.
.
.
.
.
.
.
.
প্রথম পর্ব না পড়লে এইখান থেকে কিছুই বোঝা যাবে না, তাই প্রথম পর্বটা এইখানে দিলাম।
সম্পর্কটা বেশ ভালই চলছিল। রাত জেগে ফোনে কথা বলা, মাঝে মাঝে মির্জাপুর রোডের এমাথা থেকে ওমাথা হাত ধরে হেঁটে বেড়ানো, সাউথ সেন্ট্রাল রোডের ফ্যান ফেয়ারে বসে গরম কফির চুমুক....... সব মিলিয়ে বাংলা ছিনেমা, হিন্দী ছিনেমা যেটা হোক হবে একটা। আর রাগ, অভিমান, অভিযোগতো ছিলই।
হঠাৎ করে একদিন সে আমার ফোন রিসিভ করে না, এসএমএস করি উত্তর দেয় না, দেখা করার চেষ্টা করি পারিনা। দিন যেতে থাকে.......... রাস্তায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করি সে পাশ কাটিয়ে চলে যায়, দেখা হলে ডাক দিই না চেনার ভান করে চলে যায়। আমি হতাশ হয়ে যাই। এদিকে আমার ফাইনাল পরীক্ষাও এগিয়ে আসছে। হলে যাই বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি করার জন্য, সবাই পড়ে আর আমি মোবাইলে চার্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে ট্রাই করি, এসএমএস করি, কিন্তু কোন উত্তর পাই না।
একদিন তার আম্মুর সাথে পথে দেখা। তিনি যে কথা গুলো বললেন তা শুনে আমি পুরোপুরি শক্ড, কিন্তু তাঁকে আমি বুঝতে দিলাম না। আমি তাঁকে এতটুকু বুঝালাম যে আমি সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছি। তিনি আমাকে বললেন- সে এই সম্পর্কটা নিয়ে আর সামনে যেতে চাচ্ছে না তোমার কিছু সমস্যার কারণে। আমি জানতে চাইলাম- আমার সমস্যা গুলো কি? তিনি বললেন- তুমি অত্যন্ত জেদী প্রকৃতির, যা বলো তাই করো। তুমি মাঝে মাঝে হলে থাকো যা আমার মেয়ে পছন্দ করে না। তুমি নাকি তোমার বন্ধুদের সাথে সিগরেটও খাও! এই কারণ সে এই সম্পর্কটাতে আর কোন আগ্রহ নেই। আমি বাসায় চলে আসলাম, সারারাত বসে ভাবলাম যে এই কারণ গুলোর জন্য কেউ কাউকে ছেড়ে যেতে পারে! খুব অবাকও হলাম। তারপর ভাবলাম- যে চলে যাবার তাকে বেধেঁ রাখা যাবে না, আর যে থাকার সে এমনিতেই আসবে। আমি আমার মতো গুছিয়ে নিতে লাগলাম। খুব সুন্দর করে একটা চিঠি লিখে একদিন সন্ধ্যার পর তার বাসার সামনে গেলাম। তাকে ফোন দিলাম, সে রিসিভও করলো। তাকে বললাম যেন তাদের কাজের মেয়েটাকে একটু নিচে পাঠিয়ে দেয়। আমি অপেক্ষা করছি চিঠিটা দিয়ে চলে আসবো। ঐ চিঠিটা ছিল সম্পর্কের শেষ বাধনটুকু ছিড়ে দেয়ার জন্য।
কিছুক্ষন অপেক্ষার পর দেখি সে নিজেই নেমে এসেছে। সিঁড়ি ঘরে আবছা আলোয় মুখোমুখি দু'জন দাড়িয়ে। আমি চিঠিটা তার হাতে দিলাম, সে চিঠিটা হাতের মুঠোয় নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। আমার শার্টের কাধেঁর কাছে ভিজে যেতে লাগলো। আমি আবেগকে ধরা দিলাম না। তাকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বেড়িয়ে পড়েই ভাবলাম সে তো ফিরে এসেছে কিন্তু তাকে ছুঁড়ে ফেলার জন্য আবার কেন চিঠিটা দিয়ে আসলাম!
আমি আবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সে চিঠিটা পড়ে নিজেকে আমার কাছ থেকে গুটিয়ে নিয়েছে। তারপরও হাল ছাড়িনি, অনেক চেষ্টা করেছি। অসুস্থ হয়ে পড়লাম, চশমার পাওয়ার বাড়তে লাগলো। পরীক্ষা দিলাম, কোন মতে পাশ করলাম। পরের ইয়ারের জন্য পড়াশুনা শুরু করলাম। ধীরে ধীরে সহজ হওয়ার জন্য বন্ধু, আড্ডা, হল, মুভি, গান এইগুলো নিয়ে মেতে থাকতাম, তারপরও মাঝে মাঝে তার বাসার সামনে যেয়ে দাঁড়াতাম একবার যদি বারান্দায় আসে এই ভেবে।
হঠাৎ একদিন তার আম্মু আমার মা কে ফোন করে বলে- আপনার ছেলে তার তার বাবাকে এই সম্পর্কের কথা সব জানিয়ে দিয়েছে। তার বাবা ছিল একটু রাগী প্রকৃতির, তিনি এই ব্যপারে কিছুই জানতেন না। আমার মা ব্যপারটা আমার কাছে চেপে গেল। কিন্তু ঠিকিই চ্যালা গোবিন্দ আমাকে সময়মত আমাকে খবরটা দিয়েছে। আমি আমার মা'র সাথে সরাসরি এই বিষয় নিয়ে কথা বললাম। তার আম্মু আমাদের বাসায় আসলো, আমার মা তাকে অনেক বুঝালো।
তার মনের ভেতর এখনো ধারনা আমি তার বাবাকে সব বলে দিয়েছি। সে এতটুকু চিন্তা কখনই করেনি যে কোন তৃতীয় ব্যাক্তি এই কাজ করতে পারে।
আজ অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। সে আমাকে বলতো- তোমাকে ছাড়া অন্য কোন জগৎ আমার পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব না। এখন এই কথা মনে হলে হাসি পায়। হাসি পাবে না কেন তার এই ছবির সাথে তার কথার কোন মিল খুজে পাইনা আমি। যাক তারপরও সে ভাল আছে, ভালই থাকুক।
আবেগ, ভালবাসা সব কিছুকে উপড়ে ফেলেছিলাম শুধু জীবনের সিঁড়িতে উপরে ওঠার জন্য। উপরে উঠতে পেরেছি কিনা জানিনা, তবে পরিচিত, বন্ধু, আত্মীয় সবার কাছ থেকে পেয়েছি অফুরন্ত ভালবাসা। আর পেয়েছি লক্ষী একটা বউ, শুধু লক্ষী বললে ভুল হবে অনেক অনেক লক্ষী যা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১২ রাত ২:৪৫