somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

অন্ধকার রক্তাক্ত সময়

২৩ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের মানুষরা এখন একটুতেই কোপাকোপি করছে। মেরে ফেলছে মানুষ কে। এই যে মরিয়া রাগ, এটা সামাজিক ভাবে প্রতিপালন করা হয় অনেক যত্নে।
অনেক বাড়িতে বাড়ির বউকে হাতের প্রহার আর ঠোঁটের আঘাতের উপর রাখা হয় তাদের কন্ট্রোলে রাখার জন্য। পরিবারের বড়দের দেখে ছোটরা অতি যত্নে মননে গেঁথে নেয় অপমান করা। হাতও উঠে যায় কথায় কথায়।
খুব যত্নে শিখানো হয় আমরা অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ট । ওদের চেয়ে ভালো অবস্থান আমাদের। এক ধরনের আত্ম গড়িমা নিয়ে অনেকে বড় হয়। সেটা টাকা পয়সাওলারা বেশি করে। বখে যাওয়া ছেলেমেয়েদের আরো বেশি স্পয়েল্ড করে ভালোবাসায়। যেখানে নীতি নৈতিকতার কোন ব্যাপার থাকে না। মানুষকে মানুষ না ভেবে পোকামাকড়ের মতন পিষে মেরে ফেলার মানসিকতা নিয়ে থাকে অনেকে।
যে সব বাড়িতে স্বামী, স্ত্রীকে, প্রহার করেন না। সে সব বাড়িতে চাকর বাকরকে প্রহার করা হয়। নিজের ছেলে মেয়েকে আদরে রাখা হলেও অন্যদের ছেলে মেয়েদের নিকৃষ্ট জীবের মতন দেখা হয়।
কুকুর বিড়াল, গরু, ছাগল, মোরগ, হাস নানা রকম পশু পাখিকে নানা ভাবে অত্যচার করা হয়।
যে সব মানুষ জীব জন্তুকে অত্যাচার করে তাদের মধ্যে এক ধরনের হিংস্রতা বাস করে। যারা জীব জন্তু মেরে ফেলে এরা খুনি হয় প্রায় সময়। গবেষনা বলে।
অন্যকে শাসন করা। ধমক থেকে ভীষণ রকম মার দেয়া বাড়ি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত। অলিখিত ভাবে এই আচরণ পালন করে আসছে মানুষ যুগযুগ ধরে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যদিও শিক্ষা ক্ষেত্রে মারধরকে নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু প্রাগঐতিহাসিক আচরণ অনেকে এখনো বদলাতে পারেন না। শাসন করে মানুষকে মানুষ করার চেষ্টা করেন তারা। অনেক ব্লগে, সামাজিক যোগাযোগের লেখায় মন্তব্যে দেখি, বাচ্চা মানুষ করার জন্য বাচ্চাদের মার দেয়া সাপোর্ট করেন। এরা আধুনিক মানুষ বর্তমান সময়ের। তো এমন ভিডিও চলে আসে চোখের সামনে না দেখতে চাইলেও দেখা ফেলি। মন অসম্ভব খারাপ হয়ে যায়। তিন চার বছরের বাচ্চাদের হাতের পাতায় বেত মারছেন একজন শিক্ষক। নির্বিকার চুপচাপ বসে আছেন পাশে অন্য শিক্ষক। ফুতু ফেলে থুতু চাটতেবাচ্চাদের বাধ্য করছে শিক্ষক। এসব শাস্তি দেয়া অনেকেই সাপোর্ট করেন। আমি ভেবে পাই না কি ভাবে সম্ভব।
ধমক এবং মার দিয়ে নষ্ট করে ফেলা হয় মানুষের সূক্ষাতি সূক্ষ কোমল অনুভূতিগুলি এর প্রভাবে মানুষের স্বাভাবিক আচরণ প্রকাশ পায় ভিন্ন ভাবে। কেউ একদম মিইয়ে যায় নিজের মধ্যে। কেউ হয়ে উঠে হিংস্র অনমনীয়।
চাকর বাকর শ্রেণীর যে মানুষ কারো উপরে কথা বলতে পারে না। তারা নিজের বাড়ি গিয়ে বউ বাচ্চা পিটায় । বা পশুর উপর প্রতিশোধ নেয়। এসব খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মানুষের ভয়ংকর হয়ে উঠার।
একটা সত্য ঘটনা অবলম্বে ইংলিশ মুভি দেখেছিলাম। স্টেপ ফাদার বাচ্চাটিকে সহ্য করতে পারত না একদম। হাতে না মারলেও বাচ্চাটি যখনই মায়ের কাছে আসত তখনই নানা ভাবে মাকে দখলে নিয়ে বাচ্চাটিকে দূরে সরিয়ে দিত। মা চাইলেও বাচ্চাটাকে বেশি সময় দিতে পারত না। আদর করতে পারত না স্বামীর কারনে।
চুপচাপ স্বভাবের বাচ্চাটি নিজের মতন বড় হয় অনেকটা একা একা। এক সময় বাড়ি ছেড়ে চলে যায় নিজের মতন থাকে, কাজ করে।
বেশ কিছু সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে শহরে এবং আসে পাশে, কয়েক বছর ধরে। যে মানুষগুলো মারা যায় তাদের বেশির ভাগ পানিতে ডুবে মারা যায়। এত স্বাভাবিক সেই মৃত্যু হত্যা ভাবারও তেমন কারণ নেই।
অনেক পরে আবিস্কার হয় মা বাবা, স্টেপ ফাদারসহ আরো অনেক মানুষকে চুপচাপ থাকা ভদ্র স্বভাবের এই ছেলেটি হত্যা করেছে। যাদের সাথে সমস্যা এমন কি সামান্য মনমালিন্যও হয়েছে তাদের হত্যা করে পানিতে ডুবিয়ে। পানিতে ডুবিয়ে রাখার ফলে একটি মানুষ যখন ছটফট করে, সেই সময়টুকু সে বিকৃত আনন্দ উপভোগ করে। একজন বয়স্ক মহিলাকে মেরে ফেলে শুধু সে তার হত্যা করা দেখে ফেলে সে কারণে। বহু ঘটনার পর পুলিশ তাকে খুঁজে পায়।
মানুষের মধ্যে কি ভাবে কখন হত্যা মটিভ গড়ে উঠে জানা খুব জটিল। অহংকারী মানুষ অন্যের সাধারন কোন কথাও সহ্য করতে পারে না। তাদের ইগো প্রোবলেম হয়। তারা এ কারণে মানুষ হত্যা করাতে পারে। করতেও পারে। অর্থ লোভী ক্ষমতা লোভী মানুষ নিজের স্বার্থে খুন করায় এটা সাধারন বিষয়।
কিন্তু যাদের ভিতর সারাক্ষণ নানা ভাবে যন্ত্রনা তৈরি হয়। তারা সুযোগ পেলেই তার ব্যবহার করে।
রাস্তায় বা কোন বাড়িতে চোর ধরা পরলে তাকে মারার জন্য মানুষের অভাব হয় না। হয়তো কোন শিক্ষক যে তাকে বেদম মেরেছিল তার প্রতিশোধে সে রাস্তায় ধরা পরা ছিনতাইকারীকে মারে। রাস্তায় একজন মানুষকে যারা মারে তাদের বাঁধা দিয়ে থামানোর মতন লোক খুব দেখা যায় না। কিন্তু তাদের গায়ে একাটা কিল থাপ্পর ঘুসি দেয়ার মানুষের অভাব নেই। খুব সুখি হয় মানুষ, মানুষকে মারার সুযোগ পেলে। গ্রাম সালিশ বিচারে কত মানুষকে এখনো নিষ্ঠুর ভাবে মারা হয়। আক্রান্ত হয়েও সালিশ বিচারে সঠিক বিচার আক্রান্তকারী পায় না কখনো। এসব বিচারে ক্ষমতাবানরাই বিচার পায় ।
গত বছর মনে হয় ক্রসফায়ারে কিছু মাদক ব্যবসায়িকে মেরে ফেলা হয়। ভুড়ি ভুড়ি খুশিত পোষ্ট দেখে ছিলাম মানুষ মেরে ফেলার আনন্দে উল্লাশিত ছিল অতি সাধারন মানুষও। ভাবেনি মানুষ এভাবে ক্রসফায়ারে মানুষ মারা ঠিক না। খুশি হওয়াও ঠিক না। আইনের মানুষ, মানুষ মেরে ফেলছে বিনা বিচারে, তার প্রতিবাদ হয় না। বরং এটা সমর্থন করে বাংলাদেশের অনেক অনেক মানুষ।
কিছুদিন ধরে ধর্ষণ ভয়ানক ভাবে বেড়ে গেছে এবং এদের ক্রসফায়ারে মারা হোক। এদের গনপিটুনি দেয়া হোক থেকে নানা বিকৃত ভাবে তাদের মারার সাজেশন তারা খোলামেলা ভাবে গনযোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। আবার একজন অপরাধীর পক্ষে কোন উকিল থাকবে না এটাও প্রচার করেন জনগণ।
মিন্নি নামের মেয়েটির পক্ষে কোন কোন উকিল নেই। এটাও বেআইনি নয় কি। যার পক্ষে কোন উকিল থাকে না তার পক্ষে সরকার একজন উকিল দেয় বলে জানি। নাকি নিয়ম বদলে গেছে বাংলাদেশে?
একটি ছেলেকে ছেলেধরা হিসাবে ধরে গন পিটুনিতে মেরে ফেলেছে কয়েকদিন আগে। তখনই এই লেখাটা লিখতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু অনেক কাজের জন্য শেষ করতে পারিনি। এর মধ্যে ঘটে গেছে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতম ঘটনা। একজন নারী একজন মা কে পিটিয়ে মারা হলো। অপরাধী হলেও কাউকে গনপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা কোন সভ্য মানুষের কাজ নয়। এরা এক একজন হত্যাকারী। সুযোগ পেলেই এদের বিকৃতি নিজের মার খাওয়া জীবনের অবদমনের চেপে রাখা কষ্টের বঃহিপ্রকাশ হয়ে যায় কথায় বা কাজে।
এভাবে গন পিটুনি দিয়ে যারা হত্যা করল তাদের বিরুদ্ধে কি আইন প্রয়োগ হবে। এরা কি হত্যাকারী নয়? এদের আইনের আওতায় আনা হয় না কখনো। এদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না। অথচ এরা ভয়ংকর হত্যাকারী। এই দুটো ঘটনাই নয় প্রচুর এমন ঘটনা ঘটে।
এমন ভয়ংকর ঘটনার পরও সরকার থেকে কোন কিছু এ বিষয়ে বলা হয়েছে বা পুলিশ বিভাগ থেকে বা আইন বিভাগ থেকে কিছু বলা হয়েছে আমি দেখিনি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতন নিষ্ঠুর ঘটনা জন সম্মুখে প্রকাশে কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা। দেশের জন্য লজ্জাজনক। দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক নেতার লজ্জা হওয়া উচিত। তারা এখন পর্যন্ত দেশের মানুষকে সচেতন এবং শিক্ষিত করার কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি।
এই গনপিটুনি দেয়ার বিরুদ্ধেও মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বিচার করার বিরোধীতা করতে হবে। যে কোন অপরাধীর সাজা আইনের আওতায় এনে করতে হবে। নিজের ইচ্ছায় নয়।অভ্যাসটি প্রথমত প্রত্যেকের ত্যাগ করতে হবে। সে সন্তান কাজের লোক বা স্ব্রী বা যে কেউ হোক কারো গায়ে হাত না তোলার অভ্যাসটি তৈরি করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:৩০
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×