somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

সামাজ সংসার

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা বিষয় আমি খেয়াল করেছি। যারা নিজেরা বিদেশে থাকেন বা মা বাবা থেকে দেশে থেকেও দূরে থাকেন। তারা অনেক সময় অন্যদের সমালোচনা করেন।
আহা অমুকের মা, বাবা একা জীবন যাপন করছে বুড়ো বয়সে। আহা তাদের দেখার কেউ নেই।
আহ বাবাটা একা ঘরে মারা গেলো ছেলে মেয়ে কেউ পাশে থাকল না।
এই কথাগুলো তারা একটা ঘোরের মধ্যেই বলতে থাকেন যেন।
তারা কখনো নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেন না তারা নিজেরাও দূরে আছেন বাবা মা থেকে। নিজেরা কিছু করছেন না কাছে থেকে।
আমি অনেক জ্ঞানী গুণিজনদের অন্যদের এমন সমালোচনা করতে দেখেছি।
দেশে বা বিদেশে, অনেকে মা বাবাকে সাথে রাখেন। কিন্তু যে মা বাবার নিজস্ব একটা সংসার ছিল পুরো একটা বাড়ির অধিকার নিয়ে কতৃত্ব করেছেন তারা। তাদের কে অনেক সময় নিজের ঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়। অনেক সময় তাদের ভাগাভাগী করে একটা ঘরে থাকতে হয়, অন্য ছেলে মেয়ে বা নাতি নাতনীর সাথে।
মুখে অনেক কথা বলা যায় কিন্তু কাজে আর বাস্তবতায় মুখের কথার মতন সব করা যায় না।
যৌথ পরিবারের গুণগাণে এবং যৌথ পরিবারের ভেঙ্গে যাওয়ার কষ্টেও অনেকে ম্রিয়মান হয়ে পড়েন।
কিন্তু যৌথ পরিবারে নিজেরা থাকেন না। নিজেরা নিজের পরিবার নিয়ে আলাদাই থাকেন। এক দিকে তারা সুখেই থাকেন কিন্তু অন্যেদের সমালোচনায় তারা মুখর না হলেও পারেন।

প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ বছর ধরেই যৌথ পরিবার গুলো ভাঙ্গছে। পড়ালেখা, চাকরী নানা কারণে মানুষদের পরিবার থেকে দূরে যেতে হচ্ছে।
অনেক পরিবারের বাচ্চাগুলোকে বাবা মা খুব ছোট বয়সে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেন। ছোট থেকে এরা পরিবারের বাইরে থেকে এক ধরনের মানসিকতায় অভ্যস্থ হয়ে যায় একা থাকার। বন্ধু বান্ধবের সাথে থাকার। ছোট বয়সে হোস্টেলে না পাঠালেও আঠার বছর বয়সে অনেকেই পরিবারের বাইরে চলে যায় পড়ালেখা করতে।
এরপর চাকরি শুরু করলে বিয়ে দেয়ার পর এদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় পরিবার দেখার গুরু দায়িত্ব। যা হয় অনেক সময় সমাস্যা আক্রান্ত। বিশেষ করে নতুন চাকরি করে অল্প অর্থে যখন নিজের সংসার চালানো কষ্টকর হয় তখন তাদের ভাইবোনসহ বিশাল পরিবার দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়।
আমাদের দেশের যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার পরও অনেক মানুষ যৌথ পরিবারের ধারনায় আটকে আছেন। নিজেস্ব পরিবার নিয়ে দূরে থাকার পরও। তাই দেখা যায় বাড়ির বড় ছেলেদের দায়বদ্ধতা থাকে, পরিবারের সবার দেখভাল করার। নিজের সম্পদ থাকুক আর না থাকুক।
অনেক কারণে অর্থের চাপে ঢুকে পরে মানুষটি অবৈধ আয়ের সন্ধানে। এটা অবশ্য অনেকে ইচ্ছাকৃত ভাবেও করতে পারে, প্রয়োজন না থাকার পরও।
এক ধরনের মানসিকতা আছে বিভিন্ন উৎসবে পরিবারের সবাইকে উপহার দিতে্ হবে। না হলে মান সম্মান থাকে না।
এছাড়া অকারণ কিছু নিয়মএলাকা ভিত্তিক এখন পর্যন্ত চালু আছে। মেয়ের বাড়িতে রোজার ইফতার পাঠাতে হবে। কোরবানীর গরু ছাগল দিতে হবে। যে কোন সময় বাড়িতে কেউ আসলে তাকে উপহার দিতে হবে। আরো কত কিছু। এসব অর্থহীন যুক্তিহীন নিয়মের ফলে অনেক মানুষ নাজেহাল অবস্থায় থাকেন নিয়ম পালন করতে গিয়ে।
বিদেশ থেকে কেউ গেলে পরিবারের সবার জন্য উপহার নিতে হয়। এক সুটকেস ভরে যায় উপহার সামগ্রীতে। প্লেনে এত কিছু নেওয়া কষ্টকর। তারপরও অনেকে নিয়ে যান। কিন্তু উপহার আবার অনেকে পছন্দ করেন না। বিদেশ থেকে কি এনে দিল এই সমালোচনা চলতেই থাকে। মানুষ কখনো সন্তুষ্ট নয়।
একটা সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো। যে ছেলেটি বিয়ে করল নতুন, সে নতুন বউয়ের সাথে সময় কাটালে বিষয়টা অনেক পরিবারে ভালো চোখে দেখে না কেউ। অথচ বউ আনা হয়েছে তারা দুজনে আনন্দ করবে এক সাথে এ জন্য।
এছাড়া বউকে শ্বশুড়বাড়ি রেখে নিজে একা প্রায় সময় স্বামী মেসে বা একা অন্য শহরে যেখানে চাকরি করে সেখানে থাকে। অনেকে বিদেশেও থাকে বছরের পর বছর। বিয়ে নামের একটা শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে থাকা বউটি, স্বামী নামের একটি মানুষের মুখ মনে রেখে জীবন যাপন করে যৌবনের আনন্দের সময়গুলো একা কাটায়। শ্বশুড়বাড়ির মানুষের দায়িত্বপালন করে।
অন্য দিকে পুরুষটিও বউ বা ছোট সন্তানের ছবি পকেটে নিয়ে অন্য শহরে জীবন যাপন করে। কখনো কেউ খুব আন্তরিক থাকে পরিবারের প্রতি দূরে থেকেও। আর কখনো কেউ এই অবস্থায় ভুল পথে পা বাড়ায় অন্য নারী, পুরুষের সঙ্গে জড়িয়েও পরে।
একটা সংসার সুন্দর থেকে অসুন্দর হয়ে যায়।
আমাদের দেশে একটি মানুষ, নিজে সয়ংসম্পূর্ণ হয়ে চলবে এই ভাবনায় কখনো তাকে বড় করা হয় না। বাচ্চা মানেই আমার পুতুল সবটাই আমার মতন হবে। আমার ইচ্ছায় কিছু হবে, কিছু করবে। আমার শেষ বয়সে আমাকে দেখ ভাল করবে। এই ধারনা বেশির ভাগ পরিবারে বদ্ধমূল ধারনা। খুব কম মানুষ আছেন যারা নিজের মতন সয়ং সম্পূর্ণ এবং সন্তানদের তাদের মতন নিজস্ব জীবন যাপন করতে দেখে সুখি হন।
নিজের জন্য সন্তানকে নিজের প্রয়োজনে আটকে ফেলাটা যেমন ঠিক না। তেমনি নিজস্বতায় বেড়ে উঠতে না দিয়ে পিতামাতার উপর নির্ভরশীল করে রাখা সন্তানদের মানসিকতাও একটা কঠিন অবস্থার সৃষ্টি করে।
এখন সময়, নিজের শেষ বয়স কেমন কাটাবেন সেই ব্যবস্থা নিজেরই ভাবা এবং পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থা নিয়ে রাখা দরকার, সন্তানের উপর নির্ভর না করে। যাতে সন্তান বাইরে থাকলে কাছে না থাকলে আহাজারী করার কোন মনোবৃত্তি তৈরি না হয়। নিজের শেষ সময়ে নিজের মতন জীবন যাপন করে কাটিয়ে দিতে পারেন।
আবার সন্তানরাও মাতাপিতার সম্পত্তি দখলের চিন্তায় তাদের দেখভাল করবে, এমন নিকৃষ্ট ভাবনা না করা ভালো। আঠরো বছর থেকে নিজের মতন নিজের জীবন যাপন করার জন্য নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা প্রত্যেকের জন্য জরুরী। বাবা মায়ের অজস্র সম্পত্তি থাকলেও নিজের মতন নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিৎ। অভিভাবকদেরও এই বিষয়টি বাচ্চাদের ছোট বেলা থেকে শিখানো কর্তব্য নিজের দ্বায়িত্ব নেয়ার নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখানো । অনেক অভিভাবক মনে করেন বাচ্চাদের সাথে কিছু আলোচনা করবেন না। নিজেদের অঢেল সম্পত্তি আছে বা নিজেদের দূর্দশার অবস্থা সন্তানরা জানবে না। অন্য পরিবারের শিশুদের দেখে চাহিদা বাড়লে না খেয়ে হাতে আই ফোন বা অন্য কিছু কিনে দেন সন্তানকে কিন্তু নিজেদের সামার্থ অবস্থা সন্তানদের বুঝতে দেন না। যা খুব জরুরী। সন্তান সচেতন না হয়ে অজ্ঞ হতে থাকে আর নির্ভর করতে থাকে অভিভাবকের উপর।
নিজের পরিবারের বাইরে যে একটা জগৎ থাকে মানুষের কল্যাণে কাজ করা এমন শিক্ষাও খুব কম পরিবারে দেওয়া হয়। সবটাই আমার আমাদের মধ্যে সীমিত। অথচ শিশু বয়সে মানুষের জন্য আদ্র হয় মন। অনেক পরিবারের মানুষ সেই সুন্দর মনটি নষ্ট করে দেন শিশুর। নিজেদের টানাপূড়েণ, ঝগড়া নিষ্ঠুরতা দেখিয়ে।
অন্যের সমালোচনা না করে সামাজিক মনোভাব পরিবর্তন করা জরুরী।






সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:১৪
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×