চিকিৎসা বিজ্ঞান শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গ, ত্বক, বাহু, পা, আঙ্গুল, চোখ, কান এবং চুল প্রতিস্থাপন করতে পারে। মস্তিষ্ক এখনও প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে অতি সম্প্রতি বাহুর কাছে একটি চিপ বসিয়ে তা থেকে সিগন্যাল পাঠানোর চেষ্টা বেশ সফল হয়েছে। অবস হাত ব্যবহারে জন্য এই পদ্ধতি ।
কাজ চলছে মস্তিকে প্রয়োজনীয় চিপ বসিয়ে সংকেত পাঠানোর। মনে হয় মানুষ সাফল্য পেয়ে যাবে আগামীতে। জন্মের আগেই এখন জিনগত বংশানুক্রমের রোগের অনেক চিকিৎসা হয় ভ্রণ অবস্থায়। অসুস্থ অবস্থা নিয়ে জন্ম নিতে হয় না শিশুকে। যদিও এই সব চিকিৎসা ব্যায়বহুল এবং উন্নত বিশ্বেই কেবল হয়।
এই চিকিৎসা গুলো প্রত্যেক দেশে, জন সাধারনের জন্য চালু হলে বিকলাঙ্গ বা বংশগত রোগ বিস্তার বন্ধ হবে। অনেক পরিবার অসুস্থ শিশুর চিকিৎসা ব্যয় ভাড় সামলানো থেকে রক্ষা পাবে। মানুষের মধ্যে সুস্থতা বাড়বে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে পোলিয়, যক্ষা, বসন্ত, রোগ এখন বিলুপ্ত প্রায়। কিন্তু অনেক রক্ষনশীল দেশ শিশুদের টিকা দেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখার জন্য। শিশুরা পোলিও রোগে ভুগছে এখনো। বাংলাদেশে বহু শিশু পোলিও আক্রান্ত হতো এক সময়। পরিচিত কিছু মানুষ চিনি যারা পোলিওর কারণে সারা জীবন ঠিক মতন হাঁটার সুযোগ পায়নি। অনেকে এখন হুইল চেয়ারে বা বিছানায় থাকে।
বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন পোলিও নির্মূলের প্রচেষ্টায় রোটারি ইন্টারন্যাশনালকে ২৫৫ মিলিয়ন প্রদান করেছিল ২০০৯ সালে। তারা নিমূল করতে চেয়েছিল রোগটি। কিন্তু কুসংস্কার এবং সরকারী বাঁধার জন্য কাজ সব জায়গায় ঠিক মতন হলো না তাদের সদিচ্ছা থাকার পরও। অনেক দেশ চিকিৎসা ব্যবহার করতে দিল না জনসাধারনকে।
গণপ্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো.নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, সোমালিয়া, সিরিয়ার মানুষ এখনও অনেক পরিমাণে আক্রান্ত হয় পোলিয় রোগে।
রোগ নির্মূল করা যায় কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন জনগণের সহযোগীতা এবং সরকারের পদক্ষেপ।
নতুন আরেকটি সফলতা পেয়েছে জাপানী বিজ্ঞানী। দুটি পুরুষ ইঁদুরের ত্বকের কোষ ব্যবহার করে, কার্যকর ডিম তৈরি করে এবং এটিকে ফার্টিলাইজড করে। তা থেকে পুরুষ ইঁদুরের বাচ্চা উৎপাদনের মাধ্যমে।
নারীরা এখন যে ভাবে সন্তান নেয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করছে। অদূর ভবিষতে হয়তো এই প্রজনন প্রক্রিয়ার প্রয়োজনও পরতে পারে, পুরুষের সন্তান প্রসবের ব্যাপারটি।
কৃত্তিম কিডনী এবং রক্ত উৎপাদন চলছে। কৃত্তিম ভাবে যদি রক্ত এবং কিডনী পাওয়া যায় অসুস্থ মানুষের জন্য তবে অনেক মানুষকে অপেক্ষায় থাকতে হবে না বছরের পর বছর একজন ডোনারের জন্য। আবার টাকার অভাবে বিক্রি করতে হবে না সুস্থ একজন মানুষের কিডনী বা রক্ত। অনেক আবেগে ভাসতে হবে না মানুষকে। চুরি হয়ে যাবে না মানুষের কিডনী ব্যবসার অনৈতিক চক্রের কাছে।
আমরা এখনও অতটা মানবিক হয়ে উঠতে পারিনি।
নিজেদের দেহের যে অঙ্গ, মরে যাওয়ার পরে অন্য মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করতে পারে তা নিয়েই আমরা কবরে বা দেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখি। কখনো অন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য দান করে যাই না অতি অল্প পরিমাণ মানবিক কিছু মানুষ ছাড়া এই সিদ্ধান্ত নেন না তেমন কেউ।
আর সুস্থ সবল মানুষকে নানা রকম আক্রমণে অসুস্থ বিকলাঙ্গ করে ফেলার মধ্যেও কারো বেশ পৈশাচিক আনন্দ মিলে। যুদ্ধ, মারামারি, হিংসা হানাহানীতে যত সুস্থ মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক কম মানুষ কাজ করছেন মানুষকে সুস্থ রাখার জন্য। এবং সুযোগ পাচ্ছেন সুস্থ হওয়ার। তবে একটা মজার বিষয়। অনেক মানুষের প্রচুর অর্থ আছে সেই অর্থে তারা বদলে ফেলে নিজের শরীর, চেহারা প্লাসটিক সার্জারি করে সুস্থ সবল থাকার পরও। শুধু নিজেকে নিজের পছন্দ না হওয়ার জন্য। বা অন্যের কাছে নিজেকে আরো আকর্ষণীয়করে দেখানোর জন্য।
কী ভয়াবহ সিলি একটা ধারনা! এই ধারনা মানুষ বহন করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে। অন্যের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনের। কত ব্যয় অর্থ এবং সময়ের এজন্য। অথচ তারা দান করে না একজন অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করার জন্য কিছু অর্থ।
তবু ভালো কিছু মানবিক মানুষ এখনো মানুষের জন্য কাজ করছেন। তাদের সম্মান জানাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:৩৯