[এটি আমার প্রথম ব্লগ/লেখা। আগ্রহের সাথে গ্রহণ না করলেই খুশি হব। আবার অনাগ্রহ নিয়ে ফেলে দিলেও কষ্ট পাবো। বোঝেন আমার অবস্থা!]
শুরুর দিকে আমার জীবনটা ছিল নিরীহ চতুষ্পদ একটা প্রাণীর মত। ম্যাট্রিকে ভাল না করায় মুষ্ঠিমেয় শুভাকাঙ্ক্ষী বয়জৈষ্ঠ্যরা যখন 'ওতো গোল্লায় গেছে' বলে আফসোসে চুকচুক করলেন তখনও আমি নির্বিকার। অন্যরা কে কত ভালো করলো তার খতিয়ান আমাকে বিচলিত করে না। আমার জীবনটা প্রতিদিন ঘাস খাওয়া আর মহানন্দে বাকিটা সময় জাবর কাটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অন্তত এভাবেই সবাই বলতে লাগলো। আমাকে চিন্তার খোরাক দিতে গিয়ে তারা কেমন আমোদ পেতেন জানিনা, তবে তাদেরকে আমোদের খোরাক দিতে আমার বিশেষ চিন্তা হত না এটুকু বলতে পারি। নির্বোধ চতুষ্পদ প্রাণীর মত আমার চিন্তাহীনতা তাদের দুশ্চিন্তার সলতে টাকে বোধ করি আরো উসকে দিত।
দেখতে দেখতে ইন্টারও পার হল। যারা ম্যাট্রিকের পরে সম্ভাবনাময় একটি ছেলের ঝরে পরার দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে শয্যা নিয়েছিলেন তারা গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন। কারণ এবার রেজাল্ট ভালো হয়েছে। যারা ভালো করেছে তারা কে কোন ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা কল্পনা। সেই জল্পনা কল্পনার মধ্যে আমিও ঢুকে গেলাম। পথে দেখা হলেই পরিচিত, স্বল্প পরিচিত সবাই মাই ডিয়ার টাইপের হাসি দিয়ে জানতে চায় ডাক্তার না ইঞ্জিনিয়ার, কি হতে চাই। উঠতি বয়সের মেয়েদের আলোচনার মধ্যে যে সব অমুক ভাইয়া, তমুক ভাইয়া চলে এল তাদের মধ্যেও আমি হলাম একজন। চতুষ্পদ প্রাণী বিষয়ক সমালোচনা বন্ধ হলেও যে গুণটি (নাকি দোষ?) আমাকে সেই প্রাণীর সাথে সম্পৃক্ত করেছিল সেটি কেন জানি আমার আরো বেশি করে ভালো লাগতে থাকে। কিভাবে আরো নিশ্চিন্ত ও নির্বিকার হওয়া যায় সেটিই আমার চিন্তা আর বিকার হয়।
ইন্টারের শুরুর দিকে একদল ছাত্রছাত্রী ভালবাসাবাসি করে সাড়া জাগিয়ে ফেললো। মাত্র দুটি করে প্রাণের মিলন ঘটাতে গিয়ে প্রায় অর্ধেকটা ক্লাসের জড়িয়ে যাওয়াটাও ছিল দেখার মত। যাদের প্রেম হয় তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু বান্ধবের সংখ্যাও হুড়হুড় করে বেড়ে যায়। বাংলা সিনেমার মত এখানেও নায়ক নায়িকার কাছে এক্সট্রারা ভিড় করে। এই এক্সট্রা খাতির আর বন্ধুত্বের লোভে কেউ কেউ প্রেম করতে চায়। কলেজে এসেই বাড়তি একটু খ্যাতি। ক্ষতি কি? এভাবে এক নতুন জীবনের মোহে আমার অতি কাছের বন্ধুটিও একদিন একজনকে ভালবাসার তীর বিদ্ধ করে। আমাকে শুকনো মুখে এসে জানায় অমুক তাকে বলেছে আই লাভ ইউ। তার শুকনো মুখে ঝিকমিক করতে থাকা চোখ দুটোকে বড় বেমানান লাগে। দীর্ঘসময়ের বন্ধুত্ব শিকেয় তোলা এই ভালবাসা আমাকে করে বিভ্রান্ত। একবার কারো জীবন হ্রদে ভালবাসার ঢিল পড়লে যে তরঙ্গ তৈরি হয় তা হাজারো মান অভিমানের পরও মিলায় না। রক্তের বাঁধনহীন অদ্ভুত এক আকর্ষণে বাঁধা পড়ে দুটি জীবন। অপার্থিব সেই বন্ধনের টানে বাকি সব সম্পর্কের সুতোগুলো একটু একটু করে যেন ঢিল হতে থাকে।
এরই মধ্যে একদিন বাজার থেকে সদ্য বের হওয়া ভার্জিনের দুইটা ক্যান এনে রেসলার স্টিভ অস্টিনের অনুকরণ করে ক্লাসে অন্যধরনের উত্তেজনা আনলাম। ১৫, ১৫ - ৩০ টাকার ক্যান দুটির স্বর্গীয় পানীয়কে এভাবে ধুলোয় লুটাতে দেখে কেউ শিউরে পর্যন্ত উঠেনা। কেন উঠবে? কলেজে উঠে বাবা মার বাঁধন একটু আলগা হয়েছে। অতি অল্প সেই স্বাধীনতার ব্যাপারটাকে এইরকম একটা মোটামুটি নির্দোশ টাইপের আনন্দ দিয়ে প্রকাশ করার সুযোগ পেয়ে সবাই তখন ভীষণ উত্তেজিত। যে যার মত দোকান থেকে ভার্জিনের প্রায় সবগুলো ক্যান তুলে এনে একে একে সবকটার শ্রাদ্ধ করে। আড় চোখে তখন যুগলদের দেখেছি। মমতাময়ী বাঙালি মেয়েরা অর্থের এমন অপচয় দেখে বিরক্ত চোখে তাকায়। পাশে তাদেরই ভালবাসার মানুষের চোখে মোটা দাগের ঈর্ষা। অন্যের বাহুবন্ধনে থেকে এই ধরনের স্থূল আনন্দ তাদের করা হয় না। আমি সানন্দেই প্রেম ব্যাপারটিকে পাশ কাটিয়ে গেলাম।
মাঝে মাঝেই অবশ্য খন্ড খন্ড মেঘ এসে আমার ঝলমলে আকাশটাকে ভাবিয়ে তুলতো। পথভ্রষ্ট হয়ে ভ্রান্তিময় এক ঝলক হিমশীতল বাতাসের সঙ্গি হতে মন চাইতো। (to be continued)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



