somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের কিছু প্রশ্নের উত্তর। উত্তর: ৩।

১৮ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩ নং প্রশ্নটি ছিল:
নারীদের বোরকার আড়ালে রেখে অবমাননা করা হয় কেন?

মুসলিম নারীরা প্রায়ই তথাকথিত মিডিয়ার রোষের শিকার হয়। ইসলামী নিয়মানুসারে, নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক এই নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। আসলে, ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই হিজাব বাধ্যতামূলক তবে দুজনের ক্ষেত্রে হিজাবের ধরন আলাদা। প্রথমে দেখা যাক, ইসলামপূর্ব যুগে নারীদের সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল?

১. ব্যবিলীয়নীয় যুগে, নারীরা সকল ধরনের অধিকার ও সুবিধাবঞ্চিত ছিল।

২. প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে গ্রীক সভ্যতার মহিমা সবচেয়ে বেশি। এই মহিমাময় সভ্যতায়, নারীরা সকল সুবিধা বঞ্চিত ছিলই তাদেরকে নীচ্ বলে গণ্য করা হত।
গ্রীক পুরাণতত্ত্বে, এক কাল্পনিক নারী, যার নাম 'পান্ডোরা' তাকে মানবজাতির যাবতীয় দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী করা হত। এছাড়া পতিতাবৃত্তি সকল স্তরের মধ্যে একটি সাধারন ব্যধিতে পরিণত হয়েছিল।

৩. স্বনামধন্য রোমান সভ্যতার কথা ধরা যাক। যেকোন পুরুষ ইচ্ছে করলেই তার স্ত্রীকে হত্যা করতে পারত। পতিতাবৃত্তি ও নগ্নতা খুবই সাধারন বিষয়ে পরিণত হয়েছিল।

৪. মিশরীয় সভ্যতায় নারীদের, শয়তানের রাস্তায় প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হত।

৫. ইসলাম পূর্ব আরবীয় সভ্যতায় কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া হত।

ইসলাম নারীদের তাদের সুষম মর্যাদায় অধিষ্টিত করেছে। এবং এই মর্যাদা যেন বলবৎ থাকে তার ব্যবস্থাও ইসলাম করেছে। লোকেরা সাধারণত নারীদের হিজাবের কথা বলে। কিন্তু কোরআনে প্রথমে পুরুষদের হিজাবের কথা বলা হয়েছে:
"মুমিনদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে এবং যৌণাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তারা পবিত্রতা অর্জন করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে অবহিত আছেন।" [সুরা আন-নূর (২৪:৩০)]

যে মুহুর্তে কোন পুরুষ কোন নারীর দিকে তাকাবে এবং তার মনে যদি কোন অযাচিত চিন্তা আসে তবে সে তৎক্ষণাত তার দৃষ্টি নত করবে। কোরআনে আরও বলা হয়েছে:

"মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে এবং যৌণাঙ্গের হেফাজত করে। যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তারা যেন সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তারা যেন মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে। তারা যেন স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদী, যৌণকামনামুক্ত পুরুষ বা বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত কারও কাছে সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য তারা যেন জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগন, তোমরা আল্লাহর সামনে তওবা কর যেন সফলকাম হতে পার।" [সুরা আন-নূর (২৪:৩১)]

কোরআন ও সুন্নাহ অনুসারে হিজাবে ছয়টি ধাপ রয়েছে:
১. শরীরের যেটুকু ঢেকে রাখা উচিত তা ঢেকে রাখা। এই ধাপটি নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা। পুরুষদের জন্য, নাভি হতে হাটু পর্যন্ত এবং নারীদের জন্য, সমস্ত শরীর ঢেকে রাখতে হবে, শুধু মুখ ও হাতের কব্জি বাদে, তবে ইচ্ছা করলে এই অংশও ঢেকে রাখা যায়।

বাকী ধাপগুলো নারী ও পুরুষের জন্য সমান।
২. পোশাক যথেষ্ট ঢিলেঢালা হবে যাতে শরীরের গড়ন প্রকাশ না পায়।
৩. পোশাক স্বচ্ছ হবে না যাতে শরীর দেখা যায়।
৪. পোশাক আকর্ষণীয় হবে না যা বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করে।
৫. বিপরীত লিঙ্গের অনুরুপ পোশাক পরিধান করা যাবে না।
৬. যেসব চিহ্ন অবিশ্বাসীদের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত সেগুলো ধারন করা যাবে না।

এই ছয়টি ধাপ ছাড়াও নৈতিক আচরন, ব্যবহার, উদ্দেশ্য ইত্যাদিও হিজাবের অন্তভূক্ত। শুধু পোশাকেই নয়, সাথে চোখের, চিন্তার, উদ্দেশ্যের এবং অন্তরাত্নার হিজাবও পালন করতে হয়। একজন ব্যক্তি কিভাবে চলাফেরা করে, কি ধরনের ব্যবহার করে ইত্যাদিও হিজাবের অন্তভূক্ত।

হিজাবের অত্যাবশ্যকীয়তা নিয়ে কোরআনে বলা হয়েছে:
"হে নবী, আপনি আপনার পত্নীগণ, কন্যাগণ, ও মুমিন স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের অংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়, এতে তাদের চেনা সহজ হবে এবং তারা উত্যক্ত হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালূ।" [সুরা আল-আহযাব (৩৩:৫৯)]।

দুজন যমজ বোনের কথা ধরা যাক। তারা দুজনই সমান সুন্দরী। রাস্তায় হেটে যাবার সময় তাদের একজন ইসলামী হিজাব পরিধান করেছে অর্থ্যাৎ সম্পূর্ণ দেহ কাপড়ে আবৃত শুধু মুখ ও হাতের কব্জি বাদে। এবং অন্যজন পাশ্চাত্যের মিনি স্কাট ও শটস পরেছে। রাস্তার পাশে কিছু বখাটে ছেলে বসে আছে। আপনার কী মনে হয়, তারা এই দুই বোনের মধ্যে কাকে উত্যক্ত করবে? যে ইসলামী হিজাব পরিধান করেছে তাকে নাকি যে পাশ্চাত্যের পোশাক করেছে তাকে। নিঃসন্দেহে যে পাশ্চাত্যের পোশাক পরেছে তাকে। আসলে এই ধরনের পোশাক বিপরীত লিঙ্গকে আগ্রাসী হবার পরোক্ষ আমণ্ত্রণ জানায়।

শরীয়ত অনুসারে যে ব্যক্তি ধর্ষণ করে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। অনেকেই এই শাস্তিকে অমানবিক হিসেবে উল্লেখ করেন। আমি শত শত অমুসলিম ভাইদের প্রশ্ন করেছি, যদি আপনার স্ত্রী, মা, বোন, ধর্ষিত হয় এবং সেই ধর্ষককে আপনার সামনে আনা হয় তাহলে আপনি তাকে কী শাস্তি দেবেন? প্রায় সকলেই সেই ধর্ষককে মৃত্যুদন্ড দেবেন বলে রায় দিয়েছেনে। কেউ আবার, ধর্ষককে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে হত্যা করার কথা বলেছেন। আমি জিজ্ঞেস করেছি, আপনার মা, বোন, স্ত্রীকে কেউ ধর্ষণ করলে তাকে মৃত্যুদন্ড দিতে চান আর একই ঘটনা অন্য কারও মা, বোন, স্ত্রীর ক্ষেত্রে হলে বলছেন, মৃত্যুদন্ড অমানবিক শাস্তি। এই দুমোখো নীতির অর্থ কী?

পাশ্চাত্যে নারীর স্বাধীনতার কথা বলে তাদের নগ্ন করা হয়, সম্মানহানি করা হয় এবং এভাবেই নারীদের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটে। নারীদের উচ্চমর্যাদা দানের কথা বলে তারা নারীদের হাতের পুতুল বানিয়ে অবৈধ সম্পর্কে বাধ্য করে। এই বিষয়গুলোই তখন হয়ে যায় শিল্প, সংস্কৃতি।

যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবীর সর্বাধিক উন্নত দেশগুলোর মধ্যে গণ্য করা হয়। ধর্ষণের সংখ্যার দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে। ১৯৯০ সালে এফ.বি.আই-এর রিপোর্ট অনুসারে প্রতিদিন গড়ে ১৭৫৬ টি ধর্ষণের ঘটনা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ঘটে। এই রিপোর্টের ২-৩ বছর পরে এই সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় দিনে ১৯০০ টি। ধরা যাক, যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামী হিজাব প্রবর্তন করা হল। অর্থ্যাৎ, কোন নারীকে দেখামাত্র পুরুষ তার দৃষ্টি নত করবে, নারীরা ইসলামী হিজাব পরিধান করবে এবং এরপরও যদি কোন ব্যক্তি ধর্ষণ করে তবে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। এখন প্রশ্ন হল, যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ষনের সংখ্যা,
১. কমে যাবে
২. আগের মতই থাকবে।
৩. বেড়ে যাবে।

যদি ইসলামী হিজাব ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় তবে হাতে নাতে ফল পাওয়া যাবে। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে এই হিজাব ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হলে সেখানকার মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। হিজাব, নারীদের অবমাননা করা নয় বরং তাদের উচ্চমর্যাদায় আসীন করা ও তাদের শালীনতা, সম্ভ্রম রক্ষা করা।
-তৌসিক আহম্মেদ। ছাত্র।

মুল: Answers to the Non-Muslims Common Questions about Islam. by: Dr. Zakir Abdul Karim Naik.
২৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×