কয়েক দিন আগে সিলেটের জাফলং এর খাসিয়া পল্লীতে গিয়েছিলাম তাদের উপর একটা রিপোর্ট লিখতে।রিপোর্টের জন্য তাদের সাথে সারাদিন কাটাতে হয়েছে।প্রথম দিকে তাদের কাছ থেকে কোন ধরনের সাহায্য পাচ্ছিলাম না।কেউ কথা বলতে চায় না,সবাই বলে তারা ব্যাস্ত।কিন্তু তাদের কাজে কোন ব্যাস্ততা খুজে পাই না।কোন কাজই করছে না,দাঁড়িয়ে আছে তাকে বললেও বলে ব্যাস্ত আছি।ভাবলাম বড়রা হয়ত ব্যাস্ত তাই ছোটদের সাথে কথা বলার চেস্টা করলাম।কিন্তু তারাও হয় ব্যাস্ত অথবা বাংলা জানি না বলে এড়িয়ে গেল।এরকম ব্যাবহার দেখে আমি তো পুরো অবাক।কারন কেউ যে মুখের উপর এভাবে অনায়েসে মিথ্যা বলতে পারে তা আমি কল্পনাও করতে পারি নি।মনে মনে প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল তাদের উপর, তারপরও কাজটা তো শেষ করতে হবে এই ভেবে আরো চেষ্টা করতে লাগলাম।কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না।তখনি মনে হল বিজনেস কমিউনিকেশনে শেখা “থিউরি অফ কমননেস”(কমিউনিকেশন তখনি সম্ভব যখন পরশ্পরের মাঝে কোন মিল থাকে)এর কথা।তাই কোন বিষয় নিয়ে কথা বললে তারা কথা বলতে পারে তা খুজতে লাগলাম।একটু পরেই পেয়ে গেলাম সাবজেক্ট।কয়েকটি ছেলে ফুটবল খেলছিল এদের মাঝে কেউ বলতেছিল মেসি, কেউ ম্যারাডোনা বা কাকার কথা।ওদের সাথে ফুটবল নিয়ে কথা বলতেই একে একে সবাই কথা বলা শুরু করল,যারা কিনা একটু আগেই বলছিল বাংলা জানে না।কিছুক্ষন কথা বলতেই সবাই খুব ফ্রি হয়ে হয়ে গেল।আমরা(আমি এবং আমার এক বন্ধু) আমাদের কাজ শুরু করে দিলাম।সব কাজ বাদ দিয়ে সবার আগে তাদের এই আচরনের কারন খুজতে লাগলাম।
যখন কারনটি খুজে পেলাম তখন নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছিল।তাদের এই ব্যাবহারের কারন হল তারা কতজনের সাথে আর কথা বলবে! সারা দিন হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে যায় আর বিভিন্ন প্রশ্ন করে।আরো যেটা দেখলাম তা হল এই পর্যটকদের কারনে তাদের প্রাইভেসি বলতে কিছু নেই।সারাদিন মানুষের আনাগোনার জন্য নিজের বাড়িতেও শান্তিমত থাকতে পারে না।তার উপর অনেক বখাটে ছেলেরা ঘুরতে গিয়ে অনেক ঝামেলা করে।ওখানে ছবি উঠানো নিষেধ থাকলেও অনেকে ছবি উঠায়,বিশেষ করে মেয়েদের।মেয়েরা নিজের বাড়িতেও পরাধীন,ঘর থেকে বেরোলেই অনেকে হয়ত ছবি উঠাচ্ছে।কেউ কেউ বিশ্রী মন্তব্য করতেও ছাড়ছে না।সরকার যদি এতই খাসিয়া আধিবাসি দেখাতে চায় তাহলে তাদের ইতিহাস,সংস্কৃতি নিয়ে কোন জাদুঘর করে দিলেই পারে।এভাবে চিড়িয়াখানার জন্তুর মত মানুষ দেখানোর তো কোন দরকার নেই।মানুষের প্রাইভেসী,স্বাধীনতা খর্ব করার অধিকার কারো নেই।সবাই একবার শুধু ভেবে দেখবেন যে, আপনার বাসায় যদি সারাদিন এরকম হাজার মানুষ আসতে থাকে এবং কোন কিছু না বলেই যখন তখন আপনার বেডরুমে ডুকে যায়,তাহলে আপনি কি করবেন?
বিঃদ্রঃ যারা কষ্ট করে এই পোস্টটি পড়েছেন তাদের সকলকেই অসংখ্য ধন্যবাদ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




