somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প নয় সত্যি: পর্ব-১

০১ লা জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ প্রাইমারি স্কুলের এক বন্ধুর সাথে হঠাৎই দেখা হয়ে গেল। অনেকদিন পর দেখা। প্রায় ১ যুগ পর। এই এক যুগে আমার অবস্থার কোন উন্নতি না ঘটলেও বন্ধুটির অবস্থার বেশ পরিবর্তন হয়েছে। কথায় কথায় জানা গেলো সে এখন বেশ টাকার মালিক। নিজের রোজগার দিয়ে সাভারে জমি কিনে তিনতলা বাড়ি করেছে, বিয়ে করেছে, এমনকি এক সন্তানের বাবাও হয়েছে! বন্ধুটির শরীর বেশ স্থুল হয়ে গেছে। টাকা যে হয়েছে তার একটা প্রমাণ এটি। হাতে টাকা আসলে মানুষের চেহারা ঘুরে যায়। সে তুলনায় আমার শরীরের উন্নতি বলতে শুধু দৈহিক উচ্চতার বৃদ্ধিই ঘটেছে, যে টলটলে চেহারা আমার একযুগ আগে ছিলো তা এখন শুকিয়ে পান্ডুর হয়ে গেছে। এটাও অবশ্য প্রকৃতিরই নিয়ম। অভাবে থাকলে মানুষের পোষাকে, চেহাড়ায় ‍তার ছাপ আকা থাকে।

আমি যখন স্কুল শুরু করি তখন আমার স্কুল শুরু করার বয়স ছাড়িয়ে গেছে। আর আমার এই বন্ধুটি ছিলো আমার চেয়েও বয়সে বছর তিনেকের বড়। তাই যখন আমরা ক্লাশ সেভেনে পড়ি, তখন তার বয়স ছিলো সতের। এবং এই বয়সে সে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে শ্রমিকের চাকুরী নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যায়। সময়টা ছিলো ১৯৯৮-এর গোড়ার দিকে। পড়াশুনায় খুব একটা খারাপ ছিলো না সে। ১৯৯৮ থেকে ২০১০ এই সময়টা সে কাটিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দু’টি দেশে। বেশ টাকা পয়সা কামিয়েছে। আর তা দিয়ে জমি কিনেছে, বাড়ি করেছে। জীবনের বাকিটা সময় তার আর তেমন কিছু না করলেও চলবে।

এই একযুগে আমার কি পরিবর্তন হলো? ১৯৯৮ সালে আমি স্কুলে পড়তাম। ক্লাশ রোল ছিল ১, এবং আমি এখনো পড়ছি, পড়ার নাম অনার্স কোর্স, একটি সরকারি কলেজে। এসএসসি পাস করেছিলাম স্কুলের একমাত্র এ গ্রেড প্রাপ্ত ছাত্র হিসেবে। সেটা ছিলো বাংলাদেশে গ্রেডিং সিস্টেমে দ্বিতীয় রেজাল্ট। স্বপ্ন ছিলো অনেক বড় কিছু একটা হবো। কিন্তু কি হবো তখনো বুঝতে পারিনি। আর কি হতে হলে কি পড়তে হবে তা-ও ঠিক তখন বুঝতাম না।

সায়েন্স নিয়ে এসএসসি পাস করেছি, তাই একরকম জোর করেই আমাকে গ্রামের কলেজে সায়েন্সেই ইন্টারমিডিয়েট পড়তে বাধ্য করা হলো। তারপর তো রেজাল্ট খারাপ হলো। আমার আর ভালো কোথাও ভর্তিই হওয়ার পথ থাকলো না।


শেষ পর্যন্ত ভর্তি হলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত একটা সরকারি কলেজে। সেই যে ভর্তি হলাম তো হলাম ই। অনার্সের চার বছরের কোর্স এখন ছয় বছর চলছে। আমি কোন বছর ড্রপ দিই নি, বরং যা দেবার আমার দেশে মহান রাজনৈতিক নেতাদের কল্যাণে এমনিতেই হয়ে গেছে। উপরওয়ালাই জানেন ইহ-জনম থাকতে এই কোর্স শেষ হবে কিনা।

আমার জন্ম হয়েছিলো ১৯৮৩ কি ১৯৮৪ এর জানুয়ারির এক শীতের ভোরে। টানাটানির সংসারে মা-বাবা আমার স্কুলে যাওয়া নিয়ে খুব চিন্তা-ভাবনা করেন নি। তাই স্কুল শুরু করেছিলাম অনেক বয়সে, সাত বছরের মাথায় শিশু শ্রেণীতে, আট বছরে প্রথম শ্রেণী। এখন বয়স ছাব্বিশ ছাড়িয়ে সাতাশ হতে চলেছে। এই বয়সেও আমি এখনো ১০ টাকা রোজগার করতে পারিনা। এখনো গ্রাজুয়েশনই শেষ করতে পারলাম না। তারপর পোস্ট গ্রাজুয়েশন, তারপর চাকুরি নাম সোনার হরিণের পেছনে ছোটা..............

আমি আমার অনেক বন্ধুকে চিনি যারা ক্লাশে ভাল করে কোনদিন পড়া বলতে পারতো না। তাদের অনেকেই মাঝপড়ে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে একেকটা পেশা বেছে নিয়েছে, এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত।

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×