somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোধ !

০৩ রা মে, ২০২২ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি নেট ।

অপু কিছুক্ষণ এই চ্যানেল সেই চ্যানেল ঘুরে বিরক্ত হয়ে টিভি অফ করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। ওদের বাসার উপর ছায়া পড়েছে। সুর্য এখন বিপরীতে তবুও তেজ কমে নাই। বাইরেও বাতাস তেমন নাই। যাও বাতাস গায়ে লাগছে মনে হয় কোন চুলার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর তার হাওয়া গায়ে লাগছে। মানে গরম হাওয়া !

এমনিতেই ঢাকায় তেমন বাতাস থাকে না। সারাক্ষণ তিন, চার, হাত পাখা অথবা পয়সা পাতি থাকলে এসি চালু রাখতে হয় অন্তত গরমের সময়টুকুতে। এসি কেনা এবং পালবার মতন সামর্থ্য আছে অপুর কিন্তু সারাক্ষণ এসির ভেতর থাকতে ওর ভালো লাগে না।

রান্না ঘরে ওর মা কি যেন রান্না করছে যার সুঘ্রাণ বারান্দা থেকেও টের পাচ্ছে। আজ ঈদের দিন তাই গলির আনাচে-কানাচে খুব উঁচা ভলিউমে হিন্দি গান চলছে! তাও কি সব গানের কথা ! যার বেশির ভাগ অশ্লীল শব্দ আর যদিও প্রেমের গান চলছে কিন্তু ওতে ইংগিত শুধু শরীর যৌনতার!

মাঝে মাঝে ওর মনে হয় ভারতের কোন রাজ্যে বাস করছে ! এদেশের মানুষের আনন্দ প্রকাশের মাধ্যম বদলে গেছে। বিয়া-শাদী থেকে সব ধরনের উৎসবে হিন্দি গান ছাড়া বাংলাদেশীদের পেটের ভাত হজম হয় না। কেমন জানি ভেতর বাহির পুটপুট করে! এরাই আবার ভাষা দিবসে শহীদ মিনারে কে কার আগে যাবে তাই নিয়া ঠেলাঠেলি করে। আর গায়ে গতরে লাল সবুজ টি শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শাড়ী, ব্লাউজ এর ছড়াছড়ি দেখা যায় রাস্তা থেকে শুরু করে টিভির পর্দায় !

মানে দেশপ্রেম পোষাকি হয়ে গেছে ! এর পিছনে অবশ্য রাজনীতি আছে। এ দেশে এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা চালু হয়নি। হবেও না! এরা জনতাকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে সেই তক্তা দিয়া দেশে বিদেশে বাড়ি করে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে !

এসব হাবিজাবি চিন্তা মাথায় আসছে আবার বের হচ্ছে অনেকটা সদরঘাটের লঞ্চের মতন আসছে যাচ্ছে ফারাক এতদূর লঞ্চের নির্দিষ্ট গন্তব্য আছে আর এ আজাইরা চিন্তার কোন গন্তব্য নাই ! প্রায় মিনিট দশ হলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে এর মধ্যে আলুর মতন সিদ্ধ হয়ে গেছে অপু ! খালি নুন, তেল আর মরিচ দিয়ে ঢলা দিলেই " অপু ভর্তা " হয়ে যাবে !

অপু পিছন ফিরে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো ওর মা কখন যে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন টের পায়নি।  অপু এতটাই চিন্তায় ডুবে ছিল। মায়ের হাসিমাখা মুখ।

মা বলল, কিরে আজ বাইরে গেলি না ? অপু বলল, যা গরম ! তাছাড়া কই যামু? মা বলল, কেন? তোর বন্ধুদের বাসায় ? সব কটি বিয়ে করে বউ-বাচ্চা, নিজের বাড়ি, শশুড় বাড়িতে দৌড়াইয়া কুল পায়না বলল অপু।

তাছাড়া আড্ডা জমার শুরুতে ভেংগে যায়। এই উঠি রাত হয়ে গেছে তোর ভাবী রাগ করবে, বাচ্চার স্কুল, সকালে অফিস ইত্যাদি বাহানা প্রায় সর্দি কাশির মতন লেগে আছে। সর্দি কাশির তবু এলাজ আছে এই বাহানার কোন এলাজ এখনো আবিষ্কার হয়নি। অপুর চেহারায় বিরক্তির চিহ্ন স্পষ্ট ।

এমন সময় ওর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে শব্দ হলো কয়েকটা। মোবাইল অন করে দেখে লিখা " ঈদ মোবারক  " আর কিচ্ছু না। ভালো মন্দ আর কিছুই জানতে চাওয়া হয়নি। মা প্রশ্ন করে জানতে চাইল , কে? অপু বলল, শেফালী !

মা একটা হাসি দিয়ে বলল, ও ! দাঁড়া আসছি। অপু কি লিখবে অনেক ভেবে শুধু লিখল " ঈদ মোবারক, সুস্থ থাকো আরও সুখী হও....! "

এর ভেতর মা এসে বলল, এই নে তোর একটা গিফট ! অপু বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, গিফট ! আমার জন্য । মা বলল, খুলে দেখ কি আছে ? অপু কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে তবুও খুলে দেখে একটা আকাশী রং এর পাঞ্জাবি আর একটা হোগো বস এর পারফিউম শিশি।

অপু মাকে জিজ্ঞেস করলো, মা তুমি কেন এসব কিনতে গেলে ? মা একগাল হেসে বলল, আরে আমার অত সময় কই এই দোকান সেই দোকান ঘুরে তার উপর দর দাম ঠিক করে এসব কিনা !  তার আগে বল, পছন্দ হয়েছে ? অপু বলল, হুম।  বুঝলাম সব। তা কে দিয়েছে ? মা আবার হাসি দিয়ে বলল, শেফালী !

একদিন দুপুর বেলায় অপু ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ ঘুম ভেংগে গেল মোবাইলের আওয়াজে। বিরক্ত হয়ে রেখে দিল। অপু দেখে অচেনা নাম্বার। কিছুক্ষণ পর আবার। এভাবে কয়েকবার। বিরক্ত হয়ে যেই ফোন অফ করতে যাবে অমনি টেক্সট ম্যাসেজ " প্লিজ ফোন ধর, কথা আছে। " অপু ভাবলো, কে ?  তাও তুমি সম্বোধন ! কেউ ফাজলামি করছে না তো ? প্রেমের ফাঁদ কি ? এসব হাবিজাবি গিলে খেয়ে ফেলল মোবাইল রিং টোন। ধরতেই ওপাশ থেকে একটা সেক্সি নারী কন্ঠ !

হ্যালো, কেমন আছো ?
অপু ঃ কে?
চিনতে পারছো না। গলার স্বর কি বদলে গেছে ?
অপু মিনিট খানেকের ভেতর ধরতে পারলো আর কেউ নয় অপুর প্রাক্তন শেফালী !

যে কিনা বর্তমানে নিউইয়র্কের জ্যামাইকাতে আছে এক দশক ধরে। স্বামী, বাচ্চা সংসার এসব নিয়ে খুব ব্যস্ত।

অপু ঃ চিনে কি লাভ ?
শেফালী  ঃ ঘাড়ের রগ এখনো ত্যাড়া দেখছি।
অপু ঃ তাই নাকি ! আরো বহু কিছু ত্যাড়া হয়ে গেছে !
শেফালী  ঃ বিয়ে কর ঠিক হয়ে যাবে বলেই হাসি...
অপু ঃ নিজের চড়কায় তেল দাও। যদিও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধে দাম বেড়ে গেছে !
অপু ঃ নাম্বার কিভাবে পেলে?
শেফালী ঃ বুদ্ধি ও দেখি কমে গেছে ? এ বাজারে যোগাড় করা ব্যাপার ?
অপু ঃ অনেক কিছুই কমে গেছে খালি পেট একটু বেড়ে গেছে।
শেফালী ঃ হা হা হা...  উহা ও কমে যাবে বিয়ে কর একটা।
অপু ঃ ঘটক শেফালী !
শেফালী ঃ সামনের শুক্রবার পর্যন্ত দেশে আসি। দেখা করবে ?
অপু ঃ না, ইচ্ছে নাই। কাজ আছে। খুব রুক্ষতার সহিত। 
শেফালী  ঃ বাহবা! এখনো চ্যাত আছে দেখছি। শোধ নিবে না ?
অপুঃ কিসের শোধ ?
শেফালী  ঃ এই যে তোমাকে বিয়ে না করে ডিভি লটারি বিজেতাকে বিয়ে করলাম।
অপু ঃ তুমি হ্যাপি হতে চেয়েছো বাড়ি - গাড়ি চেয়েছো যেমন টা সবাই চায়। সবার মতন বলেই শোধ নিতে চাই না। রাখছি.... 
শেফালী ঃ অপু, প্লিজ.... একটু শোন, আমি হ্যাপি না। অর্থকড়ি থাকলে সবাই সুখী না। যদি সম্মান ই না থাকে! আমার স্বামী একটা রোবট ! শুধু ডলার চিনে। এসব বলতে বলতে শেফালীর গলা ধরে গেল।
অপু ঃ তা এখন আমি এসে কি তোমার সম্মানের জন্য আন্দোলন করব? ওসব হিন্দি ড্রামা রাখো। আর কখনো ফোন করবে না প্লিজ !

শেফালী হাউমাউ করে কেঁদে দিল। অপু, প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও।

অপু ফোন কেটে দিয়েছে। শেফালী স্বামীকে  ডিভোর্স দিয়েছে এক মাস হলো। একমাত্র ছেলে বোর্ডিং স্কুলে আছে।

শেফালী ভীষণ একা। এত এত হাজার হাজার নক্ষত্রের ভেতর শুকতারা যেমন একা ঠিক তেমন।দেখলেই টের পাওয়া যায় খালি চোখে !

অপুর গায়ে শেফালীর দেয়া আকাশী রং পাঞ্জাবি ! মায়ের চোখে নোনা ছবি। মা অপুর কাছে এসে হাতটা উপরে তুলে আংগুলে একটা কামড় দিয়ে দিল। অপু আউচ ! কি করছ মা ? মা নোনা চোখে বলল, যাতে কারো নজর না লাগে ! অপু মা তুমিও ....!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২২ রাত ৯:৩২
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×