somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

প্রথম বই প্রকাশের কথা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ফাল্গুনের দুপুর সময়টা সাতাশি সাল । ঝিমধরা মায়াবী রোদ আর আমের বোলের ঘ্রাণে মৌ মৌ চারপাশ। সন্ধ্যা বিকালের বেশ আগেই বাংলা একাডেমির মাঠে মিঠে রোদ মেখে পৌঁছে যেতাম। শুক্রবারে সারাদিন সকাল থেকে মেলা চলত। সে সময় নারীরা বইয়ের ঝাপির পিছনে ছিলেন না। আমার প্রথম বই প্রকাশ পেয়েছে সেবার। গোপনে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখা কবিতার খাতার পাতা থেকে ছাপাখানার মেশিনে ছাপা হয়ে ঝকঝকে তকতকে সুন্দর বাঁধাই করা বই। বই প্রকাশের আগে কবি নির্মলেন্দু গুণ চোখ বুলিয়ে বলে দেওয়া বেশ তো কবিতাগুলো মনে অনেক সাহস সঞ্চয় করেছিল। বাংলা একাডেমির বই মেলায় হাজির নিজের বই সেই প্রথম। বইয়ের সাথে বইয়ের ঝাপির ভিতর বসা শুরু করলাম আমিও।

বাংলা বাজারের প্রকাশক এবং তাদের কর্মচারীরাই স্টল চালাতেন। বই কেনা বেচা করতেন সে সময়।
আশির দশকে কিছু তরুণ নতুন প্রকাশিত বই নিয়ে টেবিল পেতে বই বিক্রি শুরু করেন। ধীরে ধীরে লেখকরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরন করে মেলায় স্টলে বসতে শুরু করেন।
অপরাহ্ন থেকে সন্ধ্যাটা কবি লেখকদের সমাগমে ভরপুর হয়ে উঠত মেলার মাঠ। মানুষের পদচারণা বাড়ত সাথে বাড়ত ধূলার উড়াউড়ি।
আসতেন সাংবাদিক প্রতিটি প্রকাশনা ঘুরে তাদের নতুন কি বই আসছে সে সব খবর সংগ্রহ করে ছাপাতেন পত্রিকায়।
সে সময় এত প্রচার মাধ্যম ছিল না। পত্রিকায় প্রকাশিত বইয়ের তালিকা বা বিটিভিতে একটুখানি বইয়ের খবর শুনেই পাঠক আসতেন বই সংগ্রহ করতে।
ঘুরে ঘুরে নিয়ে যেতেন স্টল থেকে বইয়ের তালিকা পছন্দের হিসাব মিলিয়ে বেশির ভাগ পাঠক বই কিনতে আসতেন একুশের দিন থেকে ।
বইমেলায় ঘুরতে আসতেন বেশির ভাগ পাঠ প্রেমিরা। লিটিল ম্যাগ আর খাবারের দোকানে আড্ডা হতো। কবি লেখকদের বেশি।
একদিন কালো লম্বা আলখাল্লা পরা লম্বা চুলের একজন এসে জিজ্ঞেস করলেন, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এসেছে কি? রুদ্র প্রায় সময় আমাদের বইয়ের ঝাঁপির ভিতর বসত।
আমি জানালাম আজ এখনো আসেননি।
আসলে বলবেন, সুলতান খুঁজছে ওকে। এক ঝলকে চলে গেলেন। সুলতান সেই বিখ্যাত চিত্রকর যাকে ঘিরে অনেক মিথ। তিনি আমার সাথে কথা বলছেন। মানুষের মানচিত্র বইয়ের প্রচ্ছদটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। শক্তিশালী মানুষের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। খানিক পরে দেখলাম, চায়ের টেবিলে রুদ্র এবং সুলতান নিবিষ্ট কথা বলছেন। আমাকে দেখে হাসলেন দুজনেই।
এত্ত বেশি ভীড়ভাট্টা ছিল না তখন। ঢাকা শহরের এ মাথা ও মাথা যেতেও ঘন্টাখানেক সময় হাতে থাকলেই যথেষ্ট ছিল।
প্রায় দিনই বইমেলায় আসার প্রোগরাম করতে পারতেন মানুষ।
ফাগুনের কোকিলের কুহুতান শুনছিলাম স্টলে বসে একা ঝিমধরা দুপুরে। হঠাৎ একজন আসলেন। আমি ভাবলাম পাঠক বই নিতে এসেছেন অথবা দেখতে। কিন্তু তিনি ছিলেন সাংবাদিক। এসেছেন বইয়ের তালিকা নিতে। প্রকাশনী থেকে সেবার প্রকাশিত হচ্ছে, এমন সব বইয়ের নাম বলে নিজের বইয়ের নামটা বললাম না। প্রচার নিজের কথা নিজে বলার মধ্যে এক ধরনের সংকোচ কাজ করত।
পরদিন সব বইয়ের খবর ছাপা হলো পত্রিকায় আমার নিজের বইয়ের খবর ছাড়া। অথচ আমিই খবর দিলাম।
নিজের কথা নিজে বলার মধ্যে এক ধরনের লজ্জাবোধই কাজ করত তখন। অথবা শিক্ষাটাও এমন ছিল নিজের কথা নিজে বলতে নেই। অন্যরা বলবে।
মেলার শুরু থেকে স্টলে বসলেও আমার বই তখনো আসেনি ছাপাখানা থেকে। পনেরো তারিখের দিকে বই এলো। পাঠক সমাগম বাড়তে থাকল। একটা দুটো বই বিক্রি হতে শুরু হলো । ভালোলাগার শুরু। কেউ কেউ আবার বই এগিয়ে দিয়ে বলেন অটোগ্রাফ দিন। আমি বলি, আমি কেন? ক্রেতা বলে চিনি আপনাকে। কবিতা পড়তে দেখেছি আপনাকে।
সেই সময় বইয়ের সাথে লেখকের ছবি দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। প্রকাশক আমাকে বইয়ের মলাটে ছাপানোর জন্য ছবি দিতে বলেন অথচ আমি কিছুতেই ছবি দিতে রাজী হলাম না। আমাকে ছবি দেখে চেনার প্রয়োজন নাই। আমার লেখা পড়ে চিনলেই চলবে।
তারপরও কেউ কেউ চিনে ফেলেন কী মুশকিল।
সে সময় এক হাজার বই ছাপা হতো কম পক্ষে এক সাথে। আজকালকার মতন তিনশ পাঁচশ নয়। মেলায় অনেক লোকের ভিড় না থাকলেও প্রকাশকরা মেলা শেষে বই বিক্রি করে খুশি থাকতেন। সত্যিকারের বই ক্রেতারা মেলায় আসতেন। সাহিত্য বোদ্ধাদের সমাগম ছিল বেশি। প্রতিদিনই আমার কবিতার বই, স্বপ্ন নগরীর খোঁজে বেশ বিক্রি হচ্ছিল। মেলা শেষে দেখা গেল সাতশর মতন বই বিক্রি হয়েছে। বাকি বইগুলো মেলা শেষে বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠানো হয়। বইয়ের দোকানকে লাইব্রেরি বলা হতো। প্রতিটি শহরে বইয়ের দোকান ছিল।তেমন বইয়ের দোকান কি এখনও শহরগুলোতে আছে? বিয়ে, জন্মদিনে বই উপহার দেওয়া হতো।
প্রথম বই প্রকাশের সেই স্মৃতি কখনো ভুলার না। বইটির কভার করেছিলেন নাজভি আহমেদ।
দুইহাজার সনে বইটির দ্বিতীয় মুদ্রন হয়। তখন ডিজিটাল প্রিন্ট মলাট এবং আমার ছবি সংযোগ করেন যিনি দায়িদ্ব নিয়ে দ্বিতীয় মূদ্রণ করেছিলেন। সেই সময় আমার বইমেলায় যাওয়া হয়নি। আমি দেশের বাইরে। এরপর আরো কয়েকটি বই প্রকাশ হলো অথচ বই প্রকাশ উপলক্ষে আমার মেলায় যাওয়া হলো না একবারও। পাঠকরা নিজের পছন্দে আমার বই কিনেন এটাই ভালোলাগা।
এবার ভেবেছিলাম যাব বইয়ের সাথে সাথে পাঠকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করব। এখন তো সময় বদলে গেছে। বই পাঠক ক্রেতা। অটোগ্রাফ ছবি না হলে চলে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এবারও বাঁধা পরে গেলো যাওয়ায় আমি দূরেই রয়ে গেলাম বইমেলা থেকে। লেখার সাথে পাঠকের সম্পর্ক গড়ে উঠুক। ভালোবেসে যারা আমার লেখা পড়ছেন। তাদের সবার জন্য অফূরন্ত ভালোবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৪৬
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×