আজ প্রাইমারি স্কুলের এক বন্ধুর সাথে হঠাৎই দেখা হয়ে গেল। অনেকদিন পর দেখা। প্রায় ১ যুগ পর। এই এক যুগে আমার অবস্থার কোন উন্নতি না ঘটলেও বন্ধুটির অবস্থার বেশ পরিবর্তন হয়েছে। কথায় কথায় জানা গেলো সে এখন বেশ টাকার মালিক। নিজের রোজগার দিয়ে সাভারে জমি কিনে তিনতলা বাড়ি করেছে, বিয়ে করেছে, এমনকি এক সন্তানের বাবাও হয়েছে! বন্ধুটির শরীর বেশ স্থুল হয়ে গেছে। টাকা যে হয়েছে তার একটা প্রমাণ এটি। হাতে টাকা আসলে মানুষের চেহারা ঘুরে যায়। সে তুলনায় আমার শরীরের উন্নতি বলতে শুধু দৈহিক উচ্চতার বৃদ্ধিই ঘটেছে, যে টলটলে চেহারা আমার একযুগ আগে ছিলো তা এখন শুকিয়ে পান্ডুর হয়ে গেছে। এটাও অবশ্য প্রকৃতিরই নিয়ম। অভাবে থাকলে মানুষের পোষাকে, চেহাড়ায় তার ছাপ আকা থাকে।
আমি যখন স্কুল শুরু করি তখন আমার স্কুল শুরু করার বয়স ছাড়িয়ে গেছে। আর আমার এই বন্ধুটি ছিলো আমার চেয়েও বয়সে বছর তিনেকের বড়। তাই যখন আমরা ক্লাশ সেভেনে পড়ি, তখন তার বয়স ছিলো সতের। এবং এই বয়সে সে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে শ্রমিকের চাকুরী নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যায়। সময়টা ছিলো ১৯৯৮-এর গোড়ার দিকে। পড়াশুনায় খুব একটা খারাপ ছিলো না সে। ১৯৯৮ থেকে ২০১০ এই সময়টা সে কাটিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দু’টি দেশে। বেশ টাকা পয়সা কামিয়েছে। আর তা দিয়ে জমি কিনেছে, বাড়ি করেছে। জীবনের বাকিটা সময় তার আর তেমন কিছু না করলেও চলবে।
এই একযুগে আমার কি পরিবর্তন হলো? ১৯৯৮ সালে আমি স্কুলে পড়তাম। ক্লাশ রোল ছিল ১, এবং আমি এখনো পড়ছি, পড়ার নাম অনার্স কোর্স, একটি সরকারি কলেজে। এসএসসি পাস করেছিলাম স্কুলের একমাত্র এ গ্রেড প্রাপ্ত ছাত্র হিসেবে। সেটা ছিলো বাংলাদেশে গ্রেডিং সিস্টেমে দ্বিতীয় রেজাল্ট। স্বপ্ন ছিলো অনেক বড় কিছু একটা হবো। কিন্তু কি হবো তখনো বুঝতে পারিনি। আর কি হতে হলে কি পড়তে হবে তা-ও ঠিক তখন বুঝতাম না।
সায়েন্স নিয়ে এসএসসি পাস করেছি, তাই একরকম জোর করেই আমাকে গ্রামের কলেজে সায়েন্সেই ইন্টারমিডিয়েট পড়তে বাধ্য করা হলো। তারপর তো রেজাল্ট খারাপ হলো। আমার আর ভালো কোথাও ভর্তিই হওয়ার পথ থাকলো না।
শেষ পর্যন্ত ভর্তি হলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত একটা সরকারি কলেজে। সেই যে ভর্তি হলাম তো হলাম ই। অনার্সের চার বছরের কোর্স এখন ছয় বছর চলছে। আমি কোন বছর ড্রপ দিই নি, বরং যা দেবার আমার দেশে মহান রাজনৈতিক নেতাদের কল্যাণে এমনিতেই হয়ে গেছে। উপরওয়ালাই জানেন ইহ-জনম থাকতে এই কোর্স শেষ হবে কিনা।
আমার জন্ম হয়েছিলো ১৯৮৩ কি ১৯৮৪ এর জানুয়ারির এক শীতের ভোরে। টানাটানির সংসারে মা-বাবা আমার স্কুলে যাওয়া নিয়ে খুব চিন্তা-ভাবনা করেন নি। তাই স্কুল শুরু করেছিলাম অনেক বয়সে, সাত বছরের মাথায় শিশু শ্রেণীতে, আট বছরে প্রথম শ্রেণী। এখন বয়স ছাব্বিশ ছাড়িয়ে সাতাশ হতে চলেছে। এই বয়সেও আমি এখনো ১০ টাকা রোজগার করতে পারিনা। এখনো গ্রাজুয়েশনই শেষ করতে পারলাম না। তারপর পোস্ট গ্রাজুয়েশন, তারপর চাকুরি নাম সোনার হরিণের পেছনে ছোটা..............
আমি আমার অনেক বন্ধুকে চিনি যারা ক্লাশে ভাল করে কোনদিন পড়া বলতে পারতো না। তাদের অনেকেই মাঝপড়ে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে একেকটা পেশা বেছে নিয়েছে, এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




