somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের মৌলিক স্বার্থে রাজাকারের ফাঁসি চাই।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখ, ১৯৭১ সংঘঠিত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম আসামী রাজাকার কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণা হওয়ার পর আমি যারপরানাই হতাশ! ধীকৃত, অপমানিত ও লজ্জিত হই! আমি ভাবতে থাকি, একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমার এতদিনের অপেক্ষায় থাকা বিচারের রায় সঠিক হল না। চরম চিন্তিত হয়ে পড়লাম। কেন একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হবে না! আইনের ধারায় যেখানে সর্বচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে সেখানে এ ধরনের রায় ঘোষণায় আমি বিস্মিত! একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ৪২ বছর ধরে যে পাপ বয়ে বেড়াচ্ছে, তার অপসারণে একি যোগসাজশ!
কিন্তু আমার ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিল। শাহবাগে কিছু তরুণরা একত্রিত হয়ে। তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠল। আর খবরটি যখন কানে আসল তখন থেকেই মানসিকভাবে একাত্বতা ঘোষণা করলাম, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হতেই হবে।
পরদিন সকাল। আন্দোলনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করল দেশের প্রায় সকল গণমাধ্যমসহ বহু মানুষ। দাবি একটাই, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই, রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই। শুরু হল যেন ৪২ বছর পর এক নতুন যুদ্ধ। এ যুদ্ধ চেতনার, এ যুদ্ধ দেশপ্রেমের। তরুণ প্রজন্ম যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে কালিমার বিরুদ্ধে, ভন্ডামির বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধে কোনো দল নেই, নেই কোনো ধর্মের সীমানাও। আমরা বুঝতে শিখলাম বাঙালি আর বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই হবে। যেকোনো মুল্যেই এটি রক্ষা করতে আসুন ঐক্যমত হই। এমন দৃঢ়তার মধ্যে হয়ত অনেকেই দেশের রাজনৈতিক ফায়দা লুটার কথা ভাবছেন। আমি তাদের সাথে কোনো কোনো ব্যপারে সহমত। তবে, অন্য কোনো দলের রাজনৈতিক ফায়দা লুটার এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে বা নাটকের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ এর হায়েনাদের যদি পরিপূর্ণ বিচার দেখতে পায় জাতি, তাহলে সেই রাজনৈতিক ফায়দাকে খাটো করেই দেখব, কারণ স্বার্থটা বৃহত্তর। পুরোপুরিভাবে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ কায়েমের আন্দোলন এই তরুণদের হাত ধরেই আগাবে। এ বিষয়ে আমি আশাবাদী। তবে দুঃখের কথা হল অনেকেই এখনো এই আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারছেন না। তারা ভাবছেন এটি একটি নির্দিষ্ট দলের বা গোষ্ঠীর চাওয়া! ওই তথাকথিত ভাবুকদের বলি, প্রত্যেকটি মানুষ, দল কিংবা গোষ্ঠীর দুর্বলতা রয়েছে। প্রথমত দেখতে হবে আমাদের মৌলিক সমস্যা কী? মূল দাবি কী? প্রধান হল, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি। আর এক্ষেত্রে বিরোধীতা করছে জামায়াতে ইসলামী। এই জামায়াতে ইসলামকে যেকোনো মূল্যে দুর্বল করতে হবে। দ্বিতীয়ত জামায়াতকে যে কারণে মনে করা হয় অনেক সংগঠিত একটি দল, তা তারা হতে পেরেছে যে কারণে তার প্রধান কারণ হল তারা যে ত্রাস সৃষ্টি করে এক একটি হত্যা করে, তাতে সাধারণ মানুষ ঘরে বসে টিভি নিউজ দেখা ছাড়া আর কোনো ভূমিকা রাখতে সাহস পায় না সচরাচর। এবং সেই টিভি দেখা মানুষ বা পত্রিকা পড়া মানুষগুলোই তখন জামায়াতকে শক্তিশালি ভাবা শুরু করে। এবং জনগণের এই মানসিক দুর্বলতার বা ভয়ের সুযোগ নিয়ে আমরা জনগণই ছড়িয়েছি যে জামায়াত ইসলামী খুব শক্তিশালী এবং সংঘবদ্ধ একটি দল। এটাই বাস্তবতা। একটু গভীরভাবে ভাবলেই দেখা যায়, আমরাই, এই আমরাই জামায়াত কে শক্তিশালী বলছি। জামায়াতকে দুর্বল বলা শুরু করলে ওরা দুর্বল হয়ে পড়বে, সময় লাগলেও এটাই আমাদের করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল এই জাতীয় ইস্যুতে আমাদের ঐক্যমতে পৌঁছাতেই হবে।
গণমাধ্যমের একজন কর্মী হিসেবে সাধারণত আমি কাজ করি গ্রামীণ মানুষদের নিয়ে। তাদের সাথে প্রতিদিনই কমবেশি ফোনালাপও হয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই আলাপের বিষয়বস্তু থাকে তাদের ছোট ছোট সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছাসহ বহু মানুষের ফোন পেলাম। অবাক হলাম, গণমাধ্যমের কল্যাণে একেবারে গ্রামীণ মানুষদের মধ্যেও ভালবাসা দিবস পালনের বার্তাটি পৌছে গেছে ভেবে। আর প্রতিদিনই কিছু মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি শাহবাগে যে আন্দোলন চলছে তার সমাধান কী? এটির সদুত্তর দিতে পারি বা না পারি তবে ওইসব গ্রামীণ মানুষদের কাছে প্রজন্ম চত্বরের উপলব্ধি যে পৌছে গেছে সেটা বুঝতে পারছি। আর সবচেয়ে ভালভাবে যে বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারছি মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা দেখানোর অকৃত্রিম উদারতা দেখে। এই ভালবাসা আছে বলেই আছে রাজনীতি, আছে অর্থনীতি, ধর্মনীতি ও সমাজনীতি। আছে দেশ। যে দেশকে ভালবেসে জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। আবার গুটি কয়েক বেঈমান পাকিস্তানকে ভালবেসে হয়েছে রাজাকার। আবার একটি শ্রেণী এখনো অবৈধ অর্থ আর ক্ষমতাকে ভালবেসে হচ্ছে বিত্তশালী। হায়রে ভালবাসা, তোর বহু রকমফের! অথচ আমার মনের সব ভালবাসা এখন শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে অংশগ্রহণকারীদের জন্য নিবেদিত। যারা প্রায় পাক্ষিককাল ধরে নিরন্তর শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন -রাজাকারের ফাঁসি চাই। ন্যায্য নাগরিক অধিকার চাই। নেতা আপনি যে দলেরই হোন না কেন আপনাদের মুখে আর মিথ্যা আশ্বাস শুনতে না চাই। ইতিমধ্যে যদিও অনেকে দ্বিমত শুরু করেছে। যারা চুপিচুপি লুকিয়ে থাকা সুযোগসন্ধানীরা। এইসব সুশীল, সমাজ কর্মী, সংবাদ কর্মীসহসকল দলবাজ সুবিধাগ্রহণকারীদের গায়ে জ্বালা ধরতে শুরু করেছে। কারণ তারা ভাবছে, আর মাত্র কয়দিন তারপরেই আমি দেখিয়ে দিব, হটিয়ে দিব, দখল করব। কিন্তু তাদের মনে কী একটুও দেশপ্রেম নেই? থাকলে কি আর তারা দেশপ্রেম ভুলে শাহবাগ চত্বরে অবসস্থানরতদের ভুল বিশ্লেষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েতেন। কীভাবে তাদের নাস্তিক বলা যায় আর কতভাবে তাদেরকে ন্যাংটা করে আন্দোলন থামিয়ে দেয়া যায় সে ভাবনায় দিনরাত ঘুম হারাম করতেন। অথচ এমনটা হওয়া উচিত নয়। আমি বিশ্বাস করি, যারা এমন ভাবছেন তাদের মধ্যে বহু মানুষ আছেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের চেতনায় বিশ্বাসী। অচিরেই তারা রাজনৈতিক দলীয়করণ খোলস থেকে বেরিয়ে এসে দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মেলাবেন। প্রজন্ম চত্বরের দাবি অর্জনে এক সুঁতোর বাঁধনে জড়াবেন। শুধুই দেশের জন্য মন-মননে, মানসিক-শারিরিকভাবে কাজ করবেন, চেতনায় বদ্ধ পরিকর হবেন আগামীর আত্মনির্ভরশীল সবুজ বাংলাদেশ গড়তে। বাংলোদেশী মানুষ হিসেবে বজ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করবেন, জয় বাংলা। জয় বাংলা।














সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×