somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেরিয়ে আসতে হবে

২৩ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এককালে জনৈক ইংরেজ খেলোয়াড় মার্টিন জনসন বলেছিলেন- ইংল্যান্ডের মূল সমস্যা তিনটি। তারা ব্যাটিং করতে জানে না, বোলিং করতে জানে না, ফিল্ডিং করতে জানে না। সে-ইংল্যান্ড টিমের তুলনায় বর্তমান বাংলাদেশ টিম দুটি ধাপ এগিয়ে আছে, যেহেতু এদের মূল সমস্যা একটি- এরা ব্যাটিং করতে জানে না। বোলিং করতে এবং ফিল্ডিং করতে জানলেও ২০১১ সালের ১৯ মার্চের খেলায় তাদের প্রথমটি ছিল না পেনিট্রেইটিং কিংবা ব্যাটিংভেদী, দ্বিতীয়টিও ছিল না নিজেদের শ্রেষ্ঠ মানের সমান শার্প বা তীক্ষè। তবু ২৮৪ রান তাড়া করা অসম্ভব তো ছিল না। তা তো এই সাউথ আফ্রিকাই করে জয় পেয়েছে আগের ম্যাচে এবারের বিশ্বকাপের হট ফেভারিট ভারতের বিরুদ্ধে। তাদেরই বিরুদ্ধে আরো ৫৪ রান বেশি তাড়া করে ম্যাচ ড্র করেছে এবারকার অন্যতম শিরোপা প্রত্যাশী ইংল্যান্ড।
মাঠের একক ক্ষমতাধর দলনেতা ওপেনিং স্পেলে ডানহাতি পেসার এবং বাঁহাতি স্পিনারের কম্বিনেশনে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলে আর্লি ব্রেক আর রানের স্পিড-ব্রেকের ডবল বোনাসে বাকি স্পিনারদের ওপর চাপ লাঘবের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ হয়তো ৫০/৫৫ রান কম তাড়া করে ২০৬ রানের বদলে ১৫২ রানের হার অর্জন করতো। কিন্তু তাতেও কোনো সান্ত¦না থাকতো কী? মোদ্দা কথা- যেটা লিখতে পারবো ভেবেছিলাম, সেটা লিখতে পারলাম না। লিখতে না পারলেও জানাতে তো পারি কথাটা কী ছিল। ইংল্যান্ড, আয়ার্ল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে পরপর তিনটি ম্যাচে জেতার পরে আমার লিখিতব্য ছিল বাংলাদেশ হ্যাজ অ্যারাইভড বা বাংলাদেশ এসে গেছে। এর বদলে এখন লিখতে হচ্ছে- বাংলাদেশকে বেরিয়ে আসতে হবে এই পাকিস্তানি সিনড্রোম থেকে, না হলে এদেশ কোনোদিনই পৌঁছাতে পারবে না।
পাকিস্তানি সিনড্রোম কী? সকলে সমস্বরে বলবেন- ধারাবাহিকতাহীনতা। না, একটু ভুল হল। শুদ্ধ উত্তর হবে- স্থায়ী ধারাবাহিকতাহীনতা। অস্থায়ী ধারাবাহিকতাহীনতার শিকার সকল দলই হয় সময় সময়। কিন্তু বয়সে বাংলাদেশ টিমের অনেক বড় পাকিস্তান টিম সারাটা জীবনই এই ক্রনিক ধারাটা বহাল রেখেছে। তাদের মতো ধারাটা বাংলাদেশেরও যেন ক্রনিক না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার কাজে আমাদের এখন থেকেই লেগে যেতে হবে।
পাকিস্তানি ও বাংলাদেশী ধারা দুটি একটু মিলিয়ে দেখা যাক। ২০১১ বিশ্বকাপের এক ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর জয়ের পরে আরেক ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পদদলিত পরাজয়। স্মরণ করুন ১৯৯৯ সালের প্রথম এশিয়াকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানশিপ সিরিজের কলকাতা ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের রোমাঞ্চকর জয়ের পরের ম্যাচেই দিল্লিতে ভারতের কেবল লেগস্পিনার অনিল কুম্বলের কাছেই লজ্জাজনক হার, যিনি একাই পাকিস্তানের ১০টি উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের অফস্পিনার জিম লেকারের দোসর হয়ে যেতে পারলেন। চলতি বিশ্বকাপ সিরিজে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নেবার পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ১১০ রানের বিশাল হার। তুলনীয় আয়ার্ল্যান্ডের বিরুদ্ধে সম্মানজনক জয়ের পরের ম্যাচে বাংলাদেশের মাথাকাটা-যাওয়া পরাজয় ওয়েস্টইন্ডিজের কাছে। এই ওয়েস্টইন্ডিজের বিরুদ্ধে তেমনি হার টানা ৩৪ ম্যাচ বিজয়ী অস্ট্রেলিয়াকে হারানো পাকিস্তান দলের সামনের ম্যাচেও কিন্তু অপ্রত্যাশিত কিছু নয়- ওই স্থায়ী ধারাবাহিকতাহীনতার কারণেই।
জানি আমাদের পরিচয়ের অন্যতম প্রতীক ক্রিকেটে এতসব হেনস্থার পরেও সকলের ধৈর্য ধরে রাখতে হবে। কারণ খেলায় ধারাবাহিকতা আনতে সময় লাগেই। কিন্তু পাকিস্তানি সিনড্রোমের আরেকটি লক্ষণও তাদের মতো স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে কেন আমাদের দলের মধ্যে? সে-লক্ষণটি খেলায় নয়, খেলা সম্পর্কে বলায়। ক্রিকেট-বিশ্বের ভাষাটি ইংরেজি, যেটিতে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দলের মধ্যে ইন্ডিয়া আর শ্রীলংকার খেলোয়াড়গণ ক্রিকেটি বুলি ভালোই বলতে পারেন। কিন্তু সে ব্যাপারে দু-একজন ছাড়া পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়গণ আজো পড়ে আছেন সাত দশক পেছনে। সাত দশকের হিসাবটা সেকালের পেসার আমীর এলাহীর (১৯০৮-১৯৮০) ১৯৩৬ সালের ইংল্যান্ডের খেলা থেকে হিসেব করে।
তদানীন্তন মিডিয়াম-পেসার আমীর এলাহী মনসুর আলী পাতাউদির পিতা ইফতিখার আলী পাতাউদির (১৯১০-১৯৫২) টিমে ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে ভাষাগত নানারকম কেলেঙ্কারি করেছিলেন। তাই দলটির অপর সদস্য লালা অমরনাথ (১৯১১-২০০০) ক্যাপটেন হবার পরে খেলোয়াড়দের ভাষার উন্নয়ন-বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান টিমের ১৯৪৭-১৯৪৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রাক্কালে ট্রেনিং ক্যাম্পে ইংরেজি বলা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করলেন তিনি। কিন্তু মানলেন না একমাত্র আমীর এলাহী, কারণ তিনি ইংরেজি জানতেন না। তবু তাঁকে দলে না নিয়ে উপায় নেই, যেহেতু ১১ বছর পূর্বের ইংল্যান্ড-সফরের মামুলি পেসারটি এখন দুর্দান্ত অফ-ব্রেক বোলার এবং দুর্ধর্ষ গুগলি স্পেশালিস্ট।
ফাইনাল ওয়ার্নিংস্বরূপ অমরনাথ বললেন- ক্যাম্পে এবং সফরকালে ইংরেজি ছাড়া কথা বললে আই শ্যাল রুইন ইয়র ফিউচার। ক্যাপটেনের লাস্ট ওয়ার্নিং শুনেই ইংরেজি বেরিয়ে এসেছিল বোলার আমীর এলাহীর : ফিউচার? হোয়াট ফিউচার? নো ফিউচার। টুয়েলভ আনা পার ডে উইথ সানডে-কাট- হোয়াট ফিউচার? নো ফিউচার। অর্থাৎ রেলওয়ের পে-রোলে তিনি দিনমজুর শ্রেণির একজন গরিব কর্মচারি, যার দৈনিক মজুরি ১২ আনা। তাও আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন সানডের মজুরি কাটা। তার আবার ফিউচার কী? নো ফিউচার। স্মর্তব্য যে টেস্ট-ক্রিকেটারদের মধ্যে আবদুল হাফিজ কারদার আর গুল মোহাম্মদ ছাড়া একমাত্র আমীর এলাহীই নবগঠিত দুটি দেশের পক্ষেই খেলেছিলেন- ভারতের এবং পাকিস্তানের।
তার ছয় দশক পর আজও ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে কথায় পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ভাষার ধরন হোয়াট ফিউচার, নো ফিউচার (বর্তমান পাক-ক্যাপটেনের ইংরেজি স্মরণ করুন)। একই লক্ষণ বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের ভাষায়, যাত্রার তিনটি দশক পরেও যাঁরা বলেন- আমার পারফর্ম ভালো ছিল না বলেই আমি বাদ পড়েছিলাম। রিটেন ইংলিশ আবশ্যকীয় নয়। কিন্তু স্পোকেন ইংলিশ কোর্স প্রয়োজনমতো না-করে নিলে যে আমরা হোয়াট ফিউচার নো ফিউচারেই থেকে যাবো। অথচ আমাদের ক্রিকেটের ফিউচার আছে।


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×