গত কদিন ধরে ছুটার উপর। ক্লান্তি নেই আমার ঘোরাফেরায়। রাত গভীরে শুয়ে ভোর বেলায় উঠেই বেড়িয়ে পরা। ভ্রমণে বেরুলে আমার এনার্জি বেড়ে যায় আপনা আপনি তিনগুণ। ভোরবেলা বিছানা আঁকড়ে শুয়ে থাকতে পারি না। মনে হয় সময়টা কাজে লাগিয়ে দেখি নতুন জায়গা।
ন্যাচার থেকে হিস্ট্রিকাল স্থাপনা গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। মাড়িয়ে যাচ্ছিলাম হাজার হাজার মাইল। জার্মানির নো মাইল রেস্ট্রিকশন রোডগুলোতে ছুটে যাওয়ার মজাই আলাদা। গাড়ি চালিয়ে দারুণ আনন্দ পেলাম।
কখনো কেবলই বসে থাকা অদ্ভুত সুন্দর প্রকৃতির মাঝে। কখনো ঘুরে ঘুরে দেখা নিবিড় পর্যবেক্ষণ স্থাপনাগুলোর। এবার দেখতে চাইলাম জার্মানির সাউথ ইষ্ট দিকটা। আগে গিয়ে ছিলাম ওয়েষ্টের দিকে। ইউরোপের দেশগুলো এক একটা দেখার জন্য অন্তত এক মাস ব্যায় করা দরকার। কিন্তু ততটা সময় পাওয়া যায় না এই ব্যাস্ত জীবনে। তাই অল্প সময়ে যতটুকু দেখা যায় তাই চেষ্টা করি। একটা দেশের ভিতর কত ভিন্নতা উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিমের জীবন যাপনে। এখনো কত সুন্দর ভাবে ধরে আছে প্রাচীন ঐতিহ্য কিছু মানুষ। না ঘুরলে কাছে না গেলে তা জানার সুযোগ তেমন নেই। জানা হয় না মানুষের জীবনযাপনের ছলাকলার বিরাট অংশ। প্রাচিন থেকে উঠে আসার ইতিহাস। কদিন যাযাবর জীবন আজ এখানে কাল সেখানে। সকালে এক জায়গায় ঘুম থেকে উঠা তো অন্য জায়গায় দুপুরের খাবার খাওয়া। রাতে আরেক জায়গায় ডিনার, ঘুম। এসব করে কাটিয়ে, অবশেষে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে আনন্দের ঘুম একদম দুপুর পর্যন্ত।
হোটেলের সাজানো ঘরগুলো বড় বেশি পরিপাটি আকর্ষণ করার মতন তারপরও কেমন খাপছাড়া অস্বস্থিকর মনে হয় আপন মনে হয় না। এক বা দু রাতের অতিথি নিজের কেনা ঘরে। বাড়ি হোটেলের মতন অতটা মর্ডান পরিপাটি, সাজানো গোছানো না হলেও সেখানে থাকে অপেক্ষা আনন্দ আন্তরিকতার ছোঁয়া। রাত জেগে বসে অপেক্ষা করা কখন ঘরে আসবে স্বজন সে জন্য। এই আনন্দটুকু হৃদয় ছূঁয়ে যায়। চোখ ভিজে উঠে ভালোলাগায়।
এবার ভেবেছিলাম লণ্ডনে কদিন কাটাব। পরে বাদ দিলাম পরিকল্পনা। এখন মনে হলো ভালোই হয়েছে। লণ্ডনের বর্তমান অবস্থা দেখে ভালো লাগছে না। ব্রাক্সিট পরবর্তি সময়ে তাদের উপর বিশাল প্রভাব পরেছে যোগাযোগে। ভিনদেশি মানুষকে কর্ম হীন করে বা লণ্ডনে কাজের জন্য আসতে না দেয়ায় এখন পরিবহন ড্রা্ইভার সংকট। গ্যাস নেই গাড়ির, সরবরাহ নেই খাদ্যের। গ্রোসারী দোকানের সেলফ গুলো খালি। স্থানীও মানুষের জীবনে পরেছে বিশাল প্রভাব । এক ঘরে হয়ে থাকা সম্ভব না আন্তঃদেশীয় পরিসরে পরিব্যাপ্তি জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠা দেশগুলোর মানুষের অনেক বেশি স্বাভাবিক জীবন যাপন ছিল। নতুন করে আবার অভ্যস্থ হতে হবে একঘরে জীবন যাপনে। খুঁজে বের করতে হবে কর্মি সর্ব ক্ষেত্রে নিজের দেশের মধ্যে। সময় সাপেক্ষ এবং কঠিন অবস্থার ভিতর দিয়ে পার করতে হবে ততদিন। আমেরিকাতে নিজের দেশের কর্মি তৈরি করে চীনকে ছূঁড়ে ফেলতে চেয়ে ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু সম্ভব হয়নি তার ক্ষমতা সময়ের মধ্যে। দেখা যাক লণ্ডনের পরিস্তিতি কোথায় যায়।
কোভিট এক বিশাল প্রভাব ফেলেছে সর্ব ক্ষেত্রে। অনেক বেশি নিরাপত্তার প্রশ্ন সর্বক্ষেত্রে। হোটেলে থাকতে গেলে। রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে। মিউজিয়াম বা ভিতরে ঢুকে দেখার মতন দর্শণীয় স্থানগুলোতে যাওয়ার জন্য সর্ব ক্ষেত্রে এক গাদা কাগজ সাথে নিয়ে দেখাতে হচ্ছে। ভ্যাকসিন নেয়া হয়েছে। কোভিড নেগেটিভ রেজাল্ট। এসব দেখার পরই ভিতরে ঢুকার অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে।
যাদের কাগজ পত্র নেই তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে অনুমতি না পেয়ে, অনেকটা পথ এসে। অনেক কঠিন হয়ে গেছে ভ্রমনের আনন্দ।
সারাক্ষন এই কোভিট আতংক। মাস্ক পরিধান করে থাকা । হ্যান্ড সেনেটাইজার করা।
তারপরও আমার ঘুরুন্টি সময় আনন্দ যোগ করল জীবনে। এক ঘেয়ে বসে থাকা দুবছরের ভ্রমণবিহীন জীবনে বেশ বৈচিত্র যোগ করতে পারলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০৫