বছরের শেষ দিন একত্রিশে ডিসেম্বরের সময়টা বর্ণনা করা যাক। কুয়াশা ঘেরা সারাদিন, টুপটাপ বৃষ্টি এমনই কেটে গেলো দুইহাজার বাইশ সালের শেষ দিনটি। ঘোরতর শীতের সময় অথচ শীত কমে গেছে আরামদায়ক উত্তাপ। বাইরে বৃষ্টি মেখে হাঁটলাম খানিক। বছর শুরু হচ্ছে শীতের সময়ের উত্তাপ দিয়ে। বেশ কিছু দিন সহনীয় উত্তাপ চলছে। এখনও তাই আছে। বরফ গলে বসন্ত দিনের শুরুর মতন হয়ে আছে প্রকৃতির পরিবেশ। বৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর আজ পর্যন্ত।
ক্রিসমাসের সময় যে তুমুল তুষার ঝড় হলো ফুটখানেক বরফের নিচে ঢাকা পরল। সব গলে গিয়ে বসন্ত সময়ের আবহো তৈরি হয়েছে। কাটবেড়ালি ছাড়াও দু একটা পাখি দেখলাম। আরো দেখলাম মশার মতন কিছু উড়তে বাইরে। উত্তাপের সাথে জীবন প্রবাহ বাড়ে এই যেন প্রমাণ।
ঘরের ভিতর কিছু মাছি লুকিয়ে থাকে শীতকালে বসন্তে বের হয়। তারাও দেখি বেরিয়ে এসেছে দু একটা।
ঘরের সামনের জায়গাটা প্রতি বছর থকথকে কাদা মাখা হয়ে একটা ঝামেলা করে বরফ গলে যাওয়ার পরে বসন্তকালে। ঠিক করব বলে করা হয় না। দু চারদিন গাড়ি আটকে যায় কাদা মাটিতে। সবাই মিলে ঠেলে ঠুলে উঠাতে হয়। আসলে কাজের তো শেষ নাই সব কাজ নিজেকে করতে হয় সময় পাওয়া মুসকিল হয়।
বছরের শেষদিনে সুযোগ পাওয়া গেলো উষ্ণতায়। হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল তার মাঝে কিছু পাথর খুঁজে এনে ফেলা হলো গর্ত হয়ে যাওয়া জায়গা গুলোতে। আশা করা যায় নতুন বছর আর গাড়ি আটকে গিয়ে সমস্যা হবে না।
প্রতিদিনের কাজের বাইরে অনেক বেশি কাজের চাপ বেড়ে গেলো এই শেষ দিনে। ঘরের ভিতর কিছু অর্গেনাইজ করার ব্যবস্থা করা গেলো । একটু সময় নিয়ে আস্তে ধীরে করা যেত কিন্তু শেষ দিনে সব গুছিয়ে সুন্দর করে নতুন বছর শুরু করার ইচ্ছায় এখানের জিনিস ওখানে টানাটানি করতে অনেকটা সময় গেল। যে কোন কিছু গোছানোর আগে এলোমেলো হয়ে এক্কেবারে হিবিজিবি লেগে যায়। তারপর সেখান থেকে বেছে কত কিছু ফেলা রাখা আর পরিপাটি করা। সব শেষ করে রান্না শুরু করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। দ্রুত হাত চালিয়েও শেষ করতে পারছিলাম না কাজ।
ইচ্ছা ছিল এই লেখাটা লিখি কিন্তু কাজের ফাঁকে সময় বের করা গেলো না। চারলাইন লিখে কাজের জন্য উঠে গেলাম তেমনই খোলা পরে রইল লেখা।
রাত বারােটার আগে সব গুছিয়ে সুন্দর পরিপাটি ভাবে বসে পরিজনদের সাথে আনন্দে মাতা গেলো।
বছর শেষের দিনে দুটাে অদ্ভত ঘটনা ঘটেছে যা হতে পারতো খারাপ কিন্তু সব ভালো তার শেষ ভালো যার, এই হিসাবে ভালোই হয়েছে শেষটা। খারাপ হতে হতে হয়নি।
রাতের ডিনার করতে বসে সমানে নাক দিয়ে পানি পরছিল একটু বেশি ঝাল দিয়ে ছিলাম তরকারিতে ইচ্ছা করে তার ফলোশ্রুতিতে টিস্যু দিয়ে নাক মুছে মুছে খাওয়া শেষ করলাম। অল্প সময় পরে হঠাৎ আয়নায় নিজের মুখ দেখে চমকে গেলাম। আরে আমার নাকের হীরার নাক ফুল কই। একটু আগে খাওয়ার সময়ও যে নাকে ছিল তা বেশ মনে আছে।
মনে হলো বেসিনের পাইপ খুলতে হবে। মুখ ধোয়ার সময় ভিতরে পরে গেছে এছাড়া কি আর হবে। বেসিনের পাইপ খুলে নাক ফুল ফিরে পাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার পুরানো। আরো দু তিনবার টুপ করে পরে যাওয়ার পরে পাইপ সাথে সাথে খুলে পেয়েছি নাক ফুল। তবে এবার বেসিনে পরার সময় দেখিনি। তাও এটাই সম্ভাব্য হারানোর জায়গা মনে হলো।
দ্বিতীয় ধারনা হলো নাক মুছার সাথে টিস্যুতে আটাকে গেছে আর টিস্যু ফেলেছি গার্বেজ বিনে। তাই তাড়াতাড়ি বিনের ভিতর উঁকি দিলাম যা সহজ পাইপ খোলার চেয়ে। বেশ সুন্দর ভাবে টিস্যুর মাঝে জড়িয়ে বিনের ভিতর নাকফুলটি শুয়ে আছে দেখলাম। ভাগ্য ভালো যে গড়িয়ে ভিতরে পরে যায়নি। হীরের নাকফুলটি আমার ছেলে তার জন্মদিনে কয়েক বছর আগে আমাকে গিফট করে ছিল তাই এটা হারালে আমার অনেক মন খারাপ হতো। পেয়ে মন অনেক ভালো হয়ে গেলো। এবং ঠিকঠাক ভাবে মনে করতে পারার জন্য বেশি সময়ও ভাবনা চিন্তায় কাটাতে হয়নি মন খারাপেরও সময় পাইনি নাকফুল হারানোর জন্য।
অন্য ঘটনাটি সবারই সতর্ক হওয়ার জন্য জানাচ্ছি। কিছুদিন আগে ডাক্তারকে বলেছিলাম, মনে হচ্ছে পেটটা সব সময় ভাড়ি হয়ে থাকে ঠিক মতন ক্লিন হচ্ছে না। তো ডাক্তার একটা ওভার দ্যা কাউন্টারের ঔষধ লিখে দিলেন। বেশ নাকি ভালো রেসপন্স পেয়েছেন অন্য পেসেন্টের থেকে। বেশ অনেকদিন কিনে আনলেও খাওয়া হচ্ছিল না । নতুন ঔষধ খেয়ে কেমন ফীল করি তাই একটু অবসর সময়ে খেতে চাচ্ছিলাম। কাজের ব্যস্ততায় অনেক দিন কেটে গেলো ঔষধ খাওয়া হলো না। আর আমার একটু গড়িমশিও আছে ঔষধ খাওয়ার ব্যাপারে। না খেতে হলেই বাঁচি। এই ঔষধও কিনে আনলেও খেতে ইচ্ছা করছে না।
যে সমস্যার জন্য ঔষধটা খাবো সেটার জন্য নিজেই দায়ী ঔষধ না খেয়েই সারানো যায়। কিন্তু অনেক সময় নড়াচড়া হয় না। লেখালেখি করার জন্যও কাজে বসে থাকার পরে, আরো অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হয় যা শরীরের জন্য খুব খারাপ। ফল সবজী বেশি খেলেও চলে। কিন্তু মাঝে মধ্যে শুধু মাছ মাংসই খাওয়ার ইচ্ছা করে। ঔষধ সবচেয়ে সহজ পণ্থা মনে হলো।
তো একত্রিশ ডিসেম্বর তিনটায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে হঠাৎ মনে পরায় ভাবলাম ঔষধটা খেয়ে নেই। ভালো সুস্থ মানুষ আমি ঔষধ খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। সকাল আটটার দিকে উঠে বাথরুমে গেলাম । বাথরুম থেকে বিছানায় ফিরে এসে মনে হলো আমার হার্টবিট অসম্ভব রকম বেড়ে গেছে। হার্ট শুধু না আমার শরীরও মনে হয় লাফাচ্ছে। যেহেতু শুয়ে পরেছিলাম তাই তেমন কিছু আর বুঝতে পারলাম না। ধীরে ধীরে হাঁপরের টানের মতন হার্ট বিটের উঠানামা থামল। ভাবলাম যথেষ্ট ঘুম হয়নি আরো একটু ঘুমাই। এবং বেশ ভালো আরো তিন ঘন্টা মতন ঘুমালাম। কিন্তু উঠার পর আবারো সেই দ্রুতলয়ের হার্টবিট শুরু হলো। যত বেশি সময় চলাফেরা করছি, দাঁড়িয়ে আছি দ্রুতার সাথে বিট বাড়ছে সাথে মাথা অন্ধকার হয়ে আসছে। একটু পানি খেলাম তারপর দ্রুত গিয়ে শুয়ে পরলাম। শোয়ার পর আস্তে আস্তে আবার কমল। বাড়ির লোকজন ব্যাস্ত হয়ে গেলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে বসে থেকে কোন চিকিৎসা হবে না। আমি বুঝতে পারলামনতুন নেয়া ঔষধের প্রভাবে এমনটা হয়েছিল এছাড়া আর কোন কারণ নাই। ওদের বললাম, আমি ফাইট করে ঠিক হয়ে যাবো হাসপাতালে গিয়ে দিনটা নষ্ট করার দরকার নাই। এখন আমি খাবো । আমার মনে হলো খাওয়া দরকার ভালো করে। ডিম দুধ ফল অনেকটা এক সাথে খেয়ে নিলাম। তারপর বেশ ভালো অনুভব করলাম। বাইরে ফ্রেস বাতাসে হেঁটে আসলাম। যদিও আরো ঘন্টা খানেক পুরো সুস্থতা ফিরে আসেনি একটু অস্বস্থি হচ্ছিল। রাগ হচ্ছিল নিজে উপর কেন খামখা খেলাম ঔষধটা। ভালো যে তাতক্ষনিক প্রভাব বিস্তার করে কেটে গেছে অল্প সময় পরে, স্থায়ী কোন প্রভাব রেখে যায়নি।
ডাক্তার যখন প্রেসক্রাইব করেন, আমরা তাই বিশ্বাস করে খাই নিজের শরীরে কেমন প্রভাব পরবে তা জানতে চাই না। প্রতিটা মানুষের শরীরের নিয়ম আলাদা কিন্তু একটা ঔষধ তৈরি হয় সাধারন একটা আইডিয়া থেকে, তা ঠিক ভাবে কাজ নাও করতে পারে অনেকের জন্য। এ বিষয় গুলো ঔষধ খাওয়ার আগে আমাদের ভালো করে রিভিউ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখে নিজের জন্য উপযোগী কিনা নিজেরই যাচাই করে নেয়া দরকার।
এই ঔষধের প্রতিক্রিয়াটা স্থায়ী প্রভাব ফেলেনি। অনেক ঔষধ একবার খেলেই অনেক রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে ফেলে শরীরে। ভালোর চেয়ে খারাপ হয়ে যায় অনেক সময়। ঔষধ বেশি খাওয়ার চেয়ে না খাওয়া ভালো। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে মনোযোগ দেয়া খুব জরুরী। অল্পের উপর দিয়ে বেঁচে গেছি এটাও একটা ভালো দিক। এখন গুগলে রিভিউএ সহজেই দেখা যায় পাশ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ভালো মন্দের বিষয়গুলো। নিজের শরীর সম্পর্কে ধারনা থাকলে বুঝা যায় কিসের প্রভাবে কেমন লাগছে।
একটা বছর দ্রুতই শেষ হয়ে গেলো। অনেক নতুন কিছু সংযোগ হলো জীবনে। মন্দ কাটেনি সব মিলিয়ে ।
বছর শুরুর সময়টা পরিবারের সাথে কথা বলে শুরু হলো।
লেখাটা একত্রিশ তারিখে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সব মিলিয়ে আর লেখাটা পুরো শেষ করতে পারিনি সেদিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৫:১২