somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

দূরে দূরে থাকুন করোনাকে মারুন

২১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম দিন কোভিড ১৯ এর খবর শোনার পর থেকেই কানাডা সতর্ক। সতর্ক আমরাও। জানুয়ারাীর ১৮ তারিখে আমি একটা লেখা দিয়েছিলাম চীনে নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব। খুব বেশি কেউ পড়েননি। কারণ এমন সতর্কতার লেখা, জরুরী ইত্যাদি লেখা পড়তে কার ভালোলাগে। মজা আর আনন্দ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালোলাগে। তবে অচেনা কিছু পত্রিকা লেখাটি শেয়ার করেছিলেন। দেশে কিছু সচেতন মানুষ আছেন কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ অসচেতন এবং গায়ের জোড়ে চলা, বিজ্ঞান না মেনে ধর্মের উপর নির্ভর করা।
কানাডায় থেকে সার্স দেখেছি ২০০৩ এ। সার্স ছিল ডেডলি ভাইরাস। যাকে ধরেছে মৃত্যুই তার শেষ পরিণতি। খুব কম মানুষ ভালো হয়েছে সার্সে। অনেক ডাক্তার, নার্স মারা গেছেন সার্সে। তবে কঠিন ভাবে কন্ট্রোল করেছিল কানাডা। সার্স একসময় মানুষকে আক্রমণ করা থামায় কারণ কাছে আক্রমণ করার আর কাউকে পায় না। সার্স এমন ভয়ংকর একটি ভাইরাস গবেষকরাও ভয় পান তাকে নিয়ে কাজ করতে।
সেই অভিজ্ঞতার আলোকে সার্সের মতন রোগ এসেছে, শুনেই কানাডার সরকার এবং আমরা জনগণ, সেই জানুয়ারী থেকে সতর্ক। শুরু থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সিরিয়াসলী নিয়েছেন বিষয়টি। অভিজ্ঞ সবার সাথে পরামর্শ করছেন। প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছেন, নিচ্ছেন আগে ভাগেই। তারপরও দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিদিন পরিবর্তন পরিবর্ধন সংকোচন করছেন রীতি নীতি।
দেশের অনেক মানুষ বিদেশে ছিল তাদের ফিরে আসার মাধম্যে করোনা ভাইরাস ঢুকে পরে কানাডায়। একটা দুটো করে বাড়তে থাকে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা। জানুয়ারীতে মোটে দুইজন রোগী ছিল। আজ ২০ মার্চ ২০ এ ৯০০ ছাড়িয়ে গেছে। ১০ জন মারা গেছেন।

চীনে সে সময় নববর্ষের আনন্দের সময় । পারিবারিক ভাবে মিলিত হওয়া আনন্দ উৎসবের সময়। চীন , হংকং, তাইওয়ান, কোরিয়ার মানুষগুলো অনেকেই সে সব দেশে গিয়েছিল। সব দেশে সব অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যায়। চীনে বিশেষ করে। সবাই ফিরে আসতে শুরু করে ভ্রমণ শেষ না করেই। তখন সরকার চৌদ্দদিনের কোয়ারেইান্টনের কথা, না বললেও অনেক এশিয়ান পরিবার নিজে থেকে গৃহবন্দী হয়ে থাকেন সে সময় সচেতনতায়। তাদের আত্মিয় স্বজন বন্ধুবান্ধবরা তাদের খাবার সরবরাহ করেছে সে সময়। নিজেদের কমিউনিটি থেকে সাহায্য সহযোগীতায় আলাদা হয়ে থেকেছেন তারা দেশের আর সব মানুষকে ভয় আতংক থেকে দূরে রেখেছেন। নিজেদের গৃহবন্দী করে রেখে যদিও তাদের মধ্যে কোন লক্ষণ ছিল না। শেষ পর্যন্ত আক্রান্তও হয়নি কেউ। তবু কিছু দিন গৃহ অন্তরীন হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করেছে আর কারো মাঝে যেন না ছড়ায় সে জন্য।
সবার চোখ যখন পূবের দিকে সে সময় পশ্চিমে ইরাক থেকে কিছু লোক আসেন কানাডায় সাবধানতার কোন প্রয়োজনই মনে করেননি তারা। কিন্তু তারা বয়ে নিয়ে আসেন করোনা ভাইরাস কানাডায়। একজনের জায়গায় কয়েক জনে ছড়িয়ে যায়।
শীতের সময় অনেক মানুষ বিভিন্ন দেশে চলে যান। অনেকেই ফিরতে শুরু করেন কোভিড ১৯ এর অবস্থা যখন ব্যাপক হয়ে উঠে বেশ কিছু অঞ্চলে। প্রিন্স ডায়মন্ড নামের জাহাজে ক্রুজের সাতশজন যাত্রীর মধ্যে ছড়িয়ে পরে কোভিড ১৯। অনেকে কেনেডিয়ান নাগরিক ছিলেন জাহাজে। জাপানে থেমে থাকা জাহাজ থেকে প্লেনে করে নিয়ে এসে আলাদা ভাবে রেখে তাদের কোন রোগ নেই পরীক্ষার পর তাদের বাড়ি যেতে দেওয়া হয়। ততদিন পর্যন্ত কন্ট্রোলে ছিল কারা আসছে কারা ছড়াচ্ছে এই সংখ্যা সরকারের কাছে। এবং এরা জনগণ থেকে বিছিন্ন ছিল।
ইতমধ্যে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরে ভাইরাস। আর এক একজন অলক্ষে, অজান্তে নিয়ে আসেন শহরের ভিতর মানুষের মাঝে। ভাইরাস। একে একে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আজ এই সংখ্যা নয়শতে পৌঁছেছে।
কানাডা একটি বিশাল দেশ লোক সংখ্যা অনেক কম জায়গার তুলনায়। তারপরও সরকার প্রথম থেকে বিচক্ষণতায় লক্ষ করেছে এবং সবাইকে সাবধান থাকার সতর্কতা সয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে বারে বারে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রী এবং দ্বায়িত্বে থাকা সকলেই জনগনের জন্য সতর্কতা মূলক সব রকম ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। বিধী নিষেধ দিয়েছেন। ধাপে ধাপে পরিবর্তন এবং কড়াকড়ি করেছেন নিয়মে। মাত্র সাড়ে ছয়শ আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে সব কিছু লকডাউন করা হলো। খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাইরে না যায়। একজন বাইরে গেলে প্রতিবেশির বাজারটাও যেন করে নিয়ে আসে যাতে বাজারে বেশি লোকের ভীড় না হয় এই সাবধান এবং করনিয় বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে জানানো হচ্ছে।
স্কুলে ছোট বাচ্চা থেকে সবার মাঝে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি করোনা কি কেন কি ভাবে হয় সব জানানো হচ্ছে। শুরু থেকে সতর্কতার কথা খুব যত্ন করে বলা হচ্ছে। এগিয়ে আসছে বিভিন্ন বড় থেকে ছোট কোম্পানি, সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। ছয়হাজার কোম্পানি প্রয়োজনীয় জিনিস উৎপাদনের ওফার দিয়েছে। এমন কি
অটো কোম্পানি ভ্যান্টিলেশন তৈরি করার ওফার দিয়েছে যার প্রয়োজন এখন অনেক। শেষ ভরষা ভ্যান্টিলেশন সাপোর্ট। মাস্ক হ্যাণ্ড সেনেটাইজার তৈরি হচ্ছে স্থানীয় ভাবে আমদানীর উপর নির্ভর না করে। এখন সংখ্যাটা বাড়তে থাকবে তাই সবার মাঝে দূরত্ব তৈরি কোভিড ১৯ এর সমাধী দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। জনগণ যত সতর্কতায় দূরে দূরে থাকবে তত দ্রুত তার নিষ্পত্তি হবে এবং অনেকের মাঝে ছড়িয়ে পরা কমে যাবে। শিক্ষা কাজ কাম, ধর্ম, আনন্দ, সভা, সামাজিক যোগাযোগ সব বন্ধ রেখে এই রোগ নিরাময়ের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ত দিয়ে দেখা হচ্ছে এই মূহুর্তে। প্রথমে কোভিড ১৯ থেকে মুক্তি তারপর আবার সব কিছু করা যাবে।
গত দুইমাস থেকে ভাইরাস ছাড়া আর কোন খবর দেখছি না। তখন থেকে আমিও লিখে যাচ্ছি যা শুনছি যা দেখছি সচেতনতার খবর। বাংলাদেশে তখনো কোভিড ১৯ এর আক্রমণ শোনা যায়নি। কিন্তু হলে যে খুব খারাপ হবে তা দেখছিলাম, অনুধাবন করছিলাম অন্তর দিয়ে। আমার মতন বিদেশে যারা বাঙালি আছেন সবাই সতর্কতার কথা বলে যাচ্ছিলেন, নিজের অবস্থান থেকে। কিন্তু অনেক সময় পাওয়ার পরও বাংলাদেশের সরকার সঠিক ভাবে পদক্ষেপ না নিয়ে উদাসীন আচরণ করেছে সাবধানতা না নিয়ে। কোন প্রস্তুতি সঠিক ভাবে নেয়া হয়নি। বিদেশ থেকে যাওয়া মানুষকে কন্ট্রোল করেনি ঠিক ভাবে। বিদেশে থাকা সব বাঙালিরা সচেতন নয়। তাদের সঠিক ভাবে আটকে রাখলে হয় তো বাংলাদেশে ছড়াতই না ভাইরাস। কিন্তু এখন যে কোথায় কোথায় গেল তার কোন হিসাব পাওয়ার উপায় নাই।
সচেতন অভিভাবকের দাবীতে স্কুল ছুটির পর অসচেতন অভিভাবক ঘুরতে গেলো যেখানে অসেচেতন প্রবাসিরাও কোভিড ১৯ এর ভাইরাস নিয়ে ঘুরছিলেন। কত দূর যাবে এখন সেটা দেখার বিষয়। কানাডা বা অন্যদেশ যে ভাবে কন্ট্রোল করতে পারবে বাংলাদেশের সে ক্ষমতা নাই। তারপর নাই সঠিক সিদ্ধান্ত। ডাক্তারদের দেয়া হয়নি যথাযথ সরঞ্জাম । ফ্রণ্টলাইনের এই কর্মিরা সবচেয়ে অসহায়। মন্ত্রীরা সব আজগুবি মনগড়া তত্থ্য দিচ্ছেন।
এখনও বাংলাদেশের মানুষ জানে না কতটা ভয়াবহ মহামারী এই কোভিড ১৯। কোয়ারেইন্টিনে থাকা মানুষজন কে ভীড় করে দেখতে আসছে মানুষ। কী অদ্ভুত!
ভালো খবর উহান যেখানে এর উৎপত্তি সেখানে এখন শূন্য রোগীর সংখ্যা। ঘর ছেড়ে যাওয়া মানুষ ফিরছেন ঘরে। তিন মাস দিন রাত এক করে কাজ করা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ফ্রণ্ট লাইনের মানুষ বাড়ি যাচ্ছেন । আর্মি দাঁড়িয়ে থেকে স্যালুট করছেন তাদের। পুলিশ এস্কোট করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের এয়ারপোর্টে। জাতীয় বীর তারা। এয়ারপোর্টের কর্মিরা অভিনন্দন জানাচ্ছেন হাততালি দিয়ে তাদের। চীনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ৪০ ০০০ ডাক্তার, নিয়ে আসা হয় এক লাখ রোগীর চিকিৎসা করার জন্য। তাদের বোর্ডিংপাশে মাস্কপরা ডাক্তারের ছবি দিয়ে বিশেষ সোভিনিয়র হিসাবে তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
যে সব দেশে এখন শুরু হয়েছে বেশ বাড়বে রোগীর সংখ্যা তারপর কমতে শুরু করবে, যদি সঠিক ভাবে জনগণ এবং সরকার পাশাপাশি কাজ করতে পারেন চীনের মতন, তবেই হবে রক্ষা। সে পর্যন্ত ধৈয্য নিয়ে, দূরে দূরে থেকে, অপেক্ষা করতেই হবে সবার ভালোর জন্য।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৪৩
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×