সময় রাত সাড়ে বারোটা। কিন্তু আমার বাড়িতে সেটা সব সময় সন্ধ্যা রাত। আমরা বেশ আনন্দে গল্প করছিলাম। সাথে চলছিল কিছু কাজ। বেক করার জন্য প্রি হিট হচ্ছে ওভেন। আর শেষ মশলা পাতি দিয়ে ওভেনে দেয়ার জন্য তৈরি করছিলাম বেকিং ট্রে। তখন বিদ্যুৎ চলে গেলো।
বাইরে ঝড় বৃষ্টি নাই । আজ সারাদিন অনেক সুন্দর ছিল আবহাওয়া। মাঝরাতে আকাশে শুক্লপক্ষের চাঁদের জোছনা এখনও মাঠে বিছিয়ে থাকা কিছু বরফের শুভ্রতায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখছে মুগ্ধতায়।
এমন সুন্দর রাতে বিদ্যুত চলে যাওয়ার কোন কারন খুঁজে পেলাম না। বাড়ির সব কানেক্শন ঠিকঠাক আছে। হঠাৎ করে কি হলো। মিনিট পাঁচেক পর বিদ্যুৎ আসল কিন্তু সাথে সাথেই আবার চলে গেলো। মেশিনগুলো যেমন ঝলসে উঠলে এই আসা যাওয়ায় তা দেখে ভয়ই পেলাম। সব ফিউজ হয়ে গেলো নাতো আবার।
এবার বিদ্যুৎ গেলো তো গেলোই আর পাত্তা নেই। হাতের কাজগুলো গুছিয়ে রাখলাম মোবাইলের টর্চ জ্বেলে। ঘর ভরতি হয়ে গেলো আলোর বন্যায়। কি যে সুন্দর প্রকৃতির আলো কিন্তু কাজের জন্য এখন সব কাজেই বিদ্যুতের উপর ভরষা করতে হয়।
চাঁদনীর সাথে মিতালী করে গল্প করে কিছু সময় কেটে গেলো অপেক্ষায়।
টুইটারে খবর পাওয়া গেলো প্রকৃতিক বিপর্যয় নয়। গাড়ি চালিয়ে একজন উঠে গেছেন বিদ্যুতের খুঁটির উপর। তাতেই হয়েছে এই বিপর্যয়।
দু তিনটি শহরের মানুষের ঘরে নেমে এসেছে অন্ধকার। বিদ্যুৎ কর্মিরা ছুটে গেছেন ঘটনাস্থলে। কাজ শুরু হয়েছে। তবে কিছুটা সময় তো লাগবেই ঠিক হতে।
এদিকে ঘরে উত্তাপের ব্যারোমিটার দ্রুত নেমে যাচ্ছে নিচে। শীতকাল চলে গেলেও শীত শেষ হয়নি এখনও। যদিও খানিকটা উত্তপ্ত এখন ধরনী। তাও সহনশীল নয় ঘরের উত্তাপ ছাড়া।
বিদ্যুৎহীন সব কাজ বন্ধ। পানির ট্যাঙ্কে যতক্ষণ পানি আছে ব্যবহার করা যাবে তারপর পানিবিহীন হয়ে যাবে বাড়ি। গরমপানিও পাওয়া যাবে না একটু পরে। অতপর লেপের নিচে উষ্ণতায় ঢুকে যাওয়া হলো তাড়াতাড়ি সব কাজ বাদ দিয়ে।
ভোররাতের দিকে বিদ্যুৎ সচল হলো। ঘুমের মধ্যেই নানারকম শব্দ শুনতে পেলাম যন্ত্রপাতির। কিন্তু সাথে নাকে এলো তীব্র গন্ধ কিছু পুড়ে যাওয়ার।
মোক্ষম বস্তুটি পুড়ে গেছে, বিদ্যুতের এই উল্টাপাল্টা ব্যবহারে। অত্যাবশ্যক এই বস্তুটি হিটিং সিস্টেমের মোটর। কি সুন্দর অবস্থা হলো। আমাদের আনন্দ সময়ের। যারা বাড়িতে এসেছিল বেশ কিছুদিন থাকব এক সাথে তারা এই ঠাণ্ডায় কি ভাবে থাকবে তাই সকাল হতে না হতেই তাড়াতাড়ি, ঘর আরো ঠাণ্ডা হওয়ার আগেই চলে গেলো। আর পুরো চারদিন সব কিছু বন্ধ, গুড ফ্রাইডে ইষ্টার মান্ডের লং উইকেন্ডে যত সব কাজ করার পরিকল্পনা ছিল তার অনেকটাই থেমে গেলো আবার। মোটর কেনার সুযোগ নেই চারদিনের আগে।
তারপর সব ঠিক ঠাক হলে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। যদিও অন্য বাড়িতে গিয়ে থাকার আমন্ত্রণ আছে কিন্তু আমার নিজের বাড়িতে থাকতেই সাচ্ছন্দ। সাথে পোর্টেবল হিটারে আমার ঘরের গাছগুলোকেও একটু উষ্ণতা দিতে হবে মাঝে মধ্যে। বসন্তের আভাস পেয়েই কিছু গাছ কি সুন্দর ফুল ফুটিয়ে যাচ্ছে, তাদের দেখাশোনার জন্যও আমার থাকতে হবে বাড়িতে ।
কোথায় কত দূরে একজনের উল্টাপাল্টা গাড়ি চালাবার সাধ হলো মাঝ রাতে তার ভোগান্তি কতজনে কতভাবে ভোগ করছে,।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ২:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



