আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলন ও নির্বাচনের মহাঐক্যজোট গঠনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুর" হলো নতুন মের"করণের প্রক্রিয়া। বিএনপি-জামাত ছাড়া দেশের সবকটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল যোগ দিয়েছে এই মহাজোটে। ছোট ছোট যে দুএকটি দল এখনো মহাজোটের বাইরে আছে তাদেরও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াস চলছে। ফলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির যে দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন 14 দল তা এখন পরিণত হয়েছে সার্বজনীন দাবিতে । জোরালো হয়ে উঠেছে আন্দোলনের গতিও। আর রাজনীতির ময়দানে রীতিমতো একঘরে হয়ে পড়েছে বিএনপি-জামাত জোট। স্বভাবতই মহাজোট গঠনের সাফল্যে দার"ণ চাঙ্গা আওয়ামী শিবির। আর কোণঠাসা বিএনপি-জামাত। জনসমর্থন ও সাংগঠনিক শক্তির ভারসাম্য আওয়ামী লীগের দিকে হেলে পড়ায় রীতিমতো বেসামাল হয়ে পড়েছে বিএনপি-জামাত।
সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোমবার রাজধানীর পল্টন ময়দানে বিশাল মহাসমাবেশ করে 14 দল। লাখো মানুষের সমাগমে গোটা পল্টন ময়দান ও এর আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। মহাসমাবেশে বিপুল জনসমাগমকে আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থন
বৃদ্ধির পরিমাপক হিসেবেও দেখছেন অনেকে। কিন' তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো মহাসমাবেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, এলডিপি সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদর"দ্দোজা চৌধুরী, জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোসত্দফা আমীর ফয়সল, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীর যোগদান। মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন ও নির্বাচনের মহাঐক্যজোট গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এরশাদ-বদর"দ্দোজা চৌধুরীসহ অন্য শীর্ষ নেতারা এই মহাজোটের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। এভাবেই সূচিত হয় মহাজোটের অগ্রযাত্রা।
উল্লেখযোগ্য দলগুলোর মধ্যে এখনো মহাজোটের বাইরে আছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি), কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। নানা মতপার্থক্যের কারণে সিপিবি 14 দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও অনেক দিন ধরেই 14 দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে আসছে। যে কোনো সময় তারা মহাজোটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপি আগামী দুএকদিনের মধ্যেই যোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে। জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম এর সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বর্তমানে মহাজোটের বিকল্প নেই। মহজোটে আনার ব্যাপারে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কথাবার্তা চলছে বলে জানা গেছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের গণতন্ত্রকামী সকল দলই মহাঐক্যজোটের মহাস্রোতে শামিল হতে যাচ্ছে।
14 দলের এই মহাজোটের অগ্রযাত্রায় একঘরে বিএনপি-জামাত এখন প্রায় দিশেহারা। কারণ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে সবগুলো দল একাট্টা হয়ে মাঠে নামায় তাদের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিঙের পরিকল্পনা বাসত্দবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে। মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা মহাসমাবেশে যে 5 দফা শর্ত উত্থাপন করেছেন তা বাসত্দবায়িত হলে বিএনপি-জামাতের ভোট কারচুপির চক্রানত্দ সফল হবে না। আর এসব শর্ত বাসত্দবায়িত না হলে মহাজোটভুক্ত কোনো দল নির্বাচনে যাবে না। সেক্ষেত্রে জাতীয় ও আনত্দর্জাতিক পর্যায়ে নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতাও থাকবে না। তা ছাড়া মহাজোটের নেতারা বলেছেন, একতরফা কোনো নির্বাচন তারা করতেও দেবেন না। তাই মহাজোট আতঙ্কে পেয়ে বসেছে বিএনপি-জামাতকে। তাদের আশঙ্কা মহাজোটের বিপরীতে নির্বাচন করতে গেলে ভরাডুবি ঘটতে পারে। আর একতরফা নির্বাচন করতে গেলে পড়তে হতে পারে জনরোষের মুখে।
এ অবস্থায় দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যবহার করে বিএনপি-জামাত নানা কূটচাল অব্যাহত রাখলেও তাদের কথাবার্তা অনেকটা অসংলগ্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার 14 দলের মহাসমাবেশের পাল্টা মহাসমাবেশ করতে গিয়ে শক্তির ভারসাম্যহীনতা টের পেয়েছে তারা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, 14 দলের মহাসমাবেশের তুলনায় বিএনপি-জামাতের মহাসমাবেশে লোক সমাগম হয়েছে অনেক কম। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মহাসমাবেশে বক্তৃতাকালে মহাজোট সম্পর্কে হাস্যকর মনত্দব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, শুধু জোটে নাম বাড়ালেই মহাজোট হয় না। জনগণের শক্তিই মহাশক্তি। আগামী নির্বাচনে জনগণের মহাশক্তির কাছে মহাজোট পরাজিত হবে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, বিএনপি নেত্রীর এই মনত্দব্য বাগাড়ম্বরের মাধ্যমে বাসত্দবতাকে অস্বীকার করার চেষ্টামাত্র। কারণ বি চৌধুরী ও কর্নেল অলির এলডিপি এবং নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর তরিকত ফেডারেশন যে বিএনপির কোমর ভেঙে দিয়েছে তা বিএনপির অনেক নেতাও স্বীকার করেন। এই ক্ষতি কাটাতেই এরশাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরশাদকে নিয়ে রাজনীতির নোংরা খেলা কম হয়নি। কিন' তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। এরশাদ এখন মহাজোটের অন্যতম কাণ্ডারি। সুতরাং বিএনপি-জামাতের চোখে সর্ষে ফুল দেখারই কথা। এই সত্যটি অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন বিএনপি-জামাত জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনী। মহাসমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি বলেছেন,'এরশাদ বলেছিলেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রয়োজনে ইবলিসের সঙ্গেও জোট করবো। তাই এরশাদের যোগদানের মধ্যেই বুঝা যায় 14 দল ক্ষমতায় আসবে।' তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট গড়ে ওঠায় প্রচণ্ড ক্ষোভ ঝরে পড়েছে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কণ্ঠে। তিনি 14 দলকে জাতীয় বেইমান আখ্যায়িত করে বলেছেন, তারা বিশ্বাসঘাতকদের নিয়ে একমঞ্চে বসেছে। খালেদা জিয়ার পাশে এরশাদকে দেখতে পেলে দলত্যাগ করে বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমানের কেমন লাগতো তা তিনি প্রকাশ না করলেও বলেছেন, যখন 14 দলের মঞ্চে শেখ হাসিনার পাশে এরশাদ বসেছেন তখন বাংলাদেশে আইয়ামে জাহেলিয়াত নেমে এসেছে। 4 দলীয় জোটকে মহাজোটে পরিণত করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহার"ল ইসলাম বলেছেন, তাদের আছে মহাজোট, আর আমাদের আছে মহাভোট।
মহাজোট গঠনে মহাগোসসা মির্জা আব্বাস বলেছেন, আওয়ামী লীগ 13 জন টোকাই নিয়ে 14 দলীয় জোট করেছে। এখন আবার সেই জোটে স্বৈরাচার এরশাদকে নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাঐক্যজোট গড়ে ওঠায় বিএনপি-জামাত নেতারা যে কতোটা বেসামাল হয়ে পড়েছেন তাদের এসব মনত্দব্য থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ও বিপক্ষে যে রাজনৈতিক মের"করণ অনেক আগেই শুর" হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এই মহাজোট সেই মের"করণকে আরো স্পষ্ট করে তুলেছে। আগামী নির্বাচনেই শুধু যে এর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়বে তাই নয়; আগামীদিনের রাজনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পরিলক্ষিত হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


