somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআন-হাদীছের আলোকে শবে বরাত - পর্ব ২০

২৮ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

بسم الله الرحمن الرحيم

মুফতী মীযানুর রহমান সাঈদ

ওলী-বুজুর্গদের দৃষ্টিতে শবেবরাত পালনঃ

পূর্বে উল্লেখিত দলীলসমূহের আলোকে অধিকাংশ সলফে সালেহীন তথা ওলী বুজুর্গানে দ্বীন শবে বরাতের তাৎপর্য ও ফজীলতের পক্ষে ছিলেন। তাঁরা রাতটিকে খুবই সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ মনে করতেন। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন, যেন রাতটি ইবাদতে কাটে এবং তার মাহাত্ন্য ও ফজীলত অর্জন করা যায়। কিন্তু যেমনিভাবে সলফে সালেহীন তো এই রাতে জাগরণ থেকে ইবাদত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন, তেমনিভাবে এ রাতকে কেন্দ্র করে সংঘটিত যাবতীয় কুসংস্কার ও বিদআত থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কেননা, আহলে-হক রসূল প্রেমিক সকল মুসলমানের ঈমানী কর্তব্য হলো, যে আমল শরীয়তে যতটুকু প্রমাণিত সেই আমলটিকে ঠিক ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ রাখা। এর মধ্যে অতিরঞ্জিত করা, নিজ খুশিমত কোন আমল সংযোজন করা পরিস্কার বিদআত বলে গণ্য-যা দ্বীনের জন্য বড় সর্বনাশ ও পথভ্রষ্টতার মূল কারণ।

যথাঃ

আল্লামা ইবনুল হাজ্ব মালিকী উক্ত রাত সম্পর্কে সলফে সালেহীনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের আমল উল্লেখ করতে গিয়ে বলেনঃ

" সন্দেহ নেই, রাতটি একটি মুবারক রাত। মহান আল্লাহর নিকট মর্যাদাসম্পন্ন। মোটকথা, রাতটি যদিও ক্বদরের রাত নয়, তবুও তার মহান ফজীলত, গুরুত্ব ও তাতে উম্মতের বিশাল কল্যাণ রয়েছে। সলফে-সালেহীন রাতটির যথেষ্ট মর্যাদা দিতেন এবং তার আগমনের পূর্ব থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রাতটির যখন আগমন ঘটতো তখন তারা তাকে বরণ করে নেয়ার জন্য এবং তার যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়ার জন্যে প্রস্তুত হয়ে থাকতেন। এটাই এ রজনীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন। "

( দেখুন - আল মাদখালঃ খ-১, পৃ-২৯৯ )

অপর দিকে উক্ত রাতকে কেন্দ্র করে সংঘটিত বৈচিত্র্যময় কুসংস্কার ও বিদআ'ত প্রতিহত করার নিমিত্তে সলফে সালেহীনের নিম্নোক্ত বক্তব্যও প্রনিধানযোগ্য।

" ... তবে রাতটির ফজীলত অনেক। তার এই মহান ফজীলতের দাবী হচ্ছে, ইবাদত প্রভৃতির মাধ্যমে তার যথাযথ শোকর আদায় করা। অথচ কোন কোন লোক অধিক শোকরের স্থানে অধিক বিদআতকে গ্রহণ করে নিয়েছে।
লক্ষ্য করছো না তারা যে সাধারণ নিয়ম বহির্ভূত আলোর মেলা বসায় ! এমনকি প্রতিটি জামে মসজিদকেও তারা নানা ধরনের আলোকসজ্জায় সজ্জিত করে তোলে। এমনকি তার খুটির মধ্যে বিশেষ কৌশলে দড়ি বেঁধে সেখানেও আলোকসজ্জা করে। আর সীমাতিরিক্ত বাতি জ্বালানো অগ্নিপূজকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যদিও এরা অগ্নিপূজায় বিশ্বাসী নয়। কারণ অগ্নিপূজকরাই এমনভাবে অগ্নিজ্বালিয়ে আলোকসজ্জা করে। "

( আল মাদখাল, ইবনুল হজ্ব )

সলফে ও ফুক্বাহায়েকেরামের শবে বরাত পালনঃ

বিভিন্ন মাযহাবের ফুকাহা এবং উলামাদের থেকে একথা সুপ্রমাণিত যে, এ রাতে জাগরণ থেকে ইবাদতে লিপ্ত থাকা মুস্তাহাব। তাঁদের অভিমতও নিম্নে প্রদত্ত হলো।

১। হাম্বলী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফক্বীহ আল্লামা শায়খ মানসূর ইবনু ইউনুস (রহঃ) লিখেনঃ

" হ্যাঁ, শাবানের পনের তারিখের রাত সম্বন্ধে ফজীলতের কথা বিদ্যমান। সলফে সালেহীন এই রাতে নামায পড়তেন। কিন্তু এ রাতে জাগরণের লক্ষ্যে মসজিদে জমায়েত হওয়া বিদআত। এ রাতে জাগরণ থেকে ইবাদত করার ফজীলত ঠিক দুই ঈদের রাতে জাগরণ থেকে ইবাদত করার ফজীলতের মতই। "

২। আল্লামা ইসহাক ইবনুল মুফলিহ (মৃঃ ৮৮৪ হিঃ) বলেনঃ

" হাদীছের কারণে মাগরিব এবং ইশার মাঝখানে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব। অনেকেই বলেছেন, আশূরার রাত, রজবের প্রথম তারিখ রাত এবং শা'বানের পনের তারিখ রাতেও জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব। "

৩। ফিক্বহে হানাফীর ইমাম মুহাম্মদ ইবনু আলী আল হাসফাকী (মৃঃ ১০৮৮ হিঃ) বলেনঃ

" সফরের পূর্বে দু'রাকআত, সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে দু'রাকআত, দুই ঈদের রাতে, শাবানের পনের তারিখে, রমজানের শেষ দশ রাতে এবং জিলহজ্বের প্রথম তারিখে জাগ্রত থেকে ইবাদত কতা মুসতাহাব। "

৪। আল্লামা ইবনু নুজাইম হানাফী (মৃঃ ৯৭০ হিঃ) বলেনঃ

" রমজানের শেষ দশ রাতে দুই ঈদের রাতে, পহেলা জিলহজ্ব রাতে, শাবানের পনের তারিখ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুসতাহাবের অন্তর্ভুক্ত। যেমনটি হাদীছসমূহে এসেছে। "

৫। আল্লামা হাসান ইবনু আম্মার ইবনু আলী আশ-শারাম্বলালী আল হানাফী (মৃঃ ১০৬৯ হিঃ) বলেনঃ

" শাবানের পনের তারিখ রাত জেগে ইবাদত করা মুস্তাহাব। "

৬। শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিছে দেহলভী স্বীয় গ্রন্থ ( ماثبت بالسنة فى أيام السنة ٣٦٠ ) তে কিছু হাদীছ এবং তাবিঈনদের কিছু বক্তব্য ও আমল নকল করার পর বলেনঃ

" ... সুতরাং উল্লেখিত হাদীছসমুহের ভিত্তিতে এই রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব। ফাজাইলে আ'মালের ক্ষেত্রে এ ধরনের হাদীছের উপর আমল করা যায়। "

৭। আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) এর শিষ্য ইবনে রজব হাম্বলী (রহঃ) লিখেনঃ

" শামের বিশিষ্ট তাবেয়ী যেমন হযরত খালেদ ইবনে মা'দান (রহঃ), ইমাম মাকহূল (রহঃ), লোকমান ইবনে আমের (রহঃ) প্রমূখ উচ্চমর্যাদাশীল তাবেয়ীগণ শা'বানের পনেরতম রজনীকে অত্যন্ত মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখতেন এবং এতে খুব বেশী বেশী ইবাদত ও বান্দেগীতে মগ্ন থাকতেন। এসব বুজুর্গানেদ্বীন হতে লোকেরা শবে বরাতের ফজীলত এবং মাহাত্ন্য গ্রহণ করেছে। "

( দেখুন - লাইলাতুল মাআরিফ )

৮। হযরত আল্লামা আব্দুল হাই লখনভী (রহঃ) লিখেনঃ

" শবে বরাতে জাগ্রত থেকে বিভিন্ন প্রকার নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকা যে মুস্তাহাব তাতে কোন মতভেদ নেই। কেননা এর প্রমাণ ইবনে মাজাহ এবং বাইহাকীর শুআবুল ঈমান গ্রন্থে হযরত আলী (রঃ) হতে মারফূ সূত্রে হাদীছ বর্ণিত রয়েছে এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য আর অনেক হাদীছ রয়েছে যা বাইহাকী সহ অনেকে বর্ণনা করেছেন। যেমনটি ইবনে হাজার মাক্কী (রহঃ) আল ঈযাহ ওয়াল বায়ান নামক গ্রন্থে সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। এসব হাদীছ দ্বারা প্রমাণ হয় যে, নবী করীম (সঃ) এ রজনীতে অধিক পরিমাণে ইবাদত ও দুআ করতেন, নবীজী (সঃ) এ রাত্রে কবর যিয়ারতও করতেন এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়াও করতেন সুতরাং ( قولى فعلى ) বাচনিক ও কর্মবাচক হাদীছ দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, এ রজনীতে অধিক হতে অধিকতর ইবাদত করা মুস্তাহাব। প্রত্যেকের ইচ্ছা মাফিক (নফল ইবাদত করুক) চাই নামায পড়ুক অথবা অন্য কোন ইবাদত করুক। যদি কেউ নফল নামায পড়তে চায় তবে কত রাকাত ও কি পদ্ধতিতে পড়বে, কোন সময় পড়বে, সে ব্যাপারেও সে সম্পূর্ণ স্বাধীন। কোনক্রমেই এই রজনীতে কেউ এমন কাজ ও আমল করা বৈধ না যা হতে রসূল (সঃ) স্পষ্ট অথবা ইঙ্গিতে নিষেধ করেছেন। "

( দেখুন - নুরুল ঈজাহ মা শরহে হাশিয়াতি তাহতাভী )

৯। হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) লিখেছেনঃ

" শবে বরাতের এতটুকু ভিত্তি আছে যে, এ মাসের পনের তারিখ দিবা-রাত্রি মহা সম্মানিত ও বরকতময়। আমাদের নবী করীম (সঃ) এই রাতে জেগে ইবাদত করার এবং দিনে রোযা রাখার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। আর এ রাতে তিনি মদীনার কবরস্থানে গিয়ে মানুষদের জন্যে মাগফিরাতের দু'আ করেছেন। এছাড়া যতসব ধুমধাম মানুষ করছে, তার মধ্যে মিষ্টি বন্টন সংযুক্ত করে রেখেছে, তেমনিভাবে ফাতিহার প্রবর্তন করেছে এবং খুব গুরুত্বের সাথেই এসব কিছু করছে এগুলো বাজে ও মনগড়া। "

১০। এ বিষয়ে হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী সাহেব (রহঃ) এর বক্তব্যও অভিনিবেশযোগ্য। তিনি বলেনঃ

" যেমনিভাবে এসকল হাদীছ থেকে এই পবিত্র রাতের অনেক মহান ফজীলত ও বরকত প্রতীয়মান হয়, তেমনিভাবে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, মুসলমানদের জন্য এই রাতে নিম্নোক্ত আমলগুলো করা সুন্নাত।

১। রাত জেগে নামায পড়া এবং যিকর ও তিলাওয়াতে মশগুল থাকা।
২। মহান আল্লাহর নিকট মাগফিরাত ও উত্তম প্রতিদান এবং উভয় জাহানের সফলতা কামনা করে প্রার্থনা করা। "

অতিরিক্তঃ

১। আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেনঃ

" এ রাতের ফজীলতে বেশ কিছু মারফু হাদীস এবং আছার বর্ণিত আছে যা প্রমাণ করে যে এ রাতটি ফযীলতপূর্ণ। পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এ রাতে বিশেষভাবে সালাত আদায় করতেন। ... ... ... যে মতের উপর আমাদের মাযহাবের বা অন্যান্য মাযহাবের বহু সংখ্যক বরং বেশিরভাগ আলেম রয়েছেন তা হলো এই রাতটি অন্যান্য রাতের উপর ফযীলত রাখে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর স্পষ্ট কথার মাধ্যমে এটি জানা যায়। আর যেহেতু এ বিষয়ে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং পূর্ববর্তীদের আমল সেসকল হাদীসকে সত্যায়ন করে, এই রাতের কিছু ফযীলত সুনান ও মুসনাদ গ্রন্থসমূহতে উল্লেখিত রয়েছে তবে এ রাত সম্পর্কে কিছু জাল হাদীসও রয়েছে। "

( ইক্তিদাউস-সিরাত আল মুস্তাকীম )

আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যার এ উক্তি দ্বারা স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন সহ সলফে সালেহীনরা অনেকেই এ রাতকে ফজীলতপূর্ণ হিসেবে রায় দিয়েছেন এবং এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করেছেন।

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা এ রাত সম্পর্কে আরও বলেনঃ

" অতএব যদি কোন ব্যক্তি একা একা সালাত আদায় করে তবে তার পক্ষে একদল সালাফকে পাওয়া যাবে এবং তার পক্ষে দলীলও রয়েছে । "

( মাজমুআয়ে ফাতওয়া )

আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা তার ফাতওয়াতে লিখেনঃ

সাহাবারা, তাবেঈনরা, সালাফরা এ রাত অনেক গুরুত্বের সাথে পালন করে এসেছেন।

( ২৩ খ, ১৩২ পৃ)

" পূর্ববর্তী যুগের অনেক উলামাই এ রাতের ফযীলতকে গ্রহণ করেছেন। যেসব বুজুর্গানে দ্বীনরা এই রাতের ফজীলত সম্পর্কে একমত হয়েছেন, তাদের মধ্যে উমর বিন আব্দুল আযীয, ইমাম আল শাফী, ইমাম আল আওযায়ী, আতা ইবনে ইয়াসার, ইমাম আল মাজদ বিন তাইমিয়্যাহ, ইবনে রজব আল হাম্বলী এবং হাফিয যয়নুদ্দীন আল ইরাকী (রহঃ) অন্যতম। "

( লাতাইফুল মারিফ, হাফিজ ইবনে রজবঃ পৃ-২৬৩,২৬৪; ফাতহুল ক্বাদীরঃ খ-২, পৃ-৩১৭ )

২। ইমাম আন নববী বলেনঃ

" ইমাম শাফেঈ তাঁর কিতাব 'আল-উম' এ বলেন, আমি জানতে পেরেছি পাঁচটি রজনীতে দোয়া কবুল করা হয়, জুমআর রাত, ঈদুল আযহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত, রজব মাসের প্রথম রাত ও শাবান মাসের মাঝ রাত। "

এর পর তিনি উক্ত রাতসমূহতে পূর্ববর্তীদের কে কি আমল করতেন তা বর্ণনা করেন, পরে বলেনঃ

" ইমাম শাফেঈ বলেছেন, আমি এসব রাতে পূর্ববর্তীরা যা কিছু আমল করতো বলে বর্ণনা করেছি তা সবই মুস্তাহাব মনে করি, ফরজ নয়। "

( আল মাজমু )

৩। ইমাম সুয়ুতী (রহঃ) তাঁর 'হাকীকত আল সুন্নাহ ওয়াল বিদাহ' তে বলেনঃ

" শাবান মাসের মাঝ রাত সম্পর্কে, এর অনেক ফযীলত রয়েছে এবং এর কিছু অংশ অতিরিক্ত ইবাদতে কাটানো মুস্তাহাব। "

( হাকীকত আল সুন্নাহ ওয়াল বিদাহ আও আল আমর বি আল ইত্তিবা ওয়া আল নাহি আনাল ইবতিদা (১৪০৫/১৯৮৫ সংস্করণ), পৃ-৫৮ )

তিনি আরও লিখেনঃ

" এটি একাকী করতে হবে, জামাআতের সাথে নয়। "

৪। বাংলাদেশে কওমী আক্বীদার সবচাইতে বড় মাদ্রাসা হাটহাজারীর মুখপত্রের জুলাই/২০১১ এর ১৩-১৪ পৃষ্ঠায়,“ক্ষমা ও মার্জনায় মহিমান্বিত রাত শবে বরাত” শিরোনামে লিখা হয়েছেঃ

অসীম কল্যানে ভরপুর এই শবে বরাত রজনী বান্দার জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ এক নিয়ামত। কোন কোন মহল এ রাতের ফজীলতকে অস্বীকার করতে লাগলো। এসব লোক চরম ভূল ভ্রান্তির শিকার। হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতাই সে ভূল ধারনার একমাত্র কারন। উপমহাদেশের বিখ্যাত হাদীস ব্যাখ্যাকার আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহ) বলেন- এটা লাইলাতুল বরাত, এ রাতের ফজীলত সম্পর্কীয় হাদীসগুলো সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য।(আরফুশ শাযী শরহে তিরমিযী,পৃষ্ঠা-১৫৬)

৫। মাওলানা মাহিউদ্দীন খান তার মাসিক মদীনায় জুলাই/২০১১ এর ৪১ পৃষ্ঠায় “আল-কুরআনে শব-ই-বরাত: একটি বিশ্লেষন” শিরোনামে লিখা হয়েছেঃ

সুরা দুখানের লাইলাতুম মুবারকা শব্দের সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে, সুরা দুখান কুরআনের ১ম থেকে ৪৪নং সুরা। ৪৪ এর অঙ্কদ্বয়ের সমষ্টি ৪+৪=৮; ৮ দ্বারা বুঝায় ৮ম মাস অর্থাৎ শাবান মাসে লাইলাতুম মুবারকা অবস্থিত। আবার কুরআনের শেষ থেকেও সুরা দুখান ৭১ নং সুরা। ৭১ অঙ্কদ্বয়ের সমষ্টি ৭+১=৮, পুনরায় ৮ম মাসের দিকেই ইঙ্গিত করে। আবার এ সুরার প্রথম থেকে ১৪টি হরফ শেষ করে ১৫তম হরফ থেকে লাইলাতুম মুবারকায় কুরআন নাযিল সংক্রান্ত আয়াত শুরু হয়েছে। এটা ইঙ্গিত করে যে, ঐ ৮ম মাসের ১৪ তারিখ শেষ হয়ে ১৫তারিখ রাতেই লাইলাতুম মুবারকা। এই সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষন প্রমান করে, সুরা দুখানে বর্নিত লাইলাতুম মুবারকা ১৪ই শাবান দিবাগত ১৫ই শাবানের রাত। অর্থাৎ লাইলাতুল বারাআত বা শব-ই-বারাআত। এছাড়া মুফাসিসরীনদের বিশাল এক জামাত দাবী করেছেন, সুরা দুখানে বর্নিত যে রাতকে লাইলাতুম মুবারকা বলা হয়েছে তা অবশ্যই শব-ই-বরাত। ( ইমাম কুরতবী, মোল্লা আলী কারী (রহ), বুখারী শরীফের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার হাফিজুল হাদীস আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) এবং হাম্বলী মাজহাবের অন্যতম ইমাম বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি সহ আরো অনেকে এ বিষয়ে একমত)

৬। মাসিক আল জামিয়া এর জুলাই/২০১১ সংখ্যায় “লাইলাতুল বারাআত: করনীয়-বর্জনীয়” শিরোনামে প্রকাশিত আর্টিকেলে লিখা হয়েছেঃ

শবে বরাতের ফজীলত হাদীস শরীফ দ্বারা ছাবেত তথা প্রমানিত নয়, এ কথা বলা সঠিক নয়, বরং বাস্তব কথা হলো দশ জন সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্নিত হাদীসে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রাতের ফজীলত সম্পর্কে বর্ননা পাওয়া যায়। সঠিক কথা হলো, এ রাত হলো ফজীলতের রাত। এ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা সওয়াব ও পূন্যের কাজ, যার অনেক গুরুত্ব কুরআন ও হাদীস পাকে রয়েছে। (বায়হাকী, মিশকাত ১ম খন্ড)

৭। মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেবের প্রধান খলীফা মুজহিদে আযম মাওলানা সামসুল হক ফরীদপুরী সাহেব প্রতিষ্ঠিত মুখপত্র মাসিক আল আশরাফ এর জুলাই/২০১১ সংখ্যায় “শবে বরাত নিয়ে প্রান্তিকতা” শীর্ষক আর্টিকেলে লিখা হয়েছেঃ

শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীস বেশ কয়েকজন সাহাবায়ে কিরাম থেকে বিভিন্ন সুত্রে বর্নিত হয়েছে। এ জন্য এসব হাদীসকে দুর্বল অনির্ভরযোগ্য বলে অস্বীকার করার আদৌ কোন সুযোগ নেই। হাদীস দ্বারা শবে বরাত প্রমানিত এটা কিন্তু স্বীকার করতেই হবে। এক শ্রেনীর মুসলমান রয়েছেন যারা শবে বরাতের ফজীলত শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকারই করেন না। এটা মারাত্নক প্রান্তিকতা যা অতি জগন্য ব্যাপার।

৮। শায়খুল হাদীস মাওলানা আযীযুল হকের মুখপত্র মাসিক রাহমানী পয়গাম জুলাই/২০১১ সংখ্যায়, “শবে বরাত; জীবন বদলে যাক মুক্তির আনন্দে” শিরোনামের আর্টিকেলে লিখা হয়েছেঃ

এক শ্রেনীর লোক মনে করে, শবে বরাতের কোন অস্তিত্বই নেই ইসলামে। ইসলামের সঠিক দৃষ্টিবঙ্গি কি তা আমাদের জানা দরকার। কুরআন হাদীসের বক্তব্য থেকে জানতে পারি, চৌদ্দই শাবান দিবাগত রাতটি অত্যন্ত বরকতময় মহিমান্বিত এক রজনী। যাকে অবহিত করা হয় শবে বরাত নামে। শব্দটির অর্থ হচ্ছে মুক্তির রজনী। এ রাতে মহান রাব্বুল আলামীন রহমতের দৃষ্টি দেন, দয়ার সাগরে ঢেউ উঠে, মাগফিরাতের দ্বার উম্মোচিত হয় পাপি-তাপি সকল বান্দার জন্য।

৯। মাসিক দাওয়াতুল হক জুলাই/২০১১ সংখ্যায় “শবে বারাআত; কয়েকটি তাহক্বীকি মাসআলা” শিরোনামে লিখা হয়েছে-

সহীহ হাদীস থাকা অবস্থায় শবে বরাতের ফজীলত ও গুরুত্বকে সম্পূর্ন অস্বীকার করা এবং এ সংক্রান্ত সকল বর্ননাকে মওজু বা জয়ীফ বলা কত যে বড় অন্যায়, তা তো বলাই বাহুল্য। শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজীলত প্রমানিত হওয়ার জন্য হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বর্নিত একটি হাদীস শরীফই যথেষ্ট। যদিও হাদীসের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে এ বিষয়ক আরো হাদীস উল্লেখ করা সম্ভব।

১০। মাসিকত আন নাবা এর জুলাই/২০১১ সংখ্যার ৭ পৃষ্ঠায় হাকিমুল উম্মাতে কওমীয়া মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব কর্তৃক পবিত্র শবে বরাত এর হাদীস শরীফ নিয়ে সরাসরি সংগৃহিত একটি লিখা- “ক্ষমা ও বিপদমুক্তির রাত ১৫ শাবান” শিরোনামে পত্রস্থ হয়েছে।

( চলবে ইনশাল্লাহ )

( পরবর্তী পর্বঃ শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয় )

১৯ তম পর্ব
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×