সকাল আট টার আগে যদিও কখনও ঘুম ভাংগে না কিন্তু আজ কেন যেন সকাল ছয়টা না বাজতেই ঘুম ভেংগে গেছে এমনকি শুয়ে থাকতেও ইচ্ছা করছে না ... বারান্দায় এসে দাড়াতেই মৃদু বাতাসে একটু একটু ঠান্ডা লাগতে শুরু করলো কিন্তু বেশ ভালই লাগছে... এক কাপ চা হলে পরিবেশ টা জমে উঠত কিন্তু চা দেবে কে, এত সকালে .... হঠাৎ রীধির কথা মনে পড়ে গেলো ... সে ও কি আমার মত বারান্দায় দাড়িয়ে আমার কথা ভাবছে এখন, কে জানে?
আজ দুই দিন হয়ে গেলো রীধিকে ওর বাপের বাড়ি রেখে এসেছি ... আসার সময় খুব কষ্ট হচ্ছিল জানি না ও ধরতে পেরেছিলো কি-না, তবে ওর যে খুব কষ্ট হচ্ছিলো সেটা আমার নজর এড়ায় নি ... আসার পর থেকে প্রতিটা মূহুর্ত ওর মায়াবী মুখটা চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে....সেই প্রথম দেখাতেই বিয়ে, কিছুটা জোর করেই, মা আর ছোটবোন দুষ্টুর উপর অনেকটা অভিমান নিয়ে ; তখন পরিবেশটা যদিও অনেক জটিল ছিল কিন্তু এখন সহজ ভাবে ভাবতেই ভাল লাগছে.... এত কম সময়ে একটি ললনা যে আমাকে এতটা ভাবিয়ে তুলবে কল্পনাও করতে পারিনি ...
গতকাল খাবার টেবিলে ভেবেছিলাম মা, রীধিকে আনার ব্যাপারে কিছু বলবে... কিন্তু না, আমার ধারনা ভুল ছিল ... মা এই ব্যাপারে কিছু তো বলেই নি বরং তার ব্যবহারে মনে হলো, সে আমার উপর যথেষ্ট রেগে আছে...আমার উপর অভিমান করার কারন ঐ একটাই, যে আমি রীধিকে স্ত্রীর যথাযথ মর্যাদা দেইনি ...যদিও রীধি কাউকে কিছু বুঝতে দেয় না কিন্তু মা ঠিকই বুঝে গেছে... ছোটবোন দুষ্টুও আগে অনেকটা সময় আড্ডা দিত আমার সাথে কিন্তু এখন সে তার ভাবীকে নিয়ে ব্যস্ত ... প্রায়ই দেখা যায় আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে ভাবীর সাথে ফোনে কথা বলতে....
রীধি চলে যাবার পর থেকে বাসাটা কেমন শান্ত হয়ে গেছে... কয়েকদিনেই সে বাড়ির সবার মন জয় করে ফেলেছে নিজ ব্যবহারে ... একটা মেয়ে যে এত সহজে, নিজেকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে তা রীধিকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না .....
গোসল করার পর চুল শুকানো টা বিরক্তিকর কাজগুলোর মধ্যে একটা যা রীধি এখন করছে ....আজ সকাল থেকেই বার বার বিষম খাচ্ছে রীধি .. কে জানে, কে তার কথা এত ভাবছে... হঠাৎ সামায়নের কথা মনে পড়ে গেলো রীধির, আচ্ছা ও তো ভাবছে না আমার কথা .... মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো ওর ....অল্প সময়েই রীধি,সামায়নকে খুব ভালবেসে ফেলেছে..ওকে প্রথম দেখাতেই রীধির মনে হয়েছে, এই লোকটাকে নিয়েই সে তার বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবে অনেকটা সুখে, অনেকটা ভালবাসায় ....
সামায়নও যে ওকে খুব ভালবাসে সেটা রীধির অজানা নয় ... বিয়ের প্রথম রাতে ও যে বাজে ব্যবহার টা করেছিল, সেটা যে ও মন থেকে করেনি সেটা বুঝতে পারাটা রীধির কাছে কঠিন কিছু নয় .... "" জানো সামায়ন, আমি খুব ভালবাসি তোমাকে খুব!!! জানি না তুমি কেমন আছো কিন্তু খুব জানতে ইচ্ছা করছে। তুমি আমাকে কখনও ছেড়ে যাবে না তো ?"" -এইসব ভাবতে ভাবতেই রীধির মনটা ভারী হয়ে গেলো ... বারান্দা থেকে ঘরে এসে রবি-ঠাকুরের গানটা ছেড়ে দিলো ....
-------------বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিয়ো----------
------------মনের মাঝেতে চিরদিন তাকে রেখে নিয়ো---------
--------------ভুলো না তাকে ডেকে নিতে তুমি --------------
অতি মনোযোগ দিয়ে গানটা শুনছে রীধি আর ভাবছে গানের কথা গুলো এত সুন্দর হয় কি করে........
অফিসে এসে কাজে একদম মনোযোগ দিতে পারছি না ....রীধির সাথে কাটানো ছোট ছোট সুখস্মৃতিগুলো বার বার আমাকে ভাবিয়ে তুলছে...সেই ট্রেন থেকে নামার সময় ওর হাতের স্পর্শ, রিকশায় পাশাপাশি বসে অনেকটা সময় পার করা, ওর কন্ঠের গান, সব কিছু যেন চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাচ্ছি ......
কেন যেন মনে হচ্ছে রীধি আমাকে ভুল বুঝলো না-তো ... ""রীধি তুমি কি আমাকে ভুলে গেছো .... একটি বার ফোন তো করতে পারো .. আমি কেমন আছি সেটা জানতে ইচ্ছা হয় না বুঝি""....
অনেকটা সাহস নিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম রীধিকে ফোন করবো বলে ... কিন্তু ডায়াল করতে গিয়েই থেমে গেলাম, ওর নাম্বারটাই তো নেই আমার কাছে... দুষ্টুর কাছে পাওয়া যাবে ভেবে ওকে ফোন করলাম ...
- ফোন রিসিভ করেই দুষ্টু বলল ভাইয়া, ভাবী ফোন করেছিল তোকে ...
~ কই না-তো .... কেন ?
- না মানে আমার কাছে তোর খোজ খবর নিচ্ছিলো ... আমি বলে দিয়েছি, আমি কি জানি ...তুমি নিজেই তো ফোন করে জানতে পারো ?
~ তোর এভাবে বলাটা একদম ঠিক হয়নি ... হয়তো আমার নাম্বারটা ওর কাছে নেই
- তোমার নাম্বার ভাবীর কাছে নেই এটাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে ..
~ যাই হোক তুই তোর ভাবীর নাম্বারটা দে-তো আমি ফোন করে শুনি কিছু বলবে কি-না
- ওয়েট কর ভাইয়া আমি মা'র কাছ থেকে এনে দিচ্ছি
~ মা'র কাছ থেকে এনে দিবি মানে তোর কাছে নাম্বার নেই
- আছে .. কিন্তু মা যদি জানে তুই ভাবীকে কল করবি তাহলে খুব খুশী হবে আর কি
~ দুষ্টু ভাল হবে না বলছি .... তোর কাছে থাকলে দে নয়তো ফোন কেটে দিচ্ছি
- ওয়েট ওয়েট একটু মজাও করতে দিবে না
রীধি আমার খোজ করছিল জেনে মনটা ভাল হয়ে গেলো ... সবার মাঝেও নিজেকে ভীষণ একা লাগছিলো, এখন আর লাগছে না .... আচ্ছা ও-কে এখন ফোন করাটা কি ঠিক হবে, ও ঘুমাচ্ছে না-তো এইসব ভাবতে ভাবতেই ফোন করে ফেললাম ....
- ফোন রিসিভ করেই রীধি বলল, হ্যালো ...
~ আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না ... কি বলবো কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছি না
- রীধি আবার বললো , হ্যালো ..
~ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম, রীধি কেমন আছো ?
- ভারী কন্ঠে রীধি বললো, ভাল আছি .. আপনি ভাল আছেন তো ? (এমন ভাবে রীধি বলল যেন আমি ওকে ফোন করেছি এটা ও বিশ্বাসই করতে পারছে না )
...........
............
ও'র কন্ঠ শুনে ঠিক বুঝতে পারলাম ও'র দুচোখ পানিতে ভরে গেছে ... গাল বেয়ে সেই পানি গড়িয়ে পড়ছে .... খুব ইচ্ছা করছে হাত দিয়ে ও'র চোখের পানিটা মুছে দিতে .... খুব ইচ্ছা করছে খুব!!!!
যদি এই অনুভুতিটাকেই ভালবাসা বলে তবে হ্যা, আমি রীধিকে ভালবাসি!!!অনেকে বেশী ভালবাসি!!!(৩য় পর্ব )
""বাড়িয়ে দাও তোমার হাত , আমি এবার তোমার আঙ্গুল ধরতে চাই""(২য় পর্ব)
আমি যে চোখের বালি ... কি করে রীধি কে বলি...(১ম পর্ব )
উৎসর্গ : সকল ব্লগার (মূলত যারা উপন্যাস আর রবীন্দ্রসংগীত ভালবাসেন)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০০