somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক সবজান্তা নাস্তিক প্রোফেসর ও চালিয়াৎ ছাত্রের গল্প (জবাব সহ)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( গল্পটি আমি প্রথম শুনলাম কিছুদিন আগে। সামুতেই নাকি একজন ব্লগার লিখেছিল।সেই গল্পে দেখা যায় এক নাস্তিক অধ্যাপক তার নাস্তিকতা নিয়ে খুব বড়াই করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত এক মুসলিম ছাত্রের হাতে নিদারুণভাবে অপদস্ত হন, এবং ‘বিজ্ঞানের অক্ষমতা’ স্বীকার করে ঈশ্বরের অস্তিত্ব মেনে নিতে বাধ্য হন। গল্পটি মূলতঃ একটি খ্রীস্টান ওয়েব সাইট থেকে ধার করা।মূল ইংরেজী গল্পটি পাওয়া যাবে এই খ্রীস্টান সাইটে, যেখানে এক চালিয়াৎ ছাত্র যীশুর অস্তিত্ব গিলিয়ে দিয়েছিলেন এক ভোদাই নাস্তিক অধ্যাপককে। ইসলামিস্টরাও একই গল্প আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে চালিয়েছে গল্পটি নেটে দেখার পর থেকেই, অবশ্যই সেটার ‘যথার্থ’ ইসলামীকরণ করে । এখানে দেখুন। আমি ওই গল্পের সবচেয়ে ভাল জবাব পেয়েছি মুক্তমনার অভিজিতের লেখা থেকে। গল্পটা মজার তাই আমি গল্প ও তার জবাব দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। আসল লেখা পড়তে পারবেন এখানে।। আশা করি সবার ভাল লাগবে )

সাইকোলজির প্রফেসরের (নাম বলছি না) আজ মেজাজ খুব ফরফুরে।প্রথম সারিতে একজন নতুন ছাত্র দেখে তিনি তাকে দাড় করালেন।
প্রফেসরঃ তুমি কি গড এ বিশ্বাস কর?
ছাত্রঃ অবশ্যই স্যার।
প্রফেসরঃ গড কি ভাল ?
ছাত্রঃ অবশ্যই
প্রফেসরঃ গড কি সর্বশক্তিমান? অবশ্যই
প্রফেসরঃ আমার ভাই ক্যানসারে মারা গেছে যদিও সে গড এর কাছে নিরাময় চেয়েছিল। আমরা প্রায় সবাই অন্যের অসুখ বিসুখে সাহায্য করি, কিন্তু গড তা করেনি। এর পরও কি তুমি বলবে গড ভাল ?
ছাত্র নিশ্চুপ।
প্রফেসরঃ তোমার কোন উত্তর নেই তাইতো ? ওকে, এসো আমরা আবার শুরু করি।গড কি ভাল ?ছাত্রঃ অবশ্যই
প্রফেসরঃ শয়তান কি ভাল ?
ছাত্রঃ না।
প্রফেসরঃ শয়তান কোথা থেকে এসেছে ?
ছাত্রঃ গড থেকে।
প্রফেসরঃ তাহলে বৎস, বল জগতে এভিল বলে কিছু আছে কি?
ছাত্রঃ জ্বী আছে।
প্রফেসরঃ এভিল সর্বত্রই আছে, তাইনা ? এবং গড সব কিছু তৈরী করেছে।
ছাত্রঃ জ্বী
প্রফেসরঃ তাহলে এভিল কে তৈরী করেছে?
ছাত্র নিশ্চুপ।
প্রফেসরঃ হিংসা, বিদ্বেষ, অসুস্থতা, মৃত্যু, এসব কিছই জগতে আছে, তাই নয় কি ?
ছাত্রঃ জ্বী।
প্রফেসরঃ এসব কে তৈরী করেছে ?
ছাত্র নিশ্চুপ।
প্রফেসরঃ বিজ্ঞান বলে যে, তোমার পাচটি ইন্দ্রিয় রয়েছে যা তুমি জগতের সব বস্তুকে সনাক্ত করতে ব্যবহার কর। এখন বল তুমি কি গডকে দেখেছ ?
ছাত্রঃ না স্যার।
প্রফেসরঃ তুমি কি গডের কথা শুনেছ?
ছাত্রঃ না স্যার।
প্রফেসরঃ তুমি কি গডের স্বাদ গন্ধ কখনও অনুভব করেছ ?
ছাত্রঃ না স্যার।
প্রফেসরঃ এর পরও কি তুমি গড কে বিশ্বাস কর ?
ছাত্রঃ জ্বী।
প্রফেসরঃ পরীক্ষাগারে ব প্রফেসরঃ বলো, অনুভবে বলো প্রদর্শনে বলো , বিজ্ঞান বলে গডের কোন অস্তিত্ব নেই। তুমি একে কি বলবে ?
ছাত্রঃ কিছুই না। আমার শুধু বিশ্বাস আছে।
প্রফেসরঃ হ্যা। এখানেই বিজ্ঞানের সমস্যা।
ছাত্রঃ আচ্ছা স্যার, তাপ বলে কিছু আছে কি?
প্রফেসরঃ হ্যা।
ছাত্রঃ ঠান্ডা ?
প্রফেসরঃ হ্যা।
ছাত্রঃ না স্যার এগুলির কোনটিই নেই। (ঘটনার পট পরিবর্তনে সারা রুম চুপ হয়ে গেল।)
ছাত্রঃ স্যার, আপনি অনেক ধরনের তাপ পেতে পারেন, কম তাপ, বেশী তাপ বা আরো বেশী, কিন্তু ঠান্ডা বলে কিছু নেই।আমরা ৪৫৮ ডিগ্রীর নীচে তাপমাত্রায় যেতে পারি না।তাপের অনুপস্থিতিকেই আমরা ঠান্ডা বলি। আমরা ঠান্ডা মাপি না, তাপই মাপি।তাপই শক্তি। ঠান্ডা আলাদা কিছু নয়, এটি তপের অনুপস্থিতি মাত্র। (ক্লাসরুমে তখন পিন পতন নীরবতা।)
ছাত্রঃ আচ্ছা স্যার, অন্ধকার কি?
অন্ধকার বলে কিছু আছে কি ?
প্রফেসরঃ অবশ্যই, অন্ধকার না থাকলে রাত আসে কিভাবে?
ছাত্রঃ আপনি আবার ভুল করলেন, প্রফেসর। অন্ধকার আলোর অনুপস্থিতি মাত্র। আপনি কম আলো, বেশী আলো ঝাপসা আলো, এসব বলতেই পারেন, কিন্তু কোন আলো না থাকলেই আমরা অন্ধকার বলি।আলো একবারেই না থাকলে অন্ধকারকে আরো তীব্র করা সম্ভব নয়।
প্রফেসরঃ এসব বলে তুমি কি বুঝাতে চায়ছো ?
ছাত্রঃ আমি আসলে আপনার ফিলোসফি থেকেই একটা সিদ্ধান্তে পৌছাতে চাচ্ছি।
প্রফেসরঃ কি সিদ্ধান্ত?
ছাত্রঃ স্যার আপনি দৈত নীতি অনুসরণ করছেন।আপনি একই সাথে জন্ম মৃত্যু ভাল গড, খারাপ গড এর অস্তিত্বের যুক্তি দিচ্ছেন।আপনি গডকে সসীম পরিমাপযোগ্য রাশি মনে করছেন।স্যার বিজ্ঞান কখনও চিন্তা ও চেতনা কে পরিমাপ করতে পারেনা। বিজ্ঞান ইলেকট্রিসিটি ম্যাগনেটিজম ব্যবহার করে কিন্তু কখনও এগুলি ধেখা যায়না এবং খুব কমই অনুভব করা যায়।

এখন প্রফেসর,আপনি বলুন, আপনি কি আপনার ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেন যে, মানুষ বানর থেকে এসেছে?
প্রফেসরঃ অবশ্যই । তুমি যদি জৈবণিক বিবর্তনবাদ দেখ তাহলে তো তাই স্বীকার করবে।
ছাত্রঃ এই বিবর্তন কি আপনি চোখে দেখেছেন ? (প্রফেসর আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলেন তর্কটি কোন দিকে যাচ্ছে।)
যেহেতু কেউ বিবর্তনবাদ কেউ দেখেনি এবং কেউ ল্যাবরেটরীতে প্রমাণও করতে পারেনি, তাহলে কি ধরে নেব আপনি শুধু আপনার বিশ্বাসটাই প্রচার করছেন।আপনি কি একজন বিজ্ঞানী নাকি একজন প্রচারক ?
পুরো ক্লাস হঠাৎ হাসিতে ফেটে পড়ল।
ছাত্রঃ এই ক্লাসে কি এমন কেউ আছো যে প্রফেসরের ব্রেইন দেখেছো ? পুরো ক্লাস আবার হাসিতে ফেটে পড়ল।
এই ক্লাসে কি এমন কেউ আছো যে প্রফেসরের ব্রেইন শুনেছো অনুভব করেছো, স্পর্শ করেছো অথবা স্বাদ গ্রহণ করেছো?

এমন কেউই নেই যে তা করেছে। সুতরাং বিজ্ঞানের স্বীকৃত নিয়ম অনুযায়ী প্রফেসরের কোন ব্রেইন নেই। With all due respect, sir, how do we then trust your lectures, sir?

পুরো ক্লাস চুপ। প্রফেসর এক পলকে ছাত্রের দিকে তাকিয়ে রইল।
প্রফেসরঃ আমি মনে করি আমার ব্রেইনকে তোমার বিশ্বাস করা উচিত। আমিও এটাই বলছিলাম, মানুষ এবং গডের মধ্যে সম্পর্কটা বিশ্বাসের।এটাই বিশ্বাসীদের বাচিয়ে রেখেছে।



আস্তিকদের গল্পের এখানেই বিরতি। নাস্তিক অধ্যাপককে নাস্তানাবুদ করে চালিয়াৎ ছাত্র খুবসে বগল বাজাতে লাগলো। সেটা দেখে আকাশ হতে দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করতে লাগলেন।

ঠিক হ্যায়।

কিন্তু এর মধ্যেই গল্পের ২য় পর্ব শুরু হয়ে গেলো …



২য় পর্ব



গল্পের ২য় পর্ব :

ক্লাসের গন্ডগোলের মধ্যে এক তৃতীয় ছাত্র উঠে দাঁড়ালো। উঠে দাঁড়িয়ে বলা শুরু করলো -


‘আমার মনে হচ্ছে প্রফেসর এবং নতুন মুসলিম ছাত্র দু’জনেই বেশ কিছু জায়গায় বড় সড় কিছু ভুল করেছেন’।

সারা ক্লাস এবার তৃতীয় ছাত্রের দিকে ঘুরে গেল। ছাত্রটি বলে চললো -


প্রফেসর স্যারের মস্ত বড় ভুল হল - চোখে কিছু না দেখলেই সেটা অস্বীকার করাটা বিজ্ঞানের সংজ্ঞা হিসেবে সারা ক্লাসে চালিয়ে দেয়া। প্রফেসর সাহেব এতদিন ধরে পড়াচ্ছেন কিন্তু বিজ্ঞানের সংজ্ঞা জানেন না তা কি একটু লজ্জার বিষয় হয়ে যাচ্ছে না? উনি উনার কলিগ বা সহকর্মীদের কাছ থেকে, যারা বিজ্ঞান এবং দর্শন সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন - তাদের কাছ থেকে বিজ্ঞানের সংজ্ঞাটি শিখে এসে ক্লাসে লেকচার দিতে পারতেন। কিংবা স্কুলের মেট্রিকের বইটি খুলেও তিনি সংজ্ঞাটি দেখে নিতে পারতেন। চোখে না দেখলেই সেটা অস্বীকার করাটা বিজ্ঞান হলে তো ইলেকট্রন, প্রটোন, নিউট্রন, কোয়ার্ক, ফোটন সব কিছুই বিজ্ঞানের চোখে অস্বীকৃত! কারণ সেগুলো চোখে দেখা যায় না। বাতাসও আমরা চোখে দেখি না। কিন্তু কোন বিজ্ঞানী কি বলেছেন বাতাস অবৈজ্ঞানিক?

না বলেননি, কারণ বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তগুলো চোখে দেখা না দেখার উপর নির্ভর করে না; নির্ভর করে পরীক্ষালব্ধ প্রমাণে। যাচাইযোগ্যতা আর পরীক্ষণযোগ্যতা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের চাবিকাঠি। বাতাসকে আমরা চোখে দেখি না, কিন্তু বাতাসের স্পর্শ আমরা অনুভব করি ঝড়ের সময়। আর শুন্য বেলুন আর বেলুনকে ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে ওজন করলেই দেখতে পারবেন দুই ওজনে পার্থক্য পাওয়া যাচ্ছে, এ থেকে বোঝা যায় - বাতাসের আবার ওজনও আছে। স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র ছাত্রীরাই ‘এসো নিজে করি’ সেকশনে এই পরীক্ষাগুলো করতে পারে, আর এত বড় প্রফেসর এটা জানে না, এটা কী করে সম্ভব? ঠিক একই ভাবে বলা যায় ইলেকট্রণের অস্তিত্বও বিজ্ঞান মানে কারণ জার্মান বিজ্ঞানী ইউগেন গোল্ডস্টেইন থেকে শুরু করে স্যার জ়ে জ়ে থম্পসন, আর্নেস্ট রাদারফোর্ড সহ অনেকেই ইলেকট্রণের পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ দিয়েছেন।

কিন্তু সেরকম প্রমাণ কি ঈশ্বর বা গডের ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে?




সারা ক্লাসে পিন পতন নিঃস্তব্ধতা। প্রফেসর সাহেবের কপাল ঘেমে উঠছে। আর নতুন ছাত্রের চোয়াল ঝুলে পড়েছে।

ছাত্রটি নিস্পৃহ ভঙ্গিতে বলে চললো -


প্রমাণ পাওয়া তো পরের কথা। কোন কিছুকে বিজ্ঞানের অংশ হয়ে উঠতে হলে পরিস্কার কিছু সংজ্ঞা থাকতে হয়। ঈশ্বরের কি সেরকম কোন সংজ্ঞা আছে? আর যাওবা আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে জানি সবই পরস্পরবিরোধি। যেমন বাইবেলের ধারনা অনুযায়ী ঈশ্বর অদৃশ্য (Col. 1:15, ITi 1:17, 6:16), এমন একটি সত্ত্বা যকে কখনও দেখা যয় নি (John 1:18, IJo 4:12)। অথচ বাইবেলেরই বেশ কিছু চরিত্র যেমন মুসা (Ex 33:11, 23), আব্রাহাম, জেকব (Ge. 12:7,26:2, Ex 6:3) ঈশ্বরকে দেখতে পেয়েছিলেন বলে বর্ণিত হয়েছে। ঈশ্বর পরিস্কার করেই বাইবেলে বলেছেন - ‘তোমরা আমার মুখ দেখতে পাবে না, আমাকে দেখার পর কেউ বাঁচতে পারবে না’ (Ex 33:20)। অথচ, জেকব ঈশ্বরকে জীবন্ত দেখেছেন (Ge 32:30)। এগুলো তো পরিস্কার স্ব-বিরোধীতা। ইসলামেও আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যেখানে থাক, তিনি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন’ (সুরা হাদিদ - ৪), অথচ মুহম্মদকে নাকি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে বোরাকে করে বহুদূর পাড়ি দিতে হয়েছে। ক্যামনে কী?

আর ঈশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে যে ‘পরম দয়াময়’, সর্ব শক্তিমান, নিখুঁত, সর্বজ্ঞ ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হয় সেগুলো যে সবই পরস্পরবিরোধী তা বহুভাবেই যুক্তি দিয়ে দেখানো হয়েছে। খ্যাতনামা বিজ্ঞানী আর দার্শনিকদের অনেক বইয়েই এগুলো নিয়ে আলোচনা আছে (দেখেন এখানে কিংবা এখানে ), আছে ইন্টারনেটের অনেক সাইটেও (দেখেন এখানে )।

এই রকম পরস্পরবিরোধী জিনিস প্রমাণ করার দায়িত্ব বিজ্ঞানের না। কেউ যদি ওইরকম কিছু আছে দাবী করেন, সেইটা প্রমাণ করার দায়িত্ব দাবিদারের। এইটা হইলো দর্শনের প্রথম দিককার কোর্সের মামলা - বার্ডেন অফ প্রুফ।

কি বলেন স্যার? কি বলো তোমরা?


সারা ক্লাস মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। আর ঘর্মাক্ত প্রফেসর তার টাক মাথা চুলকাতে লাগলেন।


‘আর অন্যদিকে নতুন ছাত্র - তোমার ভুলটা হল, না বুঝেই ঈশ্বরকে বিবর্তন তত্ত্ব আর প্রফেসরের ব্রেনের সাথে তুলনা করে দেয়া। প্রথমত, বিবর্তন ঈশ্বরের মতো গায়েবী কিছু নয়। বিবর্তন তত্ত্বের বহু পর্যবেক্ষণগত প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর বিবর্তনের পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ অজস্র। বিবর্তন হচ্ছে কিনা তা নিয়ে জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন বিতর্ক নেই। প্রতিবছরই অসংখ্য গবেষণাপত্র, এবং বই লেখা হচ্ছে বিবর্তনের সাক্ষ্যপ্রমাণ উল্লেখ করে। পাবমেডে একটা সার্চ দিয়েই দেখো না বাপু - বিবর্তনের উপরে কয় হাজার পেপার বেরোয়। আর তাও না করতে চাইলে একটু দু কদম হেঁটে আমাদের লাইব্রেরিতে ঢু মেরেও দেখতে পারো। মার্ক রিডলীর ইভলুশন (Wiley-Blackwell) কিংবা ডগলাস ফুটুয়ামার ইভলুশন (Sinauer Associates Inc) তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক হিসেবেই পড়ানো হয়, সেইগুলো আমাদের লাইব্রেরীতে আমি কালই দেখলাম। বায়োলজির সেকশনেই আছে। একটু চোখ বুলিয়ে নিও, কেমন?

আর ব্রেনের ব্যাপারটা যা বললা পুরাই তামসা। ব্রেনের পরিস্কার সংজ্ঞা আছে, আছে তার বাস্তব অস্তিত্বও। আমাদের পলাশী বাজারের বাবুল কসাইও মাথার খুলি ফাটাইয়া মুরগী, খাসি আর গরুর ব্রেন দেখসে। আর মেডিকেলের ডাক্তার আর ছাত্ররা তো মানুষের মাথার ব্রেনে অপারেশন পর্যন্ত চালায়। ব্রেনের বাস্তব অস্তিত্ব না থাকলে কি হাওয়ার উপরে ছুরি কেচি চালায় নাকিরে ভাই? সি এন এন এর নিউরোসার্জন ডঃ সঞ্জয় গুপ্ত তোমার শুনলে হার্টফেল করব, কইলাম।



নতুন ছাত্রের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না একেবারেই। কিন্তু দণ্ডায়মান তৃতীয় ছাত্রের মুখে সহানুভূতির কোন ছাপ নেই। বলে চললো-


শুধু ঈশ্বর নয়, তুমি আর আমাদের প্রফেসর স্যার মিলে গোল পাকিয়েছ বিজ্ঞানের অনেক বেসিক বিষয়েই। এই যেমন ধর, তুমি ঢালাওভাবে বলে দিলে - প্রফেসর স্যারেরা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেন মানুষ বানর থেকে এসেছে। এটা কিন্তু ঠিক নয়। বিবর্তন তত্ত্ব বলছে যে, মানুষ আর পথিবীর বুকে চড়ে বেড়ানো অন্যান্য বাদঁর কিংবা বনমানুষেরা অনেক অনেককাল আগে একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হয়ে বিবর্তিত হয়েছে এবং আলাদা আলাদা ধারা বা লিনিয়েজ তৈরি করেছে। সে হিসেবে আমরা আধুনিক বানরগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও সরাসরি উত্তরসূরী নই। আমরা আসলে এসেছি বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে কথিত প্রাইমেট থেকে। তুমি কি ভেবেছ শাখারিবাজারের গাছে গাছে আর বিল্ডিং এর উপরে যে বানরদের ঘুরতে দেখো সেখান থেকেই আমরা মানুষেরা এসেছি? আর তার চেয়েও বড় কথা, তুমি কি করে ভাবলে যে তোমার ‘বানর থেকে মানুষ এসেছে’ এই স্টান্টবাজি মারা ভুল ধারণাটা বায়োলজির ক্লাসে ঘটা করে পড়ানো হবে? তুমি এক কাজ কর, মুক্তমনা থেকে ‘মানুষ কি বানর থেকে এসেছে? ’ - এই লেখাটা পড়ে নাও। মুক্তমনার বিবর্তন আর্কাইভে বিবর্তন নিয়ে এরকম অনেক ভুল ভাল ধারণার উত্তর দেয়া আছে। দেখতে পার।

তোমাদের বক্তব্য থেকে আরো কিছু ঘোট পাকানো উদাহরণ দেই। তাপ আর ঠান্ডা সম্বন্ধে যা বললে তা কিন্তু পুরোপুরি ভুল। তাপ আর তাপমাত্রাও এক কথা নয়। ইন্টারমিডিয়েটের শাজাহান তপনের বই খুলে তাপ আর তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্যটা দেখে নিও, কেমন? সোজা কথায় বললে, তাপ হচ্ছে একধরণের শক্তি। এর একটি একক হচ্ছে ক্যালরি। এখন, তাপ প্রয়োগে আমরা জানি পদার্থের মধ্যস্থিত অনুর মধ্যকার গতিশক্তি বেড়ে যায়। এই অনুর গতিশক্তির গড়পরতা বৃদ্ধিকে পরিমাপ করা হয় তাপমাত্রার বিভিন্ন স্কেলের সাহায্যে। যেমন, সেন্টিগ্রেড কিংবা কেলভিন ইত্যাদি। বুঝেছ?

আর এও জেনে রাখ, ‘ঠান্ডা’ কোন বৈজ্ঞানিক পরিভাষা নয়। বিজ্ঞানের চোখে কোন কিছু ঠান্ডা মানে হল, অন্য কোন জানা তাপমাত্রার তুলনায় বস্তুটির অপেক্ষাকৃত নীচু তাপমাত্রায় অবস্থান। কাজেই তুমি যদি বল - ‘ঠান্ডা বলে কিছু নেই’, কিংবা, ‘তাপের অনুপস্থিতিকেই আমরা ঠান্ডা বলি’ - এভাবে বলা বিজ্ঞানের চোখে এক ধরণের নির্বুদ্ধিতা। দেখো, ঠিক একই রকমভাবে তোমার লজিকেই কেউ বলতে পারে - দুঃখ বলে কিছু নেই, কারণ, সুখের অনুপস্থিতিকেই আমরা দুঃখ বলি। কিংবা কেউ এটাও বলতে পারে - রাত বলে কিছু নেই; দিনের অনুপস্থিতিকেই আমরা রাত বলি। সত্যি করে বলতো - একদম বোকার মতন শোনাবে না তখন?

ঠিক একইভাবে ‘বিজ্ঞান ইলেকট্রিসিটি ম্যাগনেটিজম সম্বন্ধে ধানাই পানাই কিছু কথা বলে বিজ্ঞানের অজ্ঞতা প্রমাণ করে আমাদের প্রফেসর স্যারকে যে বুঝ দিয়ে দিলে তাও কিন্তু ভুল। সত্যি কথা হল - পদার্থবিজ্ঞানের যে গুটি কয় ক্ষেত্রে আমরা দাবী করতে পারি যে মোটামুটিভাবে আমরা পরিপূর্ণভাবে জানতে পেরেছি - এই শাখাটি তার মধ্যে অন্যতম। তড়িৎ আর চুম্বক বল কিন্তু বহু আগেই একীভূত তত্ত্বের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, তাই একে আর এখন আলাদা নামে না ডেকে তড়িচ্চুম্বক বা ইলেক্ট্রোম্যাগ্নিটিজম নামেই ডাকা হয়। সেই কবে ১৮৬৪ সালের দিকে ম্যাকসওয়েল সাহেব চারটামাত্র সমীকরণের সাহায্যে সেটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। পরে হার্টজ ল্যাবরেটরীতে তড়িৎ চৌম্বক তড়ঙ্গ তৈরি করেছিলেন, যাকে আমরা বলি বেতার তড়ঙ্গ। আমাদের গর্ব বাঙ্গালী অধ্যাপক জগদীশ চন্দ্র বসুও কিন্তু এ নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তাই বিজ্ঞান ইলেকট্রিসিটি ম্যাগনেটিজম সম্বন্ধে জানেনা বলা মানে কিন্তু বিজ্ঞানের নয়, আসলে তোমার অজ্ঞতাই।


এবারে ছাত্রটি সোজা হাটা ধরলো সামনের দিকে; একেবারে ব্লাকবোর্ডের সামনে চলে গেলো। সেখানে পৌঁছিয়ে বলল -

আমরা স্বীকার করি আর নাই করি, বিজ্ঞান আর বিশ্বাসের মধ্যে একটা বড় পার্থক্য আছে। বিজ্ঞান কাজ করে তথ্য প্রমাণে আর পরীক্ষা-নীরিক্ষায়, কিন্তু বিশ্বাস কাজ করে কেবল অন্ধবিশ্বাসের জোরেই। বিজ্ঞানের কোন তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হলে বিজ্ঞানীরা ভুল মেনে নেন, তাদের তত্ত্বের সংশোধন করেন। নতুন তত্ত্ব দিয়ে পুরাতন তত্ত্ব রিপ্লেস হয় - যেটা বাস্তবতাকে আরো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। কিন্তু বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সে সবের বালাই নেই। কেউ বিশ্বাসের ভুল ধরিয়ে দিলেও সেটাকেই তারা আঁকড়ে ধরে রাখেন। সেজন্যই বিশ্বাস কোন বিজ্ঞান নয়।

ব্যাপারটা বোঝাতে ব্ল্যাকবোর্ডে আঁকা শুরু করলো ফ্লো-চার্ট। ফ্লোচার্ট আঁকা শেষ হবার পর, ব্ল্যাকবোর্ডটা দেখতে লাগলো অনেকটা এরকমের -


নতুন মুসলিম ছাত্রটি কিছুটা বিভ্রান্ত কিছুটা হতবাক হয়ে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রফেসর সাহেবের চোখে এতক্ষণে কিছুটা দীপ্তি ফিরে এসেছে। বললেন,


হ্যা - অনেক কিছুই আমি আগে ঠিকমত বলতে বা ব্যাখ্যা করতে পারিনি। আসলে এর পরে ক্লাসে আসার আগে আগের অনেক কিছু ঝালাই করে নিতে হবে। এই কয় বছর কেবল কন্সাল্টেন্সি করে টাকা কামাতে গিয়ে বিদ্যে বুদ্ধির সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে বসে ছিলাম। তবে এই ক্লাসে একটা বড় শিক্ষা হল আমাদের। নিজেকে বড় ভাবতে নেই, আর জ্ঞানার্জনে শর্টকাট পথ বলে কিছু নেই। সঠিকভাবে বিদ্যার্জন করতে হলে অনেক কষ্ট করতে হবে আমাদের সবাইকেই।



ক্লাস শেষের ঘণ্টা বাজল এইমাত্র। সবাই ধীর স্থিরভাবে শ্রেনীকক্ষ ত্যাগ করেছে। সবার চোখ মুখেই এক ধরণের উজ্জ্বল প্রশস্তির ছাপ। সেই ছাপ নতুন জ্ঞানের, অজানাকে জানার আনন্দের।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×