somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"দেহরক্ষী"-আমরা যা দেখলাম

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবির শুরুতে আমরা দেখি সোহানা হোটেলে হোটেলে ড্যান্স করে বেড়ায়। শখে না দায়ে। বাবার অপারেশনের টাকা জোগানোর জন্য। আমরা দেখি আসলামকে যে নিষিদ্ধ জগতের ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় মাস্তান। আগে ছিল সিজার।

আমরা দেখি একদিন হোটেলে সোহানাকে ড্যান্স করতে দেখে আসলাম। দেখেই অতিমাত্রায় ভালো লেগে যায় তার। সোহানাকে জানায়। পাত্তা দেয় না সোহানা।

আমরা দেখি আসলাম সোহানার বাবারে তুলে নিয়ে আটকে রেখে সোহানাকে ব্ল্যাকমেইল করে নিয়ে যায়।

এদিকে দেখি সিজার তার ভাইরে ফেরত পাঠানোর জন্য আসলামকে আলটিমেটাম দেয় ৭২ ঘন্টার। এরপর নাকি আসলামের দুনিয়াদারি সোহানাকে তুলে নিয়ে উলোট পালোট করে ফেলবে। যাইহোক আসলাম এই কথা শুনে মোটেও ভয় পায় না। কারন? সাতদিনের জন্য সে আমেরিকা চলে যাচ্ছে।
আমরা দেখি আসলাম সাত দিনের জন্য আমেরিকায় চলে যাবে তাই সোহানর নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন। সোহানাকে দেখে রাখবে কে? কে?
তার দলের কাউকে বিশ্বাস করে না সে। তাই খুজে বের করে দেহরক্ষী তীব্র'কে। তীব্র ভালা ছেলে। তাই তারে মিথ্যা কথা বলে পটালো ন্যাংটাকালের বন্ধু আসলাম। তীব্র কথা দেয় সে আসলামের আমানতের ক্ষতি হতে দিবে না।
এর মধ্যে সোহানা কাজের লোকদের বুদ্ধিতে তীব্র'কে পটানোর চেষ্টা করতে থাকে। কারন তাহলে সে আর তার বাবা আসলামের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবে। তীব্র তো পটে না। যখন সোহানার বাবা আত্হত্যা করে তখন তীব্র জানে আসল ঘটনা। তীব্র সোহানাকে মুক্তি দিতে যেতেই সামনে আসে আসলাম। ফিরে এসেছে সে। শুরু হয় তীব্র আর আসলামের যুদ্ধ। জিতে কে? তীব্র।

এইরকম ঘটনা নিয়া ইফতেখার চৌধুরীর দ্বিতীয় ছবি 'দেহরক্ষী'।

ইফতেখার এমন একটা ছবি চিন্তা করেছেন, বানাতে চেয়েছেন যেটা দেখে দর্শকরা হতাশ হবে না বরং হাততালি দিবে। চেষ্টাটা ভালো ছিল। এই ছবি দেখে বাংলা সিনেমার নিয়মিত দর্শকরা দুই ঘন্টার মধ্যে একবারো হাই তুলবে না এটা নিশ্চিত। উল্লাস করবে হাততালি দিবে সিটি বাজানোর মতো রাখা হয়েছে বেশ ভালো উপকরন।

সিনেমাটোগ্রাফির জন্য বেশ ভালই মার্ক পাবেন ইফতেখার। যদিও কিছু কিছু শট হুবহু কপি করা। কিছু যায়গায় কালার কারেকশন ভালো হয়েছে। সম্পাদনা মিউজিক চলনসই।

দর্শক হলে যায় মূলত কেনো? ভালো একটা গল্প দেখার জন্য নিশ্চয়। ভালো একটা গল্প ভালোভাবে উপভোগ্য করার জন্য চাই ভালোভাবে গল্পের গাথুনি সহ ভালো একটা স্ক্রিপ্ট। এর সাথে সাথে আসে অন্যান্য সব উপকরন। নির্মাতা ঠিক এই যায়গায় মার খেয়েছেন। কারন তিনি বেছে নিয়েছেন এমন এক গল্প যেটা বস্তাপচা অন্যান্য বাংলা সিনেমার চেয়ে খুব বেশি ভালোমানের না। কেনো এই গল্পকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছি?

কারন এই গল্পে নেই চরিত্রের যথাযত স্টাবলিষ্টমেন্ট, নেই লজিক্যাল পাওয়ার, নেই কোনো টুইষ্ট।

আমরা বুঝতে পারিনা কাকে নিয়ে আমাদের জার্নি শুরু হয়। হাতে অপশন থাকে দুই। সোহানা এবং আসলাম। কিন্তু সিনেমার নাম 'দেহরক্ষী'! যে আসে সিনেমার গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যাকে জোর করে হিরোইজম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

আমরা ছবির শুরুতেই শুনতে পাই আসলামের মুখ থেকে যে সে নিষিদ্ধ জগতের সবচেয়ে বড় হনু। কিন্তু আমরা তার এমন কোনো কার্যকলাপ দেখি না।

আমরা দেখি সোহানা বাবার অপারেশন করানোর জন্য হোটেলে হোটেলে নাচে। কিন্তু আমদের সোহানার বাবাকে দেখে ঐ পর্যায়ের অসুস্থ মনে হয় না।

আমরা ছবির শেষদিকে দেখতে পাই তীব্র সোহানার প্রতি সোহানা তীব্রের প্রতি তীব্র ভালোবাসা কিন্তু আমরা এটা বুঝতে পারিনা ঠিক কি কারনে তাদের এতো ভালোবাসার উৎপত্তি? পরিচালক আমাদের এটা বুঝানোর চেষ্টা করেননি।

আমরা দেখি আর ভাবি কিন্তু হিসেব মেলাতে পারি না কি করে লাশের দাফনের কাফনের মধ্যে চিঠি আসে। কেনো তীব্র দেশ থেকে সিসি ক্যামেরা না কিনে আসলামকে আমেরিকা থেকে পাঠাতে বলে।

আমাদের বাড়ির কেয়ারটেকারকে প্রথম দেখায় বাড়ির বড়কর্তা মনে হয়। আমরা দেখি বাড়ির কাজের লোকদের ভাড়ামি। যা কোনোভাবেই এ গল্পের জন্য প্রয়োজন ছিলনা কিংবা রিলেট করতে পারেননি।

আমাদের যখন নায়িকার শরীরের দিকে চোখ যায় তখন পরিচালকের যায় না আবার যখন পরিচালকের যায় তখন আমাদের যায় না।

পরিচালক এমন দৃশ্য তৈরী করতে পারেননি যা আমাদের নাড়া দেয়। পরিচালক আশ্রয় নেয় স্থুল ডায়লগের।

আমাদের আসলামের(মিলনের) অভিনয় ছাড়া কারো অভিনয় দেখেই মনে হয় নি ভালো অভিনয় করেছেন। তীব্র (মারুফ), সোহানা (ববি) এদের অভিনয় আমাদের বলার সুযোগ দেয়নি "বাহ ভালো অভিনয় করছে"। আমরা কিছু খুচরা অঅভিনেতাদের অভিনয় দেখি যা আমাদের গল্প থেকে মনযোগ সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করে।

আমরা কিছুকিছু যায়গার বাজে লাইটিং দেখতে পাই। কষ্টিউমের ক্ষেত্রেও তাই। আমাদের বিজিএমও টাচ করে না।

তবে আমরা কেউ খুবখুশ কিংবা বেখুশ মনে বের হইনা। আমরা কাউকে বলিওনা দেহরক্ষী বাজে ছবি বরং বলি ভালো ছবি।

আমরা আশাকরতে থাকি ইফতেখাররা তাদের পরবর্তী ছবিতে আরো ভালো কিছু উপহার দিবেন। আমরা আশা করে থাকি বাংলা ছবির পরিবর্তন অচিরেই সাধিত হবে।

"জয় সিনেমা"
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:৪৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×