
ফুলগুলো ড্যাফোডিল হঠাৎ উষ্ণতায় আকর্ণ হাসিতে মেতে উঠেছিল। একটা দিন খুব হাসল। সাধারনত তাদের হাসি শুরু হলে মাস ধরে চলতে থাকে। তারপর অন্য ফুল চলে এলে তারা আস্তে আস্তে চলে যায়, যেন অভিমান করে আবার আসবে আগামী বৎসর সবার আগে একা একা এমনটা ভেবে।
এদের নাম নার্সিসাস যারা নিজেকে খুব ভালোবাসে। তারা অন্যদের সাথে নিজেকে ভাগ করতে চায়না। নিজের জন্য ভালোবাসা পুরোটাই চায়। তাই হয় তো সবার আগে একা ফুটে উঠে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয় ।
কিন্তু এবার হলো কি, তাদের ফুটে উঠার দিনেই বিকাল না হতেই আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। এ সময়টা তো বৃষ্টিরই দখলে থাকে। একটা কথা আছে এপ্রিল শাওয়ার ব্রিং মে ফ্লাওয়ার। কিন্তু এপ্রিলে বৃষ্টি না হয়ে শুরু হলো কাঠ ফাটা গরম। চৈত্রের ফাটা মাটি চৌচির অবস্থা। বরফগলা জল শুকিয়ে খটখটে জমিন খুব দ্রুত। একে তো বরফপাত ছিল না তেমন তার উপর বৃষ্টি নেই। বরফ সরে যেতেই মাটি হয়ে গেলো খটখটে শুকনো। পরদিন তুমুল তুষারপাত আর ঝড় হাওয়া, চব্বিশ সেলসিয়াস থেকে এক লাফে মায়নাস ছয়ে নামল তাপমাত্রা।
ফুলগুলার কি আলুথালু অবস্থা। মাথা সোজা করেই রাখতে পারছে না। একে বরফের ভাড় তার উপর বাতাসের ঠেলা ধাক্কা। রাতে বাড়ি ফিরে দেখলাম তাদের নেতিয়ে পরা অবস্থা করুণ ভাবে কাহিল যেন বিশাল একটা অসুখের ধাক্কায় মাথা তুলে দাঁড়াবার অবস্থা নেই তাদের। মন খারাপ হলো খুব এইবার তাদের সাথে বেশিদিন থাকা হলো না।
আজ তৃতীয় দিন দুদিনের ঝড় তাণ্ডবের ধকল কাটিয়ে দেখি আবার হাসছে রোদের সাথে।
তাদের ফোটার কথা ছিল আরো দিন দশেক পরে নিয়ম মতন। সবাই ফুটেনি। যারা এখনও ফুটেনি আস্তে আস্তে প্রসেসিং করেছে নিজেদের তারা হয়তো বেশ কিছুদিন ধরে থাকবে। তবে দ্রুত যারা ফুটে উঠেছে তারা প্রকৃতির ধকলটা ভালোই সইল ।
প্রকৃতির পরিবেশ বদলে যাচ্ছে । বদলে দিচ্ছি আমরা নানা ভাবে।
আমরা নানা ভাবে বদলাচ্ছি প্রকৃতির নিয়ম। এখনে একটা বড় কারণ দ্রুত পানি সরে যাওয়ার জন্য টাইলিং সিস্টেম খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিন দিন।
এখানে কৃষকরা ভয়াবহ রকম বড়লোক। তাদের কাছে হাজার বর্গ কিলোমিটারে টাইলিং করা কোন ব্যাপার না। মাত্র পনেরদিন সময় বেশি পাওয়ার জন্য এই টাইলিং দিয়ে ভরে ফেলা হচ্ছে ক্ষেতি জমির নিচ।
টাইলিং বিষয়টা অনেকর কাছে অপরিচিত হয়তো এব্যাপারে আরেকটু বলি। কয়েক মাস ধরে তুষারপাত হয়ে সেই বরফ মাঠ জুড়ে শুয়ে থাকে। তারপর এপ্রিল জুড়ে বৃষ্টি। মাঠের মাটি থকথকে কাদা কাদা হয়ে থাকে। পা দিলেই দেবে ডুবে যেতে হয়।
এখানে কৃষকরা তো এখন আর গরু, ঘোড়া বা নিজেরা লাঙ্গল দিয়ে মাঠ চাষ করে না। ভাড়ি ভাড়ি ট্রাক্টর নামিয়ে দিন কয়েকের মধ্যে হাজার একর ক্ষেত চাষ করে ফেলে একাই মেশিনের সাহায্যে। আবার কিছু মেশিন আছে কোন মানুষের প্রয়োজন পরে না। মাঠে নামিয়ে ছেড়ে দিলেই চলে। কাজ শেষ করে ফেলে একাই।
তবে এই ভাড়ী মেশিন গুলো মাঠে নামানোর জন্য মাটির এই ভিজা ভাব দূর হওয়ার জন্য প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়। সে সময়টা হয়তো পনের বিশদিন বেশি লাগে।
কিন্তু কৃষকরা সারা বছর বসে থাকে বছরের এই কয়েকটা মাস কাজ করে। তাই এই কয়েক মাসের কাজের জন্য তারা পনের বিশদিন বেশি অপেক্ষা করতে চায় না। তাই দ্রুত মাটির নিচের পানি সরিয়ে ফেলার জন্য ব্যবহার করা হয় টাইলিং। মাঠ জুড়ে বিছিয়ে দেয়া হয় মোটা মোটা পাইপ। যে পাইপের ভিতর দিয়ে পানি সরে যায় নিচু ড্রেনিং সিস্টেমে। কৃষকরা মাঠে নেমে পরতে পারে দ্রুত। ফসল ফলে দ্রুত ফসল উঠানো হয় আগে। অনেক কৃষক শীতের ফসল লাগিয়ে দেয় মাঠে আবার অনেকে ক্ষেত প্রস্তুত করে রাখে পরের বছরের জন্য।
এতে কিছু সুবিধা পাওয়া যায় হয়তো। কিন্তু বিশাল একটা অপকার হচ্ছে । যে পানি প্রাকৃতিক ভাবে মাটির নিচে থাকার কথা তা চলে যাচ্ছে ড্রেনিং সিস্টেমের মাধ্যমে অন্য কোথাও। গ্রীষ্মকালে পানির স্তর এত নিচে নেমে যায় গত কয়েক বছর ধরে দেখছি। আগে তেমনটা কখনো হয়নি।
এবছর তো পানির স্তর এখন এই বসন্ত কালেই অনেক নিচে। গ্রীষ্মকালে কি হবে কে জানে। সাধারনত এ সময় বন্যা হয়। অনেক বাড়ির বেইজমেন্ট ডুবে যায়। এবার তেমন কিছু শুনিনি। বসন্ত এলে আমার বেজমেন্টে পানির পাম্পটা অটোমেটিক চালু হয়। একটা উচ্চাতায় পানি পৌঁছালে পাম্প করে সেটা বের করে দেয় যেন বেসমেন্টে বন্যা না হয়। এবার তেমন কোন শব্দ পেলাম না পাম্পের। কারন পানি সেই সীমা অতিক্রম করেনি।
যে সব হ্রদে মানুষ মাছ ধরত। হাঁস, পাখিরা জলকেলি করত সে সব লেকের জল একদম শুকনো থাকে গ্রীষ্মকালে গত কয়েক বছর ধরে দেখছি। আর একটা বিষয় ঘটে, সিঙ্কহোল দেখা দেয় অনেক। এখানে ওখানে হঠাৎ মাটি দেবে বিরাট বিরাট গর্ত তৈরি হয়।
একদিকে লবনাক্ত পানিতে ডুবে যাচ্ছে পৃথিবীর অনেক অংশ অন্য দিকে সুপেয় পানি কমে যাচ্ছে পৃথিবীর অনেক অংশে। এর কারন মানুষ বেশি সুবিধা ভোগ করতে যেয়ে প্রকৃতিকে নানা ভাবে বাঁধা প্রাপ্ত করছে।
উষ্ণতা বাড়ছে পৃথিবী জুড়ে। খাল নদী ভরাট আর গাছ বিলীন পরিবেশে অক্সিজেনের অভাব। কিন্তু আমরা আধুনিক নগরায়ন পরিবেশে থাকতে ভালোবাসি। গ্রামীন খোলামেলা মাটির ঘর আর পছন্দ নয় আমাদের। আকাশ চুস্বি অট্টালিকায় থাকার সুখই আলাদা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




