অভিজাত তকমা লাগিয়েও আলাওল এভিনিউয়ের বাসিন্দারা পরিপূর্ণ আভিজাত্য ভোগ করতে পারছিলো না এই বেওয়ারিশ কুকুরের যন্ত্রণায় ।রাত দশটা বাজলেই যেখানে প্রতিটি সড়কের প্রবেশপথ সীমিত করে ফেলা হয় সেখানে রাত বারোটা কি তার পরে এইসব বেওয়ারিশ কুকুরের ঘেউঘেউ বাসিন্দাদের কেবল ঘুম আর জৈবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে তা নয় তাদের আভিজাত্যকেও বিব্রত করে। কিন্তু একে তো মধ্য রাতের ব্যাপার তার উপরে আবার বেওয়ারিশ কুকুর। বাসিন্দারা ঠিক বুঝতে পারছিল না কোথায় গেলে এই নিশুতি রাতের অত্যাচার হইতে তাদের মুক্তি মিলবে।কল্যান সমিতি বলে একটা পরিষদ আছে তবে তারা কেবল মহল্লার নিরাপত্তা রক্ষা, পরিচ্ছন্নতা , পার্ক রক্ষনাবেক্ষন, হকার উচ্ছেদকরণ প্রভৃতি কাজে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে। সমিতির সদস্য দুই একজন প্রসঙ্গটা তুললেও বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের মত লোকবল ও তরিকা কোনটাই সমিতির নাই বলিয়া প্রস্তাবটি মূহুর্তেই খারিজ হয়ে যায়।
তার ও দুই তিন মাস পরে একদিন রব উঠে জনৈক প্রভাবশালী নেতার পদক্ষেপে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক মহল্লাকে বেওয়ারিশ কুকুর মুক্ত করার মিশন দুই একদিনের মধ্যেই শুরু হবে।
এবং একদিন সত্যি সত্যি মহল্লা বাসী বিকেলবেলা কুকুর নিধনের ঘোষনা সংবলিত মাইকিং শোনে। ঘোষনায় রাত বারোটার পরে অভিযানের কথা জানিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। অভিযান শুরুর পূর্বে সেই নেতা সংক্ষিপ্ত বয়ান পেশ করিবেন সেখানে পুরুষ বাসিন্দাদের উপস্থিতি সকলের মঙ্গল বয়ে আনবে বলে জানান হল।
অতঃপর রাত বারোটার পরে মহল্লার লোকেরা দেখল কর্পোরেশনের ট্রাক বেওয়ারিশ কুকুরের ডেডবডিতে ছেয়ে গেছে। প্রশিক্ষিত কুকুর নিধনকারীরা বিশেষ এক জালের ফাঁদ ফেলে অকস্মাৎ কুকুরের ঘাড়ে পুশ করে দিত এক পাওয়ারফুল ইঞ্জেকশান। সেকেন্ডের মধ্যেই পটল তুলত আভিজাত্যর হুমকি এইসব বেওয়ারিশ কুকুরেরা।
অতঃপর শান্তি নেমে আসে আলাউল এভিনিউতে। মধ্যরাতে শুনশান চারপাশ । বেওয়ারিশ কুকুরের ঘেউঘেউয়ের বদলে শয়নকক্ষে বাজে চৌরাশিয়া, মোজার্ট ,বিটোফেন, লিওনার্ড কোহেনসহ অভিজাতন্ত্রের বিবিধ সারথিরা । অটুট আভিজাত্য নিয়ে বুক ফুলিয়ে চলে বাসিন্দারা। কেবল মহল্লার নারীদের মধ্যে এক বিশেষ উশখুশ ভাব তীব্র হয়ে উঠে। একে অপরের সাম্প্রতিক পতিগমনের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুবাদে সবাই নিশ্চিত হয় তাদের সমর্থ স্বামীরা সকলে জীবনীশক্তি হারাইয়া অকস্মাৎ ধ্বজভঙ্গে পরিনত হইয়াছে।
পুরুষেরা ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের সাথে সাথে ঘাতকের দল অলক্ষে তাদেরও ইঞ্জেকশান পুশ করিয়া শুষে নিয়েছে পৌরুষ রস ।
ওষুধ কোম্পানির যে যুবকটি মোড়ের ফার্মেসীগুলোতে রাবার সরবরাহ করত ধীরে ধীরে তার বিচরনও সীমিত হয়ে যায়। তাকে মাঝে মাঝে বিরসবদনে কোন ফার্মেসীর সামনে কোম্পানি প্রদত্ত মটরসাইকেলে বসে থাকতে দেখা যায়।গাড়িতে করে যেকোন সমর্থ পুরুষ কিংবা হুট হাট এক দুইটা নিরীহ গোছের কুকুর রাস্তায় যেতে দেখলে অনুযোগের ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে সে ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০২