somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদি এই অনুভুতিটাকেই ভালবাসা বলে তবে হ্যা, আমি রীধিকে ভালবাসি!!!অনেকে বেশী ভালবাসি!!!

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্টেশন থেকে বেরিয়ে বুঝতে পারলাম যতটা ভেবেছিলাম বেলা ততটা হয়নি....সন্ধ্যা হতে এখনও অনেকটা দেরি আছে....রীধি নিজেই একটা রিকশা ঠিক করলো, আমার কাছে এলাকাটা অপরিচিত হলেও ওর কাছে বেশ পরিচিত...বাড়ি যাওয়ার জন্য যে ওর আর তর সইছে না সেটা বুঝতে পারলাম, বিয়ের পর প্রথমবার বাপের বাড়ি আসলে সব মেয়েরই এমনটা হয় মনে হয়...রীধি রিকশায় উঠে আমার দিকে চেয়ে রইলো কিচ্ছু বলছে না...আমার খুব কষ্ট হচ্ছে যে, আমার বউ সে, অথচ আমাকে দেখে খুব ভয় পায়...ভয় পাওয়াটাই যে স্বাভাবিক বিয়ের প্রথম রাতেই আমি ওর সাথে যে ব্যবহার টা করেছি তার জন্য তো আমি নিজেই লজ্জিত... হাতের ব্যাগটা রিকশায় রেখে উঠে বসলাম ...
রিকশা চলার সাথে সাথেই একটা হালকা বাতাস পরিবেশটা কে শীতল করে দিল...বুঝতে পারলাম রীধি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু সংকোচ বোধ করছে...
~কিছু বলবে রীধি ... বিয়ের পর এই প্রথম আমি ওর নাম ধরে ডাকলাম...
--রীধি একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভীত স্বরে বলল, জ্বী বলছিলাম কি, এই প্রথম বাসায় যাচ্ছি কিছু মিষ্টি কিনে নিয়ে গেলে ভাল হত না ...
~হে অবশ্যই, মিষ্টি তো নিতেই হবে... কোন দিকে মিষ্টির দোকান...
--রীধি রিকশাওয়ালাকে মিষ্টিপট্টি হয়ে যেতে বলল...

রীধির ভীতস্বরটা কি যে ভাল লাগে আমার বলে বোঝাতে পারব না ... না আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো, মা আমার জন্য যে মেয়েকে পছন্দ করেছে সে আমার রুচির বাইরে হতে পারে না ... আর মনে মনে রীধির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম, আমাকে ক্ষমা করে দাও রীধি, বিয়ের প্রথম রাতেই তোমার সাথে এইরকম বাজে ব্যবহার আমি মন থেকে করি নি ... করেছি মা আর দুষ্টুর উপর রাগ করে.... তুমি একবার আমার হয়ে ভাবো, বিয়ের দশ মিনিট আগে যদি কেও জানে তার বিয়ে তবে তার রাগ উঠাটা কি স্বাভাবিক না…..

রিকশা মিষ্টিপট্টিতে এসে থামতেই নামলাম, রীধিও নামলো ... ওকে বললাম ওর পছন্দ মত মিষ্টি নেয়ার জন্য ... ও বেশ আগ্রহের সাথে কয়েক ধরনের মিষ্টি প্যাকেট করতে বলল দোকানদারকে, দেখেই বুঝতে পারলাম ও সবার পছন্দের কথা মাথায় রেখেই মিষ্টি নিচ্ছে ...মিষ্টি নেওয়া শেষে ওকে বললাম আর কিছু নিতে হবে কি না ... আমার আগ্রহ দেখে খানিকটা অবাক হয়ে মাথা নেড়ে ইশারা করলো যে লাগবে না ... ওর অনীহা সত্ত্বেও পাশের দোকান থেকে কিছু ফলমূল কিনে নিলাম ...

কেনাকাটা শেষ করে রিকশায় উঠতে উঠতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেলো ... বাতাসটা আগের চেয়ে খানিকটা বেড়ে গেছে.... বাতাসে ওর উড়ন্ত চুলগুলো আমাকে বার বার স্পর্শ করছে কি যে ভাল লাগছে কি করে বোঝাই...

হঠাৎ রীধি খুব আস্তে আস্তে আমাকে বলল, প্লীজ আমার মা-বাবার সাথে একটু ভাল ব্যবহার করবেন, উনারা যেন কিছু বুঝতে না পারে যে আপনি আমাকে বউ হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি, তা-নাহলে খুব কষ্ট পাবে, আমি যে উনাদের একমাএ আদরের মেয়ে....
মনটা খারাপ হয়ে গেলো , খুব কষ্ট পেলাম ওর কথা শুনে ... আর মনে মনে বললাম, আরে আমি কি এতটা খারাপ নাকি, আমি কি জানি না কোথায় কেমন ব্যবহার করতে হয় ...

রিকশা বাসার সামনে আসতেই বাসাটা পরিচিত লাগলো... সেই বিয়ের দিন এসেছিলাম আর আজ আসলাম ... কেমন যেন একটু সংকোচ লাগছে নামতে...
রীধি ঠিক বুঝতে পারলো আমি অস্বস্তি বোধ করছি বাসায় ঢুকতে ... ও আমার কাছে এসে মৃদু হেসে বলল, প্লীজ আসুন , আমি আছি তো নাকি???
সত্যি নিজেকে ভীষণ একা লাগছিল, কিন্তু এই প্রথম ওর হাসি মুখটা দেখে সব কষ্ট যেন উবে গেল .... ওর হাসিটা যে এত সুন্দর হতে পারে আমার ধারণাতেই ছিল না .....

ওর বাসায় ঢুকে সবার সাথে কুশল বিনিময় করতে করতেই অনেকটা সময় পার হয়ে গেলো ... আর রীধির কথা কি বলবো সবাইকে কাছে পেয়ে ও যে কি খুশি তা কোনো ভাষা দিয়েই প্রকাশ করা যাবে না .... রীধি যে এত হাসিখুশি একটা মেয়ে বুঝতে পেরেছিলাম না, ওর হাসিমুখটা যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি....

রাতের খাবার শেষে ওর রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম সব কিছু এত গোছানো না দেখলে বোঝা যাবে না ... উপন্যাস আর রবীন্দ্র সংগীতের প্রতি ও যে কতটা দুর্বল তা ওর কালেকশন দেখেই বোঝা যা্য ... রুমে একটা হারমোনিয়াম দেখে খুব আগ্রহ হলো জানার রীধি গান গাইতে জানে কিনা .. ইস ও যদি গান জানে তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশী আর কে হবে ...

সকালে ঘুম ভাংলো একটা মিষ্টি গান শুনে ... রীধির কন্ঠ মনে হওয়াতেই দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম ....গানটা রীধি গাইছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বারান্দায় গিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম ... বাড়ির সামনের উঠানে ঠিক বাগানটার পাশে, মাদুর পেতে, হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইছে রীধি ... পাশে ওর বাবা চোখ বন্ধ করে অতি মনোযোগ দিয়ে গান শুনছেন ... দেখে মনে হচ্ছে না জানি কতদিন পর মেয়ের গান শুনছেন....
এত মিষ্টি সুরে গানটা গাইছে ও যেন প্রভাতের মৃদু হাওয়াটাও মুগ্ধ হয়ে সেটা বয়ে বেড়াচ্ছে ....
~~~~~ আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ~~~~~
~~~~~ ***খেলে যা্য রৌদ্র ছায়া*** ~~~~~
~~~~~ **** বর্ষা আসে বসন্ত ****~~~~~
~~~~~আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ~~~~~

ওর গানটা আমার হৃদয়ে স্পর্শ করছে .. বার বার স্পর্শ করছে...মনে মনে মাকে ধন্যবাদ দিতে লাগলাম রীধির মত একটা দামী উপহার আমাকে দেবার জন্য...

আজ বিকেলের ট্রেনে রীধিকে রেখেই চলে যেতে হবে ভেবে খুব কষ্ট লাগছে...কথা ছিলো দুজনে একসাথেই চলে আসবো কিন্তু ও এমন ভাবে আমাকে বলল যে কিছুদিন থাকবে এখানে, আমি আর না করতে পারলাম না...
চারটা বাজতেই ট্রেন ছেড়ে দিলো.... নিজেকে খুব একা লাগছে বার বার শুধু রীধির কথা মনে পড়ছে.... বিদায় বেলা ও যখন আমার পা ছুয়ে ছালাম করলো তখন আমার কি করা উচিত বুঝে উঠতে না পেরে শুধু ওর দিকে চেয়েই রইলাম , বুঝলাম আমাকে বিদায় জানাতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে...
ওর প্রতি এক অজানা মায়া আমার হৃদয়কে বার বার কাপিয়ে তুলছে... জানি না এই অজানা মায়াটাকেই ভালবাসা বলে কি না .... যদি এই অনুভুতিটাকেই ভালবাসা বলে তবে হ্যা, আমি রীধিকে ভালবাসি ... অনেকে বেশী ভালবাসি....

১ম পর্ব
২য় পর্ব


উৎসর্গ : সকল ব্লগার (মূলত যারা উপন্যাস আর রবীন্দ্রসংগীত ভালবাসেন)

[ গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×