somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন বছর ও অধ্যাপক ইউনূস - লেখক: বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, হল্যান্ড থেকে

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরাতন বছরের সমস্ত আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, সৌন্দর্য্য, আবর্জনা সব কিছু সাথে করে বিদায় নিয়েছে ২০১০। বিশ্বব্যাপী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ঘটা করে বরণ করে নিয়েছে নতুন বছর ২০১১ কে। নানা ঝঞ্ঝাট, রক্তক্ষয়, অশান্তি, বন্যা, খরা, নৈতিক-অর্থনৈতিক ধস, মানবাধিকার লংঘন সহ নানা ঘটনার সাক্ষী হয়ে ইতিহাসে ঠাঁই নিলো ২০১০। রাতের শেষ প্রহরে নতুন বছরের শুরুতে উৎসবে মেতে উঠে গোটা বিশ্ব। টিভির পর্দায় সে মিলন দৃশ্য দেখতে কি ভালোই না লাগে। মনে হয় পৃথিবীর কোথায়ও কোন দুঃখ নেই, কোন কষ্ট নেই, অভাব নেই। নেই হিংসা, দ্বেষ, বিভেদ জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে। মানব জাতিও বোধ করি ভুলে যায় কটি মুহূর্তের জন্যে। এক কাতারে এসে দাঁড়ায়। ভাবি এমন ক্ষণ যদি অনুক্ষণ হতো, কি ভালোই না হতো। কিন্তু সে যে হয় না। যা ঘটে তার স্থায়িত্ব ক্ষণিকের জন্যে। পর মুহূর্তে এই মানুষগুলোই আবার সেই পুরানো খোলস পরিধান করে নেয়। ধারণ করে পুরানো রূপ। একে অন্যের বিরুদ্ধে লেগে পড়ে। ভালোবাসার প্রদীপ নিভে গিয়ে দ্বিগুণ শক্তিতে জ্বলে উঠে হিংসা আর বিদ্বেষের দীপ।

ইউরোপে বসে টিভি পর্দায় দেখি দূরে স্বদেশে কক্সবাজার সৈকতে নতুন বছরকে বরণ করে নেবার কি মহাযজ্ঞ। কি আনন্দ উল্লাস। দেখে ভাল লাগে। একদিকে সাধারণের যখন এই উল্লাস, এক কাতারে শামিল হওয়া তখন দেখি রাজধানীতে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের একে অপরের দিকে ছুঁড়ে দেয়া আক্রমণাত্মক বাক্য। পাশাপাশি হতাশ হয়ে লক্ষ্য করি কি করে দেশের একটি গোষ্ঠী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে শুধু দেশবাসীর কাছে নয়, গোটা বিশ্বের কাছে হেয় করার কি প্রাণান্তকর প্রয়াস না চালিয়ে যাচ্ছে। এ যে কেবল ব্যক্তি ইউনূসকে টেনে নিচে নামানো নয়, এ গোটা দেশকে খাটো করা সে কথাটা তাদের বোধগম্য নয় বলে মনে হয়। ব্যক্তি ইউনূসকে যদি কোনভাবে এই অভিযোগের সাথে সম্পৃক্ত করা যেত তাহলে তারা যে তা তা থই থই নৃত্যে নেচে উঠতো তা বলা বাহুল্য। ধরে নিই অধ্যাপক ইউনূস অন্যায় করেছেন। তার অন্যায় যদি হয়েই থাকে তা হলো তিনি দাতাকে না জানিয়ে গ্রামীণ ব্যাংককে দেয়া ফান্ডের একাংশ গ্রামীণ কল্যাণে স্থানান্তর করেছেন। মানলাম এর মধ্যদিয়ে তিনি দাতার সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন অই টাকা তো তিনি তার নিজের একাউন্টে ট্রান্সফার করেননি। যারা আজ ‘গেল গেল’ বলে শোর তুলেছেন তাদের মত তো তিনি দাতা কর্তৃক দেয়া অর্থ নিজের কল্যাণে ব্যবহার করেননি। টাকাটা তো গেছে গ্রামীণেরই আর একটি তহবিলে। যারা দীর্ঘদিন ধরে অধ্যাপক ইউনূসের পিছনে উঠে পড়ে লেগেছেন তারা খুশী হতেন যদি অধ্যাপক ইউনূস অই টাকাটা তাদের মত নিজের একাউন্টে ট্রান্সফার করতেন। তাহলে তো এদ্দিনে প্রফেসর ইউনূসকে ন্যাংটা করে ছাড়া যেত।

মজার ব্যাপার হলো যে ব্যাপারটা খোদ দাতা সংস্থা ও অই দেশের সরকার মিটমাট করে ফেলেছে সেই পুরানো ব্যাপারটাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলছে একটি স্বার্থান্বেষী শ্রেণী যাদের চক্ষুশুল অধ্যাপক ইউনূস। আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা হলো সব কিছুতেই রাজনীতির মশলা দেয়ার প্রচেষ্টা। সর্ব বিষয়ে, সর্বক্ষেত্রে এমন দলীয়করণ বিশ্বের আর কোন দেশে আছে বলে অন্তত: আমার জানা নেই। বহির্বিশ্বে গর্ব করতে পারি হাতে গোনা দু একটি নামের একটি নয়, অন্যতম হলো অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ অভিজ্ঞতা থেকেই বলা। কাজে বেড়াতে কোন দেশে গেলে বাংলাদেশি জেনে প্রথমেই প্রসংগ উঠে আসে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক।

তেমনি সপ্তাহ কয়েক আগে হল্যান্ডে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্টারন্যাশনাল অর্গেনাইজেশন অব মাইগ্রেশন (আই ও এম) নেদারল্যান্ডের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে। তাতে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত ছিলাম। তাতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাচ মন্ত্রী ও আই ও এম ইন্টারন্যাশনাল প্রধান। আমার ভাগে যে দায়িত্ব বর্তালো তা হলো বিদেশে উন্নয়নে ডায়াসপোরা সংগঠনের ভূমিকা ও গুরুত্ব। কফি ব্রেকে কথা হচ্ছিল ডাচ সাংবাদিক ইয়ুষ্ট বিউরদেনের সাথে। বাংলাদেশ এক্সপার্ট হিসেবে পরিচিত এই সাংবাদিক বাংলাদেশে অনেক বার গেছেন এবং মাঝে মধ্যে তার সাথে আমার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হয়। দীর্ঘদিন তার সাথে পরিচয়। কফি খেতে খেতে অধ্যাপক ইউনূস প্রসংগ তুলে এই ব্যাপারে আমার কি অভিমত জানতে চাইলেন। আমার যা জানা বা ধারণা তা তাকে বলতেই তিনি বলে উঠলেন, ‘আমিও তাই মনে করি। অধ্যাপক ইউনূস এমন ভুল কখনোই করতে পারেন না। এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্টারেস্ট কাজ করছে।

এ শুধু তার মন্তব্য নয়। এ সবার বিশ্বাস। তার পরেও বলি, ধরে নিলাম অধ্যাপক ধোঁয়া তুলসী পাতা নন। কিন্তু অভিযোগটি তদন্ত করার আগেই যদি সরকারের উপরওয়ালা কেউ আগ বাড়িয়ে বিরূপ ও অনভিপ্রেত মন্তব্য করে বসেন তখন সে মন্তব্যের পেছনে কোন উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা সে প্রশ্ন মনে জাগে। দুঃখ লাগে যখন দেখি কোন কোন খ্যাতিমান সাংবাদিক অধ্যাপক ইউনূস শান্তির জন্যে নোবেল পাবার যোগ্য কিনা এমন প্রশ্ন তুলেন। কষ্ট লাগে যখন আমার মত এক খুদে সাংবাদিক দেখে কি করে তার অগ্রজ, প্রথিতযশা অই সাংবাদিকরা এমনিতর অর্বাচীন মন্তব্য করতে পারেন। তাদের কেউ কেউ আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে এই বলে মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের কেউ যদি অই শান্তির জন্যে নোবেল পুরস্কার পান তা একমাত্র শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া এমন কি এরশাদও যদি শান্তির জন্যে নোবেল পুরস্কার পান, সে তো দেশের গৌরবের কথা। আমাদের খুশী হবার কথা। কিন্তু যাকে আপনি পছন্দ করবেন না, যিনি আপনার রাজনৈতিক চিন্তাধারার সাথে এক কাতারে শামিল হবেন না, তিনি সে পুরস্কারটি পেলে, তাকে খাটো করে দেখার এ প্রবণতা কেন, এ কেমন নৈতিকতা।

আগেই বলেছি কাজে কর্মে প্রায়শ: নানা জায়গায়, নানা দেশে যেতে হয়। বাংলাদেশের শুনে প্রথমে বলে প্রফেসর ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের কথা। ওরা জানে কেবল ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাককে। ওরা জানে না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে, কোন দল ক্ষমতায়। তাতে তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। কেননা ওরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চরিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কেবল ভোট দিলেই তো আর গণতন্ত্র কয়েম হয় না। দেশের বাইরে বাংলাদেশকে বড় করে তুলে ধরি তেমন বড় ধরনের কোন ব্যাপার বা ব্যক্তি বাংলাদেশে নেই। তাই অনুরোধ অধ্যাপক ইউনূসের মত যে দু একটি ধন বাংলাদেশের আছে তাদের ছোট করার প্রয়াস চালাবেন না। এতে ব্যক্তি ইউনূসের যতটা না ক্ষতি হবে গোটা দেশ ও দশের ক্ষতি হবে বহুগুণ। আশা করি ইউনূসের পেছনে যারা ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন তাদের অতি শীঘ্র শুভবুদ্ধির উদয় হবে। এবং তা যত তাড়াতাড়ি তত মঙ্গল, দেশের জন্যে, সকলের জন্যে। ৪ জানুয়ারি ২০১১।


নতুন বছর ও অধ্যাপক ইউনূস - লেখক: বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, হল্যান্ড থেকে
দৈনিক আজাদী - তে ১৩ই জানুয়ারী প্রকাশিত উপ-সম্পাদকীয়
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×