লোককাব্যের বড় আকর্ষণ সহজ কথা এবং সুরের মূর্চ্ছনা। মরমী বাউল কবিদের সৃষ্টি ভীষণ সুন্দর ও মহিমান্বিত।
বাংলাদেশের জনপদে যুগ যুগ ধরে বাস করছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী। বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষ এদেশে মিলেমিশে বাস করছে। নানা উৎসব-অনুষ্ঠানে, পালা-পার্বণে একে অপরের সাথে সংস্কৃতি আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিকোশিত হয়েছে এবং সমন্বয়ের মহত্ব ও মাধুর্যে পুষ্টিলাভ করেছে। ঋদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত। আঞ্চলিক ভাষা ও সুরে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়েও আঞ্চলিকতা অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে সার্বজনিন।
লোকসঙ্গীত বাঙালি এবং বাংলা গানের প্রাণ। লোকসঙ্গীত মাটির গান। লোকসঙ্গীত পুরুষ বা বংশপরম্পরায় লোকের মুখে মুখে ঘুরে ফিরে। এ গান এমন এক শ্রেণীর গান, এমন এক সমাজের সৃষ্টি যাদের কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলো না বললেই চলে। তারা অশিক্ষিত হলেও প্রকৃতগতভাবে তারা ছিলেন জ্ঞানের অধিকারী। তাদের গানে জ্ঞানের কথা, তত্ত্ব ও দর্শন থাকে। ফকির লালন শাহ, হাসন রাজা, মনোমহন দত্ত, পাগলা কানাই, দুর্বীন শাহ, রাধা রমন, বিজয় সরকার, লোক কবি জালাল উদ্দিন খা, উকিল মুন্সী, শাহ আব্দুল করিম প্রমুখ প্রখ্যাত মরমী ফকিররা আমাদের লোকসঙ্গীতকে করেছে সমৃদ্ধ।
সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে আমাদের অনেক মূল্যবান লোকসঙ্গীত। এতে করে বাংলা গানের নিজস্ব রূপ তার শেকড়কেন্দ্রিক ধারা, সভ্যতার স্বরূপ যে লোকসঙ্গীত ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে নদীর মতোই প্রবাহিত হয়ে আসছিল যে ধারা রক্ষা পায়নি।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মাঝে মধ্যে সংগ্রহের কাজ চলছে আবার ঝিমিয়ে পড়ছে। সংগ্রহের জন্য চাই জোর তৎপরতা সবার আন্তরিক সচেতনতা।
অস্থির এই সময়ে আমাদের হাতের কাছেই মূল্যবান রত্ন রয়েছে সত্য কিন্তু তা আমরা নেড়ে দেখি না। বাংলা গানের ধারাবাহিকতা সংরক্ষণের ও নিজস্ব সাংস্কৃতিক চেতনা বিকাশের জন্য আমাদের উচিত এক্ষেত্রে গবেষণামূলক কাজকে আরো ত্বরান্বিত করা। তাতে করে হয়তো সমাজের এই অবক্ষয়ের ক্ষণে কিছুটা শুদ্ধতা বয়ে নিয়ে আসবে। পৃথিবীর বুকে আমরা বাঙালি এই কথাটি আরো হাজার হাজার বছর ধরে বলে যেতে পারবো সগৌরবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



