আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাঐক্যজোটে যোগ দেয়ার পর থেকেই বেশ খোশ মেজাজে রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ। মঙ্গলবার দিনভর তিনি বারিধারার নিজ প্রেসিডেন্ট পার্কের ফ্ল্যাটে কাটিয়েছেন। ছিলেনও টেনশনমুক্ত। সবার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলেছেন। দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। রাগ-ক্ষোভ ভুলে গিয়ে সবাইকে একই সঙ্গে আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস'তি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির অনেক সিনিয়র নেতা, রংপুরসহ জেলা পর্যায়ের নেতারা এরশাদের বাসায় ফুল ও মিষ্টি নিয়ে আসেন। সব ধরনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মহাঐক্যজোটে শরিক হওয়ায় তারা দলের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান। বিদেশ থেকেও অনেকে ফোন করে শুভে"ছা জানান সাবেক রাষ্ট্রপতিকে। তবে সাংবাদিকরা এরশাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি।
দলের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাঐক্যজোটে শরিক হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তারা প্রথমবারে মতো ঐক্যবদ্ধভাবে দেশব্যাপী হরতালের কর্মসূচি পালন করবেন। কর্মসূচি সফল করার জন্য পার্টি চেয়ারম্যান দলের নেতাকমর্ীদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে মাঠে নামার জন্য বলেছেন।
বেলা 11টায় ছোট ভাই ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের এরশাদের সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, অনেকদিন পর তার ভাইকে দেখে বেশ প্রাণবন- মনে হয়েছে। মহানগর সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, পার্টি চেয়ারম্যান বেশ খোশ মেজাজে রয়েছেন।
পার্টি চেয়ারম্যানের মতোই খোশ মেজাজে রয়েছেন কাজী জাফর আহমদ, র"হুল আমিন হাওলাদার, জিএম কাদেরসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এরশাদের মহাঐক্যজোটে যাওয়ার সিদ্ধান-ে খুশি দলের মাঠপর্যায়ের কমর্ীরাও। তারা বলেছেন, ঝঞ্ঝামুখর রাজনৈতিক জীবনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ এই প্রথম একটি সঠিক সিদ্ধান- নিয়েছেন।
মহাঐক্যজোটে যোগ দেয়ার আনন্দে এরশাদসহ জাতীয় পার্টির বেশির ভাগ নেতাকমর্ী খুশি হলেও বিষণ্ন স্ত্রী রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। চার দলের মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার সিদ্ধান- থেকে শেষ মুহূর্তে পিছু হঠলেও এখনও হাল ছাড়েননি রওশন এরশাদ। স্বামী এরশাদকে সঙ্গে নিয়েই ভবিষ্যতে চার দলে শরিক হওয়ার বিষয়ে তিনি এখনও আশাবাদী।
রাষ্ট্রপতি পদ, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমপক্ষে 58টি আসনে ছাড় এবং সরকার গঠনের পর সংখ্যানুপাতিকহারে মন্ত্রিত্ব_ এই তিন বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে চূড়ান- আশ্বাস পাওয়ার পরই এইচএম এরশাদ মহাঐক্যজোটে যাওয়ার সিদ্ধান- নেন বলে জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, রোববার রাতে গুলশানের একটি বাড়িতে এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের তিন শীর্ষ নেতা এরশাদকে এসব বিষয়ে আশ্বস- করেন। এরপরই তিনি সোমবার পল্টনে 14 দলের মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার সিদ্ধান- চূড়ান- করেন। সে আনুযায়ী দলের নেতাকমর্ীদেরও মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ মঙ্গলবার যুগান-রকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠনসহ একটি পূর্ণাঙ্গ সমঝোতা হয়েছে। আর এ সমঝোতার ভিত্তিতেই তারা মহাঐক্যজোটে শরিক হয়েছেন। তবে কি সব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে_ তা এখনই বলার সময় হয়নি বলে মন-ব্য করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম র"হুল আমিন হাওলাদার যুগান-রকে বলেন, এইচএম এরশাদকে দলের নেতাকমর্ীরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চান। তবে এ মুহূর্তে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে মহাঐক্যজোটের সরকার গঠন করে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করাই হ"েছ জাতীয় পার্টির মূল এজেন্ডা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য বিদিশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হতে পারে। এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে 14 দলের নেতৃত্বাধীন মহাঐক্যজোটে যোগদানের পর বিদিশার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। জানা গেছে, দলের অনেক সিনিয়র নেতা বিদিশাকে দলে ফিরিয়ে আনতে চান। তারা বিদিশার অব্যাহতি প্রদানের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য দলের চেয়ারম্যান এরশাদকে অনুরোধ করবেন। তবে তারা এ ব্যাপারে চূড়ান- সিদ্ধান- গ্রহণের আগে প্রকাশ্যে কোন মন-ব্য করতে চাননি। এ ব্যাপারে বিদিশা প্রথমে কোন মন-ব্য করতে না চাইলেও পরে বলেন, দল ফিরিয়ে নিতে চাইলে তিনি ভেবে দেখবেন।
2004 সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে এরশাদ বিদিশাকে তালাক দেন এবং একটি চুরির মামলা দিয়ে জেলে পাঠান। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ থেকে বিদিশাকে অব্যাহতি প্রদান করেন। বিদিশা তখন এসব ঘটনার জন্য বিদায়ী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে দায়ী করেন। গ্রেফতারের পর বিদিশার ওপর পুলিশি নির্যাতনও করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বন্দি জীবন থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিদিশা গুলশানের নিকেতনে নিজের ফ্ল্যাটে এরিক এরশাদকে নিয়ে বসবাস করছেন। পাশাপাশি তিনি গাইবান্ধা-1 আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস'তি নি"েছন। তবে এরশাদের 14 দলে যোগদানকে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেন। বিদিশা বলেন, দেশের অবস্থা ভালো নয়। মানুষ ভালো নেই। সবাই পরিবর্তন চায়। এরশাদ সাহেব বিষয়টি বুঝতে পেরেই বিএনপির সঙ্গে যাননি। তার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


