somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন মায়ের চোখে মেডিকেলের হলের রুম এবং অতঃপর

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক।।

আমার এক ছাত্র সামী(নামটি কাল্পনিক) এবার বরিশাল মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। বাড়ী ছেড়ে হল জীবন শুরু করেছে একমাসও হয়নি। এর ভিতর তার সাথে সিলেট থেকে আর যেই দুজন ওখানে ভর্তি হয়েছিল তারা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গত ডিসেম্বরে বরিশাল গিয়ে ট্রান্সফার আবেদন করে সিলেট মেডিকেলে চলে এসেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে তখন তার মা তাকে ওদের সাথে যেতে দেয়নি। তিনি তখন যেতে দিলে ছেলেটা এখন হয়ত তর রুমে বসে কল অব ডিউটি খেলত। এইজন্য তো আন্টির মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমার এক বন্ধু সামীর ছোটবোনকে পড়ায়। তার মাধ্যমে এই খবর পেয়ে টিউশানি শেষ করে গেলাম আন্টিকে সান্তনা দিতে। গিয়ে মনে হল প্রায় চব্বিশ বছরের এই জীবনে প্রথমবারের মত মায়ের ভালবসার একফালি ধরা পড়ল। চোখের নীচে কালী, একেবারে চুপ হয়ে গেছেন আন্টি।

এতটাই বিমর্ষ তাকে লাগছিল যে রাতে রুমে ফিরে মনে হয়েছে এখনই যেই বাস পাই তাতেই বাসায় আম্মুর কাছে চলে যাই। কদিন আগে ফোনে শোনা আম্মুর বিমর্ষ কন্ঠটার কথা মনে পড়ছিল-"আব্বা তোমারে একটু দেখতে ইচ্ছে করছে।" আন্টিকে এই বলে সান্তনা দিয়ে এসেছিলাম - "আমি তো আপনার ছেলের মতই, সামী সাথে কথা বলতে হলে আমাকে একটা ফোন দিবেন, আমি চলে আসব।"


দুই।।

কিছুদিন আগে আন্টি আর আঙ্কেল গিয়েছিলেন বরিশাল, ছেলেটা তাদের কেমন আছে দেখার জন্য। যেদিন ফিরে এলেন সেদিন সামীর ছোটবোনকে পড়াতে গেলে আমাকে চা দিতে এলেন। তখন তিনি ক্যম্পাসে সামীকে কিভাবে দেখে এসেছেন তা বর্ননা শুরু করলেন। ভাল লাগল এই ভেবে যে তার চোখে বেদনার পরিবর্তে চকচক করছিল আনন্দ। ছেলে ভালই আছে। হলে সামীর রুম কেমন দেখলেন তার বর্ননা তিনি যা দিলেন তাই তুলে ধরব নীচে। তার কথার মাঝে আমর কথাগুলো লিখছি না।

দুইটা এপ্রন ময়লা হয়ে কালো হয়ে গিয়েছে। তাই পড়ে কলেজে যায়। আমি ঐ দুইটা এপ্রন হোটেলে নিয়ে এসে ধুয়ে দিয়েছি। হলের নিচেই লন্ড্রি। ওখানে রেখে আসলেই তো ধুয়ে দেয়।

ছোট্ট একটা রুম। ছয়জন থাকে। খাটটা এমন ভাবে রাখা যে ঘরে ঢুকতে হয় খাটের উপর দিয়ে। রুমের ভিতর খালি দড়ি আর দড়ি। এই মাথা থেকে ঐমাথা পর্যন্ত দড়ি বাধা আর দড়ির উপর কাপড় ঝুলছে। সবার কাপড় একসাথে। কিভাবে যে বুঝে কার কাপড় কোনটা কে জানে? আমি সামীকে একটা বড় প্লাস্টিকের হ্যঙার কিনে দিয়েছিলাম, রুমের দেয়ালে ঐটা আটকানোও আছে। কিন্তু কাপড় ঝুলছে ঠিকই সেই দড়িতে।

টেবিলের উপরে গতদিনেয় খাওয়া কলার ছোলা রাখা, ফেলেনি। আর কিছুদিন থাকলে ঐ টেবিলে বসে পড়তে পারবে ও? পিপড়ে কামড়াবে না?

টয়লেটের বেসিনের ট্যপটা নষ্ঠ। নিচের পানির যেই ভালভটা আছে সেইটা দিয়ে পানি ছেড়ে পানি ব্যবহার করে সবাই। ছেলেরা কয়জন মিলে তো ট্যপটা ঠিক করে নিতে পারে, একটা পানির মিস্ত্রিও তো ডাকা লাগে না। আমি মনে করছিলাম আমিই লোক ডেকে ঠিক করিয়ে দিব কিনা।



তিন।।

ঐদিন টিউশনি থেকে ফেরার পথে আমার নিজের খাটটার কথা মনে পড়ছিল। আমার মা যদি এভাবেই খাটটা দেখতে পেতেন, তার আমাকে নিয়ে গল্পটা কেমন হত?


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৫৬
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×