somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জবানামা ( পর্ব ২ )

০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি নেট ।

জবার এক্সারসাইজ প্রায় শেষ পর্যায়ে একটু সোফায় বসে রেস্ট করছে। ওর মা রাহেলা বেগম সে মুহুর্তে এসে বলতে শুরু করল, আচ্ছা, এইবার এই নাচানাচি কুদাকুদি থামা আর সাউন্ড কমা। এত জোরে কেউ গান শোনে আর এসব কি গান? কাঁটা লাগা!

জবা হাসতে হাসতে বলে এগুলা তুমি বুজবা না সুতরাং তোমার শুনেও লাভ নাই। ওর মা বলল, আচ্ছা তুই বুঝলেই হইব। তোর শেষ হইছে?হইলে যা তো পাশের বাসার ভাবিকে এই শুঁটকি মাছের ভর্তাটা দিয়ে আয়।

জবা, না, মা, তুমি যাও। দেখছ না আমি ঘেমে কি অবস্থায় আছি। এ অবস্থায় যাওয়া যায়?রাহেলা বেগম একবার তাকিয়ে বলতে লাগলো ঠিক আছে আরও নাচতে থাক গান শোন মায়ের কথার দাম নাই। রাগ মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। জবা পিছন পিছন ডাকতে লাগলো ও মা শোন একটু দাঁড়াও। রাহেলা বেগম দাঁড়ালেন না। ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে ভর্তার বাটি টা নিয়ে নিলেন। জবার ঘরের কাছে এসে বললেন সদর দরজাটা লাগিয়ে যা। জবা আসছি বলে হাঁক দিলেন। ওর মা দরজাটা একটু চাপিয়ে দিয়ে পাশের বাসার কলিং বেল চাপলেন। জবা এসে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে কিচেনে চলে আসল এক গেলাস লেবুর শরবত নিবে বলে এমন সময় কলিং বেলের শব্দ। জবা বলল, আসছি। জবা দরজা খুলে অবাক একি! ওর মা তো নয়। ওর মামাতো ভাই রাতুল দাঁড়িয়ে। জবা দরজা খুলে রাতুল কে দেখে দ্রুত ঘুরে গেল। একেতো ঘেমে সুতির জামা গায়ের সাথে লেপটে গেছে তার উপর বুকে নাই ওড়না!

রাতুল বলতে লাগলো ভালো আছো জবা? জবা সে কথার উত্তর না দিয়ে পিছন ঘুরেই রাতুলকে বলতে লাগলো আসুন ভিতরে। বসার ঘরে বসুন। আমি আসছি। রাতুল চোখের পলক না ফেলে শুধু জবা কে দেখছে আসলে মুলত জবার শরীর গিলছে!

রাতুল চুপ করে দাঁড়িয়ে বসার ঘরে চলে গেল।  জবা দ্রুত ওর ঘরে যেয়ে ওড়না দিয়ে ভালো করে ওর শরীর ঢেকে পাশের বাসার কলিং বেল চাপতে লাগলো। পাশের বাসার কাজের বুয়া দরজা খুলতেই জবা দ্রুত জিজ্ঞেস করল মা আসছে  তাড়াতাড়ি ডেকে দাও তো! কাজের বুয়া বলতে লাগলো আসেন আফা, ভিতরে আসুন।

জবা দ্রুত না বলে দাঁড়িয়ে রইল। একটু পর জবার মা এসে জিজ্ঞেস করল কিরে কি হইছে? জবা বলতে লাগলো রাতুল ভাইয়া আসছে। জবার মা হাসি দিয়ে বলল,  ও রাতুল! এই বলে পাশের বাসার ভাবিকে বিদায় জানিয়ে জবার সাথে ঘরে এসে দেখে রাতুল বসার ঘরে বসে আসে। ঘেমে গেছে ফ্যান চললেও লাভ নাই। যা গরম!

রাতুল বসা থেকে উঠে সালাম করল। জবার মা রাগের সহিত বলতে লাগলো এতদিন পরে এলে। আমাদের কথা মনে পড়ল? আর তুমি একা যে?  রাতুল বলল না, না, তা নয় আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম। মা নানুর বাড়ি গেছে। বাবা আরও ব্যস্ত বাজার এর দোকান ফেলে আসে কেমনে? জবার মা জিজ্ঞেস করল তা কবে ইটালি থেকে ফিরলে? এই তো গত সপ্তাহে। আসতাম আগেই কিন্তু একটু ঝামেলা ছিল মানে হঠাৎ করে শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিল। জবার মা চিন্তা মুখে বলতে লাগলো কি বলো? কি হইছিল? রাতুল বলল, এই বদহজম! কিছুই হজম হচ্ছিল না। রাতুল ওর পাশে রাখা মিষ্টির প্যাকেট আর উনাদের জন্য আনা গিফট গুলি জবার মায়ের হাতে দিলেন। উনি বলতে লাগলেন এ মা!এতকিছু কি এনেছ? রাতুল বলতে লাগলো এই সামান্য কিছু আর কি! তেমন কিছুনা।

জবার মা ওসব নিয়ে বলল, তুমি বস। আমি আসছি। এই বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন এক গাল হাসি মুখে ধরে। জবাকে দেখল কিচেনে দাঁড়িয়ে লেবুর শরবত খাচ্ছে। ওর মা বলতে লাগলো। যা তো ঐ প্যাকেট থেকে মিষ্টি গুলি আর কিছু বিস্কুট আর এক গেলাস শরবত রাতুল কে দিয়ে আয় ছেলেটা ঘেমে শেষ। 

ছেলেটা কেমন সাহেব হয়ে গেছে না? গলায় কত মোটা সোনার চেইন দেখছত! এই দশ বছরে মেলা টাকা কামাইছে কাঁচা বাড়ি ভেংগে তিন তলা করছে। ঢাকা বসুন্ধরা মার্কেটে একটা দোকান আছে শুনছি। কত কষ্ট করে ইটালি গেল। সেই তুরস্ক, গ্রীস ঘুরে পরে ইটালি। পাঁচ বছর পর পেপারস পাইছে। জবা হু হা কিছু বলল না শুধু শুনে গেল।শুধু বলল, মা, আমি গোসল সেরে আসছি। তারপর ঠিক আছে এই বলে চলে আসল। জবার মা কিছুটা অবাক হয়ে গেল। মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। জবা বেরিয়ে যেতে রাহেলা বেগম ফ্রিজ থেকে দ্রুত মাংস বের করলেন।

জবা বাথরুমের দরজায় ছিটকিনি দিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিল। পানি খুব গরম। গ্রীষ্ম কালে এই হয় পানির ট্যাংক সহ গরম হয়ে পড়ে পানিও। এমনিতে জবা এক্সারসাইজ করছে তারউপর গরম পানি শরীর সিদ্ধ হওয়ার যোগাড়। জবা ভিজে কাপড়ে একটু অপেক্ষা করল পানি যদি ঠান্ডা আসে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পানিতে হাত দিয়ে দেখল কিছুটা কম গরম! হালাল সাবান শরীরে মাখছে। জবা চোখ বুজে আছে দেখতে পাচ্ছে সেই কোন এক শীতের রাত জবার বয়স তখন আর কত দশ। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। রাতুলদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল কয়েকদিনের জন্য। রাতুলদের তখন কাঁচা ঘর। মাত্র দুটি রুম। রাতুল তখন দশ ক্লাসের ছাত্র।

এক খাটে শুয়েছিল ওর মা রাতুল আর জবা। রাত গভীরে রাতুলের কিশোর হাত ধীরে ধীরে জবার শরীরের বিশেষ অংগ গুলি ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘষে যাচ্ছে। রাত গভীর হচ্ছে টিনের চালে শিশির জমছে। বড়ই গাছের পাতা খসে পড়ছে। খুব ঘন কুয়াসা বাইরে জমছে। সবাই ঘুমে।

মায়ের নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে জবা। লজ্জায় কাঁদছে জবা। কেউ দেখছে না কেউ না। জবা হালাল সাবান দিয়ে জোরে জোরে সেই দূষিত স্মৃতি ধুঁয়ে মুছে সাফ করতে চাইছে কিন্তু পারছে না!চোখ ভিজে যাচ্ছে। শাওয়ার এর জল চোখের জল দুইটাই গরম। একটা মোটর এর আরেকটা শরমের !
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৩৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×