সম্প্রতি বি বি সি হজ্বে নারীদের যৌন হয়রানি নিয়ে গত বছরের একটি রিপোর্ট হাইলাইট করেছে। যেখানে একজন মিশরিয় মানবাধিকারকর্মীর প্রকাশিত টুইট নিয়ে বিভিন্ন দেশে শুরু হওয়া মস্ক মি টু আন্দোলন উপর প্রতিবেদন ছাপিয়েছে যা নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা করা জরুরী মনে করছি।
মস্ক মি টু আন্দোলনে যে কয়টা পয়েন্ট বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তা হলো ভিড়ের সুযোগে গায়ে স্পর্শ করা, অযথা ধাক্কা দেয়া ইত্যাদি !
আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে বসে মস্ক মি টু দেখেন তবে, আপনার কাছে মনে হবে হারামের মত জায়গায় এটা আসলেই বড় সিরিয়াস বিষয় কিন্তু আপনি যদি তাওয়াফ ও সায়ি করে এসে থাকেন, এই অভিযোগ শোনার বা দেখার পর আপনার দেখা পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মিলাতে বেশ হিমশিম খেতে হবে!
এখানে তাওয়াফ ও সায়ি নির্ধারন করে দেয়ার কারণ হলো হজ/উমরা ব্যবস্থাপনায় মাতাফ ও মাসা ছাড়া অন্য কোন জায়গায় নারী পুরুষের একত্রিত হওয়া অসম্ভব। কঠোরতার সাথে হজ্বের প্রতিটা কাজে নারী পুরুষ পরস্পর থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিশ্চিত করা হয় এবং হাজার হাজার নিরাপত্তাকর্মী এই কাজ সফলতার সাথে আঞ্জাম দেন এবং প্রতি বছরই কিছুনা কিছু নিরাপত্তা ব্যাবস্থা আপডেট করা হচ্ছে।
মাসাতে ৪ টি ফ্লোরে পর্যাপ্ত স্পেস থাকায় এখানে সায়ি করার সময় একজনের অপরজনের সংস্পর্শে আসা বেশ কঠিন কাজ! কোন ফ্লোরে ভিড় অতিরিক্ত মনে হলে সহজেই উপরের ফ্লোরগুলোতে চলে যাওয়া যায় ফলে এখানে খুব একটা ভিড়ভাট্টা হয় না আর সকল সায়ীকারীগন নিজেদের গ্রুপ হয়ে গ্রুপবেধে সায়ি করেন ফলে প্রতিটা গ্রুপের মাঝেই নিদৃষ্ট দূরত্ব বজায় থাকে আর যেহেতু সবাই একই ডিরেকশনে হাঁটেন/দৌড়ান ফলে একজনের সাথে অপরজনের কোন সংঘর্স হওয়া সম্ভব না। এমন জায়গায় একজন নারী যখন অন্য একজন অপরিচিত পুরুষ কর্তৃক যৌন হেনস্থা হওয়ার অভিযোগ করবেন তখন আপনাকে বুঝতে হবে নারীটি ইচ্ছাকৃতভাবে একজন পুরুষের সাথে ধাক্কা খেয়েছে বা তার হাতের সাথে শরীর লাগিয়েছে যেন পরবর্তিতে অভিযোগ দায়ের করতে পারে !
মাতাফের দ্বিতীয় , তৃতীয় ও চতুর্থ ফ্লোরে পর্যাপ্ত স্পেস নিয়ে তাওয়াফ করা যায় ফলে একজন যিনি নিজেকে নিরাপদ রাখতে চাইবেন তিনি সহজেই এখানে তাওয়াফ করতে পারবেন কোনরূপ ঝামেলা ছাড়াই। মাতাফের মূল ফ্লোরে বাইতুল্লাহর অবস্থান। এখানে খুব কম সময়েই তাওয়াফ শেষ করা যায় ফলে এই ফ্লোরে হজ্ব ও উমরাহর পিক সিজনের বিশেষ কিছু সময়ে বেশ ভালো ভিড় হয়। আপনি যদি একজন নারী হোন এবং এই ভিড় এড়িয়ে যেতে চান তবে বিশেষ কিছু সময়কে এড়িয়ে গিয়ে প্রতিদিনই সানন্দে সাচ্ছন্দ্যে তাওয়াফ করতে সক্ষম হবেন। পিক আওয়ারে মাঝে মাঝে প্রচণ্ড ভিড় হয় এই ফ্লোরে তখন অধিকাংশ সময়ই গায়ের সাথে গা লাগিয়ে হাটতে হয়। কোন উপায় থাকেনা। এই ভিড়ের সময় মাহরামরা তাঁদের নারীদের নিজেদের বেষ্ঠনিতে নিয়ে সামনের তাওয়াফকারী থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে তাওয়াফ করেন । এই ভিড়ের সময় মাঝেমাঝেই প্রচণ্ড ধাক্কা আসে তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময়েই সম্ভব হয়না এমন নাযুক সময়েও প্রতিজন পুরুষ তাওয়াফকারীই সতর্ক থাকেন নারীদের শরীর থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে।
তারপরও এতো সতর্ক থাকার পরও একজন পুরুষের একজন নারীর সাথে স্পর্শ লেগে যেতে পারে, ধাক্কা লাগতে পারে তবে এতে উভয়ের মনেই এতোটাই স্বভাবিকতা থাকে যে একজন অপরজনের দিতে তাকানোর প্রয়োজন পর্যন্ত অনুভব করেন না এমনকি অধিকাংশই এটা বুঝতেও সক্ষম হয় না। একজন সাধারণ মানুষ এমনটাই করবেন কিন্তু আপনি যদি অস্বাভাবিক কেউ হোন আর বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে হজ্বে বা উমরায় গমন করেন তবেই এটা আপনার কাছে অস্বাভাবিক মনে হবে এবং আপনার মনে নানাবিধ প্রশ্নের উদ্রেক হবে যেমনটা হয়েছে মিশরিয় এই মানবাধিকারকর্মী ও আন্দোলনরত অন্যন্য মহিলাদের মনে।
ব্যাতিক্রম কোন উদাহারন নয়। একটা এক্সিডেন্ট মাত্র। পুরো বছরে কোটির উপরে মানুষ বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করেন। সেখানে একটা দুইটা দশটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। এটা কি আন্দোলন করার মতো কিছু !!?? যখন এটাই আলোচনার বিষয় হয় তখন বুঝতে হবে এ-র বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে আছে।
বিবিসির রিপোর্টের উদ্দেশ্য কি তা বুঝা খুব একটা মুশকিল নয়।
প্রথমত হজ, হজ ব্যাবস্থাপনা নিয়ে চলমান নাস্তিক্যবাদী ও ইসলাম বিদ্বেষী গ্রুপের আলোচনা সমালোচনায় ঘি ঢালা আর দ্বিতীয়ত ইসলামের পর্দার হুকুমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। নারীর সহিংসতা, শ্লীলতাহানি, যৌন নির্যাতন ইত্যাদির জন্য পোষাক দায়ী নয় বর্তমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান নারীবাদীদের। এই মিধ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য হলো মুসলিম মহিলাদের শরীর থেকে হিজাবকে উঠিয়ে দেয়া। মুসলিম মহিলাদের মনে হিজাবের গুরুত্ব কমিয়ে দিয়ে অর্ধ নগ্ন, পুরো নগ্ন মুসলিম জেনারেশন প্রতিষ্ঠিত করা। মুসলিম সমাজে অশ্লিলতাকে ছড়িয়ে দিয়ে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ঈমান ধ্বংস করে দেয়া। মুসলমানদের তাহযিব তামাদ্দুন ও ঈমান নিয়ে এই ষড়যন্ত্র আজকের নয়।
মানবাধিকারকর্মী শুনলেই আমাদের মনটা তরল হয়ে যায়! চোখ আদ্র হয়ে যায়! আহা ! কত ভালো মানুষ ! নিজের খেয়ে জনতার অধিকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন !! আসলেই কি বাস্তবতা এমন ? পৃথিবী জুরে হাজারো এনজিও এই মানবতার স্লোগান দিয়েই একটা নিদৃষ্ট ও পরিকল্পিত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছে বর্তমানে এটা আর গোপন বিষয় নয়। তাঁদের প্রতিটা সদস্যই তাঁদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের একেকটা পার্ট। এনজিও ও দলবদ্ধতা ছাড়াও এককভাবে অনেকেই মানবাধিকারের বর্ম গায়ে দিয়ে বিশেষ বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে তাই মানবাধিকারকর্মী দেখলে আদ্র না হয়ে তাঁদের সন্দেহের চোখে দেখাই যুক্তিযুক্ত অন্তত তাঁদের কার্যাবলি নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা চাই।
বিবিসি যতটানা সংবাদ মাধ্যম তারচেয়ে বেশি একটা প্রতিষ্ঠান যেই প্রতিষ্ঠানের ইসলামের প্রতি বিশেষ কোন অনুরক্ত হওয়ার সামান্যতম কোন কারণ বিদ্যমান নেই বরং হাজারো কারণ বিদ্যমান কিভাবে মুসলমানদের বিভিন্ন আচার বিচার নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠানো যায় এটা নিয়ে।
মাতাফ- বাইতুল্লাহকে ঘিরে তাওয়াফ করার জায়গা
মাসা- সাফা মারওয়া সায়ি করার জায়গা
(গুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটি সাকিব মুস্তানসির ভাইয়ের বলপেন থেকে নেয়া।)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১১:৪২