শচীন এর বিদায়ে এখন পুরো ক্রিকেট বিশ্ব বিষন্ন এবং প্রানহীন হয়ে পড়েছে । শচীনের অবসরের নিউজ এর নিচে পড়েছে ভক্ত কুলের শতশত আবেগে আপ্লুত কমেন্ট। শচীন দীর্ঘ ২৩ বছর ক্রিকেট মাঠে দাপিয়ে শাসন করেছেন। সামনে যারা ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করবে(এখনো করছে) সম্ভাবনাময় সেই সেরা ১০ খেলোয়াড়কে নিয়ে আমার আলোচনা।
টপ টেনের এই লিস্টে আমি শুধু যাদের বয়স ৩০ বা তার নিচে তাদের নিয়ে করেছি আর টপ টেন লিস্ট করার ক্ষেত্রে টেস্ট ক্রিকেটের পারফরমেন্স কে প্রাধান্য দিয়েছি। কারন টেস্ট ক্রিকেট ই হল আসল ক্রিকেট । কোন খেলোয়াড় এর গ্রেটনেস মাপা হই টেস্ট ক্রিকেট এর পারফরমেন্স দিয়ে । যেমন গ্রেট ব্যাটসম্যান হওয়ার জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে টেস্ট এ ৫০ গড় রাখা । খেয়াল করে দেখবেন যাদেরকে গ্রেট বলা হয় তারা সবাই টেস্ট এ ভালো ছিলেন। এমন তেমন কাউ কে পাবেন না যে T20/ODI তে ভালো কিন্তু টেস্ট তে খারাপ এবং তাদেরকে গ্রেট বলা হই। তাই আমি ক্রিকেটের প্রাচীন এই শদ্ধতম ফরম্যাটের পারফরমেন্স কে প্রাধান্য দিয়েছি টপ টেন লিস্ট করার ক্ষেত্রে।
১) ডেল স্টেইন => ‘১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করতে না পারলে আর কী হলো! ১৩৫ কিলোমিটার তো স্কুলের বাচ্চারাও করতে পারে। হাত ঘুরালেই হয়ে যায়।’ গতি নিয়ে এই হলো ডেল স্টেইনের দর্শন। ডেল স্টেইন আমার খুব প্রিয় একজন বোলার । সেরা হওয়ার জন্য যেসব মাল মসলা দরকার সবকিছু এই বোলারের মধ্যে রয়েছে। একেবারেই পারফেক্ট ফাস্ট বোলার । দুর্ধান্ত গতি, ক্লিন অ্যাকশান, ইনসুইং , ভয়ংকর আউট সুইং, নিয়ন্ত্রিত লাইনলেন্থ বোলিং, আগ্রাসী মনোভাব, মুহুর্তের মধ্যে ম্যাচের রঙ পালটে দেয়ার ক্ষমতা । কি নেই এই ফাস্ট বোলারের মধ্যে? তাইতো ৩ বছর ধরে আইসিসি টেস্ট রেংকিং এ ১ শীর্ষস্তান ধরে রেখেছেন। এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ ম্যাচ মাত্র ২৩ গড় নিয়ে ২৯৯ উইকেট শিকার করেছেন । এর চেয়ে কম ম্যাচ খেলে মাত্র দুই বোলার ৩০০ উইকেট শিকার করেছেন(ডেনিশ লিলি (৫৬), মুরলি(৫৮))। এই ফাস্ট বোলার শুধু ফাস্ট পিচে নই মরা পিচে ও যেকোনো ব্যাটিং লাইনআপ কে ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তাইতো ভারতের মাটিতে ভারতের মত শক্তিশালি ব্যাটিং লাইন আপ এর বিরুদ্ধে তার সেরা বোলিং রেকর্ড। ২০১০ সালে নাগপুরে ৫১ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন এবং বেশির ভাগ আউট এই ছিল স্লিপ এ ক্যাচ , দিফেঞ্চ করতে গিয়ে বোল্ড।গত বছর ইতিহাসের ২০তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে ছুঁয়েছেন ৯০০ পয়েন্ট। যে গতিতে এগুচ্ছে এভাবে এগুতে থাকলে কোন সন্দেহ নেই , খেলা শেষে একজন কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার এ পরিণত হবেন। তার ভালই সুযোগ আছে কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রা(৫৬৩) কে ছাড়িয়ে গিয়ে ফাস্ট বলারদের মধ্যে টেস্টে সেরা উইকেট টেকার হওয়ার। বয়সঃ ২৯
ইউটিউব তার বোলিং এর অনেক ভিডিও আছে দেখলে দেখতে পারেন ।
২) অ্যালিস্টার কুক => শচীনের টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড যদি যদি কেউ ভাঙতে পারে সে অ্যালিস্টার কুক (ক্যালিস এর সম্ভাবনা ক্ষীণ)। বয়স এখনো ২৭ অথচ এরই মধ্যে ২৩ টি সেঞ্চুরির মালিক বনে গেছেন রান হয়ে গেছে ৭০০০ । অধিনায়ক হওয়ার পর আরও বেশি তুমুল গতিতে রান করা সুরু করেছেন এই শুদ্ধ ব্যাটসম্যান। কয়দিন আগেই সুনীল গাভাস্কার বলেছেন “এখন ফর্মটা যেভাবে আছে কিংবা এর চেয়ে একটু যদি খারাপও হয়, তাহলেও তার পক্ষে ১৫ হাজার রান কিংবা ৫০টি সেঞ্চুরি করা অসম্ভব কিছু নয়” বলা যায়, আরও অনেক দিন বোলারদের শাসন করবেন। বয়স ২৭
৩) হাসিম আমলা => শান্ত চেহারার এই ব্যাটসমান কে বলা যায় রানের মেশিন। যখনি আমি সাউথ আফ্রিকার খেলার স্কোর চেক করি দেখি যে হাসিম সেঞ্চুরি করে ফেলেছে । স্পিন , ফাস্ট সব বোলিং এর বিপক্ষে সফল এই ব্যাটসম্যান । হাতে রয়েছে অসাধারণ সব স্ট্রোক। আমার মনে আছে কোন এক ম্যাচে(টেস্ট) স্পীড স্টার শোয়েব আক্তার কে খুব সহজেই প্রতি ওভারেই দুই তিনটা করে চার মারছে। এ পর্যন্ত ৫০ গড়ে করেছেন ১৮ টি সেঞ্চুরি । ওডিআই তেও ঈর্শনীয় গড়(৫৯) ধরে রেখেছেন । কিছুদিন আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১১ রান করে অপরাজিত থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান। এটি আমলার টেস্ট ক্যারিয়ারের তো বটেই, দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসেও কোন ব্যাটসম্যানের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির নজির! বয়স ২৯ ।
৪) এবি ডি ভিলিয়ার্স => এই সুপার পাওয়ার হিটার ব্যাটসম্যান ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই দুর্দান্ত। কী পারেন না তিনি? ব্যাটিং করেছেন ১ থেকে ৮ নম্বর পর্যন্ত প্রতিটি পজিশনেই। মিডিয়াম পেস বোলার হিসেবেও কাজ চালিয়ে দিতে পারেন। উইকেটকিপিং করেন দুর্দান্ত, আর ফিল্ডিংয়ে অনেকের মতেই তিনি এখন বিশ্বসেরা। এমনকি গলফ আর টেনিসে তিনি দুর্দান্ত, কম যান না রাগবিতেও। ওডিআই ও টেস্ট দুটোতেই ৪৯ গড় ধরে রেখেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৭৮ রানের অবরাজিত একটি ইনিংস ও আছে । ওডিআই এ ৫৯ বলে ১০২ ইনিংস ও আছে ভারতের বিপক্ষে। বয়স ২৮
৫) বিরাট কোলি => এই মুহূর্তে ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান বলা হয় বিরাট কোলি কে । হাতে রয়েছে অসাধারণ সব শট। দলের প্রয়োজনে যেকোনো রকম ব্যাটিং করতে পারেন , সেটা হোক কচ্ছপ গতিতে অথবা উড়ন্ত গতিতে । বয়স মাত্র ২৪ অথচ এই বয়সেই ৫১ গড়ে ১৩ ওডিআই সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন তাও মাত্র ৯০ ম্যাচ। যেখানে শচীন পর্যন্ত প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিল ৭৯ ম্যাচে। এর মধ্যে ছিল মিরপুরে এশিয়া কাপে পাকিস্থান কে উড়িয়ে দেয়া ১৪৮ বলে ১৮৩ রানের দানবীয় ইনিংস টি আছে । যেটা দেখে ক্যাপটেন মিসবাহ বলেছিল আমার দেখা সেরা ওডিআই ইনিংস। এখন পর্যন্ত টেস্ট এ ওডিআই এর মত রানের ফোয়ারা ছুটাতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়াই যখন ইন্ডিয়া ৪-০ তে হেরে ছিল টেস্ট সিরিজ এ তখন ইন্দিয়ার পক্ষে একমাত্র সেঞ্চুরি করেছিল বিরাট কোলি । সদ্য শেষ হওয়া ২-১ হারা ইংল্যান্ড সিরিজ এ ও লাস্ট টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিল । শচীনের জন্য দেয়া মুকেশ আম্বানির পার্টিতে ওডিআই রেকর্ড কে ভাঙতে পারে বলা হলে শচীন বিরাট কোলির নাম উল্লেখ করেন। বয়স ২৪
৬) সাকিব আল হাসান => এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হচ্ছে সাকিব। ব্যাটিং বোলিং দুটোতেই সমান পারদর্শী সাকিব। অনেকে আছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার(ক্যালিস) বা বোলিং অলরাউন্ডার (ভেত্তরি) কিন্তু সাকিব একদম পারফেক্ট অলরাউন্ডার। অনেক দিন ধরেই ওডিআই এ ১ নাম্বার অলরাউন্ডার তকমাটা ধরে রেখেছেন, টেস্ট এ ও রয়েছেন ২ নাম্বার এ। সাকিবের দারুন একটা গুন হল চাপের মুখেও রানরেট ঠিক রেখে রান করতে পারে। ২০০৯ সালে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাকিবের ৬৯ বলে ৯২ রানের ম্যাচ জিতানো ইনিংসটি আমার এখনো চোখে ভাসে। বলতে গেলেই একাই ম্যাচ জিতিয়ে ছিল সেদিন সাকিব। আর সাকিব বোলার হিসেবে ও দারুন চতুর, যথেস্ট টার্ন আছে বলে, ধারালো আর্ম বল দিতে পারে , ব্যাটসম্যান কে সহজেই রিড করতে পারে, সর্বদা কম রান দেয় , টেস্ট ওডিআই দুটোতেই দারুন সফল সাকিব। বয়স ২৫
৭) ভেরন ফিলান্ডার => এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’ রোমান সম্রাট জুলিয়াস সীজারের বহুল ব্যবহৃত লাইনটি একেবারে একশ ভাগ সত্য দক্ষিণ আফ্রিকার অল-রাউন্ডার ভারনন ফিলান্ডারের ক্ষেত্রে। মাত্র ৭ টেস্ট খেলা ফিলান্ডার অসাধারণ পারফরমেন্সের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘টেস্ট ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ এবং ভক্তদের ভোটে জনপ্রিয় ক্রিকেটারের খেতাবও পেয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটের ১১৬ বছর পর নতুন মাইলফলক অর্জন করেছেন দ.আফ্রিকার পেসার ফিলান্ডার। সবচেয়ে কম ম্যাচ (৭ ম্যাচ) খেলে ৫০ উইকেট শিকারির তালিকায় তিনি রয়েছেন দুই নাম্বারে। ২৬ বছর বয়সী ফিলান্ডার ২০১১-১২ মৌসুমে মাত্র ৭টি টেস্টে ১৪.১৫ গড়ে ৫১টি উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে ১০ উইকেট পেয়েছেন ২ বার আর ৫ উইকেট ৬ বার। সাত ম্যাচ খেলা আর কোনো দক্ষিণ আফ্রিকানের এমন রেকর্ড নেই। অভিষেক টেস্টেই ফিলান্ডার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৮ রানে ৮ উইকেট নেন, যার মধ্যে এক ইনিংসে মাত্র ১৫ রানে ৫ উইকেট আছে। ওই ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৪৭ রানে অলআউট হয়। পরের টেস্টেও ফিলান্ডার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট পান। এখন পর্যন্ত মাত্র ১২ ম্যাচে মাত্র ১৭ গড়ে ৬৭ উইকেট শিকার করেন । বয়স ২৭
৮) জেমস অ্যান্ডারসন => ইংল্যান্ডের বোলিং এর মূল সেনাপতি এখন জেমি। বলে রয়েছে মারাত্মক ইনসুইং, রিভার্স সুইং, ভালো গতি, দারুন লাইন লেন্থ। শচীন কে টেস্ট এ সর্বাধিক আউট(৯ বার ) করার রেকর্ড ও এখন এই জেমির। এবার ইংল্যান্ডের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার ও জিতেছেন এই ফাস্ট বোলার । এখন পর্যন্ত ৭৭ টেস্টে ২৮৮ টি এবং ১৬৭ ওডিআই ম্যাচে ২২২ টি উইকেট শিকার করেছেন। বয়স ৩০
৯) চেতেশ্বর পূজারা => ভারতের এই তরুন উদীয়মান শুদ্ধ ব্যাটসম্যান কে ভাবা হচ্ছে ভবিষ্যৎ দ্রাবিড়। ব্যাটিং স্টাইল ও অনেকটা দ্রাবিড় এর মতো, খেলেন ও সোজা ব্যাট এ, অযথা সেবাগ এর মতো শট খেলেন না। সদ্য শেষ হওয়া ইংল্যান্ডে সিরিজ এ ডাবল হান্ড্রেট করেছেন। এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচে ৫৮ গড়ে ৭৬১ রান করেছেন। সাথে ৩ টি সেঞ্চুরি। বয়স ২৪
১০) স্টিভেন ফিন => একজন সম্পূর্ণ ও অসাধারণ ফাস্ট বোলার হয়ে ওঠার সব গুনই বিদ্যমান বাংলাদেশের সাথে অভিষেক দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা ফিনের মধ্যে। লম্বায় ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি, উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে গুড লেংথ থেকেও তুলতে পারেন দারুণ বাউন্স। নিয়মিতই বল করেছেন ৯০ মাইলের ওপরে, সেই গতিতেই দুইদিকেই করছেন সিম মুভমেন্ট। বয়স মাত্র এখনো ২৩ । এই বয়সেই ব্রডের জায়গা কেড়ে নিয়েছেন।(3rd test, 4th test, India). এখন পর্যন্ত ১৭ টেস্ট ২৮ গড়ে ম্যাচে ৭০ টি উইকেট এবং ২৫ ম্যাচে ২৫ গড়ে ম্যাচে ৪০ টি ওডিআই ট উইকেট শিকার করেছেন। বয়স ২৩
আমি এই টপ টেন লিস্ট টা নিরপেক্ষ করে সাজিয়েছি । আপনার ভালো মন্দ নিচে মন্তব্য করে জানাবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




