বিদেশে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের দুঃসংবাদগুলো শুনতে শুনতে যে প্রবাসীরা দেশ সম্পর্কে ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, তাদের মুখেই আবার উ"চরিত হ"েছ বাংলাদেশ সম্পর্কে গৌরব আর আশার বাণী। গর্বে আর আনন্দে তাদের হূদয় ভরে উঠেছে। শুক্রবার নরওয়ের টেলিভিশনে বাংলাদেশের কৃতী সন-ান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল শান-ি পুরস্কর পাওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই আনন্দের বান ডাকে প্রবাসী বাংলাদেশী এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে। ইউরোপের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ড. ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক ও এর দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির ব্যাপক প্রচারে অভিভূত হয়ে পড়েন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
বিশ্বময় ব্রিটিশ মিডিয়া শক্তিশালী একটি গণমাধ্যম। ব্রিটিশ ব্রড কাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) শুধু স্থানীয় চ্যানেলই নয়, বিশ্ব সার্ভিসে নোবেল শান-ি পুরস্কার প্রাপ্ত বাংলাদেশের গ্রমীণ ব্যাংক আর ড. ইউনূসের কর্মকাণ্ড প্রচার করতে থাকে নিরব"িছন্নভাবে।
ড. ইউনূসকে ব্রিটেনের সংবাদ মাধ্যমে দেখানোর পাশাপাশি তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে দারিদ্র্যকে যারা জয় করেছেন তাদের অনেককেই দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশ্বের নানা দেশে ড. ইউনূস উদ্ভাবিত ক্ষুদ্র ঋণ পদ্ধতি অনুসরণের কথা।
ইউরোপের প্রতিটি দেশের প্রধান সবকটি জাতীয় পত্রিকার 14 অক্টোবর সংখ্যায় বাংলাদেশের এ গর্বিত মানুষ ড. ইউনূস সংবাদ শিরোনাম হন। এতে প্রবাসী বাঙালিরা আরও গর্বিত বোধ করেন। যে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো খবর এসব পত্রিকায় কোনদিন ছাপাতে দেখা যায়নি, তারাই আজ ড. ইউনূস আর বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামী পুর"ষকে নিয়ে এমন উ"ছ্বাসে বাঙালিদের মধ্যে পত্রিকা কেনার হিড়িক পড়ে যায়।
লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিস্টে অধ্যয়নরত এক বাঙালি তর"ণ এই প্রতিবেদকের কাছে তার অনুভূতির কথা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এমন একটি সংবাদ আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল প্রথমে। অসংখ্য বিদেশী বন্ধু উ"ছ্বসিত হয়ে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। সে সময় মনে হ"িছল, আমিই বোধ হয় ড. ইউনূস।
বাংলাদশের নোবেল শান-ি পুরস্কারটি লাভ করায় অনেক শ্বেতাঙ্গকে উ"ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ব্রিটেনে ছড়িয়ে থাকা 10 হাজার বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টের গ্রাহক হ"েছন সেই শ্বেতাঙ্গরা। শনিবার ব্রিটিশ পত্রপত্রিকাগুলো ড. ইউনূস সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ করার পর রেস্টেুরেন্টের শ্বেতাঙ্গ কাস্টমাররা গর্বের সঙ্গে বাঙালিদের অভিনন্দন জানান। প্রতিনিয়তই এই শ্বেতাঙ্গ গ্রাহকরা বাংলাদেশের কোন না কোন নেতিবাচক সংবাদ নিয়ে রেস্টুরেন্টে কর্মরত বাঙালিদের সঙ্গে আলোচনা করতেন।
লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান, দ্য টাইমস, ইনডিপেনডেন্ট, দ্য টেলিগ্রাফ, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, ডেইলি মেইলসহ সব পত্রিকা ড. ইউনূসের নোবেল শান-ি পুরস্কারের সংবাদ গুর"ত্ব সহকারে ছেপেছে।
ব্রিটেনের বহুল প্রচারিত খবরের কাগজ দ্য ইনডিপেনডেন্ট দু'পাতা জুড়ে ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছে। ইনডিপেনডেন্ট শিরোনাম করেছে 'দ্য ব্যাংকার হু চেঞ্জড দা ওয়ার্ল্ড'। নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের পাশাপাশি মনজু বেগম ও সাহেরা খাতুন নামে দু'মহিলার ছবি ছাপিয়েছে, যারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্দনির্ভরশীল হওয়ার জন্য মোরগ পালনের খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ শিরোনাম করেছে, 'নোবেল পিস প্রাইজ ফর ব্যাংকার টু দ্য পুওর'।
অস্ট্রিয়া থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক ওস-ারাইন্ট, ক্রওনেন সাইতুং, বিপ্রেসে স্ট্যান্ডার্ড করিয়াসসহ অন্যান্য পত্রিকা ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমকে প্রধান শিরোনাম করেছে।
ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন, নরওয়ে, সুইডেন, হল্যান্ড, সুইারল্যান্ডসহ ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রথম পাতায় বাংলাদশের এই গর্বিত মানুষটির খবর ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
ফ্রান্সের টিএস ওয়ান টেলিভিশন চ্যানেলে গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ফ্রান্সের একটি প্রভিন্সে দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসূচিকেও দেখানো হয়। তাছাড়া এসআর থ্রি, ফ্রান্স দোয়া, এম সিক্স প্রভৃতি টেলিভিশন চ্যানেল খবরটি তাৎক্ষণিকভাবেই তুলে ধরে। ফ্রান্সের জাতীয় দৈনিকের মধ্যে ফ্রান্সচোয়ার 'লিভারেসিউ', 'লা মেনদে' প্রভৃতি পত্রিকায় গুর"ত্বসহকারে ড. ইউনূসের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।
1997-98 সালে ইতালি সরকার বসনিয়াতে আর্থিক সাহায্য করলে ড. ইউনূস সে প্রকল্পের জন্য কাজ করেন। তখন বেশ কয়েকদিন সেখানে তিনি অবস্থান করেন। তার সম্পর্কে '97 সালে ফ্রান্সে আলেজলি নামক এক খ্যাতিমান লেখক বই প্রকাশ করেন। এতে গ্রামীণ ব্যাংকের বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন কর্মসূচির কথা লেখা হয়। বইটি ইতালির লেখক অস্টারদোরনেতি অনুবাদ করেন এবং বইটির নামকরণ করেন 'দরিদ্রের ব্যাংকার ড. ইউনূস'। এটি 1998 সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়া বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি ভাষায় তার সম্পর্কে অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। নোবেল শান-ি পুরস্কার পেয়ে ড. ইউনূস বিশ্বময় দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রনায়ক হিসেবে নতুনভাবে আবিভর্ূত হলেন।
যুগান্তর
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



