somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভেঙে পড়লাম পার্শ্বচাপে - আবদুশ শাকুর

০৮ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২৫ রানে ৩ উইকেট থেকে ৫৬ রান পযর্ন্ত্য বাংলাদেশের ৬ উইকেটের পতন দেখতে দেখতে ব্যাটসম্যানদের প্রতি স্টেডিয়াম-ভরা দর্শকের দুয়ো বেড়ে চলেছিল জিয়োমেট্রিক প্রোগ্রেশনে। সেখান থেকে ২টি রান বাড়াতেই বাকি ৪ উইকেট পড়ে যাওয়াতে দুয়োধ্বনি শতগুণ বেড়ে গেলে হতাশ হবার স্থলে খেলাটির অন্যতম দর্শক আমি হয়ে গেলাম দার্শনিক। কারণ আমার সহানুভূতি বেশি থাকে ব্যাটসম্যানদের প্রতি।
ক্রিকেটকে যতই টিমগেম বলা হোক না কেন, খেলার মাঠে কেউই একজন ব্যাটসম্যানের মতো নিঃসঙ্গ ও নিঃসহায় নন, যিনি দশজন ফিল্ডারের সমর্থনপুষ্ট একজন বোলারের মোকাবিলা করেন একাই- যখন কিনা দুজন আম্পায়ারও শ্যেনদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন নিশ্চিত হতে যে এগারোজন শত্রুপরিবেষ্টিত এই নিঃসঙ্গ প্রতিপক্ষটি কোনো ভুলত্রুটির জন্যই যেন শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে না পারেন। প্রসঙ্গক্রমে ব্যাটসম্যান-বেচারির এহেন সঙ্গিন পরিস্থিতির চরম দুটি উদাহরণ মনে পড়ে যায় আমার।
প্রথমে ১৯৬০ সালের একটি দৃশ্য। ইংল্যান্ড-ওয়েস্টইন্ডিজ ম্যাচের শেষ বলটি করবেন সেকালের ৯০-প্লাস গতির ফাস্টবোলার ক্যারিবিয়ান টেরর দৈত্যদর্শন ওয়েস হল, যিনি পিটার মের মিডল স্টাম্পটি ভেঙে সমান দুটো টুকরো করে দিয়েছিলেন। ভীতসন্ত্রস্ত টেইল-এন্ডারটিকে ক্যাপটেন এই বলে সাহস জোগালেন যে তোমাকে মারতে হবে না, বলটা কানেক্ট করতে পারলেই আমাদের জয়, অন্যথায় হার। সাহস পেয়ে স্ট্যান্স নিলেন ব্যাটসম্যান। ভয়ে তাঁর বুক করছিল দুরদুর আর ব্যাট করছিল ঠুকঠুক। একটু পরে ক্যাপটেন এসে বললেন : আর ঠুকঠুক করতে হবে না, বল হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যান বললেন : দেখিনি তো! শোনওনি? শুনেছিলাম একটি গুলির শব্দ। গুলির নয়, ওটি ছিল বলের শব্দ।
এবারের দৃশ্যটি ১৯৯৯ সালের। কলকাতার ইডেন ময়দানে হচ্ছিল ভারত-পাকিস্তান ফার্স্ট এশিয়াকাপ চ্যাম্পিয়ানশিপ টেস্টম্যাচ। গোটা ম্যাচে ৪+৪ উইকেট নেয়া ফাস্টবোলার শোয়েব আখতার বিশাল এক রান-আপ নিয়ে বুক চিতিয়ে ত্রাসসঞ্চারী ভঙ্গিতে দৌড়ে এসে প্রায় শতমাইল বেগে বল করে মিডলস্টাম্প উড়িয়ে দিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণের। কমেন্টেটার বললেন : বেচারি লক্ষ্মণের কিছু করার ছিল না, কারণ সে বলটি দেখতেই পায়নি। শোয়েবের পরের ওভারের প্রথম বলে শচীন টেন্ডুলকারের মিডলস্টাম্প উড়ে গেলে তিনি বললেন : এ মুহূর্তে এ ছেলেটিই সম্ভবত বিশ্বের দ্রুততম বোলার।
দ্বিতীয় ইনিংসে টেন্ডুলকারেরই রান-আউট বিতর্কে লাখো দর্শকের এমন তা-ব চলতে থাকলো যে খেলাটা শেষই করা যাচ্ছিল না। মাঠে নেমে দর্শকদের আবেদন জানিয়ে ভারতীয় মুরুব্বিগণও ব্যর্থ হলেন। মাইক-হাতে মাঠে নেমে ম্যাচ-রেফারি ঘোষণা করলেন যে এমন চলতে থাকলে ম্যাচের ফল ভারতের বিপক্ষে ঘোষণা করতে তিনি বাধ্য হবেন। তাতেও কাজ না-হওয়াতে কর্তৃপক্ষীয় নির্দেশে পুলিশবাহিনী মাঠে নেমে বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে বিশ্বের বৃহত্তম স্টেডিয়ামটিকে সম্পূর্ণ দর্শকশূন্য করে খেলাটি শেষ করার সুযোগ করে দিল।
এরপরই সৃষ্টি হল টেস্টক্রিকেটের করুণতম দৃশ্যটির। জনশূন্য মাঠে একা ব্যাট-হাতে দাঁড়িয়ে ভারতের লাস্ট ব্যাটসম্যান মিডিয়াম পেসবোলার ভেঙ্কটপ্রসাদ। বিশাল রান-আপ নিয়ে হিস্র চিতার মতো দৌড়ে এসে বল করে পাকিস্তানকে ৪৬ রানের জয় উপহার দিলেন শোয়েব আখতার।
কিন্তু পরশুর ঢাকার মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে না ছিল আউটসুইঙ্গার ওয়াসিম আকরাম, রিভার্সসুইঙ্গার ওয়াকার ইউনুস, স্পিডস্টার শোয়েব আখতারের মানের কেউ; না ছিল লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন, অফস্পিনার মুরলিথরন, রিস্টস্পিনার আবদুল কাদিরের মানের কেউ। তবু ৫৮ রানে ১০টি উইকেট পড়ে গেল কেন? আমাদের প্লেয়াররা কি আকস্মিক উচ্চরক্তচাপের শিকার হয়ে পড়েছিলেন? না, নি¤œরক্তচাপেরও না। সকলেই শিকার হয়েছিলেন কা-জ্ঞানহীন পার্শ্বচাপের- যা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস চারপাশ থেকে সৃষ্ট হচ্ছিল তাঁদের ওপর। কারা সৃষ্টি করছিল এই আত্মঘাতী চাপটি? যারা আমাদের ক্রিকেটারদের যোগ্যতার দ্বিগুণ-ত্রিগুণ বেশি নয়- দশগুণ-বিশগুণ বেশি প্রশংসা করছিল এবং প্রত্যাশা জাগাচ্ছিল।
অনার্সে ফার্স্টক্লাস পায়নি বলে মাস্টার্সে পাওয়ার জন্য আমার এক বন্ধু ছেলের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করেছিলেন যে, ফার্স্টক্লাস নম্বর না-পাওয়ার ভয়ে ফার্স্টপেপারটির পরীক্ষা না-দিয়েই হল থেকে ফিরে অতি-উচ্চাভিলাষী পিতার পায়ের ওপর পড়ে কেঁদেছিল তাঁর উচ্চাভিলাষী পুত্রটি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×