somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেনামী রাত্তিরের কথা

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত তিনটা চল্লিশ

ঘরভর্তি সিগারেটের ধোঁয়া। ডিম লাইটের আলোয় সাদা আর নীলচে রঙের প্রলেপে হরেক রকমের আঁকাবাঁকা রঙধনুর জাল খেলছে, অবাক হয়ে দেখছে নাজিম বিছানায় চিত হয়ে। রাত সাড়ে তিনটার ঘর অতিক্রম করছে। চারটা বাজার পর যদি ঘুম আসে। অভ্যাসটা বদ অভ্যাসের জায়গা করে নিয়েছে এখন! শরৎ বাবুর কথা মনে পড়ছে! শরৎ বাবু বলেছিলেন, গগনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চোখ পেতে রেখেও এক লাইন কবিতা মাথায় আনতে পারেননি তিনি! নাজিমেরও সেই অবস্থা, এই অন্ধকার আর আলোর সঙ্গমে ধোঁয়া ছড়িয়ে রাত্রির যে চিত্র তৈরি হল তাকে সে কোন নাম দিতে পারছে না! ময়ূরের পেখমে যে ঝলমলে কালোর একটা পরত আছে, তার সাথে এই রাত্রির অন্ধকারের তুলনা করতে ইচ্ছে করছে জোর করেই; কিন্তু বাস্তবে যা দেখছে তার সাথে পেখমের সেই রঙটার কোন মিল নেই! কবিতার সঙ্গে এভাবে মিথ্যেবাদিতা করা যাচ্ছে না কোনভাবে! অথচ এখন খুব করে একটা কবিতার লাইন আসা দরকার! একটা মোক্ষম লাইন কেবল এলেই হবে! ওই লাইনটাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই বাকি ডালপালা সমেত একটা কবিতার গাছ হয়ে যাবে! কৌশলটা সহজ! কবিতা পানিভাত! শুধু ওই একটা লাইন মাথায় আসাই সমস্যা!

ঠকঠক!
খুবই অনুচ্চ শব্দ হল দরজায়! এত রাতে দরজায় কে আসবে!
নাজিম চুপ করে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে মনোযোগ দিয়ে!

শব্দটা আবার হল! যেন খুব সঙ্কোচ নিয়ে কেউ দরজায় টোকা দিচ্ছে! রাত তিনটা চল্লিশ।
অগত্যা উঠে এগুলো দরজার দিকে।
কে?
দোস্ত, দরজা খোল!
ফিসফিস করছে রফিকের গলা!
এত রাতে! দরজা খুলে যা দেখল তার জন্য নাজিম প্রস্তুত ছিল না একেবারেই! রফিক মেয়েদের একটা স্যালোয়ার পরে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে কাচুমাচু ভঙ্গিতে!
ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারা করে শব্দ করতে নিষেধ করল রফিক! চুপচাপ ভেতরে এসে দরজা লাগালো। নাজিম বাতি না জ্বালিয়ে আগে লুঙ্গি এনে দিল! ঘটনা কী, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
বাতি জ্বালার পর রফিক বোকার মত হাসল!
নাজিম সিগারেট ধরায়, ঘটনা কী?
রফিক সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলে আজ বিরাট ধরা খেয়েছি দোস্ত!

কী রকম? কার বৌয়ের কাছে গিয়েছিলে?

বৌ না। একটা বাসায় গেছিলাম।

কার বাসায়?

একটা ফ্ল্যাট টাইপের বাসায়, ওখানে কাজ হয়!

নাজিম বুঝতে পারছে কাজ বলতে কী বোঝাচ্ছে ও। এটা এখন শহরে অহরহ আছে। বাসা ভাড়া নিয়ে কাউকে বুঝতে না দিয়ে দেহব্যবসা!
হু, তারপর?

এরকম ফালতু জায়গায় আর কখনও যাই নাই দোস্ত।

তোমাকে ডেকে নিয়ে সব রেখে দিল?

নাহ, তা না। আবার অনেকটা সেরকমই!

আচ্ছা, ঝেড়ে কাশো।

শোনো, গেছিলাম ঠিক জায়গাতেই। কাজ শুরু করেছি, শেষ না হতেই হঠাত করে ছয়জন হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে পড়ল!

দরজা দেয়া ছিল না?

নাহ, দরজার দরকার পড়ে না, রুম সেইফ ছিল।

এটা কেমন সেইফ হল?

ধুত্তোরি, তুমি বাকিটা শোনো।

হু, বল।

ছয়জন লোক ঢুকল, আমাকে থাপ্পড় দিল কয়েকটা এলোপাতাড়ি। তারপর মেয়েটাকে পাঁচজন একে একে কাজ করল!

নাজিমের কান ঝাঁ ঝাঁ করছে! গ্যাং রেইপ!

রেইপ আর কী, ও মাইয়া তো এসবই করে।

নাজিম দাঁতে দাঁত চেপে আছে, পতিতাও যে রেইপড হতে পারে এ শালা এটা বুঝবে না! অতএব বলে লাভ নেই একে।
আচ্ছা, এই কাহিনী? তারপর ওরা তোমার সব রেখে তোমাকে বের করে দিল?

বের করে নাই। ওরা কাজ সেরে চলে গেছে। আমার মোবাইল মানিব্যাগ শার্ট প্যান্ট এমনকি জাইঙ্গাটাও নিয়া গেছে!

হু। এবার তো শিক্ষা হল? তওবা পড়ে বাদ দাও এসব এরপর থেকে।
রফিক চুপ করে আছে। ওর চোখ ছলছল করছে নাজিম খেয়াল করল।
রফিকের পিঠে হাত রেখে বলল, ব্যাপার না দোস্ত, কেউ তো জানছে না এটা। বাসায় না গিয়ে আমার এখানে এসেই ভালো করেছ।
নাজিম একা এক ঘর নিয়ে থাকে, কেউ জানার ভয় আসলেই নেই।

রফিক, হাঁটুতে থুতুনি রেখে গম্ভীর হয়ে বলল, কীভাবে আসলাম জিগাইলা না?

হু, কীভাবে?

শোনো, ছেলেগুলো চলে যাবার পর মেয়েটা হাউমাউ করে কাঁদতেছিল। ওদের সামনে কাঁদে নাই। ওরা যাবার পর কাঁন্দা শুরু করল। নিজেরই অবস্থা খারাপ আমার, মোবাইল মানিব্যাগ সব নিয়ে গেছে ওরা। মেয়েটাকে যে আরো কিছু টাকা দিয়ে আসব তার উপায় নাই। আমি বললাম, যা হইছে ভুলে যা, আমি তোকে পরে আবার কিছু টাকা পাঠাইয়া দেব। মন খারাপ করিস না।

মেয়েটা চোখ মুছতে মুছতে বলল, টাকা লাগবে না ভাই। ছয়জনের মধ্যে যে ছেলেটা কিছু না করে মাথা নীচা করে খাড়াইয়া ছিল, সে আমার পাশের বাসায় থাকে। আমাকে চেনে!
সবাই জানে আমি চাকরি করি, এই কাজ যে করি তা জানে না কেউ। আজকে ও জেনে গেল। আমি আর বাসায় যাব কিভাবে!
মেয়েটা আবার হাউমাউ করে কানতে লাগল! দোস্ত আমি বুঝতেছিলাম না তখন কী করব!

নাজিম দেখতে পাচ্ছে রফিকের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে! রফিক একটা বিবেকহীন গাড়ল বলেই জেনে এসেছে এতদিন।
হু, তারপর কী হল?

তারপর ওরা ওদের ঘর থেকে একটা পুরনো পায়জামা যোগাড় করে দিছে, আমি এটা পরে বাইর হইছি। পথে এক পুলিশ আমার কাহিনী শুনে আমারে একটা সিএনজিতে তুলে দিছে। ভাড়া পুলিশই দিছে, আমার কাছে তো টাকা নাই!

হু, দোস্ত। টেনশন করো না এসব নিয়ে আর, ঘুমাও এখন।

রফিক আচ্ছা বলে চুপ করে শুয়ে রইল! নিজাম ভাবনায় ডুব দিল এবার। এই যে মেয়েগুলো, গার্মেন্টসে চাকরি করলেও তো মাসে বারো চৌদ্দ হাজার টাকা বেতন পেতে পারে! তা বাদ দিয়ে কেন এই পেশা বেছে নিতে হবে?

রাত্তিরের বুকে অনিদ্রা করেছে ঠাঁই
অভাবী কিছু পতিতার হয়ে
শহরের রাজপথে হাত পেতে আছে যত ভিক্ষুক
তারচেয়ে বেশি ক্ষুধা বেশি আকুতি নিয়ে
অনিদ্রা করেছে ঠাঁই, সামর্থ্যের চেয়েও অভাবী কিছু পতিতার হয়ে...

হু, কবিতা এসেছে। কবিতার লাইন এসে গেছে। এই কবিতাটাকেই চালিয়ে নিতে হবে! নাজিম ঝটপট উঠে বসলো, এখনই লিখে রাখতে হবে যে, নইলে হারিয়ে যাবে কবিতাটা!

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২০
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাগতম ইরান

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

ইরানকে ধন্যবাদ। ইসরায়েলকে দাত ভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য।

হ্যাঁ, ইরানকে হয়তো এর জন্য মাসুল দেওয়া লাগবে। তবে, কোন দেশ অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপে করবে আর সেদেশ বসে থাকবে এটা কখনোই সুখকর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×