
আইএমডিবি রেটিং - ৮.৪/১০
ভাষা - স্প্যানিশ
ধরন - ড্রামা, ফ্যান্টাসি, রহস্য, সংগ্রাম
রচনা ও পরিচালনা - গুইলেরমো ডেল তোরো
প্রথমেই পরিচালকের কথা দিয়ে রিভিউ শুরু করছি। তিনি বলেছেন, এটি বড়দের জন্য এক রূপকথার গল্প। সময়কাল - ১৯৪৪। সিভিল ওয়ার এর পর স্পেনে চলছে ফ্যাসিজম। বিদ্রোহী বামপন্থী গেরিলারা এই শাসন মানেনা। তারা মাঝেমধ্যেই মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়। চলে আর্মির অমানুষিক দমন আর পীড়ন। আর্মিদের প্রধান অফিসার ভিডাল একজন স্যাডিস্ট। তার অত্যাচারের পদ্ধতি আর নির্মমতা দেখে গা শিউরে উঠে। এতকিছু দেখেও তারই বাসার পরিচারক মার্সিডিজ এবং ডাক্তার বিদ্রোহীদের গোপনে জীবন বাজি রেখে সমর্থন ও সহায়তা করে চলেন।
গল্পের প্রধান চরিত্র অফেলিয়া একজন ১২ বছরের কিশোরী। সে তার অন্তঃসত্তা মা কার্মেন এর সাথে সৎবাবা আর্মি অফিসার ভিডালের তত্ত্বাবধানে আসে। ভিডাল কায়মনোবাক্যে ছেলে সন্তান কামনা করে। স্ত্রী কার্মেন এর যত্নের অভাব হয়না। কিন্তু এসবকিছুই হয় ছেলে সন্তানের আশায়। মা সন্তান সম্ভাবনায় শয্যা নেয়ায় অফেলিয়া অনেকটাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। নিঃসঙ্গ অফেলিয়ার কিশোরী মনে কল্পনা বাসা বাঁধে। সে কল্পনা করে এক ফন (দেহ মানুষের কিন্তু হাত পা শিং ছাগলসদৃশ রূপকথার চরিত্র)। সেই ফন বলে, অফেলিয়া আসলে একজন রাজকুমারী, কিন্তু তা প্রমাণ করতে তাকে তিনটি ভয়ংকর মিশনে সফল হতে হবে। এসব শুনে অফেলিয়ার মনে ঝিমিয়ে পড়া অভিযানের নেশা জেগে উঠে। সে কাজ তিনটি করবে মনস্থির করে।
অফেলিয়ার কল্পনা প্রবল থেকে প্রবলতর হতে থাকে। মাঝে মাঝে কল্পনাকে বড় বেশি বাস্তব মনে হয়। প্রসববেদনায় মায়ের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে অফেলিয়া ফনের কথামত দুধে ডোবানো ম্যান্ড্রেকের মূল মায়ের বিছানার নিচে রাখে। আশ্চর্যের ব্যাপার এতে মা ভালো বোধ করেন। এদিকে বিদ্রোহীদের একজন আর্মির হাতে ধরা পড়ে। তার উপর অকথ্য অত্যাচারে পরিচারক মার্সিডিজ ও ডাক্তারের আসল পরিচয় উন্মোচনের শঙ্কা জাগে। শেষ পর্যন্ত তারা কি পারে পরিচয় গোপন রেখে বিদ্রোহীদের রসদ দিয়ে যেতে? বিদ্রোহীরা কি পারে আর্মিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে? অফেলিয়া কি পারে কাজ তিনটি করে স্থায়ী রাজকুমারীত্ব পেতে? এসব কি শুধুই তার কল্পনা নাকি বাস্তব? তার মা কি পারে ছেলে সন্তান প্রসব করতে? স্যাডিস্ট ভিডালের কি হয় শেষ পর্যন্ত?
গল্পের প্রবাহ চমৎকার। গল্পকার একদিকে যেমন কিশোরী মেয়েকে ঘিরে কল্পনা আর বাস্তবতা উভয় সুতোয় রহস্যময়তার জাল বুনেছেন অন্যদিকে আর্মি অফিসারের নির্মমতা দেখাতে আর বিদ্রোহীদের প্রতি সমবেদনা জাগাতে হয়েছেন অকপট। সাউন্ডট্রাক এক কথায় অসাধারণ এবং কাহিনীর সাথেও অত্যন্ত মানানসই এবং শ্রুতিমধুর। মুভিটি আর্ট ডিরেকশন, সিনেমাটোগ্রাফী এবং মেক আপে অস্কার পেয়েছিল। এসব বিষয়ে মুন্সিয়ানা আপনাদের চোখ এড়াবেনা। বেস্ট রাইটিং, মিউজিক ফর মোশন পিকচারস এবং বেস্ট ফরেন ল্যাংগুয়েজ বিভাগে পেয়েছিল অস্কার নমিনেশন।
মুভিটা অসাধারণ। তবে অবশ্যই এই মুভিকে রূপকথা ভেবে বাচ্চাদের নিয়ে দেখতে বসবেন না। মুভিতে যৌন আবেদনময়ী দৃশ্য নেই, তবে ভায়োলেন্স যথেষ্ট গ্রাফিক।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৪:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



