somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলৌকা

৩০ শে মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘কোথায় তুমি?’ ফোনের ওপাশ থেকে উদ্বিগ্নকন্ঠে বলে উঠলো মেয়েটি।

‘এইতো আর দু’মিনিট। এসে পড়েছি প্রায়।’ দ্রুত জবাব দিলাম আমি। মুখে দু’মিনিট বললেও অন্তত আরো দশমিনিট লাগবে পৌছতে।

‘আমি কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি,’ উদ্বিগ্নতার সাথে এবার যোগ হয়েছে কিছুটা অভিমানও।

‘এইতো এসে গেছি প্রায়, আর দুমিনিট। রাখছি,’ বলেই ফোনটা কেটে দিলাম আমি। ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে রিক্সাওয়ালাকে আরেকটু জোড়ে চালাতে তাগাদা দিলাম।

আজ প্রথমবারের মতো দেখা করতে যাচ্ছি ওর সাথে। আর প্রথমদিনই দেরী করে ফেলেছি!

নাহ, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।

ইন্দুর সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকের মাধ্যমে। আমার লেখা একটা গল্প পড়ে ওর নাকি খুবই ভাল লেগেছিল। প্রথমে মেসেজ দিয়ে গল্পের জন্য প্রশংসা আর ধন্যবাদ জানিয়েছিল মেয়েটা। তারপর ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট। প্রথম প্রথম একটু এড়িয়ে চললেও পরে ওর কাজের প্রতি আগ্রহবোধ করতে থাকি আমি। এর সূত্র ধরে গত চার মাস ধরে নিয়মিত চ্যাট হচ্ছে ওর সাথে। প্রথমে শুধুই ওর কাজের প্রতি আগ্রহ, তারপর ধীরে ধীরে ওর উপর। এভাবেই আমাদের মাঝে রচিত হয়েছে চমৎকার একটি সম্পর্কের। ভালোবাসার সম্পর্ক।

মেয়েটি আসলে একজন লিথোগ্রাফার। মানে লিথোগ্রাফি এক্সপার্ট। লিথোগ্রাফি নিয়ে আমি খুব বেশী কিছু জানতাম না। সত্যি বলতে ওর সাথে পরিচয় হবার আগে এই নামটিই শুনিনি আমি কখনো। ওর কভারফটোতে একটা ছবি দেখে আগ্রহটা শুরু হয় আমার। এখন বলতে গেলে কিছু কিছু জানি এসম্পর্কে। তবে তা যথেষ্ট নয়।

লিথোগ্রাফি নিয়ে আমার আগ্রহ দেখে ও আমাকে সেসব দেখাতে চেয়েছিল। বলেছিল, খুব শীগ্রই বাংলাদেশে আসছে ও একটা কাজে। তখন আমাকে ওর নিজের করা লিথোগ্রাফিগুলো দেখাবে।

ও হ্যাঁ, মেয়েটা বাংলাদেশী নয়। ভারতীয়। উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে জন্ম ওর, যেটাকে বেনারস বা কাশীও বলা হয়। তবে ও বড় হয়েছে হায়দরাবাদে। উসমানীয়া ইউনিভার্সিটিতে অ্যানসিয়েন্ট হিস্টোরি, কালচার এন্ড আর্কিয়োলজি’তে পড়াশোনা করছে মেয়েটা। ওর মা ছিলেন বাঙালী, যে কারণে বাংলাটা ওর রক্তে মিশে আছে বলা যায়।

রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বিদায় করে এদিক ওদিক তাকাই আমি। ওর বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি এখন। এক মাসের জন্য একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করেছে ও। আগামী একমাস এখানেই থাকবে।

কিন্তু মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না। একটা ফোন করবো কি না ভাবতেই পেছন থেকে আমার নাম ধরে একটা ডাক শুনে ফিরে তাকাই আমি। এবং সাথে সাথেই চোখ পড়ে মেয়েটির উপর।

‘এই তোমার দুমিনিট?’ অভিমানের সুরে বলে উঠে মেয়েটি।

‘সরি,’ ক্ষমাপ্রার্থনার সুরে বলে উঠি আমি।

‘ওকে,’ বলে আমার হাত ধরে ও, ‘এবার বাসায় চলো।’

হাসিমুখে ওর সাথে পা বাড়াই আমি।

*******

ওর বাসায় ঢুকে অবাক হয়ে যাই আমি। পুরো রুমজুড়ে বিভিন্ন ছবি আঁকা। এবং সেগুলো আঁকা হয়েছে বিভিন্ন সাইজের পাথরের উপর!

‘তোমার বাসায় তো দেখি লিথোগ্রাফির ছড়াছড়ি!’ মুগ্ধকন্ঠে বলি আমি, ‘পুরো ফ্ল্যাটজুড়েই কি লিথোগ্রাফি নাকি!’

‘এগুলো ঠিক লিথোগ্রাফি নয়,’ মাথা নেড়ে বললো ও, ‘মানে, এগুলোকে পিওর লিথোগ্রাফ বলা ঠিক হবে না। এগুলো হচ্ছে পলিয়েষ্টার লিথোগ্রাফের ইন্দু ভার্শন।’

‘এটা আবার কি?’ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করি আমি, ‘এর নাম তো শুনিনি কখনো!’

‘এটার মানে হচ্ছে,’ আগ্রহের সাথে জবাব দিল ও, ‘এগুলো পাথরের উপর করা নয়। লিথোগ্রাফ জিনিসটা আসলে লিথো বা লাইমস্টোনের উপর আঁকা ছবি। কিন্তু এখানে আমি লাইমস্টোনের বদলে পাতলা প্লাস্টিক শীট ব্যবহার করেছি। সাধারনত এসব কাজে শীটগুলোর উপর পলিয়েষ্টার প্রিন্ট নিয়ে বানানো হয় ছবিগুলো। আমি সরাসরি প্লাস্টিক শীটের উপর রঙ করে বানিয়েছি এগুলো। তারপর এভাবে এনে সাজিয়েছি। একারনে এগুলো হচ্ছে ইন্দু ভার্শন।’

‘ওয়াও!’ বিস্ময়ধ্বনি বেড়িয়ে এলো আমার মুখ দিয়ে, ‘জিনিয়াস পাবলিক তো তুমি। বলে না দিলে বুঝতেই পারতাম না যে এগুলো পাথর নয়।’

‘আরে দুররর,’ মৃদু হেসে বলল ও, ‘কি যে বলো! এই শিল্পে আমি এখনো বাচ্চা।’

‘বাচ্চা তাই এই অবস্থা!’ ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালাম আমি, ‘বড় হলে তো ফাটিয়ে ফেলবে মনে হচ্ছে।’

‘দুরররর,’ একটা সোফা দেখিয়ে দিলো ও, ‘যাই হোক। বসো তুমি। আমি আসছি।’

পাশের রুমে চলে গেলো ও। আমি সোফার দিকে না গিয়ে একটা ছবির দিকে এগিয়ে গেলাম।

চমৎকার একটা ছবি এটা! অবশ্য এখানকার সবগুলো ছবিই চমৎকার। সবগুলো বর্তমান পটভূমিতে আঁকা। দুর্দান্তভাবে মানুষের অভিব্যক্তিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবিগুলোতে।

ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা জিনিস আবিস্কার করলাম আমি। সব ছবির বিষয়বস্তু একই মনে হচ্ছে। সব ছবিতেই একটা মেয়ে আর একটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে আছে ছেলেটাকে। ছেলেটা হা করে আছে। চেহারায় স্পষ্ট যন্ত্রণার ছাপ।

একে একে সবগুলো ছবিই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করলাম আমি। সবগুলোতেই একই অবস্থা! তবে একটা পার্থক্য বিদ্যমান। ছবিগুলোতে একটা ছেলের চেহারার সাথে অন্যগুলোর কোন মিল নেই। সবগুলোই আলাদা আলাদা চেহারা। বিভিন্ন ভঙ্গিতে, বিভিন্নভাবে আঁকা হয়েছে ছবিগুলো। ও হ্যাঁ, একটা ছবিতেও মেয়েটার চেহারা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না।

‘কি দেখছো এভাবে?’ ইন্দুর ডাকে কিছুটা চমকে উঠলাম আমি। আসলে ছবিগুলো দেখতে দেখতে কেমন একটা ঘোরের মাঝে পড়ে গেছিলাম আমি।

‘কিছু না,’ ওর দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম আমি, ‘ছবিগুলো দেখছিলাম আর কি। চমৎকার কাজ তোমার।’
মুচকী হাসলো মেয়েটা। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এখানে এসে বসো। কফি খেতে খেতে গল্প করি তোমার সাথে।’

এতোক্ষনে ইন্দুর হাতের দিকে চোখ বাড়ালাম আমি। একটা ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। সেখানে কফির দুটো মগের সাথে কয়েকটা পিরিচে আরো কিছু খাবার দেখা যাচ্ছে।

‘ওকে,’ সোফায় বসতে বসতে বললাম আমি।

ছবিগুলো আমাকে এতো মুগ্ধ করেছিল যে এতোক্ষন রুমের দিকে তাকানোর কথাও মাথায় আসেনি। এবার ভালোভাবে তাকালাম আমি। পুরো ঘরের মধ্যেই একটা শিল্প শিল্প ভাব বিরাজ করছে যেন। এক কোনায় একটা বই রাখার সেলফও দেখতে পেলাম।

‘তো,’ কফির মগে চুমুক দিয়ে প্রশ্ন করলাম আমি, ‘বাংলাদেশে কতোদিন আছো? এক মাসই, না আরো বেশী?’

‘এক মাসই,’ কফির কাপটা নামিয়ে রেখে জবাব দিলো ও, ‘এর বেশী থাকা যাবে না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পুরো বাংলাদেশের দর্শনীয় জায়গাগুলো ঘুরে বেড়াবো ভাবছি। শুনলাম, অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস আছে এই দেশে।’

‘গুড প্ল্যান,’ ওর সাথে একমত হলাম আমি, ‘হ্যাঁ, অনেককিছুই আছে দেখার মতো। মজা পাবে অনেক।‘

‘আমিও তাই ভাবছি,’ মৃদুহাসি ওর মুখে, ‘অবশ্য তুমি তো সময় দিতে পারবে না আমাকে। নিজেই একা একা ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে আমার।

কফি শেষ করে মগটা ট্রের উপর রাখলাম আমি। এমনসময় আমার চোখ চলে গেলো পাশে রাখা অন্য একটা সোফার দিকে। সেখানে একটা বই পড়ে আছে।

একটু ঝুঁকে বইটা তুলে নিতেই বলে উঠলো মেয়েটা, ‘এটা সম্ভবত পড়েছো তুমি। ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলার তেলেগু সংস্করন এটা।’

‘ও,’ বইটার মলাটের দিকে তাকালাম আমি, ‘ভাগ্য ভাল তুমি বলে দিলে। না হলে আমি বুঝতেই পারতাম না।’

‘ড্রাকুলা পুরোটা পড়েছো তুমি?’ উৎসুক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো ও।

‘নাহ,’ বইটা জায়গা মতো রেখে বললাম আমি, ‘পুরোটা পড়া হয়নি। আসলে থ্রিলারের দিকে বেশী আগ্রহ আমার। এসব ভ্যাম্পায়ার বা ঐধরনের গল্প কাহিনী আমাকে তেমন একটা টানে না।’

‘কেন?’ আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো মেয়েটা, ‘এই কাহিনীগুলো চমৎকার হয় তো।’

‘কিন্তু আমার কাছে কেমন যেন লাগে,’ মুখ শুকনো করে বললাম আমি।

‘ওওও,’ ওর মুখটাও শুকনো দেখালো কেন যেন, ‘আমি আরো ভাবলাম একটা ইন্টারেস্টিং কাহিনী বলবো তোমাকে।’

‘কি কাহিনী?’ প্রশ্ন করলাম আমি।

‘ড্রাকুলা সম্পর্কিত,’ শুকনো মুখেই জবাব দিলো ও, ‘কিন্তু তা কল্পনা বা নিছক কোন গল্প নয়। একেবারে বাস্তব কাহিনী।’

‘তাই নাকি?’ এবার কিছুটা আগ্রহ ফিরে এলো আমার মাঝে, ‘বলে ফেলো তাহলে।’

‘বলবো?’ যেন উৎসাহ পেলো মেয়েটা, ‘তবে বলি, হ্যাঁ? তুমি কি জানো যে, ড্রাকুলা নামে আসলেই একজন ছিল?’

‘না তো,’ অবাক হলাম আমি, ‘সত্যিই কি এরকম কেউ ছিল?’

‘হ্যাঁ,’ আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে এলো ও, ‘সত্যিই ছিল। তার নামেই তো বইটা এবং এই চরিত্রের নামকরন করা হয়েছে ড্রাকুলা। আসলে, ড্রাকুলার পুরো কাহিনীটাই একটা সত্যিকারের কাহিনীকে ঘিরে বানানো হয়েছিল।’

‘বলো কি?’ এই তথ্যটা জানা ছিল না আমার।

‘হ্যাঁ তো,’ বেশ খুশী খুশী মনে হলো মেয়েটাকে, ‘পুরোটা বলছি তোমাকে শোন।’

*******

“মধ্যযুগে রোমানিয়া তিনটি যুবরাজ-শাসিত প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। এগুলো হচ্ছে ওয়ালাশিয়া, মলডাভিয়া ও ট্রানসিলভানিয়া।

ট্রানসিলভানিয়ার দক্ষিণে ওয়ালাশিয়া রাজ্যের যুবরাজের নাম ছিল ভলাদ ড্রাকুলা। ১৪৩১ সালে তার স্ত্রী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। তার নাম রাখা হয় চতুর্থ ভলাদ। রোমানিয়ান প্রথানুসারে তাকে ডাকা হতো ড্রাকুলা নামে। ভলাদ ড্রাকুলার নামের অর্থ ছিল ‘ভলাদ দ্য ডেভিল’ বা ‘শয়তান ভলাদ’। সেই অর্থে তার পুত্রের নামের অর্থ হয় ‘শয়তানের পুত্র’।

চতুর্থ ভলাদ ভ্যাম্পায়ার ছিলেন না বটে, কিন্তু তার নামের সঙ্গে পরবর্তীকালে যে বিশেষণটি জুড়ে যায়, সেটি তার রক্তপিপাসু প্রবৃত্তির কিছুটা আভাস বহন করে। তাকে বলা হতো ‘ভলাদ দি ইমপেলার’ বা ‘শূলে-চড়ানিয়া ভলাদ’। মধ্যযুগের ইতিহাসেও তার নিষ্ঠুরতার কাহিনী একটু বেশি রকমের আশ্চর্যজনক।

প্রশ্ন আসতে পারে, শূলে-চড়ানিয়া ভলাদের সঙ্গে ভ্যাম্পায়ারের সম্পর্ক কি? আসল কথা হচ্ছে ‘ড্রাকুলা’ উপন্যাসের সেই কুখ্যাত রক্তচোষা কাউন্টের নাম হিসেবে ব্রাম স্টোকার ব্যবহার করেছেন শূলে-চড়ানিয়া ভলাদের ডাকনামটি। শুধু তাই নয়, কার্পেথিয়ান পর্বতমালার ভুতুড়ে নিসর্গ, মধ্যযুগীয় রোমানিয়ান ইতিহাসের নানা অনুষঙ্গসহ ট্রানসিলভানিয়ার ইতিহাসের ছায়া অনেকটাই পড়েছে ওই বেস্টসেলার বইটির গল্পে।

কাউন্ট ড্রাকুলা নামটি স্টোকার সম্ভবত পেয়েছিলেন উইলিয়াম উইলকিনসনের বই ‘অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ দ্য প্রিন্সিপ্যালিটিস অফ ওয়ালাশিয়া অ্যান্ড মলডাভিয়া: ইউথ ভেরিয়াস পলিটিক্যাল অবজার্ভেশনস রিলেটিং টু দেম’ থেকে। আর কাহিনীর ক্ষেত্রেও ভলাদের নৃশংসতার প্রভাব ছিল বলে মনে করেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ মনে করেন কাউন্ট ড্রাকুলার নামটি ছাড়া শূলে-চড়ানিয়া ভলাদ সম্পর্কে আর কিছুই জানতেন না স্টোকার। তবে উপন্যাস বিভিন্ন অংশে কাউন্টের সংলাপে তার অতীতের যে টুকরো ছবি পাওয়া যায়, তাতে রোমানিয়ার ইতিহাস সম্পর্কে স্টোকারের দখলদারিত্বেরই প্রমাণ মেলে। তবে তিনি শূলে-চড়ানিয়া ভলাদের কোনো উল্লেখ করেননি, এমনকি তার শূলে-চড়ানো অভ্যাসটিরও কোনো আভাস দেননি উপন্যাসে।

এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় তৎকালীন রোমানিয়ায় ভ্যাম্পায়ার মিথের জনপ্রিয়তা। ভ্যাম্পায়ার-জাতীয় প্রাণীর উল্লেখ গ্রিস, মিশর এমনকি আমাদের ভারতীয় লোককথাতেও পাওয়া যায়। কিন্তু ইউরোপীয় ভ্যাম্পায়ার মিথের উৎস দক্ষিণ স্লাভিক উপকথা। রোমানিয়ার সংস্কৃতিতে অবশ্য এই উপকথাগুলি পাওয়া যায় না।

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে পূর্ব ইউরোপে ভ্যাম্পায়ার উপকথাগুলি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে বলকান থেকে প্রত্যাগত পর্যটকদের হাত ধরে এই উপকথাগুলি এসে উপস্থিত হয় পশ্চিম ইউরোপে। উনিশ শতকের শেষ ভাগে স্বয়ং কাউন্ট ড্রাকুলাও লন্ডনে এসেছিলেন এই রকম এক পর্যটকের হাত ধরে!

শূলে-চড়ানিয়া ভলাদের কিংবদন্তি আর ভ্যাম্পায়ার উপকথা- পূর্ব ইউরোপের এই দুই উপাদানের সংমিশ্রণেই স্টোকার লেখেন তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘ড্রাকুলা’। সম্ভবত ট্রানসিলাভানিয়া অঞ্চলে প্রচলিত ভ্যাম্পায়ার উপকথার কথা স্মরণ করেই স্টোকার তার সৃষ্ট বিখ্যাত ভ্যাম্পায়ার চরিত্রটির পটভূমি সেখানেই স্থাপন করেন। আর তা নির্বাচনের পর এখানকার সবচেয়ে কুখ্যাত শাসক ভলাদ ড্রাকুলার কথাও স্বভাবতই তার মনে এসে থাকবে। ভলাদ ড্রাকুলার রক্তপিপাসু প্রবৃত্তির কারণে ভ্যাম্পায়ার হিসেবে ড্রাকুলাই ছিলেন স্টোকারের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।’

‘পুরোপুরি বুঝলাম না,’ মাথা নেড়ে বললাম আমি।

আবার শুরু করলো ও।

‘বুঝিয়ে বলছি। ইতিহাসটা শুনলে এবং আরো কিছু শুনলে আশা করি বুঝতে পারবে ব্যাপারটা।

সময়টা ইউরোপের ইতিহাসে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার যুগ। তুর্কি মুসলমানেরা এসময় সমগ্র ইউরোপ জুড়ে বড়োসড়ো যুদ্ধাভিযানের পরিকল্পনা করছিল। আর এ নিয়ে ইউরোপের খ্রিস্টানদের সঙ্গে চলছিল তাদের সংঘাত।

ছেলেবেলায় একবার তুর্কিদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন ভলাদ। তুর্কিদের কাছ থেকেই মৃত্যুদণ্ড দেয়ার শূলে চড়ানোর কৌশলটি শিখেছিলেন তিনি। পদ্ধতিটা সহজ হলেও ভয়াবহ বর্বরোচিত। একটা সূচালো আগাবিশিষ্ট কাঠ বা লোহার বিরাট একটি শলা বিঁধিয়ে দেয়া হত দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির শরীরে। তারপর ওই অবস্থাতেই শলাটিকে খাড়াভাবে দাঁড় করিয়ে মাটির সঙ্গে গেঁথে দেয়া হত। শলার মাথায় দণ্ডপ্রাপ্ত লোকটি যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুবরণ করতো।

১৪৪৮ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিরা চতুর্থ ভলাদকে মাত্র সতেরো বছর বয়েসে ওয়ালাশিয়ার সিংহাসনে বসালেও তিনি বিদ্রোহ করে পালিয়ে যান। তুর্কিরা বাইজানটাইন রাজধানী কনস্টান্টিনোপল দখল করে নিলে ১৪৫৬ সালে ওয়ালাশিয়ায় ফিরে আসেন ভলাদ। তখন তুর্কিদের সঙ্গে তার লড়াই শুরু হয়।

ভলাদের সেনাবাহিনী কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত গিয়ে দানিউব নদীর তীরের সবকটি দুর্গ পুনরুদ্ধার করে। সেই সঙ্গে শত্রুদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে থাকে। এই সময়েই গোটা অঞ্চল জুড়ে ভলাদের খ্যাতি ও কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

কথিত আছে, দু’জন তুর্কি দূত তার সভায় পাগড়ি খুলতে অস্বীকার করলে, তিনি তাদের পাগড়ি তাদের মাথার খুলির সঙ্গে পেরেক দিয়ে গেঁথে দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। শুধু শত্রুদের প্রতিই নয়, নিজের প্রজাদের প্রতিও যথেষ্ঠ নৃশংস ছিলেন ভলাদ। কারণে অকারণে হানা দিতেন শহরে। অত্যাচার চালাতেন। মানুষ খুন করতেন। পুড়িয়ে মারতেন, বা গায়ের চামড়া ছাড়িয়ে নিতেন।

১৪৬০ সালের সেন্ট বার্থালোমিও ডে-এর দিনে ট্রানসিলভানিয়ার একটি শহরে হানা দিয়ে ৩০,০০০ লোককে শূলে চড়িয়েছিলেন ভলাদ। এটিই ছিল তার নিষ্ঠুরতম গণহত্যা।

শেষদিকে ভলাদের সেনাবাহিনী তুর্কিদের হাতে পরাজিত হয়। তার নিজের লোকজনও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। হাঙ্গেরির কিং মাথিয়াসে ভলাদকে বারো বছর বন্দী করে রাখা হয়। কিন্তু মানুষকে শূলে চড়ানো তার নেশায় পরিণত হয়েছিল। কারারক্ষীদের বশ করে তাদের দিয়ে নেংটি ইঁদুর বা অন্য ছোটো জানোয়ার নিজের কক্ষে আনিয়ে নেশাগ্রস্তের মতো শলায় বিঁধিয়ে মারতেন সেগুলোকে! ১৪৭৮ সালে সিংহাসন ফিরে পাওয়ার দু’মাসের মধ্যে তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার মৃত্যু হয়। তার কাটা মাথাটি মধুতে জারিত করে তুর্কি সুলতানের কাছে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়।

ইতিহাস থেকে এটুকুই জানা যায়। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয় পুরো বিষয় বোঝার জন্য। আরো কিছু কথা আছে, সেগুলো কোন এক কারনে প্রকাশ করা হয়নি ঐসময়। কিন্তু ১৪৭৮ সালে তার মৃত্যুর পর প্রকাশ হতে থাকে তার নিষ্ঠুরতার কাহিনী। যেগুলো উপকথা হিসেবে প্রচলিত হয় ঐ এলাকাগুলোতে। সেখানেই সর্বপ্রথম ভলাদের পরিবর্তে তাকে শুধু ড্রাকুলা হিসেবে বলা হয়েছে।

এসব উপকথায় কথিত আছে, জীবিত অবস্থায় ভলাদ, মানে ড্রাকুলা বিভিন্ন সময় কারনে কারনে হানা দিতেন শহরে। সেখানে সাধারন জনগনের উপর প্রচুর অত্যাচার চালাতেন তিনি।

লোকজনকে শূলে চড়িয়ে কুখ্যাত হলেও আরেকটি স্বভাবের কথা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে। সেটা হলো এই, শহরে হানা দিয়ে যে লোকগুলোকে ধরে আনতো তার লোকেরা, সেখান থেকে সবচেয়ে সুন্দর মানুষদের বাছাই করতেন তিনি। পুরুষ, মহিলা- সবাই থাকতো তার পছন্দের তালিকায়। শূলে চড়ানোর আগে তাদের শরীর থেকে রক্ত পান করতেন তিনি।’

‘খাইচে!’ আঁতকে উঠলাম আমি।

‘হ্যাঁ,’ আগেরমতোই মাথা নাড়তে নাড়তে বললো ও, ‘সত্যি বলছি আমি।’

‘তারমানে,’ ড্রাকুলার তেলেগু সংস্করনের দিকে ইঙ্গিত করলাম আমি, ‘ব্রাম স্টোকার যা লিখে গেছেন, সেগুলো নিছক তার কল্পনা নয়? সব সত্যি?’

‘তা নয়,’ উঠে দাঁড়ালো ও, ‘গল্প লেখার ক্ষেত্রে লেখককে সব সময়ই কিছুটা হলেও কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়। ব্রাম স্টোকারও নিয়েছেন। তবে তাঁর গল্পের কাউন্ট ড্রাকুলার চরিত্রটা আসলে নেয়া হয়েছে এই চতুর্থ ভলাদ ড্রাকুলার নাম থেকে। আর আমার যতদুর ধারনা, ড্রাকুলা কনসেপ্টটা আসল ড্রাকুলা থেকেই পেয়েছিলেন ব্রাম স্টোকার।’

‘বুঝলাম,’ মৃদুস্বরে বললাম আমি।

এমনসময় আমার পকেটে থাকা সেলফোনটা কর্কশস্বরে বেজে উঠলো। স্ক্রিনে চোখ রাখতেই দেখলাম আমার রুমমেট উদ্যানের ফোন।

-‘হ্যাঁ উদ্যান, বল।’

-‘কই তুই?’

-‘আছি এক জায়গায়।’

-‘তাড়াতাড়ি মেসে আসতে পারবি?’

-‘কেন?’

-‘একটু সমস্যা হইছে।’

-‘ওকে, আসতেছি।’

ফোনটা কেটে দিয়ে ইন্দুর দিকে তাকালাম আমি। ‘সরি, যেতে হচ্ছে আমাকে। কাল আবার দেখা হবে আশা করি।’

‘কোন সমস্যা নেই,’ মৃদু হেসে বললো ও, ‘চলো এগিয়ে দিই তোমাকে।’

আমাকে নিচ পর্যন্ত এগিয়ে দিলো ও। একটা রিক্সা ডেকে দ্রুত রওনা হলাম আমি।

*******

‘ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কে কিছু জানিস?’ সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে প্রশ্ন করলাম আমি।

‘ভ্যাম্পায়ার?’ কিছুক্ষন মাথা চুলকে বললো উদ্যান, আমার রুমমেট, ‘জানি তো। মানুষের রক্ত খায়, ঐগুলা না? অনেক মুভি দেখছি এইগুলা নিয়া।’

ও যে কতোটুকু জানে বোঝা শেষ আমার। হাতের সিগারেটটা ওর হাতে দিয়ে আমার কম্পিউটারের দিকে তাকাই আমি। একটা মুভি ডাউনলোড হচ্ছে। সেটাকে পস করে গুগলে ঢুকি আমি।

ভ্যাম্পায়ার লিখে সার্চ দিতেই অনেক তথ্য ভেসে আসে মনিটরে। একটা একটা করে চোখ বুলাই সবকটার শিরোনামে।

‘উদ্যান,’ উদ্যানের দিকে তাকিয়ে বলি আমি, ‘দোস্ত, খাইছে রে!’

‘কি হইছে?’ উৎসুক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে ও।

‘আমি কোন দুনিয়ায় ঢুকলাম!’ মাথা চুলকে বললাম আমি, ‘পুরো পৃথিবীতে দেখি ভ্যাম্পায়ারের অভাব নাই।’

‘কস কি?’ অবাক হয়ে যায় ও।

‘হ্যাঁ,’ একটা আর্টিকেলের দিকে আংগুল তুলি আমি, ‘এটা দেখ। রিয়েল ভ্যাম্পায়ার! যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ২৯ বছর বয়সী মেয়ে মিশেল, যার প্রতি সপ্তাহে ৩৬ লিটার রক্ত না হলে চলেই না! আবার এইখানে দেখ, যুক্তরাজ্যের সাউথ ওয়েলসে পিরেটা ব্লেজ ও অ্যান্ডি ফ্লিথ, স্বামী-স্ত্রী। এরাও একজন আরেকজনের রক্ত খায় করে। লিয়া ও অ্যারো নামের আরো দুইজন আছে। এরাও স্বামী-স্ত্রী। কাহিনী তো কিছুই বুঝতেছি না।’

মাথা হ্যাং হয়ে যাবে দেখছি! একটা ওয়েবসাইটে এধরনের মানুষের একটা ছোটখাট লিষ্টও আছে! এরা সবাই রক্তপান করে! মানুষের রক্ত!

‘দোস্ত,’ আমার দিকে তাকিয়ে বলে উদ্যান, ‘আমার ঘুম আসতেছে। আমি যাই।’

‘দুররর,’ খেঁকিয়ে উঠি আমি, ‘ভাগ এখান থেকে। শালা! একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখতেছি, পাবলিক ঘুমাইবো!’

'তুই তো শালা সাইকো একটা," বলে উঠলো উদ্যান, 'তোর কাছে যা ইন্টারেষ্টিং লাগে, আমার কাছে সেইগুলা অখাদ্য লাগে।'

অগ্নিদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম আমি। কোনপ্রকার বিকার দেখা গেলো না ওর চেহারায়। হেলেদুলে উঠে পড়লো ও। আবার মনিটরের দিকে মনোযোগ দিলাম আমি।

যতোই পড়ছি, ততোই অবাক হয়ে যাচ্ছি। কোন দুনিয়ায় বাস করি আমি! এতো রিয়েল ভ্যাম্পায়ার?

একটা আর্টিকেল নজর কাড়লো আমার, এক বিজ্ঞানীর লেখা এটা। এখানে তিনি দাবী করেছেন, তিনি এমন একটি বংশগত রোগ খুঁজে পেয়েছেন যার সাথে ভ্যাম্পায়ারের কাহিনীর মিল রয়েছে। পোরফিরিয়া নামের এই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের হিমোগ্লোবিনে অস্বাভাবিকতা দেখা যায় এবং এর উপশম করতে রোগীর মাঝে রক্ত পান করার ইচ্ছে জাগে।

আরো ভালোভাবে খুঁজতেই দেখতে পেলাম, এই দাবীটি তিনি করেছিলেন ১৯৮৫ সালে। অবশ্য পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু পোরফিরিয়ার আসল যেসব উপসর্গ আছে, তার মাঝে একটি হলো খুব কম সময়ের মাঝে সূর্যের আলোয় ত্বকে ফোস্কা পড়ে যাওয়া। আরেকটি উপসর্গ হলো তাদের মুত্রে রক্তের উপস্থিতি, যা থেকে অন্যদের মাঝে সন্দেহ হতে পারে যে রোগী রক্ত পান করেছে।

আরো কয়েকটা রোগের নাম এবং উপসর্গ পাওয়া গেলো, যেগুলো মানুষকে ভ্যাম্পায়ারের মতো আচরন করতে বাধ্য করে। অ্যালিয়ামফোবিয়া হলে রোগী রসুনের কথা চিন্তা করলেই অস্থির হয়ে পড়েন। খাবারে রসুনের চিহ্ন দেখলেই দূরে পালিয়ে যান তারা। রসুনের কাছে এলে প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হয়ে থাকেন অনেকেই। ইসোপট্রোফোবিয়া অথবা ক্যাটোপট্রোফোবিয়া হলে মানুষ আয়নার সামনে আসতে ভয় পায়। অ্যারিদমোম্যানিয়া নামের একটি রোগ আছে, যেটা হলে মানুষ তার আশেপাশে সবকিছু গুণতে ব্যস্ত থাকে। হাইপোহাইড্রোটিক এক্টোডার্মাল ডিসপ্লাসিয়া নামের একটি দুর্লভ বংশগত রোগ আছে যেখানে রোগীর দাঁতের বৃদ্ধি হয় অস্বাভাবিক। তাদের ক্যানাইন দাঁত বাদে অন্য দাঁতগুলো অনেক সময় একেবারেই গজায় না। আর গজালেও সেগুলোও হয় ক্যানাইনের মতো সূঁচালো। জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম হলে সূর্যের আলোতে বের হতে পারে না মানুষ। এ সমস্যা যাদের থাকে, তাদের জিনের ক্ষমতা থাকে না সূর্যের আলোর অতিবেগুনী রশ্মি সহ্য করার, ফলে মানুষ সূর্যের আলোয় গেলেই তার ত্বকে ফোস্কা পড়ে যায়। একদম কম আলোতে গেলেও তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি ঘরের ভেতরের আলোতেও মাঝে মাঝে তাদের সমস্যা হয়।

নাহ! ব্যপারটা আসলেই ইন্টারেস্টিং! আরো ঘাটতে হবে। হয়তো এসবের উপর নতুন কোন প্লট বানিয়ে গল্প লেখা যাবে।

০৫

‘তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?’ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো ইন্দু। কফির মগটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো ও।

‘কেমন দেখাচ্ছে?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম আমি।

‘কেমন যেন,’ ধীরে ধীরে জবাব দিলো ও, ‘ঠিক বোঝাতে পারবো না। খুবই ক্লান্ত, একটু মনে হচ্ছে দিশেহারা, এই রকম আর কি।’

‘আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম,’ ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম আমি, ‘নতুন গল্পটার জন্য খাটতে হচ্ছে আর কি। অনেককিছু নিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে।’

‘কি নিয়ে লিখবে এবার?’ প্রশ্ন করলো ও।

‘ভ্যাম্পায়ার,’ শান্তভঙ্গিতে জবাব দিলাম আমি, ‘তোমার কাছ থেকে ঐ কাহিনী শোনার পর ব্যপারটা নিয়ে ঘাটছি আমি। ইন্টারেস্টিং একটা বিষয়। তাই ভাবলাম এটা নিয়ে কিছু লেখা যাক। খুনাখুনির গল্প তো অনেক হলো, এবার একটু ট্র্যাক চেঞ্জ করা দরকার।’

‘গুড,’ খুশী হলো ও, ‘মাঝে মাঝে ট্র্যাক চেঞ্জ করা ভাল। এক ধারায় থেকে নতুনত্ব আনা যায় না।’

‘তাই আর কি,’ ওর কথার সাথে একমত হলাম আমি।

‘শুভ,’ একটু ইতস্ততবোধ করলো ও, তারপর বললো, ‘তোমাকে একটা কথা বলি?’

‘হ্যাঁ, বলো।’ ওর দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম আমি।

‘মানে, আসলে,’ মাথা নিচু করে ফেললো ও, ‘আমি বলতে চাইছিলাম কি, লিখবেই যখন, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকলে ভাল হয় না?’

‘মানে?’ বুঝতে পারলাম না আমি।

‘মানে হচ্ছে,’ কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো ও, ‘না থাক। বাদ দাও।’

‘আরে বলো তো,’ নাছোড়বান্দার মতো বললাম আমি।

‘বাদ দাও না,’ অসহায়ের মতো মুখ করে বললো ও। যেন বিব্রতবোধ করছে।

‘বলে ফেলো,’ জোড় করলাম আমি, ‘আমার কাছে বলবে না তো কার কাছে বলবে?’

আরো কিছুক্ষন ইতস্তত করলো ও। তারপর বললো, ‘আমি বলছিলাম যে, এই ব্যাপারে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হলে ভাল হয় তোমার জন্য। মানে, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখার মজাই আলাদা। অনেক লেখকই এই কাজ করে থাকেন।’

বেশ কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম আমি। ধীরে ধীরে হাসি ফুটে উঠছে আমার মুখে।

‘তা ঠিক,’ ওর মুখটাকে দুহাতে তুলে উচু করে বললাম আমি, ‘এটা একটা ভাল কথা বলেছো তুমি। অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে।’

হাসি ফুটে উঠলো ওর মুখেও। বললো, ‘আমি জানতাম তুমি এটাই চাইবে। প্রতিটি শিল্প, সেটা যা নিয়েই হোক না কেন, সেখানে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা খুবই কাজে দেয়।’

‘তা তো অবশ্যই,’ উৎসাহ দিলাম আমি, ‘অবশ্যই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে। এই যে দেখো, আমি নিয়মিত থ্রিলার লিখি। বিশেষ করে সাইকো থ্রিলার। সেগুলোতে প্রচুর খুন-খারাপীর বর্ণনা থাকে, হিংস্রতার বর্ণনা থাকে। কোনটার সাথে কোনটার বর্ণনার মিল পাবে না তুমি। এগুলো কি এতো সহজেই আসে?’

‘যা ভেবেছিলাম,’ হাসি হাসি মুখে বলে উঠলো ও, ‘আমিও এই কাজে বিশ্বাস করি। এই যে দেখো আমার লিথোগ্রাফি, এখানেও এই কথা প্রযোজ্য। এখানে প্রচুর অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। আর সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কি কি না করতে হয়েছে আমাকে! কতোজনকে হত্যা করতে হয়েছে আমার। এতোদিনে আমি সঠিক মানুষটিকে খুঁজে পেয়েছি।’

‘মানে?’ ভ্রু কুঁচকে করলাম আমি, ‘তুমিও?’

‘অবশ্যই,’ দুহাত দিয়ে আমার হাতটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ও। ওর তৈরী করা লিথোগ্রাফির দিকে ইঙ্গিত করে বললো, ‘না হলে এগুলো এতো নিখুঁত হতে পারতো? এখানে যে কয়টা লিথোগ্রাফ দেখছো, সবগুলোতে যে ছেলেগুলো আছে, তারা বাস্তবেও ছিল। যদিও এখন আর নেই একজনও। এদের প্রত্যেককেই আমি নিজে চিনতাম। ভেবেছিলাম যে রক্ত পান করে সবগুলোকে ছেড়ে দেবো। কিন্তু এগুলো একটাও আমার মতো ছিল না। একবার করে রক্ত পান করার পরেই ওরা ঘাবড়ে গিয়েছিল। তাই নিজেকে বাঁচাতে সবগুলোকেই শেষ করে দিতে হয়েছে আমার। সবগুলোর শরীরের শেষবিন্দু পর্যন্ত রক্ত টেনে নিয়েছি আমি।’

‘এর মানে তো আমাকেও মেরে ফেলবে তুমি,’ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম আমি, ‘তাই না?’

‘আরে নাহ,’ খিল খিল করে হেসে উঠলো ও, ‘কি যে বলো! তোমাকে কেন মেরে ফেলবো? আমরা এই জিনিসটা নিজেদের উপর টেষ্ট করতে পারি। তুমি আমার রক্ত নেবে, আমি তোমারটা। তোমার রক্ত পান করার অভিজ্ঞতা আমি ব্যবহার করবো আমার মতো করে, আর আমার রক্ত পান করে সেই অভিজ্ঞতা তুমি তোমার মতো করে ব্যবহার করবে। চমৎকার বুদ্ধি না?’

‘অবশ্যই,’ আরো উৎসাহ দিলাম আমি ওকে, ‘অবশ্যই চমৎকার। তবে, আমার চেয়ে তো তোমার অভিজ্ঞতা এ লাইনে বেশী। আচ্ছা, কবে থেকে রক্ত পান করছো তুমি বলো তো?’

‘তিন বছর,’ বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে জবাব দিলো ও।

‘তিন বছর!’ অবাক হলাম আমি, ‘মাই গড! অনেকদিন তাহলে!’

‘হ্যাঁ,’ উৎসাহ পেয়ে যেন কথার তুবড়ি ছোটালো মেয়েটা, ‘জানো, প্রথম প্রথম বিষয়টা আজব লাগতো আমার কাছে। প্রথম যখন ড্রাকুলা পড়ি আমি, অবাক হয়ে যাই। আমি ভাবতাম, মানুষ কিভাবে আরেকজনের রক্ত পান করতে পারে! তারপর এই ব্যাপারে পড়াশোনা শুরু করি আমি। ধীরে ধীরে এটা আমার নিজের মধ্যে ধারন করি। এই বিষয়টা আমার প্যাশনে পরিনত হয়। তারপর প্রথম যখন একজনের রক্ত পান করি, উফফ! কি বলবো তোমাকে! দুর্দান্ত লাগলো! নিজেকে অন্যরকম মনে হতে লাগলো আমার। মনে হলো, আমি চেঞ্জ হয়ে গেছি। আমি আর আগের আমি নেই। আমি আর দশটা মানুষের মতো নই। আমি অন্য মানুষে পরিনত হয়েছি। পরিনত হয়েছি ভ্যাম্পায়ারে! অনুভুতিটা তোমাকে বোঝাতে পারবো না আমি।’

‘তাই না?’ ঠান্ডা গলায় বললাম আমি, ‘কিন্তু কথা কি জানো, আমি তোমার মতো করে ভাবতে পারিনি। তোমার মতো এই জিনিসটা প্যাশনে পরিনত হয়নি আমার। তাই আমি কারো রক্তপান করতে পারবো না।’

‘কি বললে তুমি?’ যেন চমকে উঠলো ইন্দু।

‘হ্যাঁ, ঠিক তাই,’ কথাটা বলেই পকেটে হাত দিলাম আমি। এখানে একটা ছুড়ি আছে।

সরাসরি ছুড়িটা ওর বুকের বামপাশে ঢুকিয়ে দিলাম আমি। একেবারে হৃদপিণ্ড বরাবর। আমূল গেথে গেছে ছুড়িটা ওর বুকে।

কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ও। তারপর তাকালো নিজের বুকের দিকে। তারপর আবার আমার দিকে তাকালো ও। দু’চোখে রাজ্যের বিস্ময়।

প্রথম যেদিন এই বাসায় আসি, সেদিনই ড্রাকুলাকে নিয়ে ওর উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করি আমি। সেই সাথে ওর নিজের করা লিথোগ্রাফের মধ্যে কিছুটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করি। ইন্টারনেটে লিথোগ্রাফ নিয়ে কিছুটা পড়াশোনা করেছিলাম, সেই সুবাদে লিথোগ্রাফের ব্যাপারে কিছু জিনিস জানতে পারি। সাধারনত লিথোগ্রাফে কোন ভায়োলেন্স থাকার কথা নয়। এটা একটা শিল্প, এখানে ভায়োলেন্স তেমন একটা আসে না।

কিন্তু ইন্দুর করা লিথোগ্রাফে ভায়োলেন্স জিনিসটাই প্রাধান্য পেয়েছে। ছেলেগুলোর যন্ত্রনাকাতর চেহারা আর মেয়েটার অস্পষ্ট চেহারা দেখে আমার মনে হয় যে, ছবিগুলো ইন্দুর নিজের জীবনেরই কিছু কাহিনী বর্ণনা করছে। পরবর্তীতে আরো কয়েকবার এখানে আসতে হয়েছে আমাকে। প্রতিবারই ভ্যাম্পায়ারদের নিয়ে আশ্চর্যরকম উৎসাহী মনে হয়েছে ওকে। যেন ভ্যাম্পায়ারদের করা নৃশংসতা ওকে আনন্দ দেয়।

এর মধ্যে এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছি আমি। প্রথমে ভেবেছিলাম যে গল্প লেখায় কাজে দেবে এগুলো। কিন্তু পরে ইন্দুর অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসের কথা মাথায় আসতে একটা সন্দেহের উদ্রেক হয় আমার মধ্যে। বুঝতে পারি, ও আসলে নৃশংসতার মধ্যে বিকৃত আনন্দ খুঁজে পায়। আর সেটার ছাপ ওর কাজের মধ্যেও পড়ে।

এরপরও বেশ কয়েকবার আসতে হয়েছে আমার এখানে। বাইরেও বেশ কয়েকবার দেখা করতে হয়েছে ইন্দুর সাথে। প্রতিবারই ধীরে ধীরে আমার ভেতরের সন্দেহটা বাড়তে থাকে আর বিভিন্ন আচরণে। আমার সন্দেহ অমূলক কি না, সেটা জানার কোন উপায় ছিল না, তাই এই অভিনয়টা করতে হলো আমাকে। পকেটে করে ছুড়ি নিয়ে আসাটাও সেই লক্ষ্যেই।

‘আমি কাউকে খুন করিনি আমার গল্পের জন্য,’ ঠান্ডাগলায় বললাম আমি, ‘কারন আমি যা লিখি, তার পুরোটাই আগে কল্পনা করতে ভালোবাসি। আমার প্রত্যেকটা কাজের আগেই কিছু প্ল্যান থাকে, যেগুলো ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাই আমি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই প্রথম কাউকে খুন করতে হচ্ছে। তাও আবার যাকে ভালবেসেছিলাম, তাকেই। বলতে গেলে নিজেকে রক্ষার তাগিদেই করতে হচ্ছে এটা। না হলে আমার অবস্থাও তোমার লিথোগ্রাফের ছেলেদের মতো হতো।’

কিছু একটা বলার চেষ্টা করলো ও। কিন্তু পারলো না। আমার চোখের সামনে মেঝেতে ঢলে পড়লো মেয়েটা।

ইন্দুর দিকে তাকালাম আমি। সবুজাভ চোখের মনিগুলো স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মারা গেছে ও। নিজের হাতে আমার ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে শেষ করে দিতে হবে, তা কখনো ভাবিনি।

০৬

বেশ শব্দ করে একটা প্লেন উড়ে গেলো আকাশ দিয়ে। সেদিকে তাকিয়ে আছি আমি। এই দৃশ্যটা চমৎকার লাগে আমার কাছে। সেই সাথে আছে রাতের মৃদুমন্দ হাওয়া। আছে এক আকাশ তারা, হাতে জ্বলছে সিগারেট। মন ভাল করে দেবার জন্য আর কি চাই?

‘দোস্ত,’ পেছন থেকে বলে উঠে উদ্যান, ‘ম্যাচ আছে না?’

‘আছে,’ প্যান্টের পকেটে হাত দিই আমি।

আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে উদ্যান। একহাতে সদ্য প্যাকেট থেকে বের করা আনকোরা সিগারেট, অন্যহাতে মোবাইলে টেপাটেপি করছে। ফেসবুক চালাচ্ছে সম্ভবত। পারফেক্ট শিকার আমার জন্য।

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিল ইন্দু। অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে। প্রথম অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে আমার ইন্দুর রক্তে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি আমি। শেষ রক্তবিন্দুটুকু টেনে নিয়েছিলাম আমি। কিন্ত পিপাসা মেটেনি আমার। বরং বেড়েছে।

দেখি পিপাসাটা মেটানো যায় কি না। সেই সাথে আরো অভিজ্ঞতা প্রয়োজন আমার।

নেক্সট গল্প লিখতে সুবিধা হবে!
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×