somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

ফ্রিদা কাহলো এক ব্যতিক্রমী মানুষ: পর্ব সাত

২৬ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আলোকপাত: কষ্ট অতিক্রম করা মানুষ ফ্রিদা
ফ্রিদা কাহলো সেই মেয়েটি যার জীবনের বেশীর ভাগ সময় কেটেছে অসুস্থতায়। ইচ্ছে মতন টগবগে ঘোড়া হয়ে দৌড়াতে চেয়েছে। প্রাণবন্ত সুন্দর সময় কাটাতে চেয়েছে, অথচ নির্জিব হয়ে পরে থাকতে হয়েছে ঘরের কোণে, ব্যাথার সাথে। যতবার ভেবেছে ভালো হয়ে যাবে, নতুন করে কিছু করবে ততবার নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে শরীরে।
ছোটবেলায় পলিও আর সেটা থেকে ভালো হয়ে একটু চলার মতন নিজেকে সাজিয়ে নেওয়ার পরেই আবার দূর্ঘটনা, দীর্ঘ মেয়াদি এবং স্থায়ী প্রভাব রেখে দিল শরীর জুড়ে। তার সাথে যুদ্ধ করেই চলেছে বাকি সারাটা জীবন।
শরীরের কষ্ট, মনের উপর কতটা পরে অসুস্থ হলে আমরা বুঝতে পারি। আর সে সারা জীবনই কাটিয়ে গেছে ভালো হওয়ার আশা নিয়ে।
ফ্রিদাকে জীবনে ত্রিশ বারের বেশি অপারেশন টেবিলে যেতে হয়েছে। পা'টাকে ঠিক রাখার অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত অর্ধেক পা, কেটে বাদ দিতে হয়েছে শরীর থেকে। শেষের দশ বছর আঠাশটি বিভিন্ন রকমের কার্স ধারন করেছে পিঠের ব্যাথার জন্য।
দূর্ঘটনার ব্যথা, কষ্টর সাথে যুক্ত হয়েছে গর্ভপাতের কষ্ট, মা হতে না পারার তীব্র বেদনা। আনন্দে থাকবেই বা কেমন করে যার জীবনের শুরুটাই নানা বিপত্তিতে ভরা। সুস্থ সুন্দরএকটি শরীরই সে পেল না। ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রায় সারা জীবন ধরে শরীর এবং মনের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র বিরোধী স্রোতের বৈপরিত্যে গিয়ে চেষ্টা করছে তবু নিজের মতন হওয়ার। বেঁচে থাকার। অন্য সব কষ্টগুলো দূরে সরিয়ে।




এত এত দীর্ঘ কষ্ট সময়ের মাঝে একজন মানুষ কিন্তু অসাধারন কাজ করেছে।
ফ্রিদার ছবির ভাষাই বলি কারমা। যেন শিল্পী, বানানোর জন্য বারে বারে ফ্রিদাকে বিছানায় ঠেলে দিয়েছি নিয়তি। নানা কষ্টের উপসর্গ দিয়েছে তার জীবনে যা উপকরণ করে সে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।
হয়তো বা এই দুঃখ কষ্ট না থাকলে, আমরা ফ্রিদার নামও জানতাম না। পলিও থেকে ভালো হয়ে স্বাভাবিক একটা জীবন কাটিয়ে যেত। হয় তো বা একজন ডাক্তার হতো। কিন্তু মৃত্যুর এত বছর পরও তাকে নিয়ে গবেষণা চলছে । তার আঁকা ছবি দেখার জন্য মানুষ ছুটছে তাকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে নতুন নতুন, এসব কিছুই হতো না।
সময়ের আগের অনেক ভাবনা ছিল মন জুড়ে। নিজেকে নারী নয় মানুষ ভেবে ইচ্ছে মতন সব কাজ করে গেছে স্মোকিং, ড্রাগ, ক্লাব পার্টির উচ্ছাস ভরা জীবনের সাথে অন্তহীন অস্থিরতা, বারে বারে প্রেমিক বদল করেছে, সন্তুষ্ট নয় বলে। যা তাকে বোহিমিয়ান, উশৃঙ্খল ভাবার সুযোগ পায় অতি সাধারন নিয়ম মানা মানুষ। কিন্তু অন্তরে প্রবাহিত হয়েছে এক সৃষ্টিশীল নদী। রঙতুলি হাতে দাঁড়িয়ে আঁকার শক্তি না থাকলেও বিছানায় শুয়ে আঁকার এক অদ্ভুত উপায় আবিস্কার করে এঁকে গেছে ছবির পর ছবি, শুরুতে এবং শেষে। নিজের প্রতিকৃতি আঁকা ছিল ফ্রিদার প্রধান আকর্ষণ ছবি আঁকার। নিজের জীবনের অনেক গল্প আত্মকথনের মতন বিষাদ বেদনা কষ্ট ভালোলাগা ভালোবাসা ছবি এঁকে রেখে গেছে।
একজন সবলীল, কষ্ট সহিষ্ণু শক্তিশালী মানুষ ফ্রিদা, বারেবারে ঘুরে দাঁড়য়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে গেছে।
শরীরিক অসুস্থতার সাথে ছিল মানসিক যন্ত্রনা। আর এই মানসিক যন্ত্রনা এসেছে একজন মানুষের সাথে সুন্দর সম্পর্ক পাওয়ার ইচ্ছার জন্য। একজন সঙ্গী পাশে থাকবে ভালোবাসায় আপন হয়ে আন্তরিকতায়। কিন্তু তাতে বাঁধা পরেছে নতুন করে খুঁজেছে শান্তি পেতে চেয়েছে। অনেকবার ভেবেছে, এতদিন কোন কারণ ছাড়া দিয়াগোকে ভালোবেসে আমি সময় নষ্ট করে গেছি। দিয়াগো আমার হৃদয়, মন শরীর দখল করে আছে। দিয়াগো ছাড়া আমার সব শূন্য। এমন অনুভুতি নিয়ে নিজের কষ্ট মোচনের জন্য নানা প্রচেষ্টা, এমন কি আত্ম হত্যাও করতে চেয়েছে ফ্রিদা । অসম্পূর্ণ ভালোবাসার কষ্টে অসুস্থ মানুষটির জীবন জর্জরিত হয়ে উঠেছে মানসিক অশান্তি আর অস্থিরতায়।যে সময়টা সে অসাধারন কিছু কাজ করতে পারত, সে সময়টা নিজের শারীরিক ধকলের উপর মানসিক কষ্টের যন্ত্রনা সহ্য করতে নানা ভাবে নিজেকে প্রলোভনে ভুলিয়ে রাখার প্রচেষ্টা করে গেছে, ফ্রিদা নামের বারবার দুঃখ পাওয়া মেয়েটি।

তার জীবন আবেগ, ভালোবাসা, যৌনতা, বিশ্বাসঘাতকতা, কিন্তু বেশির ভাগ ব্যথা দিয়ে পূর্ণ। ফ্রিডার দুঃখ ভরাক্রান্ত জীবনের দুটি উৎস ছিল শারীরিক অবস্থা এবং ভালোবাসার সম্পর্ক।
কষ্ট কিন্তু থামিয়ে রাখতে পারেনি সফলতা।
ফ্রিদার এই বৈপরীত্য একদিকে অসুস্থ অবস্থা থেকে ভালো হওয়ার চেষ্টা করেছে আবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছে মানসিক অশান্তির করণে এই বিষয়টার দিকে যদি আমরা একটু মনোযোগ দেই । তাহলে বুঝতে পারি মানুষের পাশে থাকা সঙ্গীটির বা নিঃসঙ্গতার কি রকম প্রভাব মানুষের জীবনে পরে। নিজের জীবন শেষ করে দিতে কুণ্ঠিত হয় না একটুকুও।
ফ্রিদাকে আসলে কিছুতেই অসহায় বলা যায় না। বারবার নিজের শরীরের উপর নানা রকম রোগের অত্যাচারে আক্রান্ত জর্জরিত হয়েও কখনো থেমে থাকেনি আঁকার হাত। নিজের কষ্ট ইচ্ছা স্বপ্ন প্রকাশ করে গেছে, যা এখনও পৃথিবীর মানুষকে আলোড়িত করছে। পিঠের মেরুদণ্ডের ব্যথায় এতটা কাবু করে ফেলল গলা উঁচু করে থাকার শক্তি নেই। অথচ নানা ভাবে নিজেকে শক্তিমান রাখার প্রচেষ্টা ফ্রিদা করে গেছে। বিছানায় শুয়ে নিজের মাথাটি বিছানার পিছনে ডাটের সাথে বেঁধে রেখে সোজা রাখার চেষ্টা। তবু চলছে সে ভাবে সে কষ্ট আঁকা



বাকি জীবনের জন্য তার ব্যথা ও অসুস্থতা, আনন্দ ভালোলাগা নিজস্ব বিষয়গুলো তার কাজের মাধ্যম হয়ে উঠে। সৃষ্টি করে; নতুন কাঠামোয় নতুন কিছু আপনমনের প্রভাবে ভাবনায়।
যেমনটা নিজের চোখ দিয়ে দেখেছে সাথে উপলব্ধি করেছে প্রচণ্ড কষ্ট। শরীরিক এবং মানসিক দুই রকমের কষ্টই মিলে মিশে গেছে ফ্রিদার আঁকায়। আবার আনন্দ ভালোলাগা উজ্জল রঙের ব্যবহার সে যে আনন্দময় , উজ্ঝলতায় সৌন্দর্যে থাকতে চেয়েছে তাও প্রকাশ পায় তার ছবিতে।

শরীর যা সারা জীবন তার দূরন্ত ছুটে চলাকে শিকল দিয়ে রেখেছে, ক্লান্ত করেছে। যন্ত্রনা ব্যাথায় কাতর মেরুদণ্ড, পিঠ, রক্তাক্ত যৌনাঙ্গ থেকে বেরিয়ে পরা শিশু, কষ্টের পাজর চেপে ধরা কার্স। জীবনের অধিক সময় যার সাপোর্টে সোজা করে রাখার চেষ্টা করেছে শরীর তাই চিত্রায়িত করেছে আপন মনে। বিছানা জুড়ে ভেসে যাওয়া রক্ত। শরীরের ভিতরের নানান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভিতরে রেখে বা বাইরে এনে এঁকেছে নানা ভঙ্গীমায়। মিলিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির উপামায়। নিজের অভিজ্ঞতার কাজগুলো স্যুরিয়ালিজম হয়ে উঠে অভিজ্ঞদের চোখে। ফ্রিদা তাকে বলে তার নিজস্বতা, স্বকীয়তা।
ফ্রিদা কমিনিস্ট পার্টি করত। মনে প্রাণে সব মানুষের সমান অধিকার নিয়ে কাজ করেছে আজ থেকে প্রায় ষাট, বছর আগে।
ম্যাক্সিকো ছাড়াও স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রিদা এবং দিয়েগো স্প্যানিশ রিপাবলিকানদের পক্ষে কাজ করেছে এবং মেক্সিকানদের ফরাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অর্থ জোগাড় করেছে। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট মেক্সিকান বিভাগে যোগ দেয় দিয়াগো এবং ফ্রিদা দুইজনই।

আজ ফ্রিদা কাহলো তার অসাধারণ শিল্পের মতোই তার স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত স্টাইলের জন্য পরিচিত। নিজের চেহারা খুব পছন্দের ফ্রিদার। খুব যত্ন করেছে এবং তার চিত্রগুলিতেও নিখুঁতভাবে তার ব্যক্তিগত চিত্র তৈরি করেছে।
বিখ্যাত সব ফটোগ্রাফাররা দারুণ সব ছবি তুলেছেন ফ্রিদার। তার নিজের আঁকা চিত্র এবং নিজে ফ্রিদা, দুটোই ধরা পরেছে, নিকোটাস মুরে, ইমোগেন কানিংহাম, এডওয়ার্ড ওয়েস্টন, গিসেল ফ্রেন্ড এবং লোলা আলভারেজ ব্রাভোর মতো ফটোগ্রাফারদের লেন্সে। ১৯৩০ থেকে তার অসাধারন সব আধুনিক ছবি নানান ভঙ্গীমায় তোলা।



ফ্রিদা অনন্য উপস্থিতি তার মেক্সিকান ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক বিশ্বাস দ্বারা প্রচুর ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। তেহুয়ানা পোশাক পরা তার পছন্দ। নিজের দেশের প্রতি তার গভীর এবং অটল নিষ্ঠার প্রতিফলন ছিল। তার পোশাক এবং অন্যান্য সৃজনশীল উদ্যোগগুলি তার শারীরিক এবং মানসিক ট্রমাগুলি কর্নভাট করে যেন ছবিতে ব্যবহৃত হত, যা তার জীবনকে রূপ দেয়। ঐশ্বরিক ট্রমা বার বার গর্ভপাতের পর, মাতৃত্ব এই পরিচয়ের শূন্যতা, বিশাল প্রভাব পরে ওর উপর। নিজেকে ভেঙ্গে চুড়ে দেখার চেষ্টা যেন। বারেবারে নিজেকেই জানার চেষ্টা, জিজ্ঞাসা নারী কি?
ফ্রিদা মাতৃত্বের আত্মবিশ্বাসের অর্থ পরিবর্তিত করে ফেলে। প্রতীক মাধ্যমে ফ্রিদা তার চারপাশে সমস্ত কিছুর সাথে সংযুক্ত, এবং সন্তানহীন একটি মা ফ্রিদা।
অবমূল্যায়ন করা যাবে না বরং তার ভাবনারমতন করে অনুভব করে, বুঝতে হবে প্রভাব । ফ্রিদা যন্ত্রণা এবং হতাশা প্রদর্শন করে এবং মা হওয়ার তীব্র আকাঙ্খা প্রকাশ করে। একা নিজেকে খুঁজে, স্বপ্রতিকৃতি এঁকে অনেকটা উন্মত্ত পাগলাটে আগ্রহে কাজ করেছে। মিশ্র জার্মান-মেক্সিকান সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ছিল । সেইসাথে শিল্পী, প্রেমিক এবং স্ত্রী, নারী, মা হিসাবে তার বিভক্ত রূপ আমরা দেখতে পাই।

একজন সবলীল, কষ্ট সহিষ্ণ শক্তিশালী মানুষ বারেবারে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে গেছে।
১৯৫৪ সালের ১৩ জুলাই উত্থান পতনের বৈচিত্রময় ফ্রিদার জীবন অবসান হয় মাত্র ৪৭ বছর বয়সে। নিউমোনিয়ায় গুরুতর অসুস্থ ফ্রিদা ব্লু হাউসে মারা যায়। মৃত্যুর কারণ, চিকিৎসকরা, পালমোনারি এম্বোলিজম বলেন। আবার আত্মহত্যা বলেও সন্দেহ রয়েছে তবে কখনও নিশ্চিত করা হয়নি। কেউ ধারনা করেন ওষুধের ডোজ বেশি পড়ায় সমস্যা হয়ে মারা যায় ফ্রিদা। আবার ফ্রিদার লেখা ডায়রি পড়ে কারো সন্দেহ হয় জীবনটাকে আর চালিয়ে নিতে চায়নি ফ্রিদা।
তার ডায়েরিতে শেষ লেখাটা ছিল, "আমি আশা করি প্রস্থানটি আনন্দদায়ক - এবং আমি আশা করি কখনই ফিরে আসবে না - ফ্রিদা"


সেই বিকেলে তার কফিনটি প্যালাসিও দে বেলাস আর্টেসের প্রবেশদ্বারে রাখা হয় । প্রহরী পাহাড়ায় ছিল সম্মান জানিয়ে।
যদিও জীবদ্দশায় তাঁর কাজের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তবে মৃত্যুর মধ্যেই, তার প্রাপ্য স্বীকৃতি অর্জন করেছিল। ।

ফ্রিদা কাহলোর জীবনের মতনই তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও সাধারণ ছিল না। তাকে তার প্রিয় গহনা এবং তেহুয়ানা পোশাক পরিয়ে, দেখার জন্য রাখা হয়েছিল। শৈল্পিক এবং সম্মানের সমন্বয় ছিল।

শব মিছিল চলাকালীন, একটি খোলা কাসকেটের উপরে কম্যুনিস্ট পতাকা রাখা ছিল। তাঁর স্বামী শিল্পী দিয়েগো রিভেরা ফিউনারেলের সারা সময় পতাকাটি তার উপরে ধরে রেখেছিল। এই সমস্ত ঘটনা তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াটিকে নিজের মধ্যে পারফেক্টিভ আর্টের কাজের মতো করে তোলে।

১৪ ই জুলাই, ছয়শরও বেশি লোক তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল। সেদিনের পরে তার মরদেহ দাহ করা হয়েছিল। তাঁর ছাইগুলি একটি কলম্বিয়ার মৃত্তিকার পাত্রে রাখা হয়েছিল ব্লু হাউসে । এখনো রাখা আছে, প্রদর্শিত হয়। দিয়াগোর মৃত্যুর পর দুজনকে এক সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। ফ্রিদার মৃত্যুর তিন বছর পর দিয়াগো ২৪ নভেম্বর ১৯৫৭ সনে মারা যায়। ফ্রিদার মৃত্যুর পর পরের বছর দিয়াগো আবার বিয়ে করেছিল ।
দিয়াগোর একটি মুরাল নয় বছর পর্যন্ত প্রদর্শণ করতে দেয়া হয়নি, সেখানে একটি বাক্য লেখাছিল, 'গড ডাজ নট এক্সিস্ট"।
ফ্রিদা যার সাথে জীবন যাপন করেছে অস্তিত্বহীনতায় বিশ্বাস করেছে সেই কত বছর আগে।

আজীবন ভালোবাসার বাড়ি লা কাসা আজুল ব্লু হাইস মিউজিয়াম বানিয়ে দেয়া হয় ফ্রিদার মৃত্যুর পর দিয়াগোর ইচ্ছায়। তবে মেক্সিকো সিটির মিউজো ফ্রিদা কাহলোর ব্যক্তিগত সম্পদ১৯৫৪ সালে মৃত্যুর পরে জন সমুখে প্রচার, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তার মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পরে ২০০৪ সালে, উন্মুক্ত করা হয় আঁকা চিত্রগুলি এবং জীবন বিস্তৃত লিথোগ্রাফ সহ চিত্রগ্রাহক, চিঠিপত্র, গহনা, প্রসাধনী, মেডিকেল করসেটস এবং ব্যতিক্রমী পোশাক-সহ এই ব্যক্তিগত জিনিসপত্র প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়।
ফ্রিদা একটি অনুকরণের আইকন হয়ে উঠেছে। তার সদৃশতা, বই, মুরাল, শপিং ব্যাগ, মোজা এবং একটি বিতর্কিত বার্বি পুতুলও করা হয়েছে তার অনুকরণে।

নারীবাদীদের কাছে ফ্রিদা নারীবাদী বলে অনুসরণ করে।তবে ফ্রিদা নিজেকে নারীবাদী বলে প্রচার বা স্বীকৃতি দিয়েছে বলে কোথাও দেখতে পাই না। কিন্তু বর্তমানে নারীবাদীরা ফ্রিদাকে নারীবাদী আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতীক বানিয়ে ফেলেছে। আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়। ফ্রিদার রক্তাক্ত গর্ভপাতের ছবি। জরায়ু নারীবাদীদের জরায়ু স্বাধীনতার প্রতীক। অথচ ফ্রিদা তার সন্তান হারানের কষ্ট উপস্থাপন করেছে। মাতৃত্বর বঞ্চনা এঁকেছে। ভেসে যাওয়া রক্ত হৃদয়ের কষ্ট এঁকেছে। নিজের শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গ সবটাই এক সমান ছিল তার কাছে। সবটাই গুরুত্বপূর্ণ। পা থেকে মাথা পর্যন্ত। কারণ সে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের যন্ত্রনা এবং ভালোলাগা অনেক বেশি উপলব্ধী করতে পেরেছে। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ যা হয় তো বুঝতে পারে না তা ফ্রিদার কাছে ছিল অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ।
তার জীবন প্রতিফলিত হয় তার কাজে।
নারীবাদীদের ফ্রিদাকে অন্ধের মতন অনুকরণ না করে তাকে উপলব্ধি করতে হবে। শরীরের কিছু অংশ প্রকাশ করে দেখানো কোন নারীবাদীর বিষয় না। নিজের শরীর চিত্রিত করে, ফ্রিদা বাইরের মানুষের আচরণ ব্যাখ্যা করে বলে, আমাদের ভিতরে খোলা। ফ্রিদা সাধারণত শারীরিক ভিজ্যুয়াল প্রতীক ব্যবহার করে দীর্ঘস্থায়ী প্রচেষ্টায় ভালভাবে আবেগগত যন্ত্রণা বোঝায়। নারী পরিচয়ের সবচেয়ে জটিল দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি নতুন এবং বিশেষ উপায়ে সৃষ্টি করে। এ বিষয়গুলো গোপনীয় কিছু নয় প্রকৃতিগত স্বাভাবিক বিষয়।
বর্তমান সময়ে ফ্রিদাকে এত অনুসরন করার কারণ কি। ১৯৩০ সালে ফ্রিদা যে মুক্ত স্বাধীন, স্বনির্ভর জীবন যাপন করেছে। আজকের অনেক নারী সে রকম জীবন যাপন করার সুযোগ পায় না। ফ্রিদার চালচলন আচার আচরণ অনুকরন করতে চায় অনেকে ।ফ্রিদা স্বনির্ভর, স্বাধীন ভাবে চলা একজন মানুষ। এই আপন খেয়ালে যা খুশি তা করার মতন শক্তি, খুব ছোটবেলায় স্কুলে না গিয়ে বাবার সাথে কথা বলে গল্প শুনে, স্কুলে যাওয়ার চেয়ে বেশিই জ্ঞান অর্জন করেছিল।
শারীরিক অসুস্থ ফ্রিদাকে বাবা অসীম সাহস যুগিয়েছেন হেরে না যাওয়ার। সব পারার বারে বারে ঠেলে দিয়েছেন কঠিন কাজটি করার জন্য।
আত্ম বিশ্বাসে সব পারার একটা মনোভাব নিয়ে ফ্রিদা বড় হয়েছে। তার যা কিছু আচরণ সবটাই তার জন্য স্বাভাবিক, আরোপিত কোন বিষয় নেই।
হঠাৎ করে ফ্রিদা হতে চাওয়া অনেকের জন্য সবটা বোঝা সম্ভব নয়। ফ্রিদার নারীবাদী হওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। সব অধিকার সে ভোগ করেছে। সাম্যবাদের রাজনীতি করেছে। ফ্রিদা প্রচণ্ড ভাবে মা হতে চেয়েছে একজন স্ত্রী হতে চেয়েছে। ভালোবাসা পেতে চেয়েছে। জীবন উপভোগ করতে চেয়েছে, শারীরিক, মানসিক ভাবে। সবটাই বাস্তব বিষয়।
শারীরিক অক্ষমতার জন্য যন্ত্রনাগুলো বিভিন্ন ভাবে ছবি এঁকে মানুষের মাঝে নিয়ে এসেছে। যা একটি প্রকৃতগত ব্যাপার, স্বাভাবিক।
পুরো বিষয় না জেনে কিছু অংশ হঠাৎ করে কোড করে অশ্লীল বলা যাবে না। বা নিজেকে মুক্ত করার ভাবনা ভাবাও যুক্তি সম্মত নয়, অন্তত আমি মনে করি।
১২ মে ২০১৬ তে, নিউইয়র্ক সিটিতে ক্রিস্টিনের অকশন হাউস। মর্ডান আর্ট হাউসে, ছবি বিক্রয় অনুষ্ঠান ছিল, পিকাসো মনেট বিশ শতাব্দির বিখ্যাত সব চিত্রকরদের চিত্রকর্ম নিয়ে। মেক্সিকান নারী চিত্রকর ফ্রিদার
টু ন্যুড ইন এ জঙ্গল" ছবিটি আট মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়। ইতিহাস হয়ে যায় ফ্রিদার শিল্প কর্ম এত দামে আর কোন নারীর ছবি বিক্রি হয়নি এ পর্যন্ত।

শেষ





সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৪৬
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×