somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বদলের নায়ক জনাব, মতিউর রহমানকে বদলে যেতে বলে বুয়েটের ছাত্ররা !!!

০৯ ই জুন, ২০০৯ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুয়েট অডিটরিয়াম। দর্শক সারিতে লোকের সমাগম খুব বেশি না। বেশির ভাগ জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। কারণ যে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা কোন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নয়। বুয়েটের মেধাবী ছাত্রী সনির ৭ম মৃত্যু বার্ষিকী। আজ থেকে সাত বছর আগে ঘাতকের ক্রস ফায়ারে নিহত হয়েছিল। এ ঘটনা আমাদের দেশে নতুন নয়, যে কারণে সচেতন ছাত্র সমাজে এই শোক পালনের এত কৃপণতা। তারপরও যে কয়জন উপস্থিত তারা নিঃসন্দেহে অকৃপণ বন্ধুবৎসল এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে বুয়েটের ভিসি, সাবেক ভিসি, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, সনির বাবা-মা ও আরো কয়েকজন বুয়েট শিক্ষক।

অতিথিবৃন্দ একে একে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখছেন। এক পর্যায়ে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান আসলেন বক্তব্য রাখতে। দিন বদলে দেয়ার বর্তমান নায়ক, দেশের অন্যতম বুদ্ধিজীবী, সর্বোপরী গোছানো ও চমৎকার বক্তা হিসেবে খ্যাত জনাব মতিউর রহমান। ছাত্র রাজনীতির ভালমন্দ দিক আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, `তবুও ন্যূনতম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত ছাত্র লীগের সাংগঠনিক পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এটা একটা ভাল দিক।' বাধ সাধলো কতিপয় মেধাবী ছাত্র। পেছন থেকে শ্লোগান দিয়ে উঠল, 'প্রধানমন্ত্রী একটা সরকারি সম্মানিত পদ তার আগে মাননীয় শব্দ যোগ করুন, আপনার মত বুদ্ধিজীবীর মুখে এটা মানায় না, আপনি বদলাতে বলেন মানুষকে অথচ আপনার মুখে অসম্পন্ন ভাষা, এটা ত্যাগ করুন'। স্বভাবতই একটু থমকে গেলেন দিন বদলের নায়ক। অতিবুদ্ধি সম্পন্ন সম্পাদক বিষয়টার একটা চালাকি ব্যাখ্যা দিলেন। তিনি বললেন, 'প্রধানমন্ত্রী শব্দটা বার বার ব্যবহার করছি এজন্য বার বারই মাননীয় শব্দটি ব্যবহার করা না করার দ্বিমত থাকতে পারে। আপনারও দ্বিমত আছে'।

পরবর্তিতে ভাষণ দিলেন জনাব মাহফুজ আনাম। তার বক্তব্যটি ছিল অত্যন্ত গোছানো এবং গঠনমূলক। তিনি বক্তব্য শেষে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হওয়ার আগেই যখন অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করছিলেন তখন ওই কতিপয় ছাত্রের সাথে আমিও উৎসুখ হয়ে জনাব মাহফুজ আনামের কাছে ছুটে যায়। ওই ছাত্ররা জনাব মাহফুজ আনামকে ধরে খুব উদ্বিগ্ন এবং সোচ্চার কণ্ঠে বলছে, 'স্যার আমরাও চাই দেশের পরিবর্তন। আজকে যারা দেশ বদলের শ্লোগান নিয়ে দৌড়ায়ে বেড়াচ্ছে তাদের কথার সাথে কাজের কোন মিল নেই। আমরা চাইনি আপনাদের বিব্রত করতে। প্রথম আলোর সম্পাদকের কাছে আমরা ছাত্ররা শিখতে চাই। তিনি কেন আমাদেরকে ভুল শেখাবেন? তিনি কেন দেশের নির্বাহী প্রধান পদ প্রধানমন্ত্রী শব্দটি উচ্চারণের আগে মাননীয় বলবেন না?' এরপর তারা একটা ডক্যুমেন্ট বের করল যেখানে একটা সংবাদ আছে জনৈক ব্যক্তি প্রথম আলোর বদলে যাওয়ার অঙ্গিকারে নিজেকে বদলানোর শপথ নিয়েছেন। শপথের কথা ছবিসহ বড় বড় অক্ষরে লিখে প্রথম আলোতে ছাপানোও হয়েছে। সেই তিনিই কয়েকদিন আগে নিজের গাড়ির গ্যাস ভরতে গিয়ে পেছনে দাঁড়ানো শত শত সাধারণ মানুষকে নিজের ক্ষমতা এক হাত দেখিয়ে সবার আগে নিজের গাড়িতে গ্যাস ভরতে বাধ্য করেছেন গ্যাস স্টেশনের মালিককে। এই হল বদলে যাওয়া অঙ্গিকারের বাস্তবতা। জনাব মাহফুজ আনাম তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। সান্ত্বনা দিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন।

আমিও চলে এলাম। আমার কানে ভাসতে থাকল কতিপয় বুয়েটের মেধাবী ছাত্রদের বুকের মধ্যে লালিত ক্ষোভের চিত্র। দেশের 'বদলে যাও বদলে দাও' শ্লোগানের অধিনায়কেরই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আমরা সত্যিই বদলে যাচ্ছি? নাকি সবই আমাদের নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করার এক একটা কৌশল মাত্র? আর সেইসব কৌশলের বলিদান হয়ে আমরা ছা-পোষা মানুষগুলো নতুন স্বপ্ন বিভোরে পার করছি বছরের বছর। তবুও এই স্বপ্নটুকুই একদিকে যেমন আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে অপরদিকে এই দ্রষ্টাদের বানিয়ে দেয় ক্রোড়পতি। এই সত্য আমরা মানলেও মানতে চায় না তরুণ প্রজন্মের মেধাবী ছাত্ররা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১০
৪৩টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×