somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

খরগোশদের উল্লাস

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব ভোরে মা বাবার ফিসফাস কথা পাশের ঘরে দরজা খোলার শব্দ, বারবার বাইরে যাওয়া আর ঘরে আসার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। খানিক বিছানায় শুয়ে থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলাম। মা বাবার পাশে দাঁড়ালাম ডিসেম্বরের শীতে জোড়সোড়ো হয়ে। তখনো ভোরের আলো ফুটেনি। আধো অন্ধকারের স্নিগ্ধ পবিত্র সময়। এমন ভোরে দরজা খুলে বাইরে আসা হয় না কত দিন। বাইরে আসাই তো নিষিদ্ধ। গোট বছরটা ঘরের ভিতরে কেটে গেলো। বন্ধ দরজা জানালা ভেন্টিলেটর কাগজে ঢাকা। দিনের বেলায়ও দিনের আলো না দেখার মতন বন্দী ঘরের ভিতর।
এত ভোরে রাস্তা দিয়ে কিছু মানুষ এদিক থেকে ওদিকে চলেছে। কিছু মানুষ পরিবারসহ যাচ্ছে। খানিক পরে ভোরের আলো ফুটছে। এক সময় বাবা এগিয়ে গেলেন উঠান পেরিয়ে বড় রাস্তার কাছে। ছুটে যাওয়া মানুষদের কছে জিজ্ঞাস করে কিছু সংবাদ জানার চেষ্টা করলেন। আর্মিরা নাকি আমাদের শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আরো অন্য বাহিনী আসছে কিনা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না কী হচ্ছে। সবাই অন্য রকম কিছুর আশংকায় ভীত। নিরাপত্তার খুঁজে ছুটছে। কি হবে কি হচ্ছে কেউ ভালো করে কিছু জানে না।
দুপুরের দিকে বারবার প্লেন ছুটে যাচ্ছে ফাইটার প্লেন প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছে আমরা ছুটে ছুটে বাংকারে ঢুকছি। কতক্ষণ পর বাংকারের ঘর থেকে বাইরে আসছি। আবার প্লেন আসলে দৌড় দিচ্ছি, মাটির নীচের ঘরে। দশ বারো বার কী তারও বেশী মনে নাই। এক সময় বাবা দেখার চেষ্টা করলেন প্লেনের দিকে তাকিয়ে কোন দেশের প্লেন। প্লেন যাচ্ছে আসছে কিন্তু কোন গুলি ছুড়ছে না। এক সময় বাবা বললেন, ইণ্ডিয়ার প্লেন। তার মানে মিত্রপক্ষ। আমাদের বাংকারে ঢুকার ছুটাছুটি বন্ধ হলো।
প্লেন আরো অনেকবার যাওয়া আসা চক্কর দেওয়ার পরও কিন্তু আমাদের কুকুর ভুলুর দৌড় থামল না। যতবার প্লেন যায় ততবার প্রাণ পণে দৌড়ে লুকাতে চেষ্টা করে। ও হয়ত ভীষণ ভয় পেয়েছিল শব্দে। কত মাস ধরে এমন শব্দের সাথে বসবাস। শব্দে শব্দে ওর হৃদপিণ্ড কেমন করত কে জানে। বোঝার চেষ্টা করিনি তখন। পরদিন ভোরে ভুলুকে মৃত পাওয়া গেল। যখন "একাত্তরের দিনগুলি" পড়লাম। তখন জেনেছিলাম, জাহানারা ইমামের কুকুরটিও যুদ্ধ শুরুর দিনে, গোলাগুলির শব্দে অস্থির হয়ে মারা যায়। শুধু মানুষ নয়, পশু পাখিরাও যুদ্ধের কারণে নির্যাতিত হয়েছে।
বিকালের দিকে খই ফোটার মতন বিরামহীন গুলাগুলির শব্দে আমরা তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে নিজেদের বন্দী করলাম আবার। গুলি ছুটছে অফূরন্ত অগনিত এক সাথে। বাবাই আবিষ্কার করলেন আবার শব্দ শুনে শুনে। মনে হচ্ছে ফাঁকা গুলি হচ্ছে । আমার পড়ার টেবিলের উপর চেয়ার তুলে ভেন্টিলেটারের কাগজ সরিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বাবা দেখার চেষ্টা করছেন কারা এমন অদ্ভুত গুলি করছে আজ। আমরা সবাই উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছি উপর দিকে চোখ তুলে বাবার দিকে। নিঃশ্বাস মনে হয় বন্ধ হয়ে আছে। ঘরে পিন পতন নিরবতা। বাইরে অফূরন্ত গুলির শব্দ। খানিক পরে দেখতে পেলেন কিছু বাবা আর এক গাল হাসি নিয়ে, কিছু বলতে বলতে নেমে এলেন চেয়ার থেকে টেবিল থেকে মেঝেতে। উৎফুল্ল হাসির আড়ালে কথা ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল বাবার।
কতদিন পর এমন মুখ ভরা হাসি বাবার মুখে। প্রায় অন্ধকার ঘরে সে হাসিতে উজ্জ্বল মুখ এখনো আমার চোখে তেমনি সতেজ ভাসছে। অস্থির বাবা মুক্তিযোদ্ধা এসেছে আমরা স্বাধীন হয়ে গেছি, আমরা মুক্ত বলতে বলতে লুকিয়ে রাখা বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা লাল সবুজ পতাকা বের করে একটা লাঠির মাথায় বাঁধতে বাঁধতে, ভাই কে নিয়ে মুক্তি যোদ্ধাদের গুলির পটকা ফুটানো মিছিলে স্বাধীনতার স্বাদ নিতে মুক্ত স্বাধীন হওয়ায় এতদিনের বুকের ভিতর জমিয়ে রাখা সব কষ্ট, জয় বংলা, জয় বাংলা উচ্চারণে স্বাধীন দেশের বাতাসে ছাড়িয়ে দিতে দিতে মুক্তির মিছিলে মিশে গেলেন।
ষোল ডিসেম্বর সারা দেশ স্বাধীন হলেও অনেক জায়গায় যুদ্ধ চলছিল অরো কয়েকদিন। আমাদের শহর স্বাধীন হয়েছিল ছয় ডিসেম্বর। খরগোশ অভিযানে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ নাম ছিল খোরগোশ বাহিনী। সারা দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে আমাদের শহর মুক্ত হয়েছিল পাকি মিলেটারির কবল থেকে। স্বাধীনতার গোলাপ ফুটে ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৭
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×