বিশ বিশ সালে বেশ কয়েক বছর পরে আমার একটি উপন্যাস প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলাম। বই প্রকাশ উপলক্ষে ফেব্রুয়ারি বইমেলায় দেশে থাকারও সিদ্ধান্তও নিয়ে নিলাম।
আগাম পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে ভাগে জানুয়ারীর শুরুতে টিকেটও করে ফেললাম প্লেনের। এত আগে প্রস্তুতি কখনই নেয়া হয় না আমার কোথাও যাওয়ার জন্য বেশির ভাগ সময় হুটহাট বেড়িয়ে পরি, কোন পরিকল্পনা ছাড়া।
আস্তে ধীরে স্যুটকেস গুছিয়ে তৈরি থাকব যাওয়ার দিনে কোন কাজ রাখব না এমনই পরিকল্পনা। কিন্তু জানুয়ারীর শেষের দিকে করোনার আতংক শুরু হলো।
ধীরে ধীরে বাড়ছে আতংক। যে যেখানে ছিল বাড়ি ফিরার তাগদায় প্লেনের টিকেট খুঁজে ফিরছে, হন্যে হয়ে। যারা বাংলাদেশে ছিল এদেশের সরকার তাদের নিজের দায়িত্বে দেশে ফিরিয়ে আনল।
এমন অবস্থায় আমার দেশে যাওয়ার চিন্তা করাও ঠিক না।
এদিকে টিকেট কাটা হয়েছে তার রিফান্ড পাওয়া যাবে কি না জানি না। কারণ রিফান্ড পাওয়ার জন্য যে ফি দিয়ে টিকেট কাটা হয় আমি তো সেটা করিনি। আমি তো দেশে যাচ্ছি নিশ্চিত এমনই সিদ্ধান্ত ছিল। পৃথিবীর রূপ এমন বদলে যাবে কে জানত।
বইটি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই মেলায় এলো।
উৎকণ্ঠা নিয়ে দেখছিলাম বইমেলা হবে কিনা। কিন্তু বাংলাদেশে বেশ ভালোভাবে মেলা চলছিল।
আমার পরিচিত যারা বই কিনেছেন তারা জানালেন মেলায় যাওয়ার কথা বই সংগ্রহ করার কথা। আমি শুধু যেতে পারলাম না বলে আফসোস করতে থাকলাম।
যাহোক তবু যাওয়ার তারিখের কদিন আগে ফোন করে বললাম প্লেন কোম্পানিকে করোনা পরিস্থিতির জন্য এখন আমি যাওয়া বাতিল করছি। তারা যেন আমার টাকা ফিরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি এমন না হলে অবশ্যই আমি যেতাম।
তারা বলল, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো করোনা নাই তাই তারা আমার টাকা ফিরত দিতে পারছে না। চাইলে আমি একটা কেইস ফাইল করে রাখতে পারি।
কি আর করা পরিস্থিতির জন্য সব নতুন করে ভাবতে হচ্ছে আগের ভাবনা চিন্তা বাতিল হলো। এত বছর বাদে বই বের করে মেলায় থেকে আনন্দ করতে চাইলাম তাও হবে না। আবার ভাড়ার টাকাও গচ্ছা যাবে। মন খারাপ হলো সবদিক দিয়ে।
যাহোক একটা কেইস ফাইল করে রাখলাম।
প্রায় আট নয় মাস বাদে তখন তো গোটা দুনিয়া করোনায় উল্টপাল্ট অবস্থা, তারা আমাকে জানাল, টিকেটের অর্ধেক টাকা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। যাক মন্দের ভালো নাই মামার চেয়ে কানা মামা পাওয়া গেলো।
পুরোটাই তো যাচ্ছিল কিছুটা পাওয়া গেলো সেই ভালো বাকি অর্ধেকের মায়া ত্যাগ করে দিলাম। অর্ধেক টাকা ক্রেডিড কার্ডে ফিরে এসেছে।
তারপর মেঘে মেঘে বেলা গড়িয়েছে অনেক। ব্যাপারটা ভুলেই গেছি আমি। করোনার মধ্যেও দেশে যেতে হলো, আসতে হলো। ঘুরতে গেলাম ইউরোপেও। নতুন মাস্ক পরে চলায় অভ্যস্ত তখন । ভ্যাকসিন সাটিফিকেট হাতে নিয়ে প্রমাণ দেখাই আমার করোনা হওয়ার সুযোগ নেই। আমি সেইফ। যদিও এখন দেখা যাচ্ছে ভ্যাকসিন নিয়েও করোনা আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই।
এর মাঝে গত বছর মাঝামাঝি সময়ে প্লেন কোম্পানি জানাল তারা আমার বাকি টাকার একটা কুপন দিচ্ছে। আবার যখন টিকেট কাটব তখন এই কুপন ব্যাবহার করতে পারব। তবে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এই কুপন কোন ভ্যাকেসন প্যাকেজে ব্যাবহার করা যাবে না। আরে দেশের বাড়ি গেলেও তো সেটা ভ্যাকেশনই আমার জন্য। তারা ঠিক কি বোঝাতে চাইল বুঝলাম না। কুপন পরে আছে ইমেলে। কখন যে ব্যবহার করা হবে জানি না। ভালো তবু টাকা ফিরে এসেছে ব্যবহার করা যাবে কোন এক সময়।
বছর শেষের কদিন আগে বড়দিনের দিন একটা মেইল পেলাম, প্লেন কোম্পানী আমার বাকিটাকাও ফিরিয়ে দিচ্ছে নগদে। বড়দিনের দিন ই মেল পেয়ে ভাবলাম এটা একটা জোকস। স্ক্যাম তো কত রকমের হয় এখন। আজকাল ম্যাসেজ আসে টাকা পাঠানো হয়েছে, পেয়েছো। কে যে এত টাকা পাঠাচ্ছে আমাকে যাদের চিনি না জানি না।
এই ইমেলও মনে হলো তেমন কিছু। কিন্তু ইমেলটা আগের মেইলের সাথে লিঙ্ক আপ তাহলে আসলও হতে পারে।
আসলেই আসল এতদিন পর ওরা আমার পুরো টাকাটাই নগদে রিফান্ড দিয়েছে। বছর শেষের সময়ে ভালো একটা খবরে মন ভালো হয়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩০