somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাহলের মৃত্যু

০২ রা মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুখ আর শান্তি শব্দ দুটির বাংলা অভিধানে আলাদা কোন ব্যাক্ষা আছে কিনা আমার জানা হয়নি। শব্দ দুটির একই অর্থ হলেও কোথায় যেন একটু ব্যবধান খুঁজে পাই। সুখের পরিবেশটা তৈরি করা যায় কিন্তু শান্তির পরিবেশ তৈরি করা যায় না। আপন কর্ম ও গুণে প্রকৃতি তা আপনা আপনি উৎসর্গ করে বসে। বৈষয়িক নিয়মের চক্করে সুখের জন্য আমরা যে প্রতিযোগিতা করি সেখানে শান্তি সবসময় নাও আসতে পারে কিন্তু শান্তি যেখানে, সেখানে সুখ অপরিহার্য। সাতটি রংয়ের মিলনে যদি সুখ হয় তাহলে আমার কাছে শুধু নীল হল শান্তি। শরতের ঝরঝরে দিনের আলোয় যদি সুখ খুঁজে পাই তাহলে শান্তি পাই আমি বর্ষার ঝকঝকে চাঁদের আলোয়। এমন সুখ আর শান্তির মাঝে যখন দিন গুনছি তেমন সময়েই সিডরের তাণ্ডবের মতো আরেকবার আমাকে হতবিহ্বল করে দিয়ে গেল। নাহলের সঙ্গে আমার সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। একবিংশ শতাব্দীর এই আধুনিক যুগেও বর্বরতার অন্যতম নমুনা স্থাপন করল। আজ দীর্ঘ বার বছর আমার আর নাহলের ভালবাসাকে নাহলের পরিবার কোনভাবেই মেনে নিচ্ছে না। ও মাস্টার্স পাশ করেছে আজ দুবছর হলো। এই বয়সেও বর্বরতা আর লাঞ্ছনার শিকার নাহল অনেকটা মায়নমারের নেত্রী অং সান সূচীর মত সে এখন। তার মোবাইল ফোনটি পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছে। গৃহবন্দী করা হয়েছে তাকে। সকল সামাজিক চিন্তা-ভাবনা কিংবা আপন জীবন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এর আগেও জীবনে এসেছে কিন্তু এবারের ধাক্কাটায় বড় বেশি একা হয়ে পড়লাম। কারো সাথেই আর আপন হয়ে মিশতে পারিনা। অবিরাম চেষ্টার পরও যেন তা পেরে উঠছিনা। আগে নিজের মাঝে যে আদর্শীক ধ্যানধারণা এবং তা নিজের জীবনে প্রবলভাবে চর্চা করার যে টান উপভোগ করতাম তা হঠাৎ করেই আমার হারিয়ে গেল। সামাজিক সীমাবদ্ধায় নিজেকেও বড্ড অপরাধী বলে মনে হয়। অন্যেরা সহজে তা মেনে নিক বা না নিক শুভাকাঙ্খীরা যে সম্মানটুকু দেখায় সেই সম্মানের আনুষ্ঠানিক সৌজন্যবোধ দেখাতেও যেন ভুলে যাচ্ছি । একজন আদর্শবাদিক মানুষ থেকে অপরাধবোধের গ্লানিকর জ্বালায় দিনদিন নীতিবাগিশ হয়ে উঠছি। আর সে জন্যই বোধহয় মনের মাঝে সুক্ষ্ যে কষ্ট ছিল তা আরো কঠিন কিন্তু অতি সুক্ষ হয়ে বিধছে দ্রুত এবং ঘন ঘন। সেজন্যই বুঝি নতুন কোন সংগ্রাম করার মত ক্ষমতা ও ধৈর্য খুঁজে পাচ্ছি না। মনের মাঝে কোথায় যেন বার বার ধ্বনিত হচ্ছে নীতিবাগিশরা জীবনে কিছু করতে পারে না, আদর্শবাদীরা তা পারে। এতে কি নিজেকে লোভী বলে মনে হচ্ছে? এ শুধু নিজের ব্যক্তিগত আর সামাজিকভাবে আঘাত পাওয়া না, একটি সত্যিকারের ভালবাসাকে হারানো কিংবা অন্যভাবে বললে ভুল হবে না যে, পৌরুষতান্ত্রিক কামনা বাসনারও যবনিকা ঘটল। এজন্য কাউকে দায়ী করাও অর্থহীন। অর্থহীন এই জীবনের জন্যও কোন দুঃখবোধ নেই আর। হঠাৎ এই নির্জীব চেতনায় অভ্যাসগত হতে অবশ্য কষ্ট পেতে হয়। তবু বেঁচে থাকতে হয়। বেঁচে আছি। আমরা সবকিছু ভুলে যায়। ভুলে যেতে পারি আমরা। এই অসীম ক্ষমতাটুকু সৃষ্টিগতভাবেই মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। তাইতো আমরা যার কাছ থেকে জন্ম নিলাম জগতের সবচেয়ে আপনজন মা-বাবা, তাদেরকেও কখনো কখনো ভুলতে বসি। আবার তাঁদের মৃত্যও যদি চোখের সামনে হয় তাও কিছুদিন বাদে ভুলে গিয়ে জাগতিক সকল কর্মকাণ্ডে মিলেমিশে আনন্দ উপভোগে জীবন চালিয়ে যায়। সমাজের অপ্রীতিকর সত্য এই নিয়মগুলো মেনে নেয়া ছাড়া আমার আর কী-বা করার আছে তা বুঝতে পারিনা।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×