এখন যত বিজ্ঞাপণ স্বাস্থ সচেতনতার গল্প সারা দিন সামনে চলে আসে দেখতে না চাইলেও জোড় করে ঢুকে পরে অনেক সময় মোবাইল, ল্যাপটপের স্ক্রীনে, চোখের দৃষ্টিতে।
কোন কিছু না ফেলানোর জন্য নতুন ভাবনা, পেঁয়াজ, রশুনের খোসা, মাছের আঁশ, এ্যাভাকোডার বিচি, কলা, আনারসের ছাল সব খাওয়া মারাত্মক ভালো শরীরের জন্য। মাঝের আঁশও গুড়া করে পানিতে ভিজিয়ে খেয়ে নিলে পাবেন মহা উপকার। সবই চা এখন। আসল চায়ের স্বাদ ভুলিয়ে দেয়। চাইনীজ গ্রীন টির বিশাল প্রভাব এখন।
অনেক উপজাতি পোকা খায়। অনেক প্রাকৃতিক পরিবেশে খাওয়া দাওয়ার অভাব বলে পোকা টোকা খেয়ে মানুষ জীবন ধারন করে। জানতাম। সেটা তাদের বেড়ে উঠার অভ্যাস।
কিন্তু সেই পোকার প্রোটিন খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে কেন মানুষকে তা বুঝলাম না।
কোভিডের আগে একদিন খবরে দেখলাম, এখানকার গ্রোসারী দোকানে এখন থেকে পাওয়া যাবে পোকার পাউডার। এইসব পোকা তেলাপোকা থেকে নানা ধরনের পোকা, পরিযায়ী মাকড়সা,হলুদ মেলওয়ার্ম এবং হাউস ক্রিকেট যাকে ঝিঝি পোকা বলি আমরা চিৎকার করে কান ঝালাপালা করে ফেলে। দেশে গরমকালে দেখতাম আলোর নিচে এসে জমা হতো দলে দলে। কুকুর খেয়ে ফেলত ধরে। এখন কুকুরের মতন আমাদেরও খেতে হবে।
মিহিন করে প্যাকেটে ভরে সাজিয়ে রাখা হবে সেলফে। ময়দা আটা, বেসন, বাদামের গুঁড়া, চালের গুঁড়া, ডালের গুঁড়ার সাথে আরো কত রকমের গুঁড়া যে সাজানো থাকে যার অনেক কিছু ছূঁয়ে দেখা হয় নাই কোন দিন। এখন পোকা গুঁড়াও সাজানো থাকবে সেলফে। খবরটা জেনেই বমি আসছিল আমার। ওয়াক থুই আমার মনে হয় খবরটা শুনে।
ছবিতে দেখছিলাম কিলবিল করে কোটি কোটি পোকা একে ওপরের গায়ে উঠছে। এগুলোর চাষ করে মহান দেশ চীন এবং সেখান থেকেই এই মহান প্রোটিন যুক্ত খাবার চলে আসবে আমাদের গ্রোসারীতে। কখনো কেক বানানোর মাঝে ময়দার সাথে মিশিয়ে নিবেন বা সালাদের ভিতর ছড়িয়ে দিবেন এই সব পোকার গুঁড়া প্রোটিনের জন্য। রেসিপিও জানিয়ে দিচ্ছিল খবরে কি ভাবে খেতে হবে।
এত এত মোরগ, হাঁস, গরু, ভেড়া, শুয়োর মাছ কত রকমের খাবার আছে, এছাড়া কত রকমের ফল, সবজী, শাক আছে, এসব খাবার পরেও কেনো পোকা আমাদের কিনে খেতে হবে এই সিদ্ধান্ত কারা নিলেন কেন অনুমতি দিলো বুঝলাম না। দয়া করে অবশ্য প্যাকেটে উপকরন লিখে দিবেন, যাতে ক্রেতার ইচ্ছা না হলে কিনবে না।
শুধু ভাবলাম অনেক পড়ে এখন থেকে প্যাকেট কার্টে তুলতে হবে। কিছুর বিশ্বাস নাই। কি কিনতে, কি কিনে নিয়ে যাবো কে জানে একটু অসাবধান হলেই। কদিন আগে এমন ভুল হয়েছিল। বাটার কিনে আনলাম একটু দাম কম দেখে। এখন যেমন আকাশ ছোঁয়া দাম সব কিছুর তাই কমদাম দেখে হাত বাড়িয়ে তুলে আনলাম। কিন্তু কিছুতেই বাটারের আসল স্বাদ গন্ধ পাই না। দেখলাম দুধ থেকে নয় সবজী থেকে বানানো বাটার। জানতামই না এমন কিছু বাজারে এসেছে।
বাটারের বদলে মার্জারিন নামের তেলের এক পদার্থ অনেক দিন খেয়ে ছিলাম পরে বাদ দিয়ে বাটারে ফিরে গেলাম ভালো না লাগায় তখনই জানলাম এই মার্জারিন খুব খারাপ। তেমনি খারাপ সোয়য়া যার আবার ভীষণ রকম ব্যবহার হয়।
এখন বলছে সয়াবিন তেল যা নাকি ভীষণ ভালো ছিল ঘি, সরিষার তেলের বদলে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার শুরু হলো তা খাওয়াও নাকি বিষ খাওয়ার মতন।
অনেকদিন ধরে খেয়ে খেয়ে অভ্যস্থ হয়ে উঠার পর জানা যাবে সেটা ভালো না আগেরটাই ভালো ছিল, অথবা নতুন কিছু খেতে হবে। মানুষের নেশা ধরিয়ে দিল পপ খাইয়ে এখন বলছে খাবেনা সুগার আছে। অথচ অনেকেই আছে মদ খাবে না কিন্তু পপ না খেলে চলবে না মদের মতনই নেশা।
তবে বাইরে থেকে তৈরি খাবার কিনলে তার মাঝে যে এই পোকা গুঁড়া মিশিয়ে রান্না করবে না তার নিশ্চয়তা কি। সব সময় তো জিজ্ঞাসা করা হয় না। কি দিয়ে রান্না করছে। বাড়িতে যত পরিস্কার করে ধোয়াধুয়ি করে রান্না করি বা ভালো তেল মসলা জেনেশুনে ব্যবহার করি দোকানে কি তেমন ভাবে রান্না করে কখনো ভালো উপাদান দিয়ে। তারা তো সব সময় প্রেজেন্টশেনটা সুন্দর করে করবে। খাবার যা দিয়ে যে ভাবেই তৈরি করুক। কখনো জিজ্ঞেস করি না রেস্টুরেন্টে গেলে তুমি কোন তেল মসলা ব্যবহার করে আমার রান্না করবে? বা মাছ মাংস টাটকা কিনা। সুন্দর সাজিয়ে দেয় প্লেট সোনা মুখ করে খেয়ে ফেলি যেন এর চেয়ে স্বাস্থকর খাবার আর হয় না।
চীনা খাবার খাওয়ার পরে প্রায় সময় মাথা ঘুরত। এমএসজি ব্যবহার করে চাইনিজরা স্বাদের জন্য। যার জন্য শরীরে এই অনুভুতি হয়। বিদেশে এসে জানলাম এমএসজি ব্যাবহার করা নিষিদ্ধ। এমএসজি যা মারাত্মক ক্ষতির করে শরীরে। স্বাদ বাড়ানোর জন্য খাবারে এর ব্যবহার এতে থাকা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট, মাথাব্যথা থেকে বুকে ব্যথার জন্য দায়ী করা হয়েছে। দেশে এক চাইনীজ দোকানে বলেছিলাম এমএসজি ছাড়া রান্না করতে বলল তাহলে কোন স্বাদ পাবেন না। না পাই ও ছাড়া রান্না করে আনেন। কিন্তু না তারা নিজেদের মতন সব মিশিয়ে রান্না করে নিয়ে আসল।
বিদেশে অবশ্য নিজের পছন্দে কিছু এক্সট্রা যোগ করতে বা বাদ দিতে নির্দেশনা দিলে তারা সে ভাবে করে দেয়।
কিছুদিন থেকে প্রাণী বাঁচাও তোড়জোড় চলছে। এক ধরনের মানুষ মাংসাসী না তৃণভুজি। আবার এক ধরণের মানুষ প্রাণী খায় মজা করে প্রাণী না হলে খাবারই হয় না তাদের। অনেকে আবার আগে খেত কিন্তু এখন প্রাণীর প্রতি দয়াশীল হয়ে খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। তারা লতাপাতা সবজী খেয়ে থাকে।
বিজ্ঞানীরা নানা উপাদান মিশিয়ে মাংসের মতন ননএনিমেল মাংস তৈরী করছে তৃণভূজিদের জন্য। দুধ তৈরি করছে। মাংসের রীতি মতন স্বাধ পাওয়া যাবে কিন্তু মাংস নয় একদমই।
মাংসের একটি কোষ নিয়ে তা থেকে প্রসেস করে মাংসের স্বাদের ভেজ মাংস উৎপাদন করা হয়েছে কারখানায়। গরু মুরগী ছাগল ভেড়া এইসব প্রাণী আর কসাইখানায় যাবে না। সাথে গরু পালনের জন্য যে বিশাল পানির প্রয়োজন হয় সেটাও বেঁচে যাবে। আমার মাথায় আসে না এটা কি ভাবে সম্ভব এই সব প্রাণী কসাইখানায় না গেলে এদের বংস বৃদ্ধি তো অনেক বেড়ে যাবে। তারা কি প্রয়োজনীয় পানি না খেয়ে বাঁচবে। আর যারা মাংস খেতে চায় না তাদের কেন মাংসের স্বাদের কারখানায় উৎপন্ন মাংস, দুধ খেতে হবে!
আমি বাইরে খেলে বাঙালি, ইণ্ডিয়ান দোকানে যাই না সাধারনত।
কয়েকদিন আগে কাছাকাছি ছিলাম, একজনের জন্য মিষ্টি কিনতে ঢুকেছিলাম বিখ্যাত বাংলাদেশি প্রিমিয়াম সুইটে। ঢুকে দেখলাম খাবারও আছে তাদের নানা ধরনের মিষ্টির সাথে। সর্ষে ইলিশ আছে দেখে টেক আউট নিয়ে চলে আসলাম। সারাদিনের ঘোরাফেরার পর বাড়ি ফিরতে আরো তিন চার ঘন্টা লাগবে তাই।
খেতে বসে দেখি চিকন একটা টুকরো দিয়েছে দাম বেশ ভালো নিয়েছে। কিন্তু মাছের আঁশ পরিস্কার করেনি। দোকানে বসে খেলে অবশ্যই দেখাতাম ডেকে। আর একদিন ওদিকে যাওয়া হলে জানিয়ে আসব ওদের রান্নার গুণাগুণ। মাছের আঁশসহ বাঙালি রান্না কল্পনা করা যায়। কত মানুষ খায় কেউ কি বলেনি কখনো।
নাকি আমিই প্রথম তাদের সর্ষে ইলিশের খদ্দের ছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০২৩ ভোর ৬:৫০