
IMDB Rating : 6.9/10
Writer and Director : Jamin Winans
Genres : Action, Fantasy
রিভিউ শুরু করার আগে মুভিটির একটু ভিতরের খবর বলার লোভ সামলাতে পারছি না। জেমিন উইনানস নামক জনৈক স্বল্পপরিচিত ভদ্রলোক মুভিটি বানান। মুভিটি লেখা, এডিটিং, ডিরেকশন এমনকি মুভির জন্য সাউন্ডট্রাক সব তিনি নিজ হাতে করেছেন। ভদ্রলোকের সহধর্মিনী করলেন সাউন্ড ডিজাইন, আর্ট ডিরেকশনের কাজ, সাথে হলেন প্রডিউসারও। মোটামুটি পারিবারিক প্রচেষ্টায় তারা মুভিটি নামালেন। মুভিটি বানাতে মোট খরচ হল মাত্র ২৫০,০০০ মার্কিন ডলার ।
মুভি বানানোই শেষ কথা না। থিয়েটার রিলিজ কিংবা হোম ডিস্ট্রিবিউশন না হলে মানুষ যেমন মুভিটা দেখতে পাবেনা, তেমনি উঠবেনা তাদের খরচের টাকা টা। একটি ফেস্টিভাল সার্কিটে মুভিটার প্রথম প্রিমিয়ার হল। ভালই সাড়া পেল। কিন্তু তারপরও বড় কোন স্টুডিও মুভিটির থিয়েটার রিলিজ কিংবা হোম ডিস্ট্রিবিউশনে এগিয়ে এলো না। পরিচালক নিজে থেকেই উদ্যোগী হয়ে কিছু থিয়েটারে এবং ডিভিডিতে এর রিলিজ দিলেন।
যে সপ্তাহে রিলিজ হল সেই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোডকৃত পাইরেটেড মুভির টপ টেন লিস্টে হলিউডের সমসাময়িক জনপ্রিয় মুভি জোম্বিল্যন্ডের সাথেই এই মুভিটাও উঠে এল। এক সপ্তাহে প্রায় ৪০০,০০০ বার ডাউনলোড হয়েছিল মুভিটা। খবর প্রকাশ হওয়ার পর অনেকেই ছুটলেন ডিভিডির দোকানে। এই মুভিটির ডিভিডির সেল বাড়লো হু হু করে।
কি আছে এই মুভিতে? জনপ্রিয় কোন তারকাই নেই, নেই চোখ ঝলসানো হলিউডি ভিজুয়াল ইফেক্ট। তবু কাহিনীর স্বকীয়তা, দুর্দান্ত কল্পনাবিলাস আর চমৎকার দৃশ্যায়নের জন্য এটি দর্শকপ্রিয় হয়েছে।
সূচনা একটু বড় হয়ে গেল। কাহিনীতে যাবো যাবো করেও যাওয়া হচ্ছে না। রাত অনেক হল। চোখ জুড়ে ঘুম আসছে। ধীরে ধীরে রাত আরো গভীর হবে। বন্ধ হবে সবার চোখ। রোজ দিনের মত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখবার আশায় চোখ বন্ধ করবো। তবু হয়তো দেখবো কোন দুঃস্বপ্ন। তারপর ঘুমের মধ্যে আতংকে কুকড়ে যাওয়া। অতঃপর ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে হঠাৎ জেগে ওঠা। স্বপ্ন মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। চাইলেই আমরা সুন্দর স্বপ্ন দেখিনা। কারণ আমাদের জগতের সমান্তরালে আছে আরো একটি জগত যেখানে শুভ আর অশুভ শক্তির বাস। মানুষ ঘুমালে এই দুই অদৃশ্য শক্তি তৎপর হয়ে উঠে। শুভ শক্তির দলটা আমাদের সুন্দর স্বপ্ন দেখায়, দেয় বাঁচার শক্তি, সাহস আর উৎসাহ। এই দলটার সদস্যদের নাম স্টোরিটেলার। অন্যদিকে অশুভ শক্তির দলটা দেখায় দুঃস্বপ্ন। এদের নাম ইনকিউবাস। ইনকিউবাসদের মুখের সামনে বড় একটা স্বচ্ছ পর্দা থাকে। মানুষ তার চরিত্রের অন্ধকার অংশগুলো বাইরের মিথ্যে কর্পোরেট হাসিতে কিংবা ভদ্রতার মুখোশে ঢাকতে চায়। ইনকিউবাসের মুখের পর্দা যে তারই রূপক তা ধরতে ভুল হয় না। ইনকিউবাসের ছায়া আমাদের উপর পড়লেই আমরা দুঃস্বপ্ন দেখি।
আমাদের ঘুমের মধ্যে এই শুভ অশুভ শক্তির শব্দহীন দ্বন্দ্বে যার জয় হয় সেই দেখায় আমাদের স্বপ্ন। এরা ছাড়াও আরেক দল আছে যারা শুভ অশুভ কোন দলেই নেই। এদের বলা হয় ড্রিফটার। এরা কেউ কেউ শুভ অশুভ কোন এক দলে ভিড়ার চেষ্টা করে। এমনি এক ড্রিফটার চায় ইনকিউবাস হতে। তার নাম ইংক। ইনকিউবাসরা শর্ত হিসাবে তাকে দেয় একটি দায়িত্ব। বাচ্চা একটা মেয়েকে তার ঘুম থেকে ধরে আনতে হবে। মেয়েটির নাম এমা। ইংক দায়িত্বটি নেয়। স্টোরিটেলারদের বাধা সত্ত্বেও সে এমা কে ধরে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু এমাকে নিয়ে ইনকিউবাসদের জগতে ফেরত যাওয়ায় প্রক্রিয়ায় দেখা দেয় সমস্যা, হয় বিলম্ব।
ঘুমের মধ্যে ধরে আনায় বাস্তব জীবনে মেয়েটি কোমায় থাকে। তার বাবা জন একজন কর্পোরেট, অর্থের মোহে পড়ে তিনি মা মরা মেয়েকে সময় দিতে পারেননা। এমা বড় হয় তার নানার কাছে। এমা'র কোমায় থাকার খবরটা তার নানা জন কে দিতে আসেন। জন শ্বশুরের প্রতি পূর্ব অভিমান থেকে এবং কর্পোরেট মোহে হাসপাতালে মেয়েকে দেখতে যাননা।
এর সমান্তরালে অন্য ভুবনে স্টোরিটেলারের এক দল এমাকে ড্রিফটারের হাত থেকে উদ্ধারের মিশনে নামে। এদের দলে একজন পাথফাইন্ডার থাকে যেই কেবল পারে বাস্তব জগতের সাথে তাদের যোগসূত্র ঘটাতে। আরেক স্টোরিটেলার লিভ পৃথকভাবে ইংক নামক ওই ড্রিফটার কে বোঝানোর উদ্দেশ্যে তার হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দেয়। লিভ ও এমাকে একসাথে বেঁধে ইনকিউবাসের হাতে তাদের তুলে দিতে নিয়ে চলে ইংক। লিভ ইংককে বোঝায় আর ভীত এমাকে দেয় সাহস আর শক্তি। এই অংশটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।
এই মুভিটির যা কিছু ভুল তা আমি নিশ্চিত আপনারা এর স্বল্প বাজেটের কথা ভেবে ক্ষমা করে দিতে পারবেন। এমনিতে কাহিনীর গাঁথুনি চমৎকার। অন্য অনেক ফ্যান্টাসি মুভির মত অসংলগ্নতা যেমন খুব একটা চোখে পড়েনি তেমনি কল্পনার দৌরাত্মে কাহিনীর জটিলতা বাড়েনি বলেই আমার মনে হয়। কল্পনা আছে, কিন্তু সেই কল্পনাকে বাস্তবের রূপক ভাবতে সমস্যা হয়না। মুভির শেষটা আরো চমৎকার যেখানে এসে পরিচালক দর্শকদের মনে জেগে ওঠা সব প্রশ্নের উত্তর খুব অল্প সময়ে নাটকীয়তার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।
এই মুভির অসাধারণ কিছু সুন্দর দৃশ্য আছে। যার একটি হল পাথফাইন্ডারের একটি দুর্ঘটনা ঘটানোর দৃশ্য। মুভিটির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও প্রশংসার দাবী রাখে। আশা করছি এই মুভিটি আপনাদের আনন্দ দিবে। মুভিতে যৌন দৃশ্য কিংবা ভায়োলেন্স এক দমই নেই। কেবল হালকা কিছু মারামারির দৃশ্য, রক্তপাত ও ভয় ধরানোর চেহারা আছে। আপনি অনায়াসে আপনার বাচ্চাকে সঙ্গে করে মুভিটি দেখতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৫:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



