রাষ্ট্রদ্রোহী জনগণ ২
- নির্বাচনকালীন সময়ে সংঘটিত সকল অরাজকতার দায়বার আওয়ামীলীগের উপর এসে পড়ছে অথচ এই ভার গ্রহণের যোগ্যতা আওয়ামীলীগের আছে কিনা সেটা কেউ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে না।
লোকমানের এই নন-টি-স্টলে "রাজনৈতিক আলোচনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।" কিন্তু যখন কাস্টমারের ক্রাইসেস দেখা দেয়, তখন শক্ত হয়ে যাওয়া পুরি ভক্ষণের জন্য কতেক রাজনৈতিক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গের এখানে আবির্ভাব ঘটে। লোকমান তাদেরকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে ফায়দা উসুলের লক্ষ্যে মাঝেমধ্যে তাদের গরমাগরম রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যবহৃত বাসি সয়াবিন তেল ছিটিয়ে দেয়। তাতে গরমাগরম আলোচনা আরো চ্যাত-চ্যাতিয়ে উঠে। আজ বুড়ো মকবুল ও কমল দা ছাড়া অন্য কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এই মূহুর্তে কমল দা'র সুরের সাথে বুড়ো মকবুলকেও সুর মিলিয়ে বলতে শুনা গেল
- বিএনপিকে প্রায় দেখা যায় কোন যুক্তির ধার না ধরে গণতন্ত্রের নামে চলতে থাকা পরিবারতন্ত্রে নিজেদের ফ্যামিলিকে ফিরিয়ে আনতে বারবার আওয়ামীলীগের উপর আক্রমনাত্মক (কথার মাধ্যমে) বোমাবাজি করছে। ভাগ্যিস বাঙালি পারমানবিক বোমার পরিবর্তে কথার বোমাকেই গ্রহণ করে এসেছে। তা না হলে আজ কী যে হত!
-সেটাই জ্যাঠা, সেটাই। বাঙলি যদি আজ কথার পারমানবিকতার বিপরীতে পারমানবিক অস্ত্র তৈরিতে লিপ্ত থাকতো, তাহলে আজ রাজনৈতিক আলোচনার দায়ে লোকমান আমাদের উড়িয়ে দিতে মোটেও সময় নিত না।
কমল দা কথা শেষ করে লোকমানের দিকে চেয়ে চোখিক ব্যাঙ্গ করলেন ।
লোকমান খুব ভাল করেই জানে এখন তেল দেয়ার সময় না, তাই সে চুপ করে থাকলো।
- ঠিক বলেছেন জ্যাঠা, আমাদের রাষ্ট্রীয় চেতনা একটু বেকুটলামিপূর্ণ। জ্ঞানী বিবেক বলেন আর জ্ঞানহীন বিবেক বলেন সকলেই সাধারণভাবে নিজেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভেবে যেমন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু বলতে যায় না ঠিক তেমনি সরকার, প্রশাসন এবং কোন দলকে কিছু বলতেও যেন তাদের লজ্জায় ঠেকে।
- যাই বলেন জ্যাঠা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের সমালোচনা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, এমনকি কখনো কখনো এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতাও হয়ে দাঁড়ায় বটে। তবে সরকার ও দলের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা কিন্তু আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।
- যদি দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে গিয়ে আপনি রাস্ট্রদ্রোহী বলে সিলেক্ট হন, তাহলে সেটাকে আপনি কিসের অধিকার বলবেন জ্যাঠা?
- না না, আপনি যেমন বলছেন তেমনটাই যদি হয়ে থাকে, তবে
- হয়ে থাকে মানে, ইহা তো হয়েই চলেছে
কারো কথার মধ্যখানে কথা বলতে দেখলে লোকমানের কাছে সেটা অনধিকার চর্চা বলেই মনে হয়! তাই লোকমান প্রাপকের সুস্থ অধিকার ফিরিয়ে দেয়াকে একান্তই নিজের দায়িত্বই জ্ঞান করে
- মকবুল ভাই, কমল দাদাকে তার কথাটা শেষ করতে দিবেন তো!
- হ্যা কমল দা, তোমার কথা শেষ কর।
- হে হে হে, মকবুল ভাই, আমি বলছিলাম, ইহা পরিবারতন্ত্র বৈ অন্য কিছু নয়। তাপচির (তাফসির/ব্যাখ্যা) করলে যা খারায়(দাঁড়ায়) তা হচ্ছে গিয়া, গণতান্ত্রিক রাস্ট্রের সম্পত্তি হয়ে আপনি যদি রাস্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু কন তবে আপনি রাস্ট্রদ্রোহী। কিন্তু যদি আপনি প্রশাসন, সরকার ও নেত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনা মূলক কিছু কন তাহলে সেটাও রাস্ট্রদ্রোহিতার কাতারে খারাইয়্যা যায়। তাছাড়া সরকার দলীয় নেত্রীরা তাদের বিপক্ষ দলকে প্রধান রাষ্ট্রদ্রোহী জ্ঞান করে বলেই প্রকাশ পাচ্ছে। এদিক দিয়ে বিবেচনা করে আপনি আমাদের সময়কে পরিবারতন্ত্রের বাহিরে গণতন্ত্রিক কাল বলতে পারবেন কি?
- কমল দা, সেটা তো অবশ্যই তুমি যা বললা তা। আই মেইন, পরিবার তন্ত্র বা ফ্যামিলি তন্ত্র। (দাড়িতে সযত্নে হাত বোলাতে বোলাতে) আচ্ছা, তুমি কি এর দ্বারা আমায় ফাচেতিওউস্নেস(Facetiousness) করলা?
- কী যে কন দাদা, আমার মত একজন সহজ সরল মানুষ
কমল দা কথা শেষ করতে পারল না, হঠাৎ তার ভাইপো রঞ্জন এসে চিৎকার করে কাঁদুকাঁদু স্বরে বলতে লাগলো
- কাকা মশাই, কাকা মশাই, বাবাকে পুলিশ মাইরতে মাইরতে থানায় নিয়ে গেছে!
বলেই অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করলো!
সবাই এখন থানামুখী..
অসমাপ্ত...
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সাংবাদিকবৃন্দ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৪