somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইয়িদ রফিকুল হক
আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

জিয়ার নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাজাকার-সমাবেশ হয়েছিল! আপনি কি তা জানেন?

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জিয়ার নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাজাকার-সমাবেশ হয়েছিল! আপনি কি তা জানেন?
সাইয়িদ রফিকুল হক

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে। এটি বাঙালি-জাতির কাছে একটি গৌরবজনকস্থান। এখান থেকেই বাঙালি-জাতির জনক স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আর স্বাধীনতার সেই ঘোষণাসম্বলিত ঐতিহাসিক ভাষণে গর্জে উঠে বলেছিলেন:

“আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায় রাখতে পারবে না।...রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, তবু এ-দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।”

কিন্তু এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই তৎকালীন সামরিকজান্তা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালের ৭ই মার্চ ‘রাজাকার-সম্মেলন’ বা ‘রাজাকার-সমাবেশ’ হয়েছিল! আর এই ‘রাজাকার-সমাবেশে’র প্রধান পৃষ্ঠপোষকও জিয়াউর রহমান। তার নেতৃত্বেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেদিনের এই ‘রাজাকার-সমাবেশ’। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই ‘রাজাকার-সমাবেশে’র নাম দেওয়া হয়েছিল “ইসলামী জলসা”। দিনদুপুরে তাদের সেই কথিত ‘ইসলামিক জলসা’র আয়োজন করা হয়। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একদিন স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয়। আর সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭৬ সালের ৭ই মার্চে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় রাজাকারদের সমন্বয়ে আয়োজন করা হয় কথিত ‘ইসলামী জলসার’! এতে দর্শক-শ্রোতা হিসাবে হাজির হয়েছিল ‘জামায়াত-শিবিরে’র সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং দেশের সর্বস্তরের রাজাকারগং। আর এখানে, উল্লেখ্য যে, সেই সময় দেশে পুরোপুরি সামরিক আইন চলছিল। আর সেই সামরিক আইনবলে দেশে সভাসমিতি ও মিটিং-মিছিল করা একেবারে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু রাজাকাররা, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের আশীর্বাদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক স্থানে প্রকাশ্য দিবালোকে ‘ইসলামী জলসা’র নামে জনসভা তথা ‘রাজাকার-সমাবেশ’ করেছিল! কী বুঝলেন? দেশ তখন কোনদিকে চলছিল?

এই ‘রাজাকার-সমাবেশে’ ‘সভাপতি’ হিসাবে সেদিন উপস্থিত ছিল আমাদের দেশের কুখ্যাত রাজাকার-আলবদর দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। আর ‘প্রধান অতিথি’ হিসাবে উপস্থিত হয়েছিল জিয়াউর রহমানের ডেপুটি এম জি তোয়াব। আরও উপস্থিত ছিল পাকিস্তান ও লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতগণ। এই ‘রাজাকার-সমাবেশে’ যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ অনেক রাজাকারই বক্তব্য রেখেছিল সেদিন। আরও বিশেষ বক্তব্য রেখেছিল প্রধান অতিথি হিসাবে জিয়াউর রহমানের উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এম জি তোয়াব। এই ‘ইসলামী জলসা’র ব্যানারে আর ‘রাজাকার-সমাবেশে’ স্লোগান দেওয়া হয়েছিল:

“তোয়াব ভাই তোয়াব ভাই, চাঁন-তারা পতাকা চাই।”
“তোয়াব ভাই তোয়াব ভাই, চাঁন-তারা পতাকা চাই।”
“তোয়াব ভাই তোয়াব ভাই, চাঁন-তারা পতাকা চাই।”...

(আরও অনেক স্লোগান ছিল। পরবর্তীতে তথ্যপ্রমাণসহ সেগুলো তুলে ধরা হবে।)



ওই সময়কার সেই ‘রাজাকার-সমাবেশ’ তথা কথিত ‘ইসলামী জলসা’য় সমাগত ‘মুসলিম-রাজাকার-জনতা’র পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে কথিত “ছয়-দফা” দাবিনামা উত্থাপন করা হয়। আর এই কথিত “ছয়দফা-দাবিদাওয়া” উত্থাপন করেছিল সেদিনের ‘রাজাকার-সম্মেলনে’র সভাপতি ও যুদ্ধাপরাধী দোলোয়ার হোসেন সাঈদী।

‘রাজাকার-সমাবেশে’র রাজাকারদের কথিত ৬টি দাবি ছিল:

১. দেশের নাম হতে হবে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’।
২. ‘জাতীয় পতাকা’ বদলাতে হবে।
৩. ‘জাতীয় সংগীত’ বদলাতে হবে।
৪. ‘শহীদ মিনার’ ধ্বংস করতে হবে।
৫. দেশের ‘সংবিধান’ পরিবর্তন করতে হবে।
৬. ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে এবং ইসলামিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

১৯৭৬-এর ওই ‘রাজাকার-সমাবেশ’ থেকে দাবিকৃত সকল দাবি জিয়াউর রহমান মানতে সাহস পায়নি। তাই, এর থেকে শেষের দুইটি মেনে নিয়েছিলেন। এজন্য তাকে বারবার সংবিধান কাটাছেঁড়া করতে হয়েছে। আর সংবিধানের অনেক ধারা-উপধারা বাতিল করতে হয়েছিল। আর ‘বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে শুরু হওয়া’ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালও ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। সংবিধানের রাষ্ট্রীয় ‘চার-মূলনীতি’ বাতিল করা হয়। রাজাকারদের খুশি করতে এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানী ভাবধারা ফিরিয়ে আনার মানসে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ সংযোজন করা হয়।
একমাত্র জিয়াউর রহমানের আশ্রয়েপ্রশ্রয়ে সেই সময় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো জায়গায় রাজাকাররা সমাবেশ করার দুঃসাহস দেখিয়েছিল! আর চরম ধৃষ্টতা ও সীমাহীন ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে উপর্যুক্ত ৬টি ঘৃণ্য ও রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক দাবি উত্থাপন করতে পেরেছিল। জাতির ইতিহাসে এটি একটি কলংকিত অধ্যায়।

পাঠক, বুঝতে পেরেছেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ‘ছয়দফা’কেও কলংকিত করার জন্য রাজাকারগং ১৯৭৬ সালের ৭ই মার্চ রাজাকার-সম্মেলনে পেশকৃত ৬টি রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক দাবিদাওয়াকে ছয়টি দফার মতো করে ঘোষণার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক “ছয়-দফা” ছিল পাকিস্তানের জন্য আতংকস্বরূপ। তাই, সেদিন ওরা চরম ধৃষ্টতার সঙ্গে দেশবিরোধী ৬টি দাবি পেশ করেছিল।

সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য সেদিন ওরা ‘রাজাকার-সমাবেশে’র নাম দিয়েছিল: ইসলামী জলসা, সীরাত মাহফিল, সীরাত সম্মেলন। আসলে, সবকিছুকে ছাপিয়ে এর আড়ালে এটা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের প্রথম আনুষ্ঠানিক জনসভা এবং সর্বস্তরের যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের পুনর্মিলনী।

সেদিনের শাসকের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে ত্রিশ লক্ষ শহীদের ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বাংলাদেশে এমন একটা কুৎসিত ও জঘন্য কাজ করতে সমর্থ হয়েছিল ওরা। কিন্তু আর নয়। চিরদিন আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারগংদের বিরুদ্ধে।
আসুন, আমরা দৃপ্তকণ্ঠে বলি:

রাজাকারদের কোনো ছাড় নেই।
রাজাকারদের কোনো ক্ষমা নেই।


তথ্যপঞ্জি সংগ্রহে যাদের কাছে ঋণী:

১. তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ০৮-০৩-১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ।
২. বাঙলাদেশ, বাঙালি ও বাংলাদেশি, নির্বাচিত প্রবন্ধ (ড. আনিসুজ্জামান, ১৪৯-১৫০)।
৩. আরও তথ্য-কৃতজ্ঞতা: শহীদ-সন্তান জাহিদ রেজা নুর ভাই।
৪. আরও কৃতজ্ঞতা-স্বীকার: বিশিষ্ট কলামনিস্ট সুভাষ সিংহ রায়।

ছবি: গুগল ও নিজস্ব এডিট


সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা।
৩০-০৩-২০২৪

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৭:৪৯
১৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×