আমার এই লেখাটি প্রথমবার কিছু সমস্যার কারণে সম্পূর্ণ পোষ্ট করতে পারিনি তাই আবার এই আঁতলামি ভরা লেখাটি পুনরায় পোষ্ট করলাম।
সর্তকতা: লেখাটি ইরান বা আমেরিকান প্রেমিকদের জন্য না।
প্রায় প্রতিদিনই গালফ্ নিউজে ইরান বিষয়ক বেশ বড় প্রতিবেদন থাকে এবং যার মূল বিষয় যথারীতি সেই দেশের প্রেসিড্ণেট এর হুমকি ধামকি- আমাদের আক্রমণ করলে পশ্চিমা বিশ্ব বিরাট ভুল করবে,তাদের উপযু্ক্ত জবাব দেওয়া হবে,নতুন মিসাইল পরীক্ষা,সাবমেরিন, আরও উন্নত যু্দ্ধ প্রযুক্তি মোতায়ন ইত্যাদি ইত্যাদি। এই প্রপাগাণ্ডায় দক্ষিণ থেকে মধ্য এশিয়ার দেশ সমূহের লোকজন যে বড়ই প্রীতবোধ করেন তা বলাই বাহুল্য। তাদের ধারণা অনেকটা এইরকম যাক আমেরিকনরা এবার ভয় পেয়েছে,ইরানকে আক্রমণ করলে পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থা কেরোসিন হয়ে যাবে।
অথচ বাস্তব অবস্থা এর সম্পূর্ণ উল্টো। পশ্চিমা বিশ্চের কথা বাদই দিলাম একা আমেরিকানদের কাছে যে পরিমাণ পারমানবিক অস্ত্র আছে তা দিয়ে গোটা পুথিবীর জনগোষ্ঠীকে হত্যা করা সম্ভব এবং তা কয়েকবার করে আর ইরান এর আয়তন সমগ্র বিশ্বের তুলনায় কত শতাংশ তা তূলনা করা অবান্তর। ভয়াবহ পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষমতা কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে তার একটু উদাহরণ দেয়া এখানে অপ্রাসাঙ্গিক হবে না। জাপানে নিক্ষিপ্ত বোমার ধ্বংস ক্ষমতা ছিলো কয়েক হাজার টন টি.এন.টি. আর বর্তমান প্রজেন্মরে একেকটি বোমার ক্ষমতা কয়েক মেগাটন টি.এন.টি. এর মানে নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক বোমার একটিই কয়েক কোটি মানুষ হত্যার জন্য যথেষ্ট। আমেরিকার সামরিক প্রযুক্তি এবং ক্ষমতা নিয়ে বিস্তারিত লিখতে হলে একটি পুরো বই লেখা যায় সুতরাং সেদিকে না গিয়ে এবার মূল প্রসঙ্গে আসি।
ইরান যদি ভালো করেই জানে তার সাথে আমেরিকানদের সামরিক তুলনা চলেনা তবে কেন এই হুমকি ধামকি এবং এ থেকে কারা লাভবান হচ্ছে? আমার মতে ইরানের এই ধরণের আচরণ তাদের বর্তমান শাসকদের উচ্চ রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় আকাঙ্খার প্রতিফলন এবং কিছুটা একগুয়েমিও এর একটি কারণ যার মূল্য সাধরণ ইরানিরা প্রতিদিনই বুঝতে পারছে। ইরানে এত তেল এবং গ্যাস থাকা স্বত্তেও তাদের দেশে তেল রেশনিং করতে হয় এবং অন্যান্য তুলনামূলক কম তেল সমৃদ্ধ দেশের সাথে অর্থনৈতিক পার্থক্যটা আকাশ পাতাল। রাজনৈতিক কারণ পরে ব্যাখ্যা করছি, ধর্মীয় কারণটির দিকে প্রথমে একটু আলোকপাত করে নেই । ইরানের বতমান শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্য বিশ্বে সৌদি প্রভাবিত সুন্নি মতবাদকে হটিয়ে তাদের শিয়া মতবাদকে প্রধানতম করা। এ লক্ষ্যে তারা আপাতত মধ্যপ্রাচ্যকেই বেছে নিয়েছে। ইরাক এবং লেবানন এর অন্যতম উদাহরণ (সিরিয়া ও এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য)। ইরানের উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন এ থেকে কিন্তু লাভবান হচ্ছে সেই সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকানরাই। ইরান জুজুর ভয় দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অস্ত্র বিক্রির ব্যবস্যাটা আরও পোক্ত হচ্ছে তাদের। সাম্প্রতিক মাল্টি বিলিয়ন অস্ত্রের প্যাকেজ প্রস্তাবই এর জলন্ত উদাহরণ। তবে এখানে একটি কথা বলা জরুরী মনে করছি তা হলো মধ্যপ্রাচ্যের সবথেকে বড় অস্ত্রের ক্রেতা সৌদি আরাব কিন্তু এত বোকা না যে এই সহজ হিসাব তার মাথায় আসে না । আসে ঠিকই কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর ব্যক্তিগত স্বার্থ এখানে জড়িত ওতোপ্রতোভাবে। প্রথমত সৌদিআরব একটি রাজতান্ত্রিক দেশ। বর্তমান বিশ্বে আমেরিকা সহ পশ্চিমা বিশ্বকে চটিয়ে কতদিন এই রাজপরিবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে পারবে তা কষ্টকল্পিত নয়। এছাড়াও এই অস্ত্র বিক্রর চুক্তি থেকে কে কত রাষ্ট্রীয় সম্পদ আরও উজার করলো তার হিসাব জনগণকে দিতে হয় না। একথা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশসমূহের জন্যও সমভাবে প্রযোজ্য। ইরানের এই ধর্মীয় প্রভাব বিস্তারের লক্ষে ধর্মকেই বিকৃতভাবে বব্যহার করছে,ইসলামী দেশসমূহ যা প্রধানত সুন্নি প্রভাবিত তাদেরকে নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করছে ইসলামী উম্মার সুরসুরিকে কাজে লাগিয়ে। এ পর্যায়ে যে তারা অনেকখানি সফল তা আমাদের দেশের জনগণের মনোভাবেই অনেকটা স্পষ্ট যা এ লেখার প্রথমদিকে বর্ণনা করেছি।
আর রাজনৈতিক কারণ প্রধানত আভ্যন্তরীণ। নিজের দেশের জনগণের সামনে একটা চরম লক্ষ্য উপস্থাপিত না করতে পারলে এবং সে উদ্দেশ্যে তাদেরকে নিজেদের পক্ষে না টানতে পারলে সেই গদি নিয়ে টানাটানি। সুতরাং জনগণের মাধা ধোলাই কর যেন তারা নিজেদের অভাব অভিযোগ সম্পর্কে সচতেন না হতে পারে। এ সমস্ত কারণ ছাড়াও কিছু গৌণ কারণ আছে যা আর এখানে আলোচনা করা হয়ে উঠলো না।
তাহলে দেখা যাচ্ছে এ যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা এ কোন আদর্শের লড়াই নয়, এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর স্বীকার হচ্ছে সাধরণ জনগণই আর এ চিত্র সহসা পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনেক ক্ষীণ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




