একেই কি বোবা ধরা বলে লোকে? ঘুমের মাঝে সিদ্ধার্থের মনে হল কেউ যেন তাকে চেপে ধরেছে। সে তার শরীর নাড়াতে চাইল কিন্তু পারল না। খানিক বাদে তার নাক মুখ ও মনে হয় চেপে ধরল অদৃশ্য শক্তিটি। সিদ্ধার্থ নি:শ্বাস নিতে চাইল কিন্তু বিফল হল আরেকবার । সে কি মারা যাচ্ছে? সে মনস্থির করে তাকে বেঁচে থাকতে হবে যেকোন মূল্যে। শরীরের সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে নিজেকে মুক্ত করার জন্য একটা প্রবল ঝাকুনি দিল সে । নিজের শরীর একবার ঝাঁকাতে পারল মনে হয়। "কে?" বলে চিৎকার করে উঠল সে। 'আমি!'। এটা কার কণ্ঠ? এ কন্ঠ তো শাইয়ারা সানার। তার মধ্যদুপুরে রোদে ভেজার সাধনসঙ্গী শাইয়ারা তার কক্ষে এই মধ্যরাতে কি করে এল? সিদ্ধার্থ নিজেকে সম্পূর্ণ ছাড়াতে আরেকবার শরীর ঝাঁকালে শাইয়ারার আর্তনাদ ভেসে উঠে, "সিদ্ধার্থ তোমাকে ছাড়া আমার চলে না। "
নারী শরীরটিকে সিদ্ধার্থ বিছানা থেকে মেঝের দিকে ঠেলে দেয়। অন্ধকারেও শাইয়ারার কাতর চোখ দেখতে পায় সে। দ্বিধা এড়াতে বেডসুইচ টিপে বাতি জ্বালায় সিদ্ধার্থ । কেউ নেই রুমে । মেঝেতে একটা তেলাপোকা বিচরণ করছে উদ্দেশ্যহীন । এই মরা রাত্রিরেও বিহারিপল্লী হইতে কাওয়ালী গানের সুর ভেসে আসছে, "হায় হায় হায় হায়! ফাগুনও রজনী ফুরায়ে যায়! "
সকালবেলা সাইকিয়াট্রিস্ট আলমগীর রেজার এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য মনস্থির করে সে । ডা: রেজার বিজনেস কার্ড খুজতে মানিব্যাগ ঘেটে আরেকটা কার্ড পায় সে। একটা গোলাপ ফুলের ছবি ছাপানো। নিচে ক্যাপশন- "বন্ধুর সাথে মনের কথা। বিস্তারিত জানার জন্য ফোন দিন।" কিছুদিন আগে বনানী উড়ালসেতুতে এই কার্ডটি তাকে দিয়েছিল জনৈক যুবক। সাথে ফিসফিস করে বলেছিল, "স্যার, ভার্সিটি গার্ল। "
সে কোনটিতে ফোন দিবে? গোলাপ ফুল নাকি আলমগীর রেজা? মেঝেতে তেলাপোকাটাকে খুঁজে সে। শাইয়ারা সানার মত এটিও উধাও ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩১