somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'আরন্যক পৃথিবী'--পর্ব-৪

২২ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত দশটার মত বাজে।রিতু বারান্দায় বসে আছে।রিতুদের বাসার এলাকাটা অনেক শান্ত শিষ্ট।দিনের বেলাতেও এদিকে যানবাহন খুব কম চলে।রাতের বেলা নেমে আসে শশ্মানের নিস্তব্ধতা।রিতুর নিস্তব্ধতা ভাল লাগে।নিস্তব্ধতায় যে কোন বিষয়ে গভীর চিন্তা করা যায়।চিন্তায় ছেদ পড়ে না।
রিতুর মন খুব খারাপ।অরন্যের সাথে এরকম ব্যাবহার না করলেও চলতো।বেচারা হয়ত রাগ করে আর টিউশনি পড়াতেই আসবে না।আসবেও বা কেনো?রিতু তো নিজের মুখেই আসতে নিষেধ করে দিয়েছে।সারাদিন তপ্ত রোদে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবে,টিউশনি খুজবে।মানুষটার কত কষ্ট হবে।রোদের উপর রিতুর ভিষন রাগ হ ওয়া শুরু হল।
রিতুর চোখ হঠাৎ বাড়ির বড় মেইন গেটের দিকে পড়লো।কে যেন দাড়িয়ে আছে।গেটের লাইটে তার ছায়া পড়ছে।জায়গাটায় ভাল মত আলো পড়ে না তাই বোঝা যাচ্ছে না মানুষটা কে।ছায়া দেখে মানুষ চেনা যায় না।
মানুষটা বারবার উকি দিয়ে নিজেকে আড়াল করে নিচ্ছে।কে এই লোক?তবে যেই হোক সে নিজেকে দেখাতে চাচ্ছে না।নিজেকে আড়াল করে রাখতে চাচ্ছে।যে নিজেকে আড়াল করে রাখতে চায় তাকে আড়াল হতে দেয়াটাই ভাল।

রিতু ঠিক করলো রহমত চাচাকে অরন্যকে ডেকে আনতে বলবেন।রিতু অরন্যের মেসের ঠিকানা জানে।কাল সকালেই রহমত চাচাকে অরন্যের মেসে পাঠায় দিতে হবে।পরক্ষনেই রিতু বুঝতে পারলো ব্যাপারটা হয়তো ঠিক হবে না।একজন প্রাইভেট টিউটরের জন্য এতটা উতলা হ ওয়ার কিছু নেই।রহমত চাচা কিছু না ভাবলেও রিতুর বাবা অনেক কিছুই ভাবতে পারে।এই অধিকার তার আছে।

রিতুর চিন্তায় ছেদ পড়লো রহমতের ডাকে।
-আফামনি,চাচাজান খাবার টেবিলে আপনারে বুলায়।
-আচ্ছা আপনি যান।আমি আসছি।
রহমত পিছনে ফিরে চলে যেতে ধরে।রিতুর ডাকে আবার ও পিছনে ফিরে তাকায়
-রহমত চাচা!
-জ্বে আফামনি?
- আপনাকে একটা কাজ দিলে আপনি করতে পারবেন?
-পারবো না ক্যান?দরকার পড়লে জান দিয়া দিব।কি করতে হবে কন

রিতু কিছুক্ষন কি যেন ভাবে তারপর বলে-না চাচা।কিছু না।আপনি যান।
-আচ্ছা।
রহমত চলে যায়।তাকে খুব ই চিন্তিত মনে হয়।

খাবার টেবিলে রিতু আর তার বাবা আজিজ সাহেব বসে আছেন।আজিজ সাহেব তার প্লেটের পাশে দাড়িয়ে থাকা গ্লাসটির দিকে তাকিয়ে আছেন।গ্লাসটি আস্তে আস্তে পানিতে ভরে উঠছে।রহমত গ্লাসে পানি ঢেলে দেয়।এটা নতুন কিছু না।শুধু ব্যাতিক্রম হচ্ছে এই জায়গায় প্রতিদিন যে গ্লাসটি থাকে সে গ্লাসটি আজ নেই।
-রহমত!
-জ্বে চাচাজান
-গ্লাসটি নিয়ে যা।একটা বাটি নিয়ে আয়।আমি বাটিতে পানি খাব।

রহমত অনুগত ভৃত্যের মত বাটি আনতে চলে গেল।কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।কথা বাড়ালে থাপ্পড় খাওয়ার আশঙ্কা আছে।থাপ্পড় খাওয়ার মত বস্তু নয়।

- বাটিতে পানি খাবে কেন বাবা?
রিতু প্রশ্ন করে।
-গ্লাসে তো অনেক পানি খেলাম রে মা।এখন বাটিতে খেয়ে দেখি কি অবস্থা।

আজিজ সাহেব আসল ব্যাপারটা গোপন করলেন।তিনি তার পছন্দের গ্লাসটি হারিয়ে যে গ্লাসে পানি খেতে পারছেন না তা তিনি বললেন না।এতে রিতু মনে কষ্ট পেতে পারে।তিনি তার মেয়ের মনে কষ্ট দিতে চান না।অন্য কোন গ্লাসে পানি খাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না।
-মিথ্যা বললে কেন বাবা?আমি জানি তুমি কেন বাটিতে পানি খাবে।মায়ের দেয়া গ্লাসটি আমি ভেঙে ফেলছি বলে তুমি বাটিতে পানি খেতে চাচ্ছো।
সত্য ধরা পড়ায় আজিজ সাহেব ইতস্তত করে বললেন-না মা।ওটা কোন বিষয় না।গ্লাস ভেঙেছে তো কি হয়েছে?অন্য গ্লাস আছে না?অন্য গ্লাসে ও তো পানি খাওয়া যায়।হঠাৎ ইচ্ছে হল বাটিতে পানি খাওয়ার।এই যা।
-আচ্ছা।তবে চিন্তার কিছু নেই।মায়ের দেয়া গ্লাস অক্ষত অবস্থায় আছে।আমি মায়ের দেয়া গ্লাসটির মত দেখতে হুবহু আর ও একটা গ্লাস কিনে রেখেছিলাম।তোমাকে চমকে দেয়ার জন্য নকল গ্লাসটি ভেঙেছি।

আজিজ সাহেবের খাবার তালুতে ওঠে।তিনি পাশে থাকা গ্লাসটিতে পানি খান এবং সাথে সাথে বমি করে ফেলেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×