somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালীর টনটনে আত্মসম্মানবোধ ও লুঙ্গী

১৫ ই জুলাই, ২০০৭ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ আসছিলাম আমার মেয়ে দুটোকে (সামীহাহ্‌ ও সুহায়লাহ্‌) নিয়ে ‘জামায়কা বে ওয়াইল্ড লাইফ রিফিউজ’ ভ্রমন শেষে। মাঝখানে ট্রেন পরিবর্তন করার জন্য ফ্রাঙ্কলিন এভেন্যূ স্টেশনে নামতেই পেছন থেকে সালাম শুনে তাকাতেই দেখি এক আফ্রিকান-আমেরিকান (কালো) মুসলিম ভাই। আমার মাথায় টুপি দেখেই তিনি ধরে নিয়েছিলেন আমি মুসলিম। আমি ভাল করে তাকিয়ে দেখি তাঁর লম্বা জামার নীচে বাংলাদেশী লুঙ্গী। যদিও লুঙ্গী অনেক দেশের লোকেরাই পরে তবুও আমার মনে হলো ঐ ভাইটির পরনেরটি বাংলাদেশী। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওটা কি বাংলাদেশী ইজার [লুঙ্গী]? তিনি লাজুক হেসে বললেন, হ্যাঁ।

আরেকটা ঘটনা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কাছে শোনা। ইনি হলেন রাস্ট্রবিজ্ঞানের ডঃ সাইয়েদ সিরাজুল ইসলাম, বর্তমানে কানাডার লেইকহেড বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত । উনি একসময় ম্যাকগিলেও পড়াতেন। সে সময় তিনি তাঁর এক কানাডিয়ান (সাদা) সহকর্মীকে একটা লুঙ্গী উপহার দিয়েছিলেন। ঐ অধ্যাপক ভদ্রলোক পরেরদিন লুঙ্গী পরেই ডিপার্টমেন্টে হাজির। ডঃ ইসলামকে তিনি বললেন, “দেখো, তোমাদের পোষাকটা বেশ আরামদায়ক।”

আমাদের বিশ্বাবিদ্যালয়ে [International Islamic University Malaysia] আরবী ভাষায় মাস্টার্স পড়তেন বাংলাদেশী এক বড় ভাই, যিনি পরে অন্য আরেকটা বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্বে পি-এইচ, ডি, করে এখন দারুল ইহ্‌সান বিশ্বাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি মাঝে মাঝে সাফারী স্যুট পরতেন। অবশ্য বেশীরভাগ সময়ে পড়তেন লম্বা আরবী জামা। ঐ লম্বা জামার নীচে দিব্যি লুঙ্গী পরে তিনি ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতেন। ক্যাম্পাসের সব বাংলাদেশী ছাত্ররাও ব্যাপারটা জানতনা। আমরা কয়েকজন মাত্র জানতাম ব্যাপারটা।

ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত ১১৫টি দেশের মুসলিম ছাত্র-ছাত্রী। তাদের অনেকেই লুঙ্গীর সাথে পরিচিত হন সেখানে এসে। অবশ্য ওদেশে লুঙ্গী সারোং নামে পরিচিত। আমাদের বসনিয়ান এক বন্ধু হারুনতো লুঙ্গী পেয়ে ভীষণ খুশী। তাঁর মতে দুনিয়ার সবচেয়ে আরামদায়ক পোষাক হলো লুঙ্গী। হারুনের মতো আরো অনেকে মালয়েশিয়া এসে লুঙ্গী পরা শিখেছিল।

নামকরা বাঙ্গালীদের মধ্যে জনসমক্ষে লুঙ্গী পরতেন মাওলানা ভাসানী। এরশাদের সময়ে একবার বাংলাদেশের জাতিসংঘে নিযুক্ত রাস্ট্রদুত লুঙ্গী-পাঞ্জাবি পরে মহাসচিবের কাছে তাঁর পরিচয়পত্র পেশ করেছিলেন বলে খবর বেরিয়েছিল। আর কোন প্রখ্যাত বাঙ্গালী জনসমক্ষে লুঙ্গী পরতেন কিনা আমি জানিনা।

অনেক বাঙ্গালীর মধ্যে লুঙ্গী পরার প্রতি রয়েছে এক ধরনের হীনমন্যতা। তারা কাউকে লুঙ্গী পরতে দেখলে মনে করে লোকটা গেঁয়ো। প্যান্ট-শার্ট পরাকে তারা মনে করেন ভদ্রলোকি কাজ। লুঙ্গী কাউকে পরতে দেখলে নাক সিটকান। অথচ ইংরেজ প্রভুরা আসার আগে তাদের পুর্বপুরুষরা কিন্তু প্যান্ট-শার্ট পরতেননা। কেউ আবার ভাববেননা আমি প্যান্ট-শার্ট পরাকে ঘৃণা করি। আমার শুধু কথা হলো কেনো সাধারণের নৈমিত্তিক ব্যবহারের পোষাকটাকে অফিস-আদালতের পোষাকের অযোগ্য মনে করা হয়। প্যান্ট-শার্ট পরাতো শিখেছি আমরা পরাধীন হওয়ার পর। আর লুঙ্গী-কোর্তা/পাঞ্জাবী হলো আমাদের স্বাধীন পুর্ব পুরুষের পোষাক। আমাদের স্বাধীন পুর্বপুরুষের এ পোষাকের প্রতি উন্নাসিকতা মোটেই কাম্য নয়।

পোষাক মানুষ পরে থাকে লজ্জা নিবারণ, পরিবেশের ক্ষতিকারক উপাদান থেকে রক্ষা এবং সৌন্দর্য উপকরণ হিসেবে। যে পোষাক এ কাজগুলো ঠিকঠাক মতো করে তা অবশ্যই ভালো পোষাক। আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেন, “ওহে আদম সন্তানেরা! তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার এবং তোমাদের দেহের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পোষাক নাজিল করেছি। আর খোদাভীতির পোষাক হচ্ছে সর্বোত্তম। এটি আল্লাহ্‌র নিদর্শনগুলোর অন্যতম, আশা করা যায় লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।” [আল-কুরআন; ৭/২৬]

লুঙ্গী পোষাকের উপরে বর্ণিত উদ্দেশ্যগুলো ভালভাবেই পালন করে। তাই একে খাটো করে দেখার উপায় নেই। ভিন দেশীরা যদি এ পোষাককে ভালো বলে গ্রহণ করতে পারে তাহলে আমরা কেন এর পরিধানকারী খাটো করে দেখব। আজ ভাষানীর মতো আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন বাঙ্গালীর দরকার অনেক। দরকার পরের পোষাকের চেয়ে নিজেরটাকে মুল্য দিতে শিখার মানুষের।

নিউ ইয়র্ক (জুলাই ১৪, ২০০৭)
২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×