মাঝেমধ্যে হুটহাট করে আবিষ্কার করি, অমুক মানুষটা আর ফ্রেন্ডলিস্টে নেই। আগে একটু খারাপ লাগতো, অবাক লাগতো কারণটা কি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে কারণ বুঝতে পারতাম, কিছু ক্ষেত্রে অনুমান করতে পারতাম, কিছু ক্ষেত্রে কল্পনা করে নিতে হতো কারণটা কি হতে পারে। অনেক সময় আইডি হ্যাক হওয়া বা টেকনিক্যাল সমস্যার কারণেও এরকম ঘটে থাকে। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে ম্যাচিউর হতে থাকি। এসব আর গা করে না এখন। কারণ, জ্বলজ্যান্ত মানুষই দুনিয়া থেকেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। রোড এক্সিডেন্টে, পানিতে ডুবে, হার্ট এটাক করে, ব্রেইন স্ট্রোক করে, কত স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক কারণে, নিজের সমবয়সী থেকে শুরু করে, বিভিন্ন বয়সের কাছের বা দূরের মানুষকে মরতে দেখে আসছি। ফেসবুকে কে, কি মনে করে আনফ্রেন্ড করে দিলো; কিংবা কে রিয়েল লাইফে, কিসের ভিত্তিতে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলো, আমাদের জীবনের সামগ্রিক বিবেচনায় সেসব খুবই তুচ্ছ ব্যাপার। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- আমাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য; আর কিছুই না। সমাজ না, গুষ্ঠি না, বংশ না, পাড়াপ্রতিবেশি না; "আপনি ঠিক তো জগত ঠিক"।
ভবিষ্যতে কখন কার প্রয়োজন হবে, এইজন্য কখনো কাওকে তোয়াজ করে বা সহ্য করে চলিনাই কখনো। আমার সাথে ভালো তো, আমি সবসময় ভালো। সবসময় ডিপ্লোম্যাটিক হওয়া যায় না। সুবিধাবাদী, বা সুযোগসন্ধানী মানুষজন অনেক দেখে এসেছি তিন দশকের উপরের এই ক্ষুদ্র জীবনে। জীবন ও প্রকৃতি আমার প্রকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অভিজ্ঞতা আমাকে যা শিখিয়েছে, তা কোন শিক্ষক শেখাতে পারতো বলে মনে হয় না। আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমার শুভাকাঙ্খীদের দোয়া-আশীর্বাদ, ব্যক্তিগতভাবে অর্জিত শিক্ষাদীক্ষা, এবং সর্বোপরি শরীর ও মনের বল। পেটের খাবার, মাথার ছাদ, গায়ের কাপড়ের জন্য কারো মুখাপেক্ষী না; কখনো থাকতেও হবে না। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত কারোরই কখনো এক রকম থাকে না; পরিবর্তন আসেই; উন্নতি বা অবনতি। এবং সেটাকে স্বাভাবিক ধরে নিয়েই আমাদের এগোতে হয়। আজ যে আপনাকে অবজ্ঞা করছে, কাল সে-ই হয়তো আপনার উন্নতির পরে ফজরের নামাজের সময় উঠে ফেসবুকে ঢুকে আপনার পোস্টেই সবার আগে লাইক দিবে। মানুষ খ্যাতির কাঙ্গাল, প্রাপ্তির পঙ্গপাল। মানুষ চেনা হয়ে গিয়েছে আমার। জীবনের পথে চলা হাজার হাজার মানুষের প্রতিটা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ ব্যাপার আমার মেমোরিতে গেঁথে আছে। কিছুই ভুলি না আমি। আর, আমার প্রতিশোধপরায়ণতাও ভয়াবহ। এমন বিচিত্রভাবে ও আকস্মিকভাবে নিতে পারি, সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। হয়তো বা সেকারণেই স্রষ্টা আমাকে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতার স্বাদ থেকে দূরে রেখেছে; অন্যদের ভালোর কথা ভেবেই। আপনি যদি সীমা অতিক্রম করতে পারেন, নিজের ইতরামিকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেন, নিজেকে সময়ের সাথে বদলাতে না পারেন, তাহলে আমার হাতের আক্রোশ থেকে বাঁচতে পারলেও মুখ থেকে বাঁচতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। সেক্ষেত্রে, হাদীসের দোহাই দিয়েও লাভ হবে না। যাদের জীবনের একমাত্রই বিনোদন গীবত কিংবা রিয়া, তাদের মুখে নীতিবাক্য মানায় না।
অনেক কিছু বলি বা লিখি, নির্দিষ্ট কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে; নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে উদ্দেশ্য করে। প্রায় সময়েই সেসব আশেপাশের আরো অনেকের গায়ে লেগে যায়; কিছুই করার থাকে না। মশার কয়েল জ্বালানোর ফলে অন্যান্য আরো পোকা তো মরবেই; ওয়ারফেয়ারের ভাষায় এর নাম কোলেটারাল ড্যামেজ। অনেকেই বলতে পারেন, এত ইগো, এত প্রাইড, এত ভ্যানিটি কিসের। না এসব দম্ভ না, এর নাম ইন্টেগ্রিটি; এসব এরোগেন্সি না, এর নাম আত্মসম্মানবোধ। আজ যদি আমার অর্থনৈতিক বা সামাজিক অবস্থা এরকম সন্তোষজনক নাও হতো (কাল যদি নাও থাকে), তাও আমি একই রকম থাকবো। বিচিত্র সমাজব্যবস্থা মানুষকে বিদঘুটে ও বদমেজাজী হতে বাধ্য করে। যে সমাজ আপনাকে সামষ্টিক আচরণ ও সিদ্ধান্তের সামনে নতজানু করে আপনাকে অনুভূতিহীন দাসে পরিণত করে, সে সমাজকে আমি নিকুচি করি। সৌজন্যতাবোধ, সামাজিকতা, ট্র্যাডিশন বা ভদ্রতার বেশে আমার বা আমার পরিবারের উপর কোন কিছু চাপায় দিতে আসলে সাবধান। বয়স, পেশাগত সম্মান, সামাজিক অবস্থান, ইত্যাদি কোন কিছুর পরোয়া করবো না। আইনের বাধ্যবাধকতা না থাকলে এরকম জন্তুদের আমি স্রেফ আমার দুই হাত দিয়ে ধড় থেকে শির আলাদা করে দিতাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৩